গাভীর দুধ বৃদ্ধির হোমিও ঔষধ ও সঠিক পরিচর্যা জেনে নিন | Msta2z

গাভীর দুধ বৃদ্ধির হোমিও ঔষধ ও সঠিক পরিচর্যা জেনে নিন

প্রিয় বন্ধুরা আসসালামু আলাইকুম,আশা করি আপনার ভালোই আছেন। এই পোষ্ট পড়ার জন্য যেই বন্ধুরা এসেছে তিনি নিশ্চয় গাভীর দুধ বৃদ্ধির বিষয় জানতে চায়। তাদের উদ্দেশেই আমার এই পোষ্ট খানা। আপনি কি গরুর দুধ বৃদ্ধির উপায় জানতে চাচ্ছেন তাহলে এই পোষ্ট টা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন। সব কিছুই জানতে পারবেন।
গাভীর দুধ বৃদ্ধির হোমিও ঔষুধ

বিশেষ করে গাভী পালনের পরে দুধ না দিলে প্রায় সাবার মনটাই খারাপ হয়ে যায়। তখন অনেকের মনেই প্রশ্ন আসে কি ভাবে গাভীর দুধ বাড়ানো যায়। কি ঔষধ খাওয়ালে দুধ বাড়ানো যায়। এমনটা। বন্ধুরা সে সম্পর্কে বিস্তারিত দেওয়া হলো।

ভৃমিকা

আমাদের দেশের গাভী গুলো দুধ উৎপাদনের ক্ষমতা অন্যান্য দেশর গাভীর তুলনায় কম। এর পেছনে কিছু কারন আছে যা হলো পরিবেশের কারন ও গরুর জাতের কারন। একেক জাতের গাভীর দুধ উৎপাদন ক্ষমতা একেক রকম। কিন্তু জাত দেখলে হবে না গরুর সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে গরুর দুধ বাড়ানো সম্ভব।

গাভীর সঠিক পরিচর্যা

বন্ধুরা একটা গাভীকে সঠিক পরিচর্যা না করলে তার কাছে থেকে ভালো বাছুর বা বেশী দুধের আশা করা যায় না। গাভীর কাছ থেকে ভালো কিছু পেতে হলে গাভীকে সঠিক পরিচর্যা করতে হবে অবশ্যই। যেভাবে গাভীর যত্ন নিবেন-
  • প্রত্যেকদিন একই সময়ে খাবার দেয়ার চেষ্টা করবেন।
  • পর্যাপ্ত পরিমান দানাদার খাদ্য খাওয়াতে হবে।
  • গাভী যেখানে থাকে সেখান টা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হতে হবে।
  • গোবর বা পেসাব কিছু ক্ষন পর পর পরিষ্কার করবেন।
  • গোয়াল ঘরের ড্রেন পরিষ্কার করে রাখবেন।
  • গাভীকে খাবার দেয়ার আগে পাত্রটা ভালো করে পরিষ্কার করে নিবেন।
  • গাভীকে নিয়মিত গোসল করাতে হবে।
  • যেখানে গরুর খাবার রাখবেন সেখান যেন পরিষ্কার হয় গরুর খাবারে যেন পোকা না ধরে।
  • গাভী গরুকে আশ জাতীয় খাবার সরবরাহ করতে হবে। এবং যদি পারেন কাঁচা ঘাস দিলে আরো ভালো হয়।
  • দানাদার খাদ্য সঠিক নিয়মে ভেঙ্গে খেতে দিতে হবে।
  • ৩-৪ মাস পর পর কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়াতে হবে।
  • নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচি অনুসরন করতে হবে।

গাভীর খাদ্য তালিকা

একটা গাভী কে প্রত্যেকদিন ১২-১৩ কেজী কাচা ঘাস এবং ৩-৪ কেজী দানাদার খাদ্য এবং পর্যাপ্ত পরিমানে খর ও পানি খাওয়াতে হবে।আর গাভীর দানাদার খাবার গুলো হলো-
  • এক কেজি- গমের ভুষি
  • ৪৫০-৫০০ গ্রাম- চাউলের গুড়া
  • ১৫০গ্রাম- চিটা গুর
  • ১ কেজি-খেসারি ভাঙ্গা
  • ৫০ গ্রাম- খনিজ মিশ্রন
  • ৫০ গ্রাম- লবন

