গ্যাস হলে কি শ্বাসকষ্ট হয় - গ্যাস হলে কি করবো বিস্তারিত জানুন
গ্যাস্ট্রিক রোগ টি আমাদের কাছে সবারই পরিচিত একটি রোগ। এই রোগের কথা আমাদের সবার কাছে পরিচিত। কারন এই রোগ আমাদের ছোট, বড়, বৃদ্ধ সকলের এই রোগ হয়। গ্যাস্ট্রিক এর কারনে অনেক সময় বুকে ব্যাথা হয়। বন্ধুরা আপনাদের জন্য আমার লেখা পোষ্ট যে, গ্যাস হলে কি শ্বাসকষ্ট হয়। নিচে তা আলোচনা করা হলো।
বিশেষ করে আমাদের অসচেতনতার কারনে আমাদের শরীরে এই রোগ বাধিয়ে দিই। কারো শরীরে গ্যাসট্রিকের মাত্রা বেশী থাকে আবার কারো শরীরে কম থাকে।
ভৃমিকা
গ্যাসট্রিক থেকে যাদের বুকে ব্যাথা বা বুক জ্বালাপোরা হয় তাদের জন্য আজ আমাদের এই আরটিকেলটি। যাদের এই সমস্যা আছে বা যারা ভুগছেন তারাই শুধু এই আরটিকেল টি খুজবেন। সেই বন্ধুদের কে বলছি , আমাদের এই পোষ্ট টি আপনি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন তাহলে এই সমস্যার সমাধান মিলবে। ইনশাল্লাহ।
গ্যাস্ট্রিক রোগের লক্ষণ
যারা গ্যাসট্রিকের সমস্যায় ভুগছেন তারাই শুধু জানেন যে কতটা কষ্টের এই অসুখ। এই গ্যাসট্রিকের সমস্যা দেখা দিলে মনে হয় কখন ভালো হবে আর কিভাবে ভালো হবে। এই সমস্যা হয় সামন্য তেলে ভাজা কোন খাবার খেলে বা মশলা যুক্ত খাবার খাওয়ার সাথে সাথেই শুরু হয়ে যায়। এই সমস্যা হলে সাধারনত বুক এবং গলা প্রচন্ড আকারে জ্বালাপোড়া করে। নিচে আরো কিছু গ্যাস্ট্রিক এর লক্ষণ গুলো দিয়া হলো।
- পেটে গ্যাস হয়
- খিদে কম পায় এবং পেট ভরা ভরা মনে হয়।
- বুক ও গলা জ্বালা পোড়া করে এবং পেটের মাঝখানে এবং সাইডে চিন চিন ব্যাথা করে।
- বুকে এবং পেটে ব্যাথা বা চাপ অনুভূতি হয়।
- হজমে অসুবিধা হয়
- বমি বমি ভাব হয় এবং বমি হয়ে যায়।
- মাথা প্রচন্ড ব্যাথা করে।
উপরের সমস্যা গুলো হলে আপনি মনে করবেন যে আপনার গ্যাস্ট্রিক এর সমস্যা হয়েছে।
গ্যাস হলে কি শাসকষ্ট হয়
যদি কোন তৈলাক্ত খাবার খাওয়া হয়, বা কোন অনুষ্ঠানে মেহমান হিসাবে গিয়ে তৈলাক্ত খাবার খাওয়ার আগে অবশ্যই আপনাকে একটি গ্যাসের ট্যাবলেট খাওয়া উচিত হবে। আপনার যদি বেশী গ্যাসের সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যেই বাসায় গ্যাসের ঔষুধ রেখে দিবেন। মনে রাখবেন গ্যাসের সমস্যা মাত্রাতিরিক্ত হয়ে গেলে শাসকষ্টের সমস্যা দেখা দেয়।
এই শাসকষ্টের সমস্যা এত বেশী হয়ে থাকে যে আপনাকে অস্থির করে দিবে। তাই আপনার উচিত হবে যে গ্যাসের সমস্যা প্রকাশ হলে গ্যাসের ঔষুধ খেয়ে নেয়া। বিশেষ করে রাতের বেলা গ্যাসের সমস্যা দেখা দিলে শাসকষ্ট হয়।
গ্যাস হলে কি করবো
আপনার গ্যাসের সমস্যা বেশী হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ঔষুধ খেতে হবে। কিন্তু ঔষুধ আনার আগে যা করবেন।
- গ্যাস বেশী হলে সুয়ে না থেকে বসে থাকার চেষ্টা করবেন। এতে আরাম পাবেন।
- গ্যাস হলে বেশী করে ঠান্ডা পানি পান করবেন। তাহলে পেট ঠানডা হবে।
- বেশী গ্যাস হলে রাতের খাবার টা না খাওয়াই ভালো হবে। আর খাবার খেলে সুয়ার দুই থেকে তিন ঘন্টা আগেই খাওয়ার চেষ্টা করবেন।
- পেটে গ্যাস হলে ধুমপান করবেন না।
- গ্যাস হলে কিছু শরীরের ব্যায়াম আছে সেগুলো ব্যায়াম করবেন তাহলে বায়ুপথ দিয়ে পেটের বাতাস বের হয়ে যাবে।
