বিড়াল জায়নামাজে উঠলে কি নামাজ হবে বিস্তারিত জানুন
বিড়াল পালন সখের কাজ। অনেক মেয়ে- ছেলে আছে যারা সখ করে বিড়াল পালে। বাসা বাড়িতে বিড়াল পাললে অনেক সময় দেখা যায় বিড়াল নামাজ পড়ার জায়নামাজের উপর চলাফেরা করে বা শুয়ে থাকে। তখন অনেকেরই মনে প্রশ্ন আসে যে, বিড়াল জায়নামাজে উঠলে ঐজায়নামাজে নামাজ হবে কি।
ভৃমিকা
যে মানুষগুলো বিড়াল পালন করে রসুল( সাঃ) তাদের কে লক্ষ করে বলেন, তোমরা কখনোও বিড়ালকে খাবারের বা পানির কষ্ট দিও না। বিড়াল কে নিয়মিত খাবার ও জল দিতে হবে।এবং প্রত্যেক সপ্তাহে ২/৩ বার গোসল করে দিতে হবে। তাহলে বিড়ালের শরীরে যেগুলো(পেসাব, পায়খান) নাপাকি লেগে থাকে সেগুলো পরিস্কার হয়ে যাবে।
বিড়ালের প্রসাব কি নাপাক
সাধারনত বিড়ালের বাহিরের অংশ পবিত্র। যদি বিড়াল কোন খাবার পাত্রে মুখ দেয় তাহলে সেটা অপবিত্র হবে না। কারন এ ব্যাপারে অনেক হাদিস আছে। আমাদের নবীজে হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) ওজুর পাত্রে বিড়াল কে পানি পান করিয়েছেন এবং অবশিষ্ট পানি দিয়ে ওজু করেছেন। এবং নবীজি বলেছেন বিড়াল তোমাদের চারপাশে ঘোরা ফেরা করা একটা প্রাণী।
কিন্তু তার গোসত খাওয়া যাবেনা। কারন বিড়লের গোসত মুসলমানের জন্য হারাম। বিড়ালের গোসত যদি হারাম হয় তাহলে বিড়ালের পেসাব- পায়খানা কাপরে লাগলে নাপাক হয়ে যাবে। সাধরনত দেখুন, মানুষ ত পবিত্র জীব কিন্তু তার পেসাব - পায়খানা অপবিত্র। আর সব জীব-জনতুর পেসাব - পায়খানা নাপাক হয়।
পেসাব -পায়খানা কোনদিন পবিত্র হয় না। বিড়ালে যে পোষাকে পেসাব -পায়খানা করবে সে পোষাক ধৌত না করে সহীসুদ্ধ ভাবে নামাজ হবে না। এই জন্য নিঃসন্দেহে বলা যায় বিড়ালের পেসাব- পায়খানা নাপাক।
বিড়াল জায়নামাজে উঠলে কি নামাজ হবে
আমাদের নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন,বিড়াল নাপাক প্রাণী না। কিন্তু বিড়ালের গোসত হারাম। আর বিড়ালের পেসাব - পায়খানা নাপাক।বিড়াল জায়নামাজে উঠে শুয়ে থাকলে বা হাটাহাটি করলে ঐ জায়নামাজে নামাজ পড়া যাবে। কিন্তু যারা বিড়াল পালন করে তাদের কে সর্তক থাকতে হবে।কারন যদি জায়নামাজে উঠে পেসাব পায়খানা না করে দেয়।
অনেক সময় দেখা যায় বিড়াল নাপাকি বস্তুতে পা দিয়ে ঐ পা নিয়ে জায়নামাজে যেন না উঠে। এতে নাপাকি হওয়ার সম্ভবনা আছে। এছারাও নামাজ পড়ার সময় বিড়াল নামাজের সামনে দিয়ে চলাফেরা করলে নামাজে মনোযোগ নষ্ট হয়।তাই সম্ভব হলে বিড়ালকে ঘর থেকে বের করে দিয়ে দরজা লাগিয়ে নামাজ পড়তে হবে।
বিড়াল আচর দিলে কি হয়
