বেগম রোকেয়ার সংক্ষিপ্ত জীবনি সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
টাকানারী জাগরনের অগ্রানী বীর যোদ্ধা বেগম রোকেয়া সাখওয়াত হোসেন ।যাকে বাঙ্গালী নারী জাগরনের অগ্রদূত ও বলা হয়ে থাকে । তিন ছিলেন একজন সুশিক্ষিত নারী । বেগম রোকেয়ার সংক্ষিপ্ত জীবন কাহিনী ইতিহাসের পাতায় আজও জ্বল জ্বল করে তাকিয়ে আছে । তিনি আমাদের সমাজে নারী জাগরনের জন্য প্রাণ পণ চেষ্টা করে গেছেন । এই জন্য বেগম রোকেয়াকে উপাধি দেওয়া হয়েছে মুসলিম নারী জাগরণের অগ্রদুত। তিনি আমাদের সমাজের জন্য এক গর্বিত নারী।
সেকালে মেয়েদের না ছিল লেখাপড়ারর অধিকার না ছিল বাইরে কোথাও বেরোবার স্বাধীনতা । সামাজিক বিধিনিষেধের কারনে মেয়েরা লেখাপড়া করতে পারত না । মেয়েদের বিয়ে দেওয়া হতো খুবঅল্প বয়সে ।
ভৃমিকা
মুসলমান মেয়েদের তখন স্কুলে যেতে দিতেন না অভিভাবকরা । বেগম রোকয়ো বলেছেন, গরুর গাড়ীর চাক দুটো থাকে । গাড়ি চলতে হলে চাকা দুটোকে সমান হতে হবে। একটা ছোট হলে একটা বড় হলে সেই গাড়ির চাকা চলবে না । সেরকমই হলো মেয়ে আর ছেলে । প্রচুর চেষ্টা ও কষ্টের ফলে বেগম রোকেয়া সাখওয়াত হোসেন মেয়ে ও ছেলের ভেদাভেদের অবস্থান টা পাল্টাতে পেড়েছে ।
বেগম রোকেয়ার উপাধি কি
রোকেয়া সাখওয়াত হোসেন সাধারনত বেগম রোকেয়া নামে পরিচত । তিনি বাংলার সমাজে নারী জাগরনের জন্য যতেষ্ট চেষ্টা করেছেন । এই জন্য বেগম রোকেয়ার উপাধি দেওয়া হয়েছে মুসলিম নারী জাগরনের অগ্রদুত । বেগম রোকেয়া চেয়েছিলেন সামাজে নারীদের মুক্তি,নারীদের সমাজে শিক্ষা বিস্তার এবং সর্বঙ্গনী উন্নতি।
বেগম রোকেয়া প্রতিটি নারীদের কথা চিন্তা করে পিতৃতান্ত্রিক সমাজে নারীদের বিশেষ অবস্থান ফুটিয়ে তুলেছেন ।নিজে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ না পেলেও তিনি অন্য নারীদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ করে দিয়ে গেছেন । বেগম রোকেয়ার এসব অবদানের জন্য তাকে নারী জাগরনের হাতিয়ার হিসাবে গণ্য করা হয়েছে।
বেগম রোকেয়ার সংক্ষিপ্ত জীবনি
শুধু মেয়ে হবার কারনে রোকেয়াকে এভাবেই কাটাতে হতো বন্দি জীবন । সেকালে মেয়েদের লেখাপড়ার চল ছিল না । লেখা পড়াটা ছিল আরেক যুদ্ধ । রাত গভীর হলে ভাইয়ের কাছে শুরু হতো তার জ্ঞান অর্জন । বাবা - মা তখন গভীর ঘুমে । সারা বাড়ি নিঝুম । মোম বাতি জ্বালিয়ে রোকেয়া বই খুলে বসেছেন । এই বই সেই বই থেকে ভাই সাবের তাকে পাঠ দিচ্ছেন ।
জ্ঞানের জন্য তৃষ্ণার্ত বোন রোকেয়া শিখছেন কত কিছু । রাতের পর রাত এভাবেই কেটে গেছে । কখনো কখনো পড়তে পড়তে ভোর হয়ে গেছে । লুকিয়ে লুকিয়ে এভাবেই পড়া শিখেছেন রোকেয়া। রোকেয়ার কোথাও যাবার অনুমতি নেই । ঘরের বাইরে তো দুরের কথা , কারো সামনে যাওয়াও নিষেধ ।এমনকি সে যদি মেয়ে হয় তার সামনেও যাওয়া নিষেধ ছিল তার ।
রোকেয়ার বন্দি জীবন
রোকেয়ার বয়স তখন পাাঁচ বছর । চার দেয়ালের মধ্যে বন্দি রোকেয়ার তো খুশি হবার কথা । কিন্তু তাকে কখনো চিলেকোঠায় , কখনো সিড়ির নিচে , কখনো দরজার আড়ালে লুকিয়ে থাকতে হতো । একেই বলে অবরোধ প্রথা । অবরোধ মানে বাড়ির নিদিষ্ট গন্ডির মধ্যে আটকিয়ে থাকা শুধু মেয়ে হবার কারনে রোকেয়ার এভাবে কাটাতে হতো বন্দি জীবন । সেকালে মেয়েদের লেখা পড়ার ও চল ছিল না ।
