পেঁয়াজের রসের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

নানান স্বাস্থ্য সমস্যায় শাক-সবজিকাচা পেঁয়াজ হলো রান্নার জন্য প্রধান উপকরন। তাছারা ও কাঁচা পেঁয়াজ ভাতের সাথে, মুড়ির সাথে, পুছকার সাথে, সালাতের সাথে, সিংঙ্গারার সাথে, ইত্যাদি খাবারের সাথে অনেকেই খেয়ে থাকেন। বিশেষ করে বাঙ্গালিরা এই ঐতিহ্যর সাথে বিশেষ ভাবে জড়িত। কিন্তু অনেকেই জানেন না পেঁয়াজের রসের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।
পেঁয়াজের রসের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
পেঁয়াজ আমাদের রান্নার জন্য নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় একটি জিনিস। যে কোন তরকারি রান্নার কাজে পেঁয়াজ ব্যাবহার করা হয়।পেঁয়াজ খাবারের স্বাদ দিগুন বাড়িয়ে তুলে। তাছাড়া ও পেয়াজে অনেক পুষ্টি গুন আছে। যা আমাদের শীরিরের জন্য খুবই উপকারি।

ভৃমিকা

পেঁয়াজ হলো একটি কন্দজ সবজি। এটিকে আবার তরকারির বিশেষ মশলা বলা হয়ে থাকে। সারা বছর বাজারে পেঁয়াজ পাওয়া যায়। এর বিজ্ঞান সম্মত নাম হলো অলিয়াম সেপা। যাই হোক না কেন পেঁয়াজ রসের যে উপকারিতা ও অপকারিতা আছে তা এই পোষ্টে বিস্তারিত জানানো হলো।

ভাতের সাথে কাঁচা পেয়াজ খেলে কি হয়

কাঁচা পেঁয়াজ শরীরের জন্য বিভিন্ন উপকার করে থাকে।কারো যদি দাঁতের ক্ষয়ের সমস্যা থাকে তাহলে ভাতের সাথে কাঁচা পেঁয়াজ নিয়মিত খেলে ভালো উপকার পাওয়া যায়।ব্লাড পেসার ও কোলস্টোরেল এর মতো রোগ কমাতে ভাতের সাথে কাঁচা পেঁয়াজ খেলে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়। যার ফলে হার্টএ্যাটাকের ঝুকি কমে যায়। 

প্রিয় পাঠক ভাতের সাথে কাঁচা পেঁয়াজ খেলে হৃদরোগ, ক্যান্সারের মতো রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। তবে তা নিয়ম মাফিক খেতে হবে। তো যাই হোক না কেন প্রত্যেকদিন খাবারের মেনুতে কাঁচা পেঁয়াজের ব্যাবস্তা থাকলে বা খেলে আমাদের শরীরের পক্ষে যে কতটা উপকারি তা বলার ভাষা রাখে না।