প্রাকৃতিক উপায়ে গাভীর দুধ বৃদ্ধির উপায়

কিভাবে প্রাকৃতিক উপায়ে গাভীর দুধ বাড়ানো যায়। হ্যা প্রাকৃতির দেয়া খাবার খাওয়ানোর মাধ্যমে এবং সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে গাভীর দুধ বাড়ানো সম্ভব। এই বিষয়ে হয়েতো অনেকেরই জানা নাও থাকতে পারে। গরু পালনে লাভবান হওয়ার পেছনে দুধ উৎপাদন করা একটি গুরুত্বপুর্ণ বিষয়।গরুর দুধ উৎপাদন বেশী হলে বেশ লাভবান হওয়া যায়। 

বিশেষ করে যারা গরু বা গাভী পালন করে থাকে তারা প্রাকৃতিক উপায়ে দুধ বাড়ানোর কৌশলটাই জানতে আগ্রহী। চলুন বন্ধুরা জেনে নেওয়া যাক প্রাকৃতিক উপায়ে দুধ বৃদ্ধির উপায়।
গরুর প্রয়োজনীয় খাদ্য সমূহ

১. শুকনা হলুদ- ১ কেজি

২. চিনি বা আখের গুরা- ২ কেজি

৩. খাটি সরিষার তেল- ১ কেজি

খাবার তৈরী করার নিয়ম

১. চুলাতে একটা করাই দিয়ে তাতে ২৫০ গ্রাম সরিষার তেল ভালো করে গরম বা ফটিয়ে নিতে হবে।
এর পর তেল গরম হলে গরম তেলে হলুদ গুলো ভালো করে ভেজে নিতে হবে যাতে হলুদের রং কালচে বা খয়রী কালার হয়।

২. তারপর তেলগুলো ঝরিয়ে নিয়ে ভাজা হলুদ গুলো পাটায় বা হামান দিস্তায় ভালো করে বেটে নিতে হবে।

৩. তারপর একটি পাত্রে হলুদের গুরোর সাথে চিনি বা আখের গুর এবং বাকী ৭৫০ গ্রাম তেল দিয়ে সবগুলো উপাদান খুব ভালো করে মিশাতে হবে। এগুলো সংরক্ষন করার জন্য একটা বয়াম বা কোন পাত্রে রাখতে পারেন। এগুলো ঠান্ডা জায়গায় ৭ দিন রেখে দিতে হবে। আর এই ভাবেই তৈরী করুন গরুর দুধ বৃদ্ধির প্রাকৃতিক উপাদান।

খাদ্য গুলো খাওয়ানোর নিয়ম
প্রাকৃতিক উপায়ে যে খাদ্যটি তৈরী করা হলো সেই খাদ্য সাত দিন পর সকালে গাভীকে ৮০ গ্রাম থেকে ১০০ গ্রাম খাওয়াতে হবে। গাভী এই খাবার টি বেশ ভালোই খায়। এই ভাবে নিয়মিত প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে খাবার তৈরী করে গভীকে খাওয়ালে দুধ অনেক গুনে বাড়তে থাকবে। বন্ধুরা একবার এভাবে তৈরী করে গরুকে খাইয়ে দেখুন। 

এই ভাবে খাবার তৈরী করে খাওয়ালে গাভীর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। এবং গাভীর প্রজনন ক্ষমতাও বাড়তে থাকবে। এই ভাবে খাদ্য তৈরী করে খাওয়ালে দুধ উৎপাদন বেড়ে যাবে এবং খরচের তুলনায় লাভবান হবেন বেশী। তাই আপনারা নিঃসন্দেহে এইভাবে গাভীর দুধ উৎপাদন বাড়াতে পারেন।

গাভীর দুধ বৃদ্ধির ইনজেকশান

আমাদের দেশ অনেক মানুষ যারা গাভিপালন করে এবং গাভীর দুধ বাড়ানোর ইনজেক শান খুজেন, তাদের জন্য বলা হচ্ছে যে আমাদের দেশে কোন কোম্পানীতে দুধ বৃদ্ধির ইনজেক শান পাওয়া যাবে না। তবে গাভীর শরীর দুর্বল থাকলে অনেক সময় দুধ কম দেয় সেক্ষেত্রে আপনি গাভীর জন্য ভিটামিন ঔষুধ খাওয়াতে পারবেন। 