রোকেয়ার সাহিত্য চর্চা
মুলমান মেয়েদের তখন স্কুলে যেতেই দিতেন না অভিবাকরা । রোকেয়া স্কুলে যাবেন কি করে ? কিন্তু তিনি তো দমবার পাত্রী নয় । বাড়িতে কোরআন পড়া শিখলেন । উর্দুও শিখলেন । কিন্তু বাংলা শেখার জন্য তার মন ছট ফট করতে লাগলো । রোকেয়ার বড় বোন করিমোন নেছা ,জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা ইব্রাহীম সাবের । করিমুন্নেসা তার বড় ভাইয়ের কাছে লেখাপড়া শিখেছেন ।
ভাই বোন দুজনেই রোকেয়াকে স্নেহ করতেন । এই ভাই বোনের কাছে রোকেয়ার যত আবদার । রোকেয়ার লেখাপড়া করার আদম্য আগ্রহ !বড় বোনের কাছে তিনি বাংলা শিখলেন । সেই লেখা পড়া টা ছিল আরেক যুদ্ধ । রাত গভীর হলে ভাইয়ের কাছে শুরু হতো তার জ্ঞান অর্জন।
বেগম রোকেয়ার জন্ম ও মৃত্যু সাল
রংপুরের পায়রা বন্দ গ্রামে মিঠা পুকুর উপজেলায় ১৮৮০ সালে জন্ম হলো এক ফুট ফুটে শিশুর । নাম তার রোকেয়া। রোকেয়ার দুই বোন আর দুই ভাই আর এক ভাই শৈশবে মারা যায় । । তার বাবার নাম জহীরউদ্দিন মোহাম্মদ আবু আলী হায়দার । তার বাবা একজন শিক্ষিত জমিদার । তার মায়ের নাম ছিল রাহাতুন্নেসা সাবের চৌধুরানী ।
কিন্তু সেই জমিদারী তখন পরতির দিকে । আগের অবস্থা ছিল না ।রোকেয়া ১৮৮০ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন । ১৯৩২ সালের ৯ই ডিসেম্বর তিনি মৃত্যবরন করেন। তিনিই প্রথম মেয়েদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করেছিলেন । নারী জাগরনের অগ্রদূত হিসাবে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন তিনি ।
বেগম রোকেয়ার শ্রেষ্ট গ্রন্থ কি
বেগম রোকেয়ার শ্রেষ্ট গ্রন্থটি ১৯৩১ সালে প্রকাশিত হয় । মনের কথা মনের ভাবনা সব তুলে ধরেছেন তার লেখার মধ্যে । তার লেখা কয়েক টি উল্লেখ্য যোগ্য বই হলো - ‘মতিচুর’‘অবরোধবাসিনী’ও‘পদ্মরাগ;সেময় ভারতবাসি মুসলমান নারীদের উন্নতি এবং সমাজের অবরোধপ্রথার জন্য যে অসুবিধা হতো তা বর্ণিত হয়েছে এই গ্রন্থগুলোতে ।
বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন আমাদের এই দামি অলংকার কে দাসত্বের প্রতিক হিসাবে বিবেচনা করেছেন । আমাদের সমাজের নারিদেরকে এই দামি অলংকারকে ত্যাগ করে নিজেদেরে আত্নসন্মানবোধে উজ্জবিত হয়ে অর্থ রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন করতে বিশেষ ভাবে অহব্বান জানিয়েছেন ।এই জন্য তিনি বলেছেন ঃ
বহু কাল হইতে দাসীপনা করিতে করিতে দাসিত্বে অভ্যস্ত হইয়া পরিয়াছি ।ফলে পুরুষরা আমাদের মনকে পর্যন্ত দাস করে ফেলিয়াছে ।তাহারা ভূস্বামী, গৃহস্বামী প্রভৃতি হইতে হইতে আমাদের স্বামী বা শাসক হইয়া উঠিয়াছেন ।আর এইযে আমাদের অলংকার গুলো এগুলো দাসত্বের নির্দশন ।কারাগারে বন্দিগণ লৌহনির্মিত বেরী পরে আর আমরা স্বর্ণের বেরি পরিয়া বলি ,মল পরিয়াছি । আমাদের ঐ বহু মূল্যের অলংকার গুলো দাসত্বের নির্দশন ব্যাতিত আর কিছুই নয় ।
বেগম রোকেয়ার বিয়ের বয়স
