শরীর সুস্থ রাখতে শাক-সবজি বিশেষ ভূমিকা সম্পর্কে জানুন | Msta2z

শরীর সুস্থ রাখতে শাক-সবজি বিশেষ ভূমিকা সম্পর্কে জানুন

 আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি পাওয়া যায় । এসব সবজি থেকে বিভিন্ন ভিটামিন পাওয়া যায় । তাই প্রতিদিন খাবারে বিভিন্ন ধরনের শাক - সবজির আইটেম থাকা খুবই প্রয়োজন। অপুষ্টি ও দেহের রোগ প্রতিরোধে শাক-সবজির ভূমিকা অপরিসীম। শাক-সবজি খেলে কি কি অসুখ থেকে রেহাই পাওয়া যায় তা নিচে আলোচনা করা হলো।

নানান স্বাস্থ্য সমস্যায় শাকসবজি কি কাজ করে পড়ে দেখুন

সূচিপত্রঃ নানান সমস্যায় শাক -সবজি

  • ডায়াবেটিসে
  • রক্তচাপ(ব্লাডপেসার )নিয়ন্ত্রনে
  • চোখের সমস্যায়
  • অম্বল গ্যাসে
  • হৃদ রোগ
  • হাত পা জ্বালায়
  • পাতলা পায়খানায়
  • আলসার
  • চর্মরোগ
  • সর্দি-কাশিতে
  • অনিদ্রায়

প্রসাবের সমস্যায়ডায়াবেটিসে

রক্তে চিনির পরিমান স্বাভিককের তুলনায় অধিক হলেই ডায়াবেটিস রোগ হয়। ইদানিং এই রোগের প্রকোপ সাংঘাতিক ভাবে বাড়ছে। কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ সবজি যেমন-বীট,আলু, রাঙা আলু, ওল, কচু, ও খামালু প্রভৃতি সবজি বেশি খাওয়া চলবে না। আবার তেলেকুচা, উ্চ্ছে -করলা, মেথির শাক, নিমপাতা, পলতে ও হেলেঞ্চার শাক হলো এই রোগের পক্ষে মহৌষধ।

 আবার ডায়াবেটিস রোগে সাদা রঙ্গের বেগুন খুবই উপকারি। এই রোগে আক্রান্ত রোগিকে থোর,মোচা, ঢ়াড়স, ডুমুর, পালং, মেথি, তমাল ও িগিমে শাক খেতে হবে। এছারা ও কাচা রসুন রক্তে সুগারের পরিমান কমিয়ে আনতে সক্ষম।

রক্তচাপ(ব্লাডপেসার) নিয়ন্ত্রণে

অধিক রক্তচাপ অর্থাৎহাই ব্লাডপেসার হল এখনকার সময়ে অন্যতম প্রধান স্বাস্থ্য সমস্যা। নানান কারনে হাই ব্লাডপেসার হতে পারে । পটাশিয়ামের রক্তচাপ কমানোর বানিয়ন্ত্রনের একটা ক্ষমতা রয়েছে ।পটাশিয়াম সমৃদ্ধ শাক-সবজি যেমনঃ আলু, কচু, ঢ্যাড়স,ঝিঙ্গে, উচ্ছে, বীট, গাজর, রাঙা আলু, মটরশুটি, পালং, বাধাকপি এবং নটেশাক।এগুলো নিয়মিত আহারের সঙ্গে খাওয়ার অভ্যাস করুন।

 দেখা গেছে শুষনি শাক ও সজনে পাতা সেদ্ধ ভাতে সঙ্গে খেলে দারুন উপকার পাওয়া যায়। সজনে পাতা সেদ্ধ পানি কিন্তু ফেলে দিবেন না । এছারাও কাচা রসুনের উচ্চ রক্তচাপ কমিয়ে আনার ক্ষমতা আছে । নিয়মিত এককোয়া করে কাচা রসুন ভাতের সঙ্গে খেলে এই রোগে উপকার পাওয়া যায়।

চোখের সমস্যায়

ভিটামিন -‘এ’চোখের জন্য খুবই গুরত্বপূর্ণ চোখের রেটিনার রড-কোষ গঠনের জন্য এই ভিটামিন খুবই প্রয়োজন । ভিটামিন-‘এ’ -এর অভাব থাকলে দৃষ্টি শক্তি হ্রাস এবং রাতকানা রোগ হয়। চোখের সমস্যার জন্য শিশুদের প্রথম থেকেই ভিটামিন -‘এ’ আছে এমন শাক-সবজি খেতে দিন ।

