করলার জুস বানানোর নিয়ম -করলার জুসের উপকারিতা
করলা হলো গরম ও বর্ষাকালের সবজি। করলা খেতে অনেক বেশী তেতো হলেও করলার পুষ্টিগুনের শেষ নাই। করলা মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ করে। করলার জুস কিভবে বানাই বা নিয়ম কি তা হয়তো অনেকেরই জানা নেই। নিয়ম জানা না থাকায় অনেকের খেতে ইচ্ছে করলে বানিয়ে খেতে পারে না। ত যাই হোক বন্ধুরা কিভাবে করলার জুস বানাতে হয় তা নিচে দেওয়া হলো।
কাচা করলার জুস শরীরকে সুস্থ্য রাখে এবং শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে থাকে। আমরা যদি নিয়ম করে করলার জুস খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলি তাহলে শরীরের জন্য বেশ উপকার হবে।
ভৃমিকা
উচ্ছে ও করলা হলো গরম ও বর্ষকালের সবজি। উচ্ছে হলো গোলকার এবং মোটামাপের। আবার করলা হলো লম্বাটে এবং আকারে অনেক বড়। এদের বিজ্ঞান সম্মত নাম একটিই এবং সেটা হলো -মমরডিকা করনটিয়া। উচ্ছে এবং করলা স্বাদে তেতো। এটি শরীরের পক্ষে অত্যান্ত উপকারি সবজি।
করলার জুস বানানোর নিয়ম
করলার জুস বানানোর জন্য একটি কাচা করলা নিতে হবে। তার পর একটা ছুরি বা বটি দিয়ে করলার উপরের সবুজ অংশ টা ছোট ছোট করে কেটে নিতে হবে।কাটা করলা গুলো বাটিতে নিতে হবে তার পর দুটো কাচা মরিচ কুচি কুচি করে কেটে নিতে হবে। একটা লেবু নিতে হবে এবং লেবুটি কেটে পুরোটাই রস চিপে দিতে হবে।তার পর পরিমান মতো ধনে পাতা কুচি করে কেটে নিতে হবে।
তার পর সবগুলো উপকরন একসাথে নিতে হবে।তার পর বিলিনডারে সব গুলো একসাথে নিতে হবে তবে করলার তিতা কাটানোর জন্য অর্ধেক মাল্টার রস মিশাতে হবে তাহলে জুস টা খেতে ভালো লাগবে।তার পর একটু বিট লবণ, সামান্য পরিমান চিনি,তার পর পরিমান মত পানি দিয়ে ভালো করে ব্লিন্ড করে নিতে হবে। ব্লিন্ড হয়ে গেলে গ্লাসে ঢেলে পরিবেশন করতে হবে।আশা করছি আপনেরাও এভাবে করলার জুস বানিয়ে খাবেন খুব ভালো লাগবে।
করলার জুসের উপকারিতা
করলার জুস আপনার শরীরকে অনেক সুস্থ্য রাখতে সাহায্য করে। চলুন কাচা করলার জুসের উপকারিতা সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত জেনে নিই।
- কাচা করলার জুস নিয়মিত খেলে খাবার হজম করতে অনেক সাহায্য করে।
- শর্কারার পরিমান নিয়ন্ত্রনে সাহয্য করে।
- কাচা করলার জুস খেলে চোখের দৃষ্টি ভালো রাখে
- ডায়বেটিস রোগীদের ডায়বেটিস নিয়ত্রন করতে সাহায্য করে।
- মাথার চুল এবং ত্বকের উজ্জলতা বাড়াতে প্রচুর কার্যকরি।
- কারো শরীরে অ্যালার্জি থাকলে অ্যালার্জি কমাতে সাহায্য করে।
শুধু করলার রসে সাথে একটু মধু মিশেয়ে খেলে ও প্রচুর উপকার পাওয়া যায়। তাই প্রতিদিন সকালে নিয়ম করে করলার এক গ্লাস রস খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন শরীরকে বিভিন্ন রোগের হাত থেকে রক্ষা করুন।
করলার পাতার রস এবং করলার উপকারিতা
- করলার পাতার রসে লবণ মিশিয়ে খাওয়ালে পিত্তের বিষ ও বমন মলত্যাগ দ্বারা বেরিয়ে যায়।
- করলার পাতার রস মুত্র বৃ্দ্ধি করে, জ্বর সরায়, কৃমি নাশ করে। ঔষুধ হিসাবেও এর অনেক গুন আছে।
- বিখ্যাত প্রাচীন বৈদ্য সুশ্রুতের মতে করলার পাতর রস জোলাপের কাজ করে এবং প্রয়েজনে বমিও কমায়।
- ম্যালেরিয়ায় করলার পাতার রস শরীরে লাগালে এবং তিনটি করলার পাতা ও তিনটি আস্ত গোল মরিচ এক সঙ্গে পিশে নিয়ম করে কিছুদিন খেলে বেশ উপকার পাওয়া যায়।
- অম্লপিত্তের জন্যে যদি ভাত খাওয়ার পরই বমি হয়ে যায় তাহলে করলার ফুল বা পাত ঘিয়ে ভেজে বা কাচা লবণ মিশিয়ে খেলে তা নিবারন হয়।
- তিনটি করলার বিচি ও তিনটি গোলমরিচ এক সঙ্গে অল্প পানি দিয়ে পিষে একটু একটু করে বাচ্চাদের খাওয়ালে বাচ্চাদের বমি বন্ধ হয়ে যায়।
- দশ চা চামুচ করলার পাতার রসে একটু হিং মিশিয়ে খাওয়ালে প্রসাব পরিষ্কার হয়ে যায়। কোন কারনে প্রসাব বন্ধ হলে এটা ঔষুধ হিসাবে প্রয়োগ করা যায়।
- কচি করলা টুকরো করে কেটে ছায়ায় শুকিয়ে নিয়ে মিহি করে পিষে নিয়ে চার মাস ধরে সকালে এবং সন্ধ্যাবেলায় নিয়মিত দু চা চামুচ করে এই চুর্ণ খেলে ডায়বেটিস নিশ্চয় সারবে। সেই সঙ্গে অবশ্যই ডায়বেটিসের খাওয়া -দাওয়া বিধি নিষেধ মেনে চলতে হবে। এই ভাবে করলার চুর্ণ খেলে প্রসাবের সঙ্গে শর্করা বা সুগার বেরোনো একে বারেই বন্ধ হয়ে যাবে।
- একচা চামুচ করলার রস নিয়ে তাতে অল্প চিনি মিশিয়ে নিয়মিত খেলে অর্শ থেকে রক্ত পড়া বন্ধ হয়।
- করলার রস নিয়মিত খেলে ক্যান্সার রোগ থেকে দুরে থাকা যাবে।
- শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে ।
- নিয়মিত করলার রস খেলে রক্ত পরিস্কার করে।
- শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
ওজন কমাতে প্রতিদিন কতটুকু করলার জুস পান করা উচিত
প্রতি একশ গ্রাম কাচা করলা থেকে আমরা ক্যালোরি পাই মাত্র ১৭ ক্যালোরি। এতে ৮০-৮৫% রয়েছে পানির পরিমান। এ উভয় কারনেই করলা আমাদের শরীরের ওজন কমাতে বিশেষ সাহয্য করে। কাচা করলা তে রয়েছে অ্যান্টি-অকিডেন্ট যা আমাদের শরীরের অপ্রযোজনীয় পদার্থ সমূহ নিষ্কাষনে সাহায্য করে যা আমাদের পরিপাক এবং বিপাককে সহজ করে তুলে।
যার জন্য আমাদের দেহের ওজন তাড়াতাড়ি কমে যায়।করলাতে আছে ভিটামিন সি যা আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কে বাড়িয়ে তুলে এবং ইনফেকশন থেকে রক্ষা করে। সকল ধরনের ইনফেকশন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য প্রতিদিন করলা পাতা বা কাচা করলা পানিতে ফুটিয়ে সেই পানি এক গ্লাস করে পান করলে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়।
করলার পুষ্টিগুনের তালিকা
কাচা করলা খেতে যদিও অনেক তিতা ,তবে আপনি জেনে রাখুন যে করলা তে অনেক পুষ্টির ভান্ডার আছে।নিচে করলার পুষ্টিগুনের তালিকা দেওয়া হলো-
করলার অপকারিতা
করলাতে এত পরিমান উপকারিতা থাকার পরেও দিনে ২-৩ টির বেশী করলা খাওয়া যাবে না। যে কোন খাবার অতিরোক্ত খাওয়া শরীরের জন্য বিপদজনক হয়। অতিরোক্ত করলার রস খাওয়ার জন্য কারো কারো শরীর আবার অসুস্থ্য হয়ে যেতে পারে।
- গর্ভবস্থায় করলার রস খাওয়া কিছুটা ঝুকিপূর্ণ। করলার যেই উপাদানগুলো আছে তার জন্য জরায়ুর রক্তক্ষরন এবং গর্ভপাতের আশঙ্কা থাকতে পারে।
- ছোট বাচ্চারা খেলে বাচ্চাদের বমি হতে পারে, পেট ব্যাথা হতে পারে, এমনকি ডায়রিয়া ও হতে পারে।
- অতিরোক্ত করলা খেলে রক্তে শর্করার পরিমান কমে যেতে পারে।
- অতিরিক্ত কেরলার জুস খাওয়ার ফলে পেটে গ্যাসের সমস্যা তৈরি হবে
- অতিরিক্ত করবার জুস খাওয়ার পরে হার্টের সমস্যা তৈরি হবে
- করলার জুস পেটের জন্য ক্ষতিকর এটি অতিরিক্ত পান করার ফলে ডায়রিয়া হতে পারে
- অতিরিক্ত করলার জুস খেলে স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে যেমন ত্বকের ব্রণ হওয়া
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক আশা করছি আপনারা সকলে আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে বুঝতে পেরেছেন করলার জুস বানানোর নিয়ম সম্পর্কে করলা জুস বানানো নিয়ম খুবই সহজ শুধুমাত্র করলা হালকা সিদ্ধ করে তার রস বের করে হালকা মধু মিশিয়ে খেয়ে নিলেই এর উপকারিতা পেয়ে যাবেন তবে করলার জুস অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে সাথে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে করলার জুস থেকে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন পাওয়া যায় শরীরে এলার্জি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে তাই আমাদের প্রত্যেককে সাবধানতা হবে এবং অতিরিক্ত কারো জুস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে
গরম থেকে শুরু করে শীত কাল পর্যন্ত সারা বছরেই বাজারে করলা পাওয়া যায়।করলার ভাজি, ভর্তা,চরচরি, ঝোলের তরকারি ইত্যাদি বানিয়ে খাওয় যায়।তেতো হলেও করলা খেতে বেশ সুস্বাদু। বিশেষ করে প্রায় সবার কাছেই করলা প্রিয় খাবার। তবে করলার তরকারি যেমন খায় তেমনি ঔষুধ হিসাবে অনেকই ব্যাবহার করে থাকে।এই পোষ্ট টি পরে নিশ্চই আপনি করলার ব্যাবহার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারলেন।পোষ্টটি পরে আপনাদের ভালো লাগলে কমেন্ট বকসে জানিয়ে যাবেন।
msta2z.comব্লগের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url