রোগ প্রতিরোধে গাজর ও মুলা খাওয়ার উপকারিতা বিস্তারিত জানুন | Msta2z

রোগ প্রতিরোধে গাজর ও মুলা খাওয়ার উপকারিতা বিস্তারিত জানুন

গাজর হলো একটি মূলজ সবজি। শীতের মৌসুমে বাজারে একে পাওয়া যায়। আবর মুলো হলো একটি জনপ্রিয় মুলোজ সবজি। এটি শীতের ঠিক আগের সময় থেকে বাজারে উঠে। মুলা এবং গাজর দুটো সবজিতেই প্রচুর পরিমানে ভিটামিন আছে। মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ করতে মূলা ও গাজর খাওয়ার কিছু নিয়ম আছে। যে ভাবে খেলে শরীরের পক্ষে ভালো উপকার হবে।
রোগ প্রতিরোধে গাজর ও মূলা খাওয়ার উপকারিতা

সারা বিশ্বেই মূলা ও গাজরের চাষাবাদ হয়। মুলো প্রতিদিনের আটপৌরে সস্তা তরকারি। সস্তা ও সুলভ বলেই কিন্তু হেলা ফেলা নয়।মূলোর অনেক গুন। অনেক রোগ সারাবার ক্ষমতা রয়েছে।

ভৃমিকা

গাজর ও মূলা নানান প্রকার খাদ্য তৈরীতে ব্যাবহত হয়।এই দুটো সবজি আবার কাচা ও খাওয়া যায়। আবার সালাত করে ও খাওয়া যায়। তা বন্ধুরা খাওয়ার নিয়ম গুলো আমরা আজ জানবো আমরা অনেকেই হয়তো গাজর মুলা খেতে খুব ভালোবাসি।

কিন্তু এই গাজর মত খাওয়ার মাধ্যমে কি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়? এছাড়াও গাজর এবং মূলা খাওয়ার কি কি উপকারিতা রয়েছে আজকে আমরা সেই সমস্ত বিষয় সম্পর্কে জানব। আমাদের প্রত্যেকের শরীরে একটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে। এই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বলা হয় ইমিউনিটি সিস্টেম সঠিকভাবে কাজ করবে।

তখন আপনার শরীর সুস্থ থাকবে এবং রোগ বালাই দূর হবে কিন্তু যদি ইমিউনিটি সিস্টেম কাজ না করে তাহলে বিভিন্ন রোগবালায় দেখা দিবে। এই পৃথিবীতে শাকসবজি তুলনায়  শরীরের জন্য বেশি উপকারী আর কিছুই নেই। শাকসবজির মধ্যেই সমস্ত পুষ্টিগুণ এবং ভিটামিন নিহত রয়েছে তাই বেশি বেশি শাকসবজি খেতে হবে এবং শরীরকে পুষ্টিগুণে ভরপুরম রাখতে হবে। চলুন দেরি না করে আমরা ঝটপট দেখে আসি রোগ প্রতিরোধে গাজর খাওয়ার নিয়ম ও গাজরের উপকারিতা সমূহ কি কি।

রোগ প্রতিরোধে গাজর খাওয়ার নিয়ম ও গাজরের উপকারিতা

গাজরের প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন- এ আছে। এই ভিটামিন -এ এর অভাবে শরীর ব্যাধি গ্রস্ত হয়ে পড়ে। শরীরের বৃদ্ধি থেমে যায়। শারীরিক ক্ষমতা কমে যায়। খাদ্যদ্রব্য হজম হতে অনেক দেরি লাগে। চামড়া খসখসে হয়ে যায় ও ত্বকের রোগ দেখা দেয়। নিচে রোগ প্রতিরোধে গাজর খাওয়ার নিয়ম বা উপকারগুলো দেয়া হলো-

১. গাজরে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন- এ আছে। প্রত্যেকদিন একটা করে কাঁচা গজর চিবিয়ে খেলে বাভাতের সাথে সালাত করে খেলে চোখের দৃষ্টি শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।

২. গাজরে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ক্যান্সার প্রতিরোধ এবং রক্ত সুদ্ধিকরন করতে সাহায্য করে। এছারা মুখের দাগ,ছোপ,দুর করে এবং বয়সের ছাপ দুর করে। এই জন্য নিয়মকরে গাজরের জুস বানিয়ে খাওয়া দরকার।

৩. গাজরে ক্যালরি এবং সুগারের উপাদান কম থাকায় ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে।

৪. প্রতিদিন একটা করে কাচা গাজর খেলে দাঁত সুন্দর হয় এবং মুখের ভিতরে পরিষ্কার রাখে।গাজরের মিনারের গুলো দাঁত মজবুত রাখতে সাহায্য করে।

৫. গাজর সেদ্ধ করে পোল্টিস বাধলে ক্ষত, ফোড়া, আর সব রকমের খারাপ ধরনের ঘা সেরে যায়।