 আহারে এই সব সবজির ব্যাবস্থা রাখবেন । ভিটামিন এ পাবেন এমন সবজি গুলো হলো -গাজর, বাধাকপি, লেটুস, পালং, টমেটু, নেটে, মেথি, সজনে এবং সরষে শাক। দৃষ্টিশক্তি বাড়ানোর জন্য বথুয়া এবং ‍গিমার শাক দারুন উপকারি।

অম্বল গ্যাসে

অম্বল গ্যাসের সমস্যা এখন বাঙালির ঘরে ঘরে। আর এর প্রধান কারন নিয়ম মেনে না খাওয়া । আবার ঠিকমতো হজম না হওয়ায় এই সমস্যা তৈরী হয়। আহারে নিয়মিত কয়েকটি সবজি রাখলে অম্বল গ্যাসের সমস্যা অনেকটাই কমবে। থোর খাবেন। দেখবেন এতে হজম শক্তি বাড়বে। আবার আমরুল, গিমা, বথুয়া, পুুদিনা, ধুন্দল, পোটল, পলতে এবং কাকরোল প্রভৃতি সবজি খেলে অম্বর গ্যাসের প্রকোপ কমবে। সজনে পাতা সেদ্ধ গরম ভাতের সাথে মেখে খান । 

হাতে নাতে উপকার বুঝতে পারবেন। আবার ছোলাশাক সেদ্ধ করে বীট লবণ যোগ করে ভাতের সঙ্গে মেখে খেলে অম্বল ও বুকজ্বালা থাকবে না । অম্বল গ্যাস জনিত পেট ফাপায় দেখা গেছে সরশে ও থানকনির শাক বেশ কার্যকরি । কাচা শসা আহারের সঙ্গে খেলে অম্বর থাকবে না। এবং খাবার সহজে হজম ও হয়।




 

হৃদরোগ শাক-সবজি

এখনকার দিনে হৃদরোগ হলো মারাত্বক স্বাস্থ্য সমস্যা। পরিবেশ দূষণ কাজের ও মানসিক ঝামেলার জন্য টেনশন, উচ্চরক্তচাপ অনিয়ম করে খাওয়া েএবং ঘুম ঠিকমতো না হলে এটি হতে পারে । নিয়মিত সবজি সহ নিরামিষ খাওয়া অভ্যাস করলে হৃদরোগের প্রকোপ অনেকটাই কমবে । আপনি পুর্ণনবা, বাধাকপি, পালং ও পলতে প্রভৃতি শাক খাবেন ।

 এছারাও টমেটো, আলু, গাজর, বীট ও ওলকপি এবং কাচা রসুন পিয়াজ খাবেন। দেখবেন এতে হৃদপিন্ড সুস্থ্য ও সচল থাকবে এবং হার্টএ্যাটাকের সম্ভবনা কমে যাবে। আবার বিরমী শাক, খেলে এর মধ্যে “ব্রাক্ষীন্” নামক ভেষজ অ্যালকালয়েড থাকার জন্য হৃৎপিন্ডে শক্তি যোগায় এবং একে কর্মক্ষম রাখে।
হাত -পা জ্বালায় ঃহাত ও পায়ের জ্বালা কমাতে আপনি হেলেঞ্চা, বথুয়া , ও তেলা কুচার শাক ভাতের সঙ্গে মেখে খাবেন । দেখবেন এতে উপকার পাবেন।

পাতলা পায়খানায়

পাতলা পায়খানা হলো পেটের সমস্যা । এসময়ে আপনাকে খাবার বিষয়ে সাবধান হতে হবে। পাতলা পায়খানা এবং পেটের গন্ডগোল হলেই নটে, বাধাকপি, বথুয়া, মেথি, গাঁদাল, ‍থানকুনি, কাচা পেঁপে ও কাচাকলা প্রভৃতি সবজি সিদ্ধ অথবা ঝোল করে খাবেন । সজনে পাতার ঝোল এই রোগে বেশ কার্যকরি।

আলসারে

আলসার হলো একটা ক্ষতি কারক রোগ। পেটে আলসারের প্রধান কারন হলো গ্যাসট্রিক এসিডের অধিক ক্ষরন,যা পচনের কাজে ব্যাঘাত ঘটায়। আজকাল অনেকেই এই রোগে ভোগেন। চিকিৎসার সঙ্গে সঙ্গে খাওয়া দাওয়া ঠিকমতো মেনে করলেই এর হাত থেকে রেহাই পাওয়া অসম্ভব নয়। আপনি আহারে নিয়মিত ভাবে লাউ, চালকুমরা, কাচাপেপে ,কাচাকলা ,মিষ্টি আলু পাকা কাকরোল প্রভৃতি সবজি খাবেন।

