গর্ভাবস্থায় কাঁচা কলা খাওয়ার উপকারিতা ও বিভিন্ন পুষ্টিকর খাবারের উপকারিতা | Msta2z

গর্ভাবস্থায় কাঁচা কলা খাওয়ার উপকারিতা ও বিভিন্ন পুষ্টিকর খাবারের উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় কাঁচা কলা খাওয়ার উপকারিতা কি তা প্রত্যেক টা গর্ভবতী মাকে জানা প্রয়োজন। শুধু কাঁচা কলাই না কোন খাবার খেলে কি উপকার পাওয়া যায় তা জানা প্রয়োজন। অনেক খাবার আছে যা গর্ভবতী মায়ের জন্য খুবই ক্ষতিকর। কোন খাবার খেলে একজন গর্ভমায়ের কি উপকার হয় তা নিচে বিস্তারিত জানো হলো-
গর্ভাবস্থায় কাঁচা কলা খাওয়ার উপকারিতা

পাকা কলা খাওয়া হয় ফল হিসাবে আর কাঁচা কলা খাওয়া হয় সবজি হিসাবে। আপনার শরীরের বাড়তি ওজন কমাতে চান তবে রোগীর পথ্য হিসাবে পরিচিত স্বাস্থ্যকর এই সবজিটি প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে।

ভৃমিকা

কাঁচা কলা হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ সবজি। এটি পাকা কলা থেকে সম্পর্ন আলাদা। কাঁচা অবস্থায় গাছ থেকে কাটা বা তোলা হয়। সারা বছর বাজারে কাঁচা কলা পাওয়া যায়। এর দাম খুব সহজ লাভ্য। এই কাঁচা কলার বিজ্ঞানসম্মত নাম হলো- সুসা প্যারাডিসিকা। কাঁচা কলা অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি সবজি। প্রিয় বন্ধুরা কাঁচা কলার উপকারিতা গুলো নিচে দেওয়া হলো-

গর্ভাবস্থায় কাঁচা কলা খাওয়ার উপকারিতা

বাড়তি ওজন কমায়ঃ গর্ভবস্থায় এমনিতে অনেক ওজন বেড়ে যায়। আবার ওজন বাড়লেও সমস্যা না বাড়লেও সমস্যা। তবে অতিরোক্ত ওজন বাড়াটা স্বাভিক নয়। এতে গর্ভবতী মায়ের বাচ্চাপ্রসব কালীন সময়ে সমস্যা হয়। ওজন কমাতে চাইলে প্রত্যেকদিনের খদ্য তালিকায় অল্পপরিমানে কাঁচা কলা রাখবেন। কাঁচাকলার ফাইবার অনেকটা সময় পেট ভরিয়ে রাখে। এটি আশযুক্ত হওয়ায় মেদ কমাতে সাহায্য করে।

পেটের খারাপ ব্যাকটেরিয়া দুর করেঃ কাঁচা কলা আঁশ যুক্ত সবজি হওয়ার জন্য পেটের খাবার সহজেই হজম করে দেয়। যার ফলে পেটের ভিতরের খারপ ব্যাকটেরিয়া গুলো সহজেই দুর করে ফেলে। কিন্তু অতিরোক্ত পেট ফুলে থাকলে বা গ্যাসের সমস্যা হলে কাঁচা কলা না খাওয়াটাই ভালো। পেটের কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা ও অনেক সময় বাড়িয়ে দেয়। নিজের শরীরের অবস্থা দেখে বুঝে খেতে হবে।

পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়ায় কাঁচা কলাঃ কাঁচা কলায় আছে এনজাইম, যা পাতলা পায়খানায় বা ডায়রিয়ার মতো রোগে পেটের নানা ইনফেকশন দুর করে। পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হলে ডাক্তাররা কাঁচা কলা খাওয়ার পরমর্শ দিয়ে থাকে বা খেতে বলে।

