দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায় - চিরতরে গ্যাস দুর করার উপায় | Msta2z

দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায় - চিরতরে গ্যাস দুর করার উপায়

পেট ফাপা, বদহজম, গ্যাস এখনকার দিনে প্রায় সকলেরই এ ধরনের সমস্যা হয়। এ ধরনের সমস্যা হলে শরীর খুব খারাপ লাগে। খাওয়া দাওয়া করলে ও ভালো লাগে না এবং বসলে ও না, শুয়ে থেকে ও ভালো লাগে না। এমন অবস্থায় মনে হয় কিভাবে দ্রুত পেটের গ্যাস কমানো যায়। ত বন্ধুরা দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায় আমরা অনেকেই জানি না।
দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায়

আজ আমরা এই পোষ্ট থেকে জানতে পারবো দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর সহজ উপায়। দ্রুত গ্যাস কমানোর উপায় এবং চিরতরে গ্যাস দুর করার উপায় বিস্তারিত লেখা হলো বন্ধুরা পড়তে থাকুন-

ভৃমিকা

আসলে এখনকার দিনে পেটের গ্যাস এবং পেট ফাপা কোমন ব্যাপার হয়ে গেছে। খাওয়া দাওয়ার একটু কম বেশী হলেই এধরনের সমস্যা দেখা দিচ্ছে সকলের। ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে বৃদ্ধ মানুষ সকলের এসমস্যা হয়ে থাকে। পেটের এই সমস্যা দ্রুত ভালো করার কিছু টিপস এই পোষ্টে দেওয়া হলো।

পেটে গ্যাসের লক্ষণ সমূহ

আমাদের অনেকেরই মনে প্রশ্ন আসে পেটে গ্যাস হলে কি কি ধরনের সমস্যা হতে পারে। যখন আমাদের পেটে গ্যাসের সমস্যা হয় তখন বেশ কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। এই সমস্যা গুলো দেখা দিলে আপনে বুঝবেন যে গ্যাসের জন্য এধরনের সমস্যা হচ্ছে। নিচে লক্ষণ গুলো দেওয়া হলো-
  • অল্প খাবার খেলেই পেট ভরা ভরা লাগবে। বেশী খাওয়ার ইচ্ছে হলে ও খাওয়া যাবে না।
  • অতিরোক্ত হেচকি আসবে।
  • ঘন ঘন বদহজমের সমস্যা হবে
  • সারা দিন না খেলে ও খিদে লাগবে না।
  • পেটে থেকে শুরু করে গলা, বুক অসহ্য জ্বলতে থাকবে।
  • শরীর খুব ক্লান্ত লাগবে
  • বমি বমি ভাব হওয়া বা বমি হওয়া
  • আনেক সময় রক্ত বমি ও হতে পারে
  • বমির সাথে মাথা প্রচন্ড ব্যাথা করা।
  • পেট ড্রামের মতো ফুলে থাকবে
  • পেট হালকা বা প্রচন্ড ব্যাথা হওয়া। ব্যাথা পেটের মাঝখানে ও হতে পারে বা পেটের সাইডে ও হতে পারে।
  • কোষ্ঠ কাঠিন্য বা ডায়রিয়া হওয়া
  • মলত্যাগ করতে সমস্যা হওয়া বা কালো মল হওয়া
  • হঠাৎ করে ওজন বাড়ে যাওয়া

দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায়

পেটের গ্যাসের সমস্যা নানা করনে হতে পারে। বাইরের খাওয়া থেকে বা তেলে ভাজা কোন খাবার বেশী খেলে বা মদ্যপান বা ধুমপানের জন্য এই সমস্যা হতে পারে। এছারাও কোষ্ঠকাঠিন্য , বদহজমের সমস্যা থাকলেও এই সমস্যা হতে পারে। গ্যাসের সমস্যা হলে সারাদিন অস্বস্থি লাগে। তাই এবার আসুন জানা যাক কিভাবে আমরা পেটের গ্যাস কে দ্রুত কমাতে পারি-