- তাছারাও বেশী ঝাল, মশলা, তেল দিয়া বা ভাজা খাবার খাবেন না।
গ্যাস হলে কি বুকে ব্যাথা হয়
গ্যাসের কারনে বুকে ব্যাথা হয় এটা প্রাই সবাই জানে।বুকে ব্যাথা, বুকে অস্বস্থি এগুলো গ্যাসের কারনে হয়। তবে যখন অতিরোক্ত গ্যাস হয় তখন এধরনের সমস্যা দেখা দেয়। গ্যাসের কারনে বুকে ব্যাথা হলে বুকে বা পেটে বা পিঠে বিভিন্ন আকারের সমস্যা দেখা দেয় । এর সাধারন লক্ষন গুলো হলো
বুকে ছুরির আঘাতের মতো ব্যাথাঃ গ্যাসের কারনে বুকে হঠাৎ করে তীব্র ব্যাথা হয় এবং সেই ব্যাথা কখনো কখনো সারা বুকে ঘুরিয়ে বেরায়।
বুকে চাপ অনুভবঃ বুকের মধ্যে অনেক সময় ভারী ভারী লাগে বা সংকোচন অনুভূতি হয়। আবার হৃদপিন্ড সাথে সম্পর্কিত ব্যাথার অনুভূতি হয়।
শরীর আটসাট বা পেট ফোলাঃ অনেক সময় পেট ফুলে যায় শরীরকে আটসাট লাগে। তখন মনে হয় গ্যাস বের হলেই ভালো হয়।
খাবারের পরে অস্বস্থি লাগাঃ বিশেষ করে যখন গ্যাস হওয়ার মতো খাবার গুলো আমরা খাই। এই ধরনের খাবার খাওয়ার পর শরীরের অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যায় এবং গ্যাস আস্তে আস্তে বেশী হতে থাকে।
কাঁধ বা পিঠ টেনে ধরাঃ অতিরোক্ত গ্যাসের কারনে অনেক সময় কাঁধ বা পিঠের পিছনে টেনে ধরে। আর কাধের রগ গুলো প্রচন্ড ব্যাথা করে।গ্যাস অতিক্রম করার পর ব্যাথা উপশম বা বৃদ্ধি পেতে পারে। যা আমাদের শরীরের জন্য মারাত্বক সমস্যা হয়ে দারায়।
বুকের ব্যাথাকে সব সময় আমাদের কে লক্ষ করা প্রয়োজন। এই বুকের ব্যাথাকে সদা সর্বদা গুরত্ব সহকারে দেখতে হবে।আপনি যদি ক্রমাগত বা গুরুতর বুকে ব্যাথা অনুভব করেন তবে সঠিক মূলায়ন এবং নির্দেশনার জন্য একজন স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারের সাথে পরামর্শ করুন এবং দ্রুত চিকিৎসার ব্যাবস্থা করবেন। বন্ধুরা আপনার এই পোস্ট থেকে বুঝতে পারলেন যে গ্যাস হলে বুকে ব্যাথা হয়।
গ্যাস্ট্রিক বুকে ব্যাথা দুর করার উপায়
গ্যাস্ট্রিককে বুকে ব্যাথা দুর করার জন্য কিছু উপায় অবলম্বন করলে আপনেরা এই সমস্যা থেকে দ্রুত মুক্তি পাবেন। কিছু সাধারন কৌশল দেওয়া হলো-
১. গ্যাস্ট্রিক বুকে ব্যাথা দুর করার ঔষুধ
অ্যান্টাসিডঃ এই অ্যান্টাসিড ঔষুধ সেবন করলে পেটের অ্যাসিড, অম্বল এবং বদহজম দ্রুত গতিতে কমায়।
সিমেথিকোনঃ সিমেথিকোন ঔষুধটি গ্যাসের কারনে যে বুদ বুদ হয় তা ভেঙ্গে দেয়। যার কারনে বায়ুদ্বার দিয়ে সহজেই গ্যাস বের হয়ে যায়।
২. খাবার খাওয়ার নিয়ম
- গ্যাস উৎপাদনকারী খাবার যেমন, পেঁয়াজ, মশুর ডাল, বাধাকপি, ফুলকপি এবং মটরশুটি এই ধরনের খাবার যেগুলো থেকে গ্যাস বেশী হয় সে খাবার থেকে এরিয়ে চলুন।
- পেট ভরে খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। ওভারলোড করে খাবার খেলে গ্যাসের সমস্যা বেশী হয়।
- যে খাবাররই খান না কেন ভালো করে চিবিয়ে চিবিয়ে খাবেন। খাবার ভালো করে না চিবালে খাবারের সাথে বাতাসের কিছু পরিমান পেটে চলে যায় । যা থেকে মারাত্বক গ্যাসের সৃষ্টি হয়।
৩. জীবন ধারা পরিবর্তন করুন
- খাওয়ার পরপরই শুয়ে পরবেন না। অনন্ত সোয়ার ১-২ ঘন্টা আগে খাওয়ার চেষ্ট করুন।