হৃদরোগের ঝুকি কমে দেয়ঃ পকা কলাতে যেমন পটশিয়াম আছে তেমনি কাঁচা কলাতেও প্রচুর পরিমানে পটশিয়াম আছে। ডাক্তার রা বলে কাঁচা কলা নিয়মিত খেলে হুদরোগের ঝুুকি কমে দেয়। তবে যাদের উচ্চরক্ত চাপ বা কিডনির সমস্যা আছে তাদের কে কাঁচা কলা বা পাকাকলা খাওয়া টা সবসময় নিয়ত্রন করে খেতে হবে।

রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রন করেঃ রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রনের জন্য কাঁচা কলা বেশ কার্যকরী। কাঁচা কলা আশ যুক্ত সবজি হওয়ায় রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রন করতে সাহায্য করে। ভিটামিন বি ৬ গ্লুকোজ নিয়ত্রন করে এবং ডায়াবেটিস রোগ প্রতিরোধ করতে সাহয্য করে।

বিভিন্ন অসুখে কাঁচা কলা খাওয়ার কিছু নিয়ম

  • একটি কাঁচা কলা খোসা সহ চক চক করে কেটে প্রতি রাতে পানিতে ভিজিয়ে রেখে দিন। পরদিন সকালে ওই পানি পান করলে কঠিন আমাশয় নির্মূল হয় এভাবে এক মাস খেতে হবে।
  • পেটের অসুখে আমাশয় ও রক্ত আমাশয় রোগে কাঁচা কলা সেদ্ধ করে টাটকা টক দইয়ের সঙ্গে মেখে খেলে রোগ সারে।
  • কলা গাছের শুকনো শিকড় গুরু করে অল্প পরিমাণে খেলে পিত্ত রোগ সারে। রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়া রোগের ও এটি একটি মহা ঔষধ।
  • অনেকের মতে কলা গাছের শিকড়ের রসের সঙ্গে ঘি ও চিনি মিশিয়ে খেলে প্রসাবের অসুখ বা মেহরোগ ভালো হয়।
  • কাঁচা কলা শুকিয়ে গুড়া করে প্রতিদিন অল্প পরিমাণে দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে যৌনবাধি সারে ও প্রসাবের অসুখ সারে।
  • একেবারে কচি কলাপাতা মিহি করে বেটে দুধ মিশিয়ে ঘন ক্ষীরের মতো করে খাওয়ালে মেয়েদের প্রদর রোগ ভালো হয়।

গর্ভাবস্থায় পাকা কলা খাওয়ার উপকারিতা

পাকা কলা দিনে কয়টা খাবেন তা আপনের শরীরের সুস্থ্যতার উপর নির্ভর করবে। তবে ডাক্তাররা এসময় মেয়েদের কে দিনে ২ থেকে ২ টি কলা খাওয়ার নির্দেশ দিয়ে থাকে। তবে অতিরোক্ত খাওয়া যাবে না। কোন খাবারই গর্ভাবস্থায় অতিরোক্ত না খাওয়াটাই ভালো। গর্ভবস্থায় কলা খেলে মা ও সন্তানের কি উপকার হয় তা জেনে নেওয়া যাক।

১. এটি মর্নিং সিকনেসে সাহায্য করে। সকালে একটা করে কলা খেলে পেট ভালো থাকে এবং বমি বমি ভাবটা কমিয়ে দেয়।

২. গর্ভকালীন সময়ে মা এবং মায়ের শরীরের ভিতরে বাড়তে থাকা ফিটাস এর জন্য এই ফল গুরুত্ব পূর্ণভৃমিকা পালন করে।

৩. গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার যে কত রকম উপকারিতা রয়েছে তা বলে শেষ করা যাবে না। কলার মধ্যে থাকা ভিটামিন- এ, ভিটামিন-ডি, ভিটামিন-৬, এছারাও আছে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম প্রচুর পরিমানে পাওয়া যায়।

৪. গর্ভবতী মহিলাদের বেশীর ভাগ সময় ব্লাডপ্রেসার উঠানামা করে থাকে। আর এটাকে খাওয়া দাওয়ার মাধ্যমে নিয়ত্রন করা সম্ভব। আপনি যদি প্রতিদিন নিয়ম করে ১-২ দুই টা কলা খেতে পারেন তাহলে আপনার ব্লাড প্রেসার নিয়ত্রনে থাকবে।