পেট ম্যাসেজ করায় গ্যাস কমায়
গ্যাস হলে পেটের উপরে একটু সরিষার তেল দিয়ে নিচের দিকে পেট ম্যাসেজ করুন। এভাবে ম্যাসেজ করতে থাকলে পেটের গ্যাস বায়ুদ্বার দিয়ে বেরিয়ে যাবে।

গরম পানিতে গোসল করে গ্যাস কমান
পেটের ব্যাথা বা গ্যাস হলে একবার গরম পানি দিয়ে গোসল করেই দেখুন বেশ উপকার পাবেন। গরম পানি পেটের গ্যাসের ব্যাথা ভালো করে।গরম পানিতে গোসল করলে অন্ত্রের উপর চাপ কমে। এবং অন্ত্র ভালো থাকে।

দারুচিনি খেয়ে পেটের গ্যাস কমান
দারুচিনি গ্যাসের জন্য খুবই উপকারি। এক গ্লাস পানিতে আধা চামুচ দারুচিনি গুরো দিয়ে ফুটিয়ে দুই থেকে তিন বার খেলে গ্যাস দুর হয়ে যাবে।

পাক কলা খেয়ে গ্যাস কমান
পাকা কলা খেতে আমরা সকলেই কম বেশী ভালো বাসি। তবে গ্যাসের সমস্যা হলে কলার উপকারিতার বিকল্প নেই। কলায় রয়েছে প্রচুর পরিমানে পটাশিয়াম, যা প্রাকৃতিক অ্যান্টাসিড নামে পরিচিত।পেটের অ্যাসিড এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধক হিসাবে ভীষন কাজ করে। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে একটা করে কলা খাবেন তাহলে কিছু দিনের মধ্যেই আপনি উপকার পাবেন। তবে একটা বা দুইটার বেশী কলা খাওয়া যাবে না।

তুলসি পাতা খেয়ে গ্যাস কমান
তুলসি পাতা পাকস্থলীতে শ্লেষ্মার মতোন পদার্থ উৎপাদনে সাহায্য করেন। সকালে চায়ের সাথে কয়েকটা কাচা তুলসী পাতা ফুটিয়ে নিন। সেই তুলসী পাতা দিয়া চা সকালে খালি পেটে খান। দেখবেন বেশ দারুন উপকার পাবেন।

মৌরি দ্রুত গ্যাসের ব্যাথা কমাতে পারে
আপনের গ্যাসের অসহ্য ব্যাথা হলে এই গুনবতী মৌরি খান। ভাত খাওয়ার পরে মৌরি চিবিয়ে খেলে পেটের অ্যাসিড হওয়ার সম্ভবনা থাকে না। রাত্রে একগ্লাস পানিতে মৌরি ভিজিয়ে রাখুন। পরদিন সকালে খালি পেটে ভেজানো মৌরি এবং পানি সহকারে খান। অথবা কয়েকটি পুদিনা পাতার সঙ্গে মৌরি গরম পানিতে ফুটিয়ে খেতে পারেন। তাহরে গ্যাসের সমস্যা থেকে দ্রুত রেহাই পাবেন।

আদা, রসুন পেটের গ্যাস কমায়
পেটে অম্বল হলে এ থেকে দ্রুত রেহাই পেতে আদা ও রসুন বিশেষ কার্যকরী ভৃমিকা পালন করে। আদা খেলে পেটের খাবার ‍দ্রুত হজম করতে সাহয্য করে। তাই কোন ভারী খাবার খাওয়ার আধা ঘন্টা থেকে এক ঘন্টা আগে আদার সাথে একটু লবণ দিয়ে চিবিয়ে খান। এভাবে খাওয়া হলে অম্বলের সমস্যা থাববে না। আর রসুনে রয়েছে প্রচুর পরিমান ফাইবার। যা খাওয়ার পর দ্রুত খাবার হজম করে ফেলে।

টকদই পেটের গ্যাস কমায়
গ্যাসের সমস্যায় একচামুচ থেকে দুই চামুচ টক দই খাবেন। অনেক উপকার পাবেন। টকদই এ আছে ক্যালসিয়াম যা পাকস্থলীতে গ্যাস সৃষ্টি হতে দেয় না। আরো ভালো হয় টকদই এর সাথে একটু বিট লবণ মিশিয়ে খেলে। আরো দ্রুত কাজ করবে।