পেঁয়াজের রসের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

কাচা পেঁয়াজ খেয়ে যে রকম আমাদের শরীরের উপকার হয় তেমনি পেঁয়াজের রস দিয়ে ও আমাদের শরীরের বিভিন্ন ‍উপকার হয়।
পেঁয়াজের রসের উপকারিতাঃ
  • দু চা চামুচ পেঁয়াজের রস আর দু চা চামুচ মধু একসঙ্গে মিশিয়ে রোজ সকালে নিয়মিত খেলে পুরুষত্ব ( বীর্য ) বৃদ্ধি পাবে।
  • পেঁয়াজ খেলে গলা পরিষ্কার হয়, মুখমন্ডল পরিষ্কার হয়, দাঁত দুধের মতো সাদা হয় স্মরন শক্তি বাড়ে, এবং সেই সঙ্গে দুর্বল স্নায়ু সতেজ হয়।
  • পেঁয়াজের রসের সঙ্গে করলার রস মিশিয়ে ছোট সাইজের কাপের ১/২ কাপ খেলে ভীষন রকমের অজীর্ন সেরে যায়।
  • যে সব শিশুদের ঘুম কম এবং রাত্রিতে ঘুম না আসার জন্য মাকে ঘুমাতে দেয় না তাদের ঘুমের ঔষুধ ও এই পেঁয়াজ। প্রথমে এক লিটার পানি ভালো করে ফুটিয়ে নিয়ে আঁচ থেকে নামিয়ে নিন। দুটি মাঝারি সাইজের পেঁয়াজ কুরুনি দিয়ে কুরে নিয়ে সেটা সেই পানিতে ঢেলে দশ মিনিট রাখুন। পানি ঠান্ডা হলে ছেকে নিন। খুব ছোট শিশু হলে এক চা চামুচ পানি নিয়ে পাঁচ ফোটা বিশুদ্ধ মধু মিশিয়ে বাচ্চাকে খইয়ে দিন। বাচ্চার শিগগিরি অনিদ্রা কেটে ঘুম আসবে।
  • যে সব বাচ্চারা ভাত খেতে শিখেছে এবং কৃমি রোগে ভুগছে তাদের এক চা চামুচ করে পেঁয়াজের রস নিয়ম করে খাওয়ালে কৃমি বিনিষ্ট হবে এবং যদি বদ হজমে ভোগে তাও ভালো হয়ে যাবে।
  • যদি বার বার মল ত্যাগের জন্য দুর্বলতায় শরীর ঠান্ডা হয়ে যায় তাহলে দু চা চামুচ পেঁয়াজের রসের সঙ্গে এক চা চামুচ আদার রস ও এক চিমটি গোল মরিচ মিশিয়ে খাওয়ালে শরীরের স্বাভিক তাপ ফিরে আসে আর পেটের মোচর কমে।
  • এক চা চামুচ সাদা পেঁয়াজের রস তার সঙ্গে মধু ,আদার রস ও ঘি এক চামুচ করে নিয়ে মিশিয়ে ২১ দিন ধরে রোজ সকালে খেলে পুরুষত্ব বৃদ্ধি পায়।
  • গরমের জন্য মাথা ব্যাথা করলে পেঁয়াজের টুকরো ‍নাকে শুকিয়ে দিলে আরাম হয়। পেঁয়াজ মিহি করে পিষে পায়ের তলায় ঘষলে ও আরাম পাওয়া যায়।
  • পেঁয়াজের রস দাদ ও চুলকানিতে লাগালে উপকার পাওয়া যায়।
  • পেঁয়াজের রস মাথায় লাগালে উকুন মরে যায়। সেদ্ধ করা পেঁয়াজের পুলটিস বাঁধলে কাচা ফোড়া পেকে যায়।
  • মাথার চুল পরে গেলে, চুলের বৃদ্ধি কমে গেলে বা অল্প বয়সে চুল পেকে গেলে পেঁয়াজের রসে মধু মিশিয়ে মাথায় মালিশ করুন।
  • মাথা ধরলে পেঁয়াজ থেতো করে কপালে লাগাবেন বা থেতো করা পেঁয়াজ খাবেন।
  • কানে ব্যাথা হলে পেঁয়াজের রস গরম করে কানে দু তিন ফোটা ফেলুন।
  • মেয়েদের মুর্চ্ছা বা হিস্টিরিয়ায় পেঁয়াজের রস শুকিয়ে দিলে সুফল পাওয়া যায়।
  • ঘুম না হলে রাতে নিয়মিত পেঁয়াজ খেতে হবে।
  • অর্শ রোগে পেঁয়াজ কুচিয়ে টক দই মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
  • টিউমার গ্লান্ডের জ্বলা বা গ্লান্ড ফোলায় পেঁয়াজ ভেজে মধুর সঙ্গে ভালো করে মিশিয়ে প্রলেপ দিলে উপকার পাওয়া যায়।
  • বিছে, বোলতা ও মৌমাছির কামরে পেঁয়াজ বেটে প্রলেপ লাগালে জ্বালা কমে।
পেঁয়াজের রসের অপকারিতাঃ প্রত্যেকটা খাবারের উপকারিতা ও থাকে আবার অপকারিতা ও থাকে ।
  • কাঁচা পেঁয়াজে প্রচুর পরিমানে ফাইবার ও গুলকোজ থাকে যা থাকার কারনে সকলের হজম হয় না। এতে গ্যাসের/ এ্যাসিডিটির সমস্যা হয়। যার ফলে শরীরের ক্ষতি হয়।
  • পেটের সমস্যা হলে কাঁচা পেঁয়াজ খাবেন না। কারন পেঁয়াজ আরো হজম শক্তি বাড়িয়ে দেয়। এতে পেটের সমস্যা আরো বেশী হবে।
  • মুখের স্বাদে বেশী করে পেঁয়াজ খেলে বুকের জ্বালা পোরা হবে।
  • কাঁচা পেঁয়াজ খেলে মুখের দুর্গন্ধ হয়।
  • যাদের শরীরে এলার্জি আছে তাদের কাঁচা পেঁয়াজ বা পেঁয়াজের রস খেলে বা মাথায় লাগালে এলার্জি বেশী হয়ে যায়।
  • পেঁয়াজ খাওয়ার জন্য মুখের দুর্গন্ধ হয় যার ফলে নামাজ হয় না।