 দেখবেন এতে উপকার পাবেন। কাঁচাপেপের মধ্যে থাকা সাদা দুধের মতো আঠায় থাকা প্যাপেন উৎসেচক হলো হজম সহায়ক এবং আলসার সরাতে সক্ষম। এছারা খাবার সময় এককোয়া কাচা রসুন খাবেন কারন এটি অন্ত্রে আলসার সরাতে বেশ কার্যকরি।আলসার হলে কয়েকটি লক্ষণ দেখা দেয় ।লক্ষণ গুলো নিচে দেওয়া হলো 
  • বদ হজম
  • বমি বমি ভাব
  • খাবারে অরুচি
  • বুকে জ্বালাপোরা
  • ওজন কমে যাওয়া
  • এই সব লক্ষণ দেখা দিলে তাড়া তাড়ি ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে রোগির চিকিৎসা করতে হবে।

চর্মরোগে

চর্মরোগ হলো ত্বক সংক্রান্ত স্বাস্থ্য সমস্যা । নানান কারনে এটি হতে পারে । তবে ত্বক পরিস্কার এবং রক্ত পরিশোধনের জন্য সবজি বেশ উপকারে লাগে এবং চর্মরোগের আক্রমন প্রতিরোাধ করতে পারে । মেথিশাক,নুনিয়াশাক , কুলেখারা, নটে, নিমপাতা, হেলেঞ্চা, পলতে ,উচ্ছে এবং প্রভৃতি সবজি খেলে চর্মরোগের বিরুদ্ধে দেহের ভিতরে একটা প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরী হয়। খোসা-চুলকানি সারাতে নিমপাতা ভাজা , কাচা রসুন, এবং হেলেঞ্চা ও নটেশাক বেশ কার্যকরি।
চর্ম রোগের লক্ষণ গুলো নিচে দেওয়া হলো
  • আক্রান্ত স্থানে সবসময় চুলকাতে থাকবে
  • চুলকাতে চুলকাতে চামরা উঠে যাবে
  • ফুসকুরি গুলোতে পুজ এবং পানি জমে যায়
  • বেশি চুলকালে পুজ বা রক্ত ছরিয়ে পরে
  • বেশি চুলকানি হলে তাড়াতাড়ি ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে ।

সর্দি-কাশিতে

সর্দি-কাশি হলো এখনকারি দিনে এক সাধারন স্বাস্থ্য সমস্যা । বেশ কিছু শাক-সবজি এ রোগ প্রতিরোধে কার্যকর ভৃমিকা পালন করে। শিুশুদের বুকে জমে থাকা সর্দি কমাতে গরম ভাতের সঙ্গে আমরুল শাক খেলে উপকার পাবেন। সর্দির জন্য পুই শাক ও সমান কার্যকরি। সর্দি ও কাশির মতো রোগের জন্য থানকুনি, মেতি, হেলেঞ্চা, বেশ উপকারি এটা আজ প্রমানিত। শ্বাসকষ্ট ও বুকে জমে থাকা সর্দিকমাতে রাঙা আলু এবং বাধাকপি ও ব্রাক্ষীশাক বিশেষ কার্যকরি ভৃমিকা পালন করে।

সর্দি-কাশি হলে কিছু করনীয় কাজ আছে ।যেগুলো নিচে দেওয়া হলো 
  • বেশী কাশি হলে ঔষুধ খেতে হবে
  • শরীর সবসময় গরম রাখতে হবে
  • ফ্রিজের ঠান্ডা পানি খাওয়া যাবে না
  • পানিতে লবণ দিয়ে গরম করে গড়গড়া করে নিন
  • প্রচুর পরিমানে কুসুম গড়ম পানি পান করুন

অনিদ্রায় 

ঠিকমতো ঘুম না হওয়া হলো এক ধরনের সমস্যা । এটি যেমন অসহনীয় তেমন ক্ষতিকারক ও বটে । যাদের ঠিকমতো ঘুম হয় না তাদের দৈনিক আহারে সেলারি, নুনিয়া, ও সুষনি প্রভৃতি শাক খান ।

প্রসাবের সমস্যায়

প্রসাব নিয়মিত ভাবে তৈরী ও নিঃসরণ না হওয়া হলো একটি মারাত্বক সমস্যা । এই সমস্যা থেকে নানান রোগ ও হতে পারে । শাক - সবজির মধ্যে পুঁই ,নুনিয়া, লেটুস, সরষে ,বথুয়া ,আমরুল ,ঢ্যারস ,আলু, প্রভৃতি নিয়মিত খেলে প্রসাব তৈরি এবং নিঃসরন ঠিকমতো হবে। প্রসাবের পরিমানও বাড়বে।
প্রসাবের সমস্যা হলে কয়েক টি লক্ষণ দেখা দেয় তা নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
  • প্রসাবের সময় জ্বালা পোড়া হবে
  • ঘন ঘন প্রসাব হবে
  • পেটে ব্যাথা হবে
  • প্রসাবের বেগে প্রসাব ধরে রাখতে পারবে না
  • প্রসাবের সাথে হালকা রক্ত বের হবে
  • দিনে ৭ থেকে ৮ বার পেসাব হব

লিউকোরিয়ায়

লিউকোরিয়ায় বা সাদা স্রাব হলো মেয়েদের একটি স্বাস্থ্য সমস্যা । এই রোগে শরীর দুর্বল হয়ে যায় ,মেজাজ খিটখিটে হয় এবং দেহে রক্তাল্পতা দেখা যায়। রোগের শুরুতেই কাচা কলা, থোরা , মাচা,এবং মেথি ও কুলেখারার শাক খাওয়া অভ্যাস করলে এই রোগ সরানো যাবে।
বিভিন্ন কারনে এই রোগ হয়ে থাকে। তা নিচে কয়েক টি বিষয় দেওয়া হলোঃ
  • শরীর দুর্বল থাকলে এই রোগ হয়
  • শরীরে বিভিন্ন ধরনের ক্যালসিয়ামের অভাবে এই রোগ হতে পারে
  • কিডনি দুর্বল হলে এই রোগ হয়
  • পেটের ব্যাথা বা পেটে আঘাত লাগলে এই ধরনের সমস্যা দেখা দেয়
  • আরো ইত্যাদি কারনে লিউকোরিয়া রোগ হতে পারে

 

ক্ষিদে বাড়ানো

সময়ে ক্ষিদে না পাওয়া এমনকি খাবারে অরুচি হলো আর এক স্বাস্থ্য সমস্যা । ইদানিং এটির উপদ্রুপ বেড়েছে । দেখা গেছে দৈনিক আহারে কয়েক টি নির্দিষ্ট সবজি খেলে এই সমস্যা বেশ কিছুটা কমে যাবে । পলতে ,পুদিনা, মেথি শাক, নিমপাতা, তেলেকুচার পাতা, বথুয়া,গাদাল, সজনে ও মুলো শাক খেলে আহারে অরুচি দুর হবে এবং ‍খিদে বাড়বে। এছাড়াও উচ্ছে ,থোরা কাচা কুমরো এবং খেসারি শাক খেলে খিদে বাড়ে।

সবজি ব্যাবহার বিষয়ে সতর্কতা

১। পানিতে ভিজানো সবজি খুব তাড়াতাড়ি পচে নষ্ট হয়ে যায়। অকারনে সবজি ফেলে রেখে শুকাবেন না । কারন এতে সবজির খাদ্য গুন নষ্ট হয়ে যায় ।
২। সবজি কখনো কাটার পর ধুবেন না । তবে কাটা র আগে ভালো মতন ধুয়ে তবেই কাটবেন। তাতে সবাজির মধ্যে থাকা পুষ্টি বা খাদ্যোপাদান গুলি বের হয়ে রান্না তরকারিতে চলে আসবে।
৩। কাটা সবজি বেশি ক্ষন পানিতে ভিজিয়ে রাখবেন না।
৪। সবাজি খুব ছোট করে কাটবেন না । কারন এর ফলে সবজি বেশি করে অক্যিজেন সংস্পর্শে আসবে এবং ভিটামিনের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যাবে।
৫। রান্নার সময় সেদ্ধকরা সবজির পানি ফেলে দিবেন না
৬। সবজি খাবারের কাগজ বা পাতলা পলিথিনের প্যাকেটে জরিয়ে বা ঢুকিয়ে মুখ বেধে ‍দিন। এতে সবজি টাটকা থাকবে । তবে কখনোই শাক পাতা বা অধিক জলিয় অংশ আছে এমনসব সবজি সংরক্ষন করবেন না ।

শেষ কথা

ফল-সবজি অবশ্য শরিরের পক্ষে যতটা প্রয়োজন ততটা ক্যালশিয়াম যোগাতে পারে না। সেই জন্য ফল -সবজির সঙ্গে সঙ্গে দুধ, দই, ছানা , ও দুগ্ধজাত অন্যান্য খাবার ও খেতে হবে ।
তার পাশাপাশি অবশ্যাই প্রতিদিন আহারের সময় শাক - সবজি খেতে হবে ।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

msta2z.comব্লগের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url