লবঙ্গ খেয়ে পেটের গ্যাস কমান
পেটে গ্যাস হলে একটু লবণের সাথে একটা বা দুইটা লবঙ্গ মুখে দিয়ে চিবিয়ে খান। তাহলে বেশ উপকার পাবেন। গ্যাসের ব্যাথা ও কমিয়ে দেয় লবঙ্গ। লবঙ্গ পেটের খাবার দ্রুত হজম করে। অম্বল হলে ১-২ টা লবঙ্গ মুখে রাখলে বেশ উপকার পাবেন।

এছারাও বেশী করে ঘন ঘন ঠান্ডা পানি খেতে হবে এবং হাটাহাটি করতে হবে তাহলে দ্রুত গ্যাস ভালো হয়ে যাবে। এর পরও যদি ভালো না হয় আপনি ঔষুধ খেতে পারবেন। নিচে কিছু গ্যাসের ঔষুধের নাম দেওয়া হলো-

দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর ঔষুধ

বেশী গ্যাস হলে তো অনেক সময় ঘরোয়া উপায়ে ভালো করা সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে ঔষুধ খাওয়ার প্রয়োজন পরে। তবে বেশী গ্যাসের সমস্যা হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ঔষুধ খাওয়াটাই ভালো হবে। নিচে গ্যাস ভালো হওয়ার কিছু ঔষুধের নাম দেওয়া হলো-
  • সেকলো
  • সার্জেল
  • নিউট্রাক
  • মাক্ম -প্রো
  • এক্সিলক-২০
  • ইসুটিন-২০
  • ফিনিক্স-২০
  • অ্যান্টাসিট
  • রেনিটিডিন
  • নিউট্রাক
  • লোসেকটিল
  • ওরট্রাক
  • রাবিপ্রাজল
উপরের উল্লেখিত ঔষুধ গুলোর মধ্যে যে কোন একটা আপনি খেতে পারেন। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে বা যেকোন ফার্মেসীতি গেলে পাবেন।

গ্যাস হলে কি কি খাওয়া যাবে না

গ্যাসটিকের সমস্যা হলে চিকিৎসক রা কিছু কিছু খাবার খেতে নিষেধ করে থাকে। পুষ্টিবিদদের মতে এমন কিছু খাবার আছে যা খেলে গ্যাসের সমস্যা আরো বাড়তে পারে। নিচে খাবার গুলোর নাম দেয়া হলো-

দুধ, কাচাছোলা, মুখি কচু, এচোর, বাদাম, কোমল পানীয়, বাধা কপি, ফুল কপি, সিদ্ধ আলু, মসুর ডাল, গম, তেলে ভাজা খাবার, এগুলো খাবার খাওয়া যাবে না। তার পরও কোন তরকারি বা কিছু রান্না করলে কম তেল মশলা দিয়ে রান্না করে খেতে হবে। এতে নিজেদেরই শরীর ভালো থাকবে।

সকালে কি খেলে গ্যাস হবে না

অনিয়ম করে খাওয়া দাওয়া বা বেশী তেল, ঝাল, মশলা যুক্ত খাবার খেলে পেটের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। আর সকালে পেট পরিষ্কার না হলে বিভন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয় পেটের। পেটে গ্যাস হয়, পেট ব্যাথা করে ইত্যাদি। শরীর সুস্থ্য রাখার জন্য পেট পরিষ্কার রাখতে হবে। আর পেট পরিষ্কার থাকলে গ্যাসের সমস্যা ও হবে না। এমন কিছু খাবার আছে যেগুলো রোজ সকালে খেলে গ্যাসের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। তা হলো-

হালকা গরম পানিঃ ঘুম থেকে সকালে উঠে হালকা কুসুম গরম পানি খান। কিছুদিন অভ্যাস করুন দেখবেন আপনার পেট সহজেই পরিস্কার হবে এবং গ্যাস থেকে মুক্তি পাবেন।