তবে কিছু কিছু ভিটামিন এর ইনজেকশান গুলো দুধ বাড়াতে সাহায্য করে ও গাভী সঠিক সমসয়ে গরম হয়। যেমন, ভিটামিন এডিই,অ্যামাইনো এসিড, ক্যালসিয়াম ও কিছু মাল্টিভিটামিন গাভীর দুধ বাড়ানোর ইনজেকশান হিসাবে কাজ করে। উপরের এই সকল ইনজেকশান ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে প্রয়োগ করলে গরুর শরীরের যে ঘার্তি বা ভিটামিন কম থাকে তা সহজে পূরণ হয়ে যায় এবং গাভীর দুধ বৃদ্ধি পায়।

এছারাও বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির গাভীর দুধ বাড়ানোর পাউডার পাওয়া যায়। যেমন, ডিবি পাউডার, ক্যালসিয়াম, এবং বিভিন্ন ভিটামিন পাউডার। এসকল ভিটামিন পাউডার গাভীর শরীরের সকল প্রকার দুর্বলতা এবং ভিটামিন পূরণ করতে সাহয্য করে।

গাভীর দুধ বৃদ্ধির হোমিও ঔষুধ

আপনি যদি গাভীর দুধ বৃদ্ধি করতে চান তাহলে গাভীকে পর্যাপ্ত পরিমানে কাাঁচ ঘাস, দানাদার খাবার, ভিটামিন ঔষুধ, এবং হোমিও ঔষুধ ইত্যাদি পর্যাপ্ত পরিমানে খাওয়াতে হবে এবং সঠিক যত্ন নিতে হবে। বেশী দুধ পাওয়ার জন্য একটা গাভীকে প্রথম থেকেই যত্ন নিতে হবে। যখন দুধ দিবে তখন নিলে হবে না। আপনি হয়তো আবার হোমিও ঔষুধ খাইয়ে দুধ বাড়ানোর পরিকল্পনা করছেন।

তবে মনে রাখবেন যে সকল গাভী দুধ দিতে দিতে হঠাৎ করে দুধ দেয়া কমে যায় সে সকল গাভীকে হোমিও ঔষুধ খাইয়ে দুধ বৃদ্ধি করাতে পারবেন। গাভীকে অনেক সময় ঔষুধ খাওয়াতে হয় সেই ঔষুধের সাইড ইফেক্ট হওয়ার কারনে দুধ কমতে থাকে। এধরনের কোন সমস্যা হলে আপনি হোমিও ঔষুধ খাওয়ালে ভালো ফলাফল পাবেন। তবে গাভীর সঠিক খাবার প্রদান করেন তাহলেই দুধ বাড়তে থাকবে। খাবার না দিয়ে ঔষুধ খাওয়ালেকে কি আর দুধ বারে।

গাভীর দুধ দোহন পদ্ধতি

গাভীর দুধ দোহন পদ্ধতি দুই রকমের। একটি হলো সনাতন পদ্ধতি আরেকটি হলো যান্ত্রিক পদ্ধতি।

যান্ত্রিক দুধ দোহন পদ্ধতিঃ এই পদ্ধতিতে এক সাথে অনেক গুলো গাভীর দুধ দোহন করা হয়। যার ফলে কম সময় লাগে এবং পরিস্কার এবং স্বাস্থ্য সম্মত দুধ পাওয়া যায়।

সনাতন পদ্ধতিঃ এই পদ্ধতিতে মানষকে হাত দিয়ে দুধ দোহন করতে হয়। এবং গাভীর সব বিষয়ে সচেতন থাকতে হয়। যে দুধ হোহাবে তার হাত, নখ,এবং কাপর চোপর পরিষ্কার রাখতে হবে। তার পাশাপাশি গরুর বাট বা ওলান পরিষ্কার রাখতে হবে। গাভীর গায়ে মশা মাছি লাগলে তাড়াতে হবে এবং গাভী যেন নরাচরা না করে এই জন্য খাবার দিয়ে ব্যাস্ত রাখতে হবে।

সনাতন পদ্ধতিতে দুধ দোহনের কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে সেগুলো হলো-
  • যে ব্যাক্তি দুধ দোহাবে তার হাত, নখ, শরীর পরিস্কার রাখতে হবে।
  • দোহনকারীর হাতের নখ অবশ্যই ছোট রাখতে হবে।
  • মনে রাখতে হবে যে প্রতিদিন একই টাইমে দুধ দোহন করতে হবে।
  • দুধ দোহনের আগে গাভীর গা পরিষ্কার করে নিতে হবে।
  • দুধ দোহনের আগে গাভীর ওলান বা বাট ভিজে কাপর দিয়ে পরিস্কার করে নিতে হবে।
  • দোহনের সময় গাভীর গবোর বা পেসাব ছিটে না পরে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
  • প্রথমে দুই থেকে তিন ফোটা দুধ ফেলে দিতে হবে।
  • দুধ রাখার পাত্র শুকনো এবং পরিষ্কার হতে হবে।
  • পর্যাপ্ত সময়ের মধ্যে দুধ দোহন কাজ শেষ করতে হবে।
  • বিশেষ করে সকাল ও বিকালে দুধ করা ‍উচিত। এসময় দুধের পরিমান বাড়ে।

দুধ সংরক্ষণ পদ্ধতি

গরুর দুধ অত্যান্ত পুষ্টিকর খাবার। গরুর দুধ ছোট বা থেকে শুরু করে বৃদ্ধ মানুষ পর্যন্ত পান করতে পারে। তবে দুধের একটা সমস্যা হলো তারাতারি নষ্ট হয়ে যায়। তবে আপনে চাইলে ফ্রিজে রেখে দুধ সংরক্ষণ করতে পারবেন। দুধ কিভাবে ফ্রিজে সংরক্ষন করা যায় তা নিচে দেওয়া হলো-
  • একটা পাত্রে দুধ ছেকে নিয়ে চুলায় বা গ্যাসে ভালো করে জ্বাল দিতে হবে তার পর দুধ ঠান্ডা করে সারাদিন বা পরের দিন পর্যন্ত সংরক্ষন করা যায়।
  • ফ্রিজের নরমালে দুধ রাখলে সাত দিন পর্যন্ত রাখা যায়। আর ডিপে রাখলে ২-৩ মাস পর্যন্ত রাখা যায়। তবে দুধ পরিষ্কার পরিচ্ছিন্ন পাত্রে সংরক্ষণ করতে হবে।
  • সব সময় চেষ্টা করবো তাজা দুধ সংক্ষন করার চেষ্টা করবেন। মেয়াদ শেষ হয়ে যায় বা জ্বাল দিয়া দুধ ফ্রিজে বোতলে রাখা ঠিক নয়। আর ফ্রিজের নষ্ট দুধ পান করবেন না।
  • ফ্রিজে দুধ রাখলে সাধারনত প্লাসটিকের বোতল বা কাচের পরিষ্কার বোতলে সংরক্ষন করা যায়। আবার প্যাকেট করে ও রাখা যায়।

গরুর দুধ ফ্রিজে কতদিন রাখা যায়

গরুর তরল দুধ ফ্রিজে ৬-৭ দিন ফ্রিজে রাখলে ভালো হয়। আর ডিপে রাখলে ২-৩ মাস পর্যন্ত রাখা যায়। তবে দুধ বেশী দিন ফ্রিজে রাখলে দুধের স্বাভিক গুনাগুন নষ্ট হয়ে যায়। এই জন্য চেষ্টা করবেন ১৫- ১ মাসের মধ্যে দুধ খাওয়ার চেষ্টা করবেন। তাহলে পুষ্টিগুন টা ভালো থাকে।

লেখকের মন্ত্বব্য

বন্ধুরা এই পোস্ট থেকে গরুর পরিচর্য, গরুর দুধ বৃদ্ধি এবং গরুর দুধ সংরক্ষন সম্পর্কে জানলাম। গরুর স্বাস্থ্য এবং দুধ ভালো পেতে হলে অবশ্য গরুর ভালো যত্ন নিতে হবে। কথায় আছে যত গুর দিবেন তত মিষ্টি হবে। আশা করি বন্ধুরা আমার এই পোষ্ট পরে আপনারা যতেষ্ট উপকৃত হয়েছেন। এবং অন্য ভাই ও বোনদের উপকারের জন্য পোষ্টটি পরিচিতদের মধ্যে সেয়ার করবেন । কারন তারাও পরে উপকৃত হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

msta2z.comব্লগের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url