৬. গাজরের বীজে পানি মিশিয়ে বেটে পরপর পাঁচ দিন পান করলে মেয়েদের ঋতু রোগ ভালো হয়ে যায়।
৭. গাজর খেলে রং ফর্সা হয়, মুখের সৌন্দর্য বাড়ে কারণ গাজরে আছে রক্ত পরিষ্কার করবার গুণ।

৮. শরীরে পুষ্টি এবং বৃদ্ধির বিকাশের জন্য গাজর খাওয়া খুবই প্রয়োজন।

৯. অর্শ, ক্ষয় রোগ, পিত্ত রোগ, গাজর খেলে সুফল পাওয়া যায়। গাজরের রস মস্তিষ্কের পক্ষেও ভালো কাজ করে।

১০. গাজর খেলে শরীর নরম ও সুন্দর হয় শরীরে শক্তির সঞ্চার হয় আর ওজন বাড়ে।

১১. শিশুদের গাজরের রস খাওয়ালে দাঁত বেরোতে কোন কষ্ট হয় না। আর দুধও ঠিকমত হজম হয়।

১২. নিয়মিত গাজর খেলে দেহের চর্বির মাত্রা কমায়। ওজন কমাতে চান এরকম বন্ধুরা তোমরা নিয়মিত কচি গাজর,কাঁচা পেঁপে, কাঁচা বাধাকপির টুকরো খেতে পারেন। বিশেষ করে সকালের নাস্তা, ভাত, রুটি, ডালের পরিবর্তে।

১৩. যাদের শরীরে রক্ত কম আছে তাদের জন্য প্রত্যেকদিন একটা করে কচি গাজর খাওয়া প্রয়োজন। এতে শরীরের রক্তের মাত্রা পূরন করতে সাহায্য করে।

গাজর অত্যন্ত পুষ্টিকর , সুস্বাদু এবং খাদ্যআশসমৃদ্ধ শীতকালিন সবজি। যা প্রায় সারা বছরই পাওয়া যায়। তরকারি ও সালাদ হিসাবে গাজর খাওয়া যায়। এছারও গাজর দিয়ে অনেক সুস্বাদু খাবার তৈরী করা যায়। তবে রান্না করে খাওয়ার চেয়ে কাচা গাজর খাওয়া বেশী উপকার। কারন এতে পুস্টির অপচয় কম হয়।

গাজরের পুষ্টিগুণ তালিকা

গাজর একটি মূলজ সবজি। শীতের মৌসুমে বাজারে অনেক পাওয়া যায়। এর বিজ্ঞান সম্মত নাম হলো- ডকাশ ক্যারোটা। গাজর যেমন পুষ্টিকর সবজি তেমনি শরীরের জন্য দারুন উপকারি। গাজরের পুষ্টিগুণের কথা আমারা অনেকেই জানি না। পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে ১০০ গ্রাম খাদ্যপযোগী গাজরে পাবেন-

কার্বোহাইড্রেট-                              ১০.৬ গ্রাম

ক্যালসিয়াম-                                  ৮০ মিগ্রা.

প্রেটিন-                                         ০.৯ গ্রাম

পটাশিয়াম-                                    ১০৮ মিগ্রা.

ফ্যাট-                           ০.২গ্রাম, আঁশ- ১.২ গ্রাম

ফসফরাস-                                     ৩৫ মিগ্রা.

নিকোটিনিক অ্যাসিড-                    ০.৬ মিগ্রা.

লোহা-                                            ১.৫ মিগ্রা.

ভিটামিন- এ -                              ৩১৫০ আই, ইউ

থায়ামিন-                                       ০৪ মিগ্রা.

একটি বড়  মাপের গাজর থেকে আপনি ২২ ক্যালোরি শক্তি পাবেন।

রোগ প্রতিরোধে মূলা খাওয়ার নিয়ম ও মূলার উপকারিতা

বর্তমানে বাংলাদেশে মূলা সারা বছরই প্রায় পাওয়া যাচ্ছে। এখন বর্ষাকালে ও মূলা চাষ করা হচ্ছে। মাটির নিচে থাকা স্ফীত মুলা বা শিকড়কেই আমরা মূলা হিসাবে খাই। তবে বেশি দেরি করে মাঠ থেকে তুললে এতে আশ বা ছিবড়ে বেশি হয়ে যাবে। এবং খাওয়া যাবে না ।বলা হয় এজন্য মাঘ মাসে মুলো খেতে নেই। কেবল নরম শ্বাস সবজি হিসেবে খাবেন। এর বিজ্ঞানসম্মত নাম হলো- র‌্যাফানাস স্যাটাইভাস
মূলা খাওয়ার নিয়ম এবং উপকারিতা গুলো নিচে দেওয়া হলো-

১. দুপুর বা রাত্রিতে গুরু -পাক ভোজনের পরে মুলোর রসে পাতিলেবুর রস মিশিয়ে খেলে পেটের ব্যথা ও গ্যাস কমে যায়।

২.ভাত রুটি খাওয়ার সঙ্গে কাঁচা মুলো নুন দিয়ে খেলে রুচি বাড়ে।

৩. কচি মুলোর সালাত খেলে খিদে বেড়ে যায়, হজম দ্রুত হয়।

৪. মুলার মধ্যে আছে জ্বর সারাবার গুণ। জ্বরের সময় মূল্য খেলে বেশ কার্যকর পাওয়া যায়।
পিলের রোগে পরম উপকারী মুলো।

৫. শীতকালে কাঁচা মুলো খেলে কাজে উৎসাহ বাড়ে ।খাবার সহজে হজম হয় এবং শরীরের পুষ্টি হয়।

৬.মুলোর শাক বেশি মাত্রায় খেলে প্রস্রাব ও মল পরিষ্কার হয়ে গিয়ে শরীরের গ্লানি বেরিয়ে যায়।

৭.অর্শ রোগীরা মুলোর পাতা শাক বা মুলুর শাকের রস খেলে উপকার পাবে।

৮.মুলোর চেয়ে মুলোর শাকের গুণ বেশি। মুলোর শাক সহজে হজম হয় ও খাওয়া দাওয়ায় রুচি বাড়াই।

৯. নিয়মিত মূলো খেলে শরীরের ওজন দ্রুত কমে যায়।

১০. রক্তে অক্সিজেন বাড়ায়

১১. রক্তনালি শক্তিশালী করে তোলে

১২.রক্তচাপ নিয়ত্রন করে

১৩. শরীরের আদ্রতা বজায় রাখে

১৪. ত্বকের জন্য ভালো

১৫. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

১৬.হৃদযন্ত্রের সুরক্ষা দেয়

মূলা খেলে কি গ্যাস হয়

মূলা সবজি টি বিশেষ পুষ্টিকর খাবার নামে সবাই চেনে। মূলা কারো কারো অপছন্দ হলেও কারো কারো কাছে বেশ মজাদার সবজি। কিন্তু কথা হলো অতিরোক্ত পরিমান মূলা খেলে কি গ্যাস হয়। আসলে মূলা খেলে কোন গ্যাস হয় না বরং পেটের গ্যাস বের করে দেয়। মূলা খেলে পেটের হজম শক্তি বেড়ে যায় এবং গ্যাসকমে যায়।

কাঁচা মূলা সালাড বা মুলা লবণ দিয়ে খেলে বেশ উপকার পাওয়া যায়।মূলাই অতিরোক্ত ফাইবার থাকার কারনে,মূলা খাওয়ায় সহজেই কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পাই।এইজন্য বলছি মূলা খেলে পেটের গ্যাস বাড়ায় না বরং গ্যাস কমিয়ে দেয়। এবং পায়খানা পরিষ্কার হয়। তবে অতিরোক্ত কোন খাবারই খাওয়া শরীরের জন্য ভালো নয়। ‍নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেকটা খাবার খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।

মূলোর পুষ্টি গুণের তালিকা

মুলো কিন্তু একটি পুষ্টিকর সবজি। বাজারে কম দামে এবং খুব সহজেই এই সবজি পাওয়া যায়। এর ১০০ গ্রাম খাদ্য উপযোগী অংশী পাবেন-

কার্বোহাইড্রেট-                                ৩.৪ গ্রাম

ক্যালসিয়াম-                                       ৫০ মিগ্রা.

প্রেটিন-                                           ০.৭ গ্রাম

ফসফরাস-                                          ২২ মিগ্রা.

ফ্যাট-                                             ০.১ গ্রাম

লোহা-                                                ০.৪ মিগ্রা.

আঁশ-                                              ০.৮ গ্রাম

পটাশিয়াম-                                       ১৩৮ মিগ্রা.

ভিটামিন- এ -                                   ০.০

ভিটামিন-সি -                                     ১৫ মিগ্রা.

লেখকের মন্তব্য

মূলা এবং গাজর দেখতে যতটা সুন্দর তেমনি এদের পুষ্টিগুন ও সুন্দর। এবং এইসবজি গুলো অনেকটাই সুস্বাদু বটে।প্রিয় বন্ধুরা আশা করি প্রত্যেকটা সবজি গুরুত্বসহকারে খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। কোন সবজির কি স্বাদ এটা বাছাই না করে তাদের পুষ্টি ও গুনাগুনের কথা মাথায় রেখে সবজি খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। 

মাছ - মাংসের দিকে বেশী গুরুত্ব না ‍দিয়ে সবজির দিকে গুরুত্ব দিন। তাহলে মনে হয় শরীর টা বেশী ভালো থাকবে। ইনশাল্লাহ। সাবাই ভালো থাকবেন শরীরের দিকে খেয়াল রাখবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

msta2z.comব্লগের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url