কাঁচা পেঁয়াজ খাওয়া কি হারাম

কাঁচা পেয়াজ খাওয়া হারাম না। তবে মসজিদে যাওয়ার আগে কাঁচা পেঁয়াজ খাওয়া মাকরুহ। কারন সেই দুর্গন্ধে মানুষের কষ্ট হয়। মুসলমানদেরকে পরিষ্কার পরিচ্ছিন্ন হয়ে নামাজ আদায় করতে হবে। শরীরে দুর্গন্ধ বা মুখে দুর্গন্ধ নিয়ে নামাজ মাকরুহ হবে। পেঁয়াজ খেয়ে থাকলে ভালো ভাবে ব্রাশ করে মুখের দুর্গন্ধ দুর করতে হবে। কারন মহানবী (সা ) বলেছেন, পেঁয়াজ খেয়ে মখের দুর্গন্ধ দুর না করে যেন কেও মসজিদে নামাজ পড়তে না আসে।

পেঁয়াজ খেলে কি ওজন কমে

পেঁয়াজের মধ্যে প্রচুর পরিমানে ফাইবার ও গুলকোজ থাকে। আমাদের শরীরের জন্য ফাইবার খুবই প্রয়োজন। দুই কাপ পেঁয়াজে ৫ গ্রামের একটু বেশী ফাইবার থাকে।যার ফলে বেশী পরিমান পেঁয়াজ খেলেও বেশী ফাইবারের আশঙ্কা থাকে না। যাদের শরীরে সহ্য হবে। পেঁয়াজে ক্যালোরির মাত্রা কম থাকে।দুই কাপ পেঁয়াজে রয়েছে মাত্র ১২৮ গ্রাম ক্যালোরি।যার ফলে দ্রুত ওজন ঝরিয়ে ফেলে। পেঁয়াজে একটি উপাদান রয়েছে যার নাম কোয়াসেটিন। এই উপাদানের জন্য আমাদের শরীরের ওজন দ্রুত কমিয়ে দেয়।

পেঁয়াজের পুষ্টিগুনের তালিকা

পুষ্টি বিজ্ঞানীদের কথায় ১০০ গ্রাম কাঁচা পেঁয়াজে আছে-

কার্বোহাইড্রেট-                                 ১১.০ গ্রাম

লোহা-                                          ০৭ মিগ্রা.

প্রেটিন-                                            ১.২ গ্রাম

ক্যালসিয়াম-                                  ১৮০ মিগ্রা.

আঁশ-                                               ০.৬ গ্রাম

ফসফরাস-                                     ৫০ মিগ্রা.

রিবোফ্ল্যাবিন-                                   ০১ মিগ্রা.

থায়ামিন-                                        ০৮ মিগ্রা.

নিকোটিনিক অ্যাসিড-                       ০৪ মিগ্রা.

ভিটামিন-সি-                                    ১১ মিগ্রা.

লেখকের মতামত

পেঁয়াজ কেটে বাসি না করে টাটকা-টাটকাই খেয়ে নিয়া উচিত। পেঁয়াজকে বায়ুনাশক বলা হয়। কিন্তু রান্না করা পেঁয়াজ বায়ু কারক হয়ে যায়। কাঁচা পেঁয়াজ বায়ু সৃষ্টি করে না। অনেক ক্ষন ধরে পেঁয়াজ কেটে রাখলে পেঁয়াজের গুন নষ্ট হয়ে যায়।যে কোন খাবার অতিরোক্ত খাওয়া ভালো না। এই জন্য প্রত্যেক ‍দিন একটি করে মাঝারি মাপের পেঁয়াজ খাবেন যা আপনাদের শরীরের কোন খারাপ কারন হবে না।
আমার এই পোষ্টটি পড়ে আপনাদের ভালো লেগে থাকলে পরিচিতদের মধ্যে সেয়ার করবেন প্লিজ। কারন তারাও পরে উপকার পাবে।

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *