প্রবাসে যাওয়ার কিছু প্রযোজনীয় তথ্য ও চুক্তিনামা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
বিদেশে যাওয়ার চুক্তিপত্র বা কন্টাক্ট ফরম থেকে আপনি আপনার দরকারি তথ্যগুলো জেনে নিতে পারেন। এ ব্যাপারে অন্য কারো সাহায্য নিতে পারেন অথবা দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ করে চুক্তিপত্র থেকে নিম্নলিখিত তথ্যগুলো জেনে নিন। কর্মজীবী হয়ে আপনি বিদেশ যাওয়ার আগে চাকরির চুক্তিপত্র হাতে পাওয়ার পর তা আসল না নকল তা অবশ্যই পরিক্ষা করতে হবে।
কন্টাক ফরম বা চুক্তিপত্র ছারাই আপনি কোন চাকরিতে যোগদান করলে নিয়োগকারী আপনাকে নিয়মের বাইরে কোন কাজ দিলে আপনি কোন আইনগত ব্যাবস্থা নিতে পারবেন না।
ভৃমিকা
চুক্তিপত্র সঠিক ঠিক না ভুল তা আপনি চেক করে নিতে পারবেন। এবং বাংলাদের দূতাবাস থেকে তা সত্যায়িত করতে হয়।আপনি যে এজেন্সির মাধ্যমে বিদেশ যাবেন বা চাকরি পাবেন তারাই আপনাকে চুক্তিপত্র পাওয়ার ব্যাবস্থা করে দিবেন। চুক্তিপত্র কোথায় চেকিং করা হয় তার যোগাযোগের ঠিকানা হলো- বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অফ ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি অফিস।
বিদেশে যাওয়ার কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য
বর্তমানে সময়ে বাংলাদেশে বেকারত্বের সমস্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এই বেকার জীবন থেকে বাচার জন্য অনেকেই বিদেশে গমন করছে। কিন্তু বিদেশে যাওয়ার আগে কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য আছে তা আপনাদের কে অবশ্যই জানতে হবে। আমার মনে হয় তথ্য গুলা জেনে বিদেশ গেলে আপনাদের জন্য অনেক সুবিধা হবে। তথ্য গুলো নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ
আপনাদের করনীয়
- বিদেশ যাওয়ার পথে যা করতে হবে তার একটি তালিকা তৈরি করবেন।
- যে ব্যাগটি বিমানে নিজের সাথে রাখবেন সেখানে টাকা পয়সা গহনা ভ্রমণ ও চাকরি সংক্রান্ত কাগজপত্র রাখবেন।
- যে ব্যক্তি বিমানে নিজের সাথে রাখতে পারবেন না সেব্যাক ওজন করবেন এবং ২০ কেজি ওজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখবেন।
- ভ্রমণের জন্য হালকা কিন্তু শক্ত উপাদান দিয়ে তৈরি এবং ভালো তালার ব্যবস্থা সহ ব্যাগ কিনবেন।
- প্রতিটি ব্যাগের নাম ঠিকানা ও ফোন নাম্বার লিখে রাখবেন যেন ব্যাগ হারিয়ে গেলে এয়ার লাইসেন্স এর পক্ষে দ্রুত যোগাযোগ করা সম্ভব হয়।
আপনেরা যা করবেন না
- যে ব্যাগ লাগেজ হিসাব হিসাবে দিয়ে দেবেন সেখানে টাকা -পয়সা, গহনা, ভ্রমণ ও চাকুরী সংক্রান্ত কাগজপত্র এবং অন্যান্য মূল্যবান জিনিস রাখবেন না।
- অপরিচিত ব্যক্তির দেয়া কোন জিনিসই রাখবেন না।
- কখনো ধারালো কোন বস্তু যেমন ব্লেড,কেচি, চুরি ইত্যাদি ক্যারি অন বা হাতব্যাগে রাখবেন না এরকম বস্তু সিকিউরিটি চেকের সময় ধরা পড়ে এবং ফেলে দেয়া হয়।
নিষিদ্ধ কোন জিনিস ব্যাগে নেয়া যাবে না যেমন
- অগ্নিস্ত্র ও বিস্ফোরক জাতীয় পদার্থ।
- নিষিদ্ধ মাদক ও ড্রাগ।
- আগুন ধরে এমন তরল পদার্থ যেমন (লাইটার)।
- দুর্গন্ধ বের হয় এমন পদার্থ।
- বন্যপ্রাণী মাছ ও খাবার।
- মাংস, দুধ, ডিম, ও অন্যান্য পোলটি জাতীয় খাবার, ফুল- ফল, সবজি, পান, গুল, সাদা পাতা ইত্যাদি
- অরুচি কর ছবি সম্পন্ন বই বা পন্য পত্রিকা।
ব্যাগেজ রুল ( বিধিমালা) অনুযায়ী অভিবাসী কর্মীরা দেশ তাগের সময় অথবা বিদেশ থেকে ফেরার সময় দু'ধরনের দ্রাব্য বহন করতে পারবেন, যেমন- ১. শুল্কমুক্ত ২. শুল্ক সাপেক্ষে।
- বিদেশ যাওয়ার সময় কোন ব্যক্তি বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫০০ টাকার বেশি মুদ্রা নিতে পারবেন না। তার ব্যাগেজ ২০ কেজির বেশি হলে আলাদা চার্জ দিতে হবে তবে কোনক্রমে ৬৫ কেজির বেশি হতে পারবেনা। পেশাগত এবং কাজের সাথে যুক্ত নয় এমন কিংবা বিদেশে বিক্রির জন্য কোন সামগ্রিক বহন করা যাবে না।
- যেসব ব্যাগেজ নিজের হাতে রাখবেন না সেগুলো বিমানবন্দরে স্ক্যানিং করে এয়ার লাইসেন্সের কাউন্টারে দিতে হবে।
- ল্যান্ডিং কার্ড থেকে বহনযোগ্য সামগ্রিক তালিকা সংগ্রহ করুন।
শুল্ক মুক্ত সামগ্রী
- পরিধেবস্ত্র, হাত ব্যাগ ও ভ্রমণ সামগ্রী।
- বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সার্কুলার অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণ অলংকার।
- ব্যবহার্য প্রসাধন সামগ্রী চশমা ও ব্যবহার্য ফিজিক্যাল এইড ও একটি হুইলচেয়ার।
- ছেলে মেয়েদের ব্যবহার্য পরিমিত পরিমাণ খেলনা ও একটি বহনযোগ্য কট।
- পরিমিত খাদ্য সামগ্রী ক্যামেরা এবং অন্যান্য বহনযোগ্য ব্যক্তিগত ব্যবহারী যন্ত্রপাতি।
- রপ্তানি ছাড়পত্রের আওতায় ব্যক্তিগত ও গৃহস্থালির সামগ্রী প্রয়োজনীয় পাসপোর্ট, ভিসা, টিকিট এবং জনশক্তি।
এয়ার পোর্টে যাওয়ার জন্য যা করতে হবে
- প্রয়োজনীয় পাসপোর্ট, ভিসা, টিকিট এবং জনশক্তি ব্যুরোর ছাড়পত্র সহ ফ্লাইট এর তিন ঘন্টা পূর্বে বিমানবন্দরে উপস্থিত হতে হবে।
- এইজন্য আগে থেকে আপনার বাসা বা যেখান থেকে এয়ারপোর্ট যাবেন সেখানকার যানজট ও ভ্রমণ সময় চিন্তা করে রাখুন।
- বেশি দেরি করলে আপনার সিট রিজার্ভেশন বাতিল হতে পারে।
- বোডিং শুরু হওয়ার এক ঘন্টা আগে চেক ইন কাউন্টার বন্ধ হয়ে যায়।
- কোন কোন এয়ারপোর্টে পোটার বা মাল বহনকারী থাকে। এই জন্য আপনাকে ফি দিতে হতে পারে শুধুমাত্র ইউনিফর্ম পরিহিত পার্টোর ব্যবহার করুন।
এয়াললাইন্স কাউন্টারে চেক করার নিয়ম
- আপনি যে এয়ারলাইন্সের মাধ্যমে যাচ্ছেন তাদের কাউন্টারে গিয়ে আপনার টিকিট, ভিসা ও পাসপোর্ট দিন।
- আপনার হাতে হাত ব্যাগ বা ক্যারি অন ব্যাগ ছাড়া অন্যান্য ব্যাগ এখানে চেক ইন করা হবে।
- চেক ইন ব্যাগে একটি ব্যাগেজ স্ট্যাম্প লাগাতে হবে এবং এর একটি অংশ আপনার টিকিটে লাগানো হবে গন্তব্যে পৌঁছে ব্যাগেজ স্টেপ নাম্বার মিলিয়ে তা বুঝে নিতে হবে। আপনার ব্যাগ হারিয়ে গেলে ব্যাগেজ স্ট্যাম্প সহ এয়ার লাইসেন্স এ অভিযোগ করতে পারবেন।
- আপনাকে একটি বোডিং কার্ড দেয়া হবে যেখানে আপনার সিট নাম্বার ও বই গেট নাম্বার দেয়া থাকে। ডিপা স্যার গেট নাম্বার দেয়া না থাকলে পরে মাইকে ঘোষণা দেয়া হবে ও টেলিভিশন স্কিন ও বোর্ডিং ফ্লাইট নাম্বার সহ ডিপারচার গেটের নাম্বার প্লেন ছাড়ার এক ঘন্টা আগে দেয়া হয়।
- check in counter এ আপনাকে এম্বারকেসন- কার্ড দেয়া হবে। না দিলে আপনি অবশ্যই তা চেয়ে নিন। পূর্বেই এমবারকেশন কার্ড পূরণ করে রাখুন।
ইমিগ্রেশন কাউন্টার
- ইমিগ্রেশন কাউন্টারে প্রার্থীর পাসপোর্ট, ভিসা, জনশক্তি ব্যুরোর ছাড়পত্র ইত্যাদি পরীক্ষা করে সঠিক থাকলে পাসপোর্ট সিলমোহর করে প্রার্থীকে ভেতরে প্রবেশ করার অনুমতি দেয়া হয় এবং পূর্বে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।
- যদি বোডিং কার্ডে ডিপার্চর গেট নাম্বার দেয়া না থাকে তাহলে বিমানবন্দরের বড় ইস্কিন বা ছোট টিভ স্ক্রিন থেকে তথ্য সংগ্রহ করে ডিপারচার লাউঞ্জে গিয়ে অপেক্ষা করুন। প্রয়োজনে ডিউটি অফিসার কে জিজ্ঞাসা করুন।
বোডিং-কার্ডঃ বর্তমানে অরোহনের পূর্বে ইংরেজিতে ও বাংলায় মাইক্রোফোনে ঘোষণা করা হয় এবং ডিসপ্লে বোর্ড ও টেলিভিশন মনিটরে দেখানো হয়। ঘোষণার পরই বোর্ডিং- কার্ড হাতে নিয়ে বিমানের দিকে অগ্রসর হতে হয়। বিমান বন্দরে কোন অসুবিধার সম্মুখীন হলে সেখানে অবস্থিত প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের কর্মকর্তাদের সহযোগিতা নিতে পারেন।
বসার জায়গাঃ সিট নাম্বার মিলিয়ে বসুন। দরকার হলে কেবিন ক্রু, বিমানবালা, এয়ার হোস্টেস এর সাহায্য নিন।
খাবার ও পানীয়ঃ প্লেনে দেয়া খাবার ও পানীয় দাম টিকিটের সাথে নেয়া থাকে। চব্বিশ ঘন্টা আগে থেকে এয়ারলাইন্সকে জানিয়ে রাখলে শিশু, বৃদ্ধ, ডায়াবেটিক রোগী বা অন্যান্য সমস্যার জন্য বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করা হয়।
ধূমপানঃ আন্তর্জাতিক প্লেনে ও এয়ারপোর্টে ধূমপান নিষিদ্ধ। তবে অনেক এয়ারপোর্টে কিছু জায়গা ঠিক করা থাকে যেখানে ধূমপান করা যায়। আর প্লেনে কোন অবস্থাতেই ধূমপান করা উচিত হবে না।
বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিঃ প্লেনে মোবাইল ফোন ও ট্রানজিস্টার রেডিও ব্যবহার নিষেধ তবে ল্যাপটপ, কম্পিউটার, ক্যালকুলেটর, ইলেকট্রিক ঘড়ি ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে।
টয়লেট্রিজঃ প্লেনে দূর যাত্রার ক্ষেত্রে আপনার জন্য টুথপেস্ট, টুথব্রাস, সাবান, টিস্যু, টয়লেট পেপার দেয়া হয়।
বিদেশে পৌছে বিমানবন্দরে করনীয়
প্লেনে ইমিগ্রেশন ডিস এমবারকেশন ফ্রম ও কাস্টমস ডিক্লারেশন ফ্রম দেয়া হবে পূরণ করে রাখুন।
ইমিগ্রেশনঃ ইমেগ্রেশন সামনের লাইন দিয়ে দাঁড়ান। আপনার পাসপোর্ট, ভিসা, ইমিগ্রেশন / ডিস অ্যাম্বারকেসন ও কাস্টমস ফ্রম সহ তৈরি করুন । অফিসার আপনার পাসপোর্টে ওই দেশে গমনের তারিখসহ সিল দিয়ে দেবে।
ব্যাগ সংগ্রহঃ ইমিগ্রেশন এর পর ব্যাগে সংগ্রহের জন্য কনভেয়ার বেল্ট এর সামনে দাঁড়ান। কনভেয়ার বেল্ট এর উপর আপনার ফ্লাইট নাম্বার দেয়া থাকবে সেটা খেয়াল করুন।
ব্যাগ হারানোঃ বেল্টে ব্যাগ না পাওয়া গেলে বা ব্যাগ হারিয়ে গেলে সাথে সাথে এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষকে জানান এবংকে্লইম ফরম পূরণ করুন প্রয়োজনের তথ্য কেন্দ্রের সহায়তা নিন। এয়ারলাইন্স আপনার ব্যাগ খুঁজে বের করে আপনার চূড়ান্ত গন্তব্যে যোগাযোগ করবে ।আপনার হারানো ব্যাগ আপনাকে পৌঁছে দেয়া হবে। না পাওয়া গেলে টিকেটে উল্লেখিত নীতিমালা অনুযায়ী আপনাকে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে।
কাস্টমসঃ আপনার কাস্টমস ডিক্লারেশন ফ্রম নিন কাস্টমস অফিসার চাইলে ব্যাগ খুলে দেখান।
বিদেশে যাওয়ার চুক্তিপত্র
বিদেশ যাওয়ার আগে বাংলাদেশ দূতাবাশের সাথে যোগাযোগ করে চু্ক্তিপত্রে নিম্ন লিখিত তথ্য গুলো জেনে নিন। চুক্তিপত্রে কি কি তথ্য থাকে তা নিচে আলোচনা করা হলো।
- চাকুরির নাম (Job title)
- কোম্পানি বা চাকরিদাতা নাম ঠিকানা সহ।
- কর্মক্ষেত্র।
- চাকরির সময়সীমা।
- মাসিক বেতন।
- নিয়মিত কর্ম ঘন্টা এবং সাপ্তাহিক ছুটি।
- ওভারটাইম।
- বাৎসরিক ছুটি।
- বেতন সহ ছুটি ও বেতন ছাড়া ছুটি।
- অসুস্থতার ছুটি।
- মেডিকেল বা স্বাস্থ্য সেবার সুবিধা।
- কর্মক্ষেত্র সম্পর্কিত অসুস্থতা বা মৃত্যুর জন্য ক্ষতিপূরণের অংক।
- যাতায়াত ভাড়া।
- খাবার ভাতা।
- বাসস্থান ভাতা।
- মৃত্যু হলে লাশ দেশ দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা ইত্যাদি।
শেষ কথা
প্রবাস জীবনের কাজের ধরন ও কর্মপরিবেশ বিভিন্ন রকম হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রেই কাজের প্রকৃতি বেশ কঠিন হতে পারে আবার সহজ ধরনের কাজও হতে পারে। বড় বড় কোম্পানিতে কাজের একটা নিয়ম তান্ত্রিক পদ্ধতি থাকে তাই যাবার পূর্বে ঠিক কোন ধরনের কাজ করতে হবে সে সম্পর্কে সঠিক ধারণা নিয়ে যাওয়া দরকার।
বিদেশে কাজের পরিবেশ বিভিন্ন হওয়ার কারণে কাজের ভিন্ন প্রকৃতিকে কখনো কখনো খাপ খাইয়ে নিতে হয়। মাঝেমধ্যে এক ধরনের কাজের জন্য নিয়ে অন্য কাজ করতে দেয়া হয়। এ ব্যাপারেও নিজের মানসিক প্রস্তুতি রাখা ভালো। সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির কাজ অথবা চরম কষ্টকর কাজ করতে বাধ্য করলে আইনের আশ্রয় নিতে হবে।
অনেক কাজ খোলা আকাশের নিচে করতে হয় যেমন contraction কাজ, কৃষি কাজ, রাস্তা পরিষ্কার, এ সকল কাজ প্রচন্ড গরম অথবা শীতের মধ্যে করতে হতে পারে।প্রিয় পাঠক আমার এই পোষ্টটি পড়ে আপনেরা উপকৃত হলে অন্যদের সেয়ার করুন। কারন তারাও পোষ্টটি পরে উপকৃত হবে।
msta2z.comব্লগের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url