- হজমশক্তি বাড়াতে এবং ফোলা ভাব কমাতে শারীরিক ভাবে সক্রিয় থাকুন।
- খাবারের সময় এবং পরে ঠেসে বসবেন না। শরীর কে চাপ দিবেন না। একটু হাটাহাটি করার চেষ্টা করুন।
- খাবার খাওয়ার পর বা সারাদিন প্রচুর পানি পান করুন।
- চা, কফি, বা এ্যালকোহল যুক্ত পানীয় গুলির খাওয়া এরিয়ে চলুন।
- এবং গ্যাস বেশী হলে শারিরিক কিছু ব্যায়াম আছে সেগুলো করার চেষ্টা করুন।
গ্যাস্ট্রিক বুকে ব্যাথা দুর করার ঘরোয়া উপায়
আপনি সহজে কোন পেশাদার চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারছেন না বা কাছে কোন চিকিৎসক নেই এই অবস্থায় আপনি ঘরোয়া ভাবে কিছু চিকিৎসা করে গ্যাসের কারনে বুকে ব্যাথা কমাতে পারবেন। নিচে কিছু সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো-
লেবু পানিঃ এক গ্লাস গরম পানিতে লেবুর রস চিপে পান করুন। তাহলে বেশ উপকার পাবেন। কারন লেবুর রস হজমে সাহায্য করে এবং গ্যাস কমাতে সাহায্য করে।
আদাঃ আদা গ্যাস কমাতে বেশ কার্যকরী ভৃমিকা পালন করে।আপনি আদা চা খেতে পারেন বা আদা কুচি কুচি করে কেটে সামান্য লবণ দিয়ে চিবিয়ে খেতে পারেন। দ্রুত গ্যাস কমতে থাকবে।
লবঙ্গঃ গ্যাস কমানোর জন্য ১-২ টা লবঙ্গ মুখে নিয়ে আস্তে আস্তে চিবুতে থাকুন।
উষ্ণগরম পানিঃ সারাদিন গরম পানিতে চুমুক দিলে পচনতন্ত্র শিথিল হয় এবং গ্যাসের অস্বস্থি কমে যায়।
পেপারমিন্ট চাঃ পেপারমিন্ট চা পাকস্থলি শিথিল করতে এবং গ্যাস কমাতে সাহায্য করে। খাওয়ার পরে এক কাপ পেপারমিন্ট চা খান।
মৌরি বীজঃ ভাত বা অন্য কোন ভারী খাবার খাওয়ার পর এক চমুচ মৌরী বীজ চিবিয়ে খান। মৌরী বীজ পেট ফুলে যাওয়া এবং গ্যাস কমাতে সাহায্য করে।
গ্যাস উৎপাদন খাবার এরিয়ে চলুুনঃ যেগুলা খাবার খাওয়ার পর গ্যাস হয় সেসব খাবার গুলো খাবেন না। আর সে সব খাবার খেলে পরিমানে অল্প খেতে হবে। তবে এরিয়ে চলায় ভালো।
সঠিক খাদ্যাভ্যাস করুনঃ খাবারের সময় খাবার গুলো ধিরে ধিরে চিবিয়ে চিবেয়ে খান। কারন খাবার না চিবিয়ে খেলে খাবারের সাথে পেটে বাতাস চলে যায়। যার ফলে গ্যাস সৃষ্টি হয়।
গ্যাস হলে কি মাথা ঘোরে
গ্যাসের কারনে যদি ডায়রিয়ার মতো অবস্থা হয়ে থাকে বা বমি ভাব বা বমি হওয়া এরকম অবস্থাই ডিহাইড্রেশন হতে পারে। যার জন্য হালকা মাথা ঘোরা বা মাথা ব্যাথা হতে পারে। তবে সাধারন বা অল্প গ্যাসে মাথা ঘোরে না বা মাথা ব্যাথা হয় না।
শেষ কথা
আমরা যখন ফাইবার যুক্ত খাবার বেশী খেয়ে ফেলি তখন আমাদের পাকস্থলি সহজে খাবারগুলোকে হজম করতে পারে না। যার ফলে পেটে বদহজম হয় বা খাবার অপরিপাক থেকে যায়। অপরিপাক খাবার গুলোকে কিছু অল্প আয়ুর ব্যাকটেরিয়া খেয়ে ফেলে। এর পর সেই মৃত ব্যাকটেরিয়া থেকে তৈরী হয় গ্যাস।
সেই গ্যাস আমাদের পেটে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করে। মনে রাখবেন আপনার গ্যাসের সমস্যা বেশী হয়ে গেলে বা মাত্রাতিরোক্ত হয়ে গেলে পেশাদার চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নিবেন। এতে ঘরোয়া চিকিৎসায় কোন লাভ হবে না। আশা করি সাবাই ভালো থাকবেন।
msta2z.comব্লগের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url