ইসুবগুলের ভুসিঃ ইসুবগুলের ভুসি রাতে এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। সকালে খালি পেটে খেয়ে ফেলুন। দেখবেন পেট দ্রুত পরিষ্কার হয়ে যাবে। এবং দিনে দিনে পেটের গ্যাস কিলিয়ার হয়ে যাবে।

লেবু পানিঃ সকালে কুসুম গরম পনিতে একচক লেবুর রস চিপে দিয়ে পানি খেয়ে ফেলুন দেখবেন বেশ উপকার পাবেন। এভাবে নিয়মিত খেতে থাকলে পেটের চর্বি ও কেটে যায়।

আমলকি জুসঃ সকালে খালি পেটে আমলকি জুস খেলে গ্যাসের সমস্যায় বেশ উপকার দেয়।
গরম পানিতে মধুঃ সকালে এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে এক চামুচ মধু মিশিয়ে খেলে গ্যাস থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

জোয়ানের পানিঃ সকালে খালি পানির পরিবর্তে এক গ্লাস জোয়ানের পানি খেতে পারেন। সকালে জোয়ানের পানি খেলে পাকস্থলি পরিস্কার থাকে। রাতে একট গ্লাস পানিতে জোয়ান ভিজিয়ে রাখুন সকালে খালি পেটে খেয়ে ফেলুন দেখবেন বেশ উপকার পাবেন।

চিরতরে গ্যাস ‍দুর করার উপায়

কিছু আশযুক্ত খাবার বা শাক সবজি খাওয়ার পরে আমাদের পাকস্থলি হজম করতে পারে না।এর কারনে পেটে গ্যাসের সমস্যা দেখা দেয়। কিন্তু এই সমস্যার সমাধান আপনি নিজেই করতে পারবেন। কিছু নিয়ম মেনে চললে গ্যাস কখনো ও হবে না।
  • তেল, মশলা, ঝাল বেশী দিয়া খাবার খাবেন না।
  • বাইরের ভাজা পোরা খাবেন না।
  • খাবারের সময় অনিয়ম করবেন না
  • পেট ঠেসে খাবার খাবেন না। বিশেষ করে পেটে আর জায়গা নেই তারপরও খেয়েই যাচ্ছি এভাবে খাবেন না।
  • যে খাবারই হোক না কেন ভালো করে চিবিয়ে খেতে হবে।
  • গ্যাসট্রিক এর সমস্যা থাকলে হালকা সিদ্ধ খাবার খাওয়া যাবে না।
  • রাতের খাবার ঘুমানোর ২-৩ ঘন্টা আগেই খেতে হবে। মানে খাবার খাওয়ার পরে একটু হাটাহটি করবেন তাহলে খাবার টা পেটে হজম হবে। তার পরে সুবেন তাহলে গ্যাস হবে না।
  • ঘুমোনোর সময় কোমর এবং বুক পেটের থেকে ১০ সেন্টিমিটার উপরে রাখবেন । তাহলে পেটে গ্যাস তৈরী হবে না। খাবার সহজেই হজম হয়ে যাবে।

লেখকের মন্তব্য

উপরের আলোচনা থেকে আমরা গ্যাসট্রিক সম্পর্কে কিছু ভালো ধারনা লাভ করলাম। গ্যাস হলে কি খাওয়া যাবে আর কি খাওয়া যাবে না তা, আমরা জানতে পারলাম। গ্যাসট্রিকের সমস্যায় ভুগে থাকি অনেক মানুষ। এর প্রধান কারন হলো অধিক তেল এবং মশলা যুক্ত খাবারের জন্য। এমন কিছু ‍খাবার আছে যেগুলো খেয়ে দেখা যাচ্ছে গ্যাসের সমস্যা হচেছ তা খাওয়া যাবে না।

এবং বেশী করে পানি খাওয়ার অভ্যাস গরে তুলতে হবে। আর আপনার হজমের সমস্যা হচ্ছেেঐসব সবজি ভুলেও খাবেন না। নিজে মানবেন তো রোগ ও আপনাকে মানবে। সকলেই সুস্থ্য থাকুন ভালো থাকুন। আর msta2z.com ব্লগের সাথেই থাকুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

msta2z.comব্লগের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url