যে ব্যক্তিরা সখ করে বিড়াল পালে তারা তো অবশ্যই বিড়ালের আচর বা কামর খেয়েই থাকে। কারন তারা পশু। ওদের মানুষের মতো বুদ্ধি নাই। তাদের কে নারাচারা করলে আচর বা কামর খাওয়াটা স্বাভাবিক। তবে আচর বা কামর খাওয়ার পর শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। যেমন,
- জলাতঙ্কা হতে পারে
- জোরে কামড়ালে ত্বকের নিচে রক্তনালী ,স্নায়ু ও পেশীর ক্ষতি হয়।
- যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে বা শরীর দুর্বল থাকে তাদের পান্তরেলা রোগ হতে পারে। যার ফলে হাটা চলা সমস্যা হয়। এবং গাট ফুলে যায়।
- ধনুস্টংকার হতে পারে।
- প্রাপ্ত বয়স্ক বিড়াল কামড়ালে সাংঘাতিক বিষ লাগে।
তবে আচর খাওয়ার পরে অনেকেউ আতংকে থাকেন। না জানি কি হয়। কিন্তু ভয় পাওয়ার কোন কারন নেই। এধরনের সমস্যায় পড়লে কি করবেন সে ব্যাপারে জেনে নিন।
বিড়াল কামরালে প্রাথমিক ও ডাক্তারি চিকিৎসা
- বিড়াল আচর মারলে বা কামড়ালে তেমন ক্ষত হয় না। সে ক্ষেত্রে ভয় পাবেন না। ক্ষত স্থানটি স্যাভলন পানি বা জীবানুনাশক দিয়ে ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করুন। কিন্তু ক্ষত জায়গা টা যদি বেশী হয় বা রক্ত বের হয় তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরমর্শ নিতে হবে।
- জলাতঙ্কের জীবানু দুর করার জন্য বেশী কাজ করে সাবানের পানি। ক্ষত হওয়ার পরপরই সাবান পানি দিয়ে ক্ষত জায়গাটি ভালো করে ধুয়ে ফেলুন।
- বেশী ক্ষত হলে ব্যাকটেরিয়া দুর করার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাবহার করুন। রক্ত পাত বন্ধ করার জন্য ব্যান্ড এইড বা গজ লাগাতে হবে।রক্ত বন্ধ হওয়ার পর ব্যান্ড এইড খুলে ফেলুন কারন বাতাস চলাচল করতে হবে।
- অনেক সময় বিড়ালের আচরে বাচ্চাদের গায়ে জ্বর চলে আসে। সেক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। জ্বর আসে জীবানুর কারনে। শরীরে ফুসকা পরে, জ্বর আসে, এবং পেট ব্যাথা করে এরকম লক্ষন দেখতে পেলে সাথে সাথে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবেন। তা না হলে বেশী সমস্যা দেখা দিতে পারে।
বিড়াল কত বছর বেঁচে থাকে
বিভিন্ন গবেষকরা গবেষনা করে দেখেছেন যে, একটি বিড়াল কত বছর বেঁচে থাকে। একটি বিড়াল সাধারনত ১৪/১৫ বছর বাঁচতে পারে। বিড়াল রা জন্ম হওয়ার পর তাড়াতাড়ি বাড়তে থাকে। কিন্তু বয়স হয়ে গেলে বিড়াল ধীরগতির হয়ে যায়।৪ থেকে ৭ বছরের মধ্যে বিড়ালদের শরীর খুব চাঙ্গা থাকে তারপর ধিরে ধিরে বয়স হয়ে গেলে ঝিমিয়ে যায়।
বিড়ালের অসুখ হলে কি করতে হবে
পোষা বিড়ালের অসুখ হলে, বিড়ালের কিছু লক্ষণ দেখে বুঝে নিতে হবে যে বিড়ালটি অসুস্থ্য হয়েছে।লক্ষণ গুলো হলো-
- খাবারের অরুচি হবে
- মুখের ভিতর থেকে গন্ধ বের হবেে