আসলে সে সময়টা ছিল এমনই । মেয়েদের না ছিল লেখাপড়ার অধিকার , না ছিল বাইরে কোথাও যাওয়ার অধিকার । সামাজিক বিধিনিষেধের কারনে মেয়েরা লেখাপড়া করতে পাড়ত না । মেয়েদের বিয়ে দেওয়া হতো খুব অল্প বয়সে । এভাবে বড় বোন করিমুন্নেসার চৌদ্দ বছর বয়সে বিয়ে হয়ে গেল । রোকেয়ার বিয়ে হলো ষোল বছর বয়সে । স্বামী সৈয়দ সাখওয়াত হোসেন সরকারি চাকুরে ।
এবার স্বামীর নাম অনুসারে তার নাম হলো রোকেয়া সাখওয়াত হোসেন । বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার পালা । স্বামীর বাড়ি ভগাল পুর পৌছে দেখলেন বাড়িতে সবাই উর্দুতে কথা বলে ।রোকেয়া উর্দুতে কথা বলতে শুরুকরলেন।। কিন্তু বাংলা ভাষায় কথা না বললে কি মনের সাধ মিটে । বাংলা ভাষাকে তিনি একদিনের জন্যও ভুলে থাকতে পারেন নি ।
রোকেয়ার স্বামীর মৃত্যু
বিয়ের মাত্র ১০ বছর পর রোকেয়ার স্বামী সেয়দ সাখওয়াত হোসেনর মৃত্যু হলো । এবার শুরু হলো রোকেয়ার আরেক জীবন । মুসলমান মেয়েরা তখন অনেক পিছিয়ে । লেখাপড়া করার স্কুল নেই । মৃত্যুর আগে স্বামী কিছু অর্থ রেখে গিয়েছিলেন । স্বামীর মৃত্যুর পর কলকাতায় স্বামীর নামে তিনি মেয়েদের একটা প্রাথমিক স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন ।
শুরুতে এই স্কুলের ছাত্রী ছিল মাত্র ৫ জন । কিন্তু আস্তে আস্তে ছাত্রী সংখ্যা বাড়তে থাকলো। তিনি বুঝতে পারলেন মুসল মান মেয়েরা কেন এত পিছিয়ে আছে , কতো কথা তার মনে কতো কিছু বলার ইচ্ছে । এবার তিনি বাংলা ভাষায় শুরু করলেন লেখা লিখি ।
নারি জাগরনে বেগম রোকেয়ার অবদান
১৯০৫ সালে এই উপন্যাস টি বেগম রোকেয়া লেখেন । এই উপন্যাসে নারীদের কথা এমন ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যেখানে সব বিষয়ের নেতৃত্বে আছেন নারীরা । বিশেষ করে একদল তুখর এবং জ্ঞানী নারীদের জন্য গড়ে উঠেছে েএক বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর এক জগৎ ।এই মহান বৈজ্ঞানিকরা আবিষ্কার করেছেন নিয়ন্ত্রনের সকল কৌশলগুলো ।
বেগম রোকেয়া বলেন যে, কাজ গুলো পুরুষ লোকে পারিবে সে কাজ গুলো মেয়েরা ও পারিবে ।বেগম রোকেয়া যে ভাবে বলে গেছেন । আজ আমাদের সমাজে সেটাই হচ্ছে । এতে কোন সন্দেহ নেই। তবে তার জন্য, তাকে তিল তিল শ্রমে এগিয়ে যেতে হয়েছে । কিন্তুু তা হয়তো আজকের যুব সমাজে কাছে কিছুটা গল্পের মত লাগবে ।
নারি জাগরন বেগম রোকেয়া সাখওয়াত হোসেন মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত তিনি স্কুলে কাজ করে গেছেন । বেগম রোকেয়ার অভ্যাস ছিল তিনি প্রত্যেকদিন রাতের বেলা লিখতেন । মৃত্যুর দিন রাতেও তাই করেছেন । টেবিরে বসে লিখতে লিখতে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পরেছেন । তাই আমরা নরীরা বলতে পারি নারী জাগরনে বেগম রোকয়ার অবদানের শেষ নাই।
শেষ কথা
এই সমাজের অবহেলিত নারীদের শিক্ষার উন্নতির জন্য বেগম রোকেয়া সাখওয়াত হোসেন নিদ্দিধায় এগিয়ে এসেছিলেন । প্রকৃত ও বস্তু পাঠ এবং বৃত্তি শিক্ষাকে বেগম রোকেয়া অত্যান্ত গুরুত্ব পূর্ণমনে করতেন । যার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল নারীর শারিরিক ও মানসিকতার ক্ষমতার বিকাশ ঘটানো ।তার সর্বশেষ অসমাপ্ত লেখা ছিল নারীর অধিকার সম্পর্কে।
msta2z.comব্লগের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url