- আচরনের পরিবর্তন আসবে
- শরীরের ওজন কমে যাবে
- যেখানে সেখানে পায়খান -প্রসাব করে বেরাবে
- বিড়ালের গায়ের লোম গুলো এলোমেলো হয়ে থাকবে
- গলার কন্ঠ পরিবর্তন হয়ে যাবে
- অতিরোক্ত ঘুম পারবে
এসময় বিড়ালের রোগ বেশী দেখা দিলে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। আর বিড়ালের কিছু কিছু ভয়ানক রোগ হয় যা হলে বিড়াল মারাও যেতে পারে।তখন কোন ঔষুধ খাইয়েও ভালো হয় না। বিড়ালের অসুখ হওয়ার আগে বিড়ালকে ভ্যাকসিন দিতে হয়। ভ্যাকসিন অসুস্থ্য থাকায় দেওয়া যাবে না।পোষা বিড়ালকে সুস্থ্য রাখতে ভ্যাকসিন অবশ্যই দিতে হবে। এবং বাড়িতে চিকিৎসার পর ভালো না হলে পশু ডাক্তারের কাছে নিতে হবে। তাহলে রোগ ভালো হয়ে যাবে।
বিড়াল পায়ে ব্যাথা পেলে কি করা উচিত
বিড়াল পরে গিয়ে ব্যাথা পেলে বা অন্য কারনে ব্যাথা পেলে আক্রান্ত স্থানে বরফ দিয়ে সেক দিতে হবে। তবে কাটা জায়গাতে বরফ ঠেকানো যাবে না। ব্যাথা ভালো না হলে ব্যাথার ঔষুধ খাওয়াতে হবে।
বিড়ালের লোম থেকে কি কি রোগ হয়
প্রাণীর শরীর থেকে বিভিন্ন রোগ হয় মানুষের শরীরে। সেটা বিড়াল হোক বা কুকুর হোক। যে কোন প্রাণীর দেহ থেকে রোগ হতে পারে। তাই বিড়াল, কুকুর ইত্যাদি প্রাণীর শরীরে হাত দিলে হাত সাবন দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে। সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছিন্নতা অবলম্বন করতে হবে। আর গর্ভবতী নারীদের বিড়ালধরা থেকে সাবধান হতে হবে। বিড়াল বাহিত রোগ গুলো নিচে দেওয়া হলো-
ক্যাপনোসাইটোফাগা ক্যানিমোরসাসঃ এটি আছে বিড়াল বা কুকুরের মুখের লালাতে। এই মুখের লালা মানুষের গায়ে লাগলে কোন ক্ষতি হয় না কিন্তু এই লালা মানুষের পেটে গেলে বা বিড়াল -কুকুর কামর দিলে মৃত্যু ও হতে পারে। উপসর্গ গুলো হলো, শক, ব্লাড পয়জনিং, মেনিনজাইটিস,রেসপিরেটরি বা ডিসট্রেস।
এসব জিবানু থেকে মুক্ত থাকতে হলে কুকুর - বিড়ালে কামর দিলে সাথে সাথে এ্যানটিসেপটিক দিয়ে পরিষ্কার করে নিবেন। এবং প্রয়োজনে ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা নিবেন। আর বিড়ালের লোম পেটে গেলে তো কথায় নেই ডাইরেক ডায়রিয়া হবে।
শেষ কথা
বিড়ালের গা যদি ভেজা থাকে বা গায়ে কোন নাপাকি লেগে থাকে সেক্ষেত্রে নামাজের সামনে বা জায়নামাজে বিড়াল উঠলে জায়নামাজ নাপাক হবে। আর বিড়ালের গায়ে হাত দিলে েঐহাত ভালো করে ধুতে হবে। কারন অসুখ কারো পর না। সামান্য একটু ভুলের কারনে অনেক বড় বড় অসুখে ভুগতে হয়। সবাই ভালো থাকবেন। সুস্থ্য থাকুন সর্তক থাকুন।
msta2z.comব্লগের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url