৫. কলাতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমান ক্যালিসিয়াম । গর্ভাবস্থায় থাকা শিশুর হাড় মজবুত করতে সাহয্য করে। সে জন্য চিকিৎসকরা গর্ভবতী মহিলাদেরকে কলা খেতে বলেন।

৬. গর্ভবতী মেয়েদের কলা খাওয়ার জন্য শরীরে রক্তের পরিমান ঠিক থাকে। যে সব গর্ভবতী মায়েদের শরীরে হিমোগ্লবিন এর মাত্রা কম থাকে তাদের কে বেশী বেশী কলা খাওয়া প্রয়োজন। এটা ডাক্তারের কথা।

৭. পাকা কলা কোলেস্টেরল লেভেলকে নিয়ত্রন করতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় দিনে ১-২ টি কলা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা।

গর্ভাবস্থায় দুধ খাওয়ার উপকারিতা

১. গর্ভাবস্থায় দুধ খেলে গর্ভের শিশুর মাংসপেশী গঠন ও শারীরিক গঠন সুন্দর করতে সাহায্য করে। কারন দুধে রয়েছে উৎকৃষ্ট মানের প্রটিন।

২. গর্ভাবস্থায় দুধ খেলে শিশুর দাঁত ও হাড়ের বিকাশে বিশেষ কার্যকারী ভৃমিকা পালন করে। দুধে রয়েছে প্রচুর ক্যালসিয়াম ও খনিজ উপাদান। যার সাহায্যে শিশুর হাড়ের গঠণ মজবুত করে তুলে।

৩. নিয়মিত দুধ পান করলে গর্ভের শিশুর পুষ্টি হয় এবং গায়ের রং সুন্দর হয়।

৪. কোন গর্ভবতী নারী যদি খাবারে অরুচি থাকে বা শরীরের ওজন কম থাকে বা গর্ভের বাচ্চার ওজন কম হয় এ অবস্থায় গর্ভবতী নারীকে সকালে নাস্তা করার পর দুধের সাথে বাদামের গুরো মিশ্রন করে খাবেন তাহলে গর্ভের শিশুর ওজন ঠিক থাকবে এবং মায়ের ওজন ও ঠিক থাকবে।

৫. গর্ভবতী নারী নিয়মিত দুধ পান করলে শরীরের ক্লান্তি দুর হবে এবং শরীরে প্রচুর শক্তি সঞ্চয় হবে।

৬. কোন গর্ভবতী নারীর যদি ঠান্ডা লেগেই থাকে তাহলে রাতে সোয়ার আগে একগ্লাস গরম দুধ খেতে হবে । তাহলে গর্ভের বাচ্চারও মায়ের কখনোওঠান্ডা লাগবে না।

৭. পেটের কুষ্টকাঠিন্য থাকলে সকালে এককাপ গরম দুধ এবং রাতে এককাপ গরম দুধ খেলে পেটের সমস্যা দুর হবে। এবং হজম শক্তিকে ত্বরন্নিত করবে।

গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার ‍উপকারিতা

১. খেজুরে প্রচুর পরিমান ফাইবার থাকায় পেটে কুষ্ঠকাঠিন্য দুর করে।

২. খেজুরে রয়েছে পটশিয়াম । যা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ত্রন করে এবং পেশির নিয়ত্রন বাড়ায়।

৩. গর্ভাবস্থায় খেজুর খেলে হাপানি এবং শুকনো কাশি হবে না।

৪. খেজুর খেলে শিশুর দাঁত হাড়েরে মজবুত করতে সাহায্য করে। এগুলো প্রচুর পরিমান ভিটামিন সরবরাহ করে। গর্ভের শিশুর রোগ প্রতিরোধ করে।

৫. গর্ভাবস্থায় নিয়ম করে খেজুর খেলে জরায়ুর পেশী শক্তি শালি করে।যা মসৃন ভাবে বাচ্চা প্রসব ঘটাতে সহায়তা করে।

৬. খেজুরে প্রচুর পরিমানে আয়রন থাকে যা মায়ের শরীর থেকে শিশুর শরীরে রক্ত সরবরাহ করতে সাহায্য করে।

গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা

কিসমিস সচরাচর হেলদি স্ন্যাক্স হিসাবে খাওয়া হয়। একজন গর্ভবতী নারীর জন্য কিসমিস প্রচুর উপকারি। কিসমিসের কয়েকটি উপকারিতা নিচে দেওয়া হলো-

১. কিসমিসে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ফাইবার ও প্রয়োজনীয় ভিটামিনও খনিজ পদার্থ ।

২. কিসমিস নিয়মকরে খেলে আপনার শরীরের কোষ ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে।

৩. গর্ভবতী নারিদের কালো কিসমিস টা বেশী খাওয়া প্রয়োজন।কারন হজম নিয়ত্রন করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে।

৪. গর্ভবস্থায় কিসমিসি খেলে আপনার শরীরের ক্লান্তি দুর করবে। এবং শরীরের এনার্জি বাড়িয়ে তোলে।

গর্ভাবস্থায় বাদাম খাওয়ার উপকারিতা

১. বাদামে রয়েছে স্বাস্থ্যকার প্রেটিন,উচ্চমানের খাদ্য আশএবং কয়েক প্রকারের ভিটামিন সহ মিনারেল যা শরীরের জন্য দরকারি। ১০০ গ্রাম বাদামে রয়েছে ১০০ মােইক্রোগ্রাম ফলিক এসিড যা একজন গর্ভবতী মায়ের দৈনিক চাহিদার ২৫ শতাংস পূরন করে।

২. নিয়মিত বাদাম খেলে একজন গর্ভবতী মহিলার দৈনিক শক্তি ৩১. ৫% পূরন করে।

৩. বাদামে প্রচুর পরিমান প্রটিন রয়েছে। যা বাচ্চার মাংসপেশী গঠনে এবং শিশুর ওজন বাড়াতে সাহয্য করে।

৪. বাদামে রয়েছে ভিটামিন ই যা ত্বক ও চুলের সুস্থায় খুবই উপকারি। একজন গর্ভবতী মা নিয়মিত বাদাম খেলে বাচ্চার ত্বক ও চুল ভালো থাকে।

৫. গর্ভের শিশুর ক্যালসিয়াম বাড়াতে বাদাম বিশেষ কার্যকর ভৃমিকা পালন করে। ক্যালসিয়াম গর্ভের শিশুর জন্য প্রয়োজন। এতে বাচ্চার হাড় এবং দাত মজবুত করতে সাহায্য করে।

৬. একজন গর্ভবতী মা নিয়মিত বাদাম খাওয়ার ফলে গর্ভের বা্চ্চার স্বাভাবিক বিকাশে বাধাগ্রস্ত হয় না।

৭. অনেক গর্ভধারীনী মা বাচ্চা প্রসবের পর উচ্চ রক্ত চাপে ভোগেন। এই উচ্চ রক্ত চাপ কমাতে গর্ভবতী মহিলাদের নিয়িমিত বাদাম খাওয়া প্রয়োজন।

গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে

গর্ভবতী মেয়েদের শরীরের বার্তি পুষ্টির প্রয়োজন হয়। এ সময় তাদের পুষ্টিকর এবং ভিটামিন জাতীয় ফল খেতে হবে। আবার এমন কিছু কিছু ফল আছে যেগুলো ভুলেও খাওয়া যাবে না।

গর্ভাবস্থায় যেসব ফল খাওয়া যাবে
  • কলা
  • আপেল
  • কমলা
  • তরমুজ
  • পেয়ারা
  • ডালিম
  • নাশপাতি
  • কমলালেবু
  • আম
  • অ্যাভোকাডো
গর্ভাবস্থায় যেসব ফল খাওয়া যাবেনা
  • পেঁপে
  • আনারস
  • আঙ্গুর
  • হিমায়িত ফল
  • তেতুল

শেষ কথা

প্রত্যেকটা মেয়েদের গর্ভকালীন সময়টা এমন একটা সময়,তখন নারীদের খাবার, ঘুম, ব্যায়াম, প্রতিটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ন। প্রতিটি নারীরি শারিরীক গড়ন এবং গঠন আলাদা থাকতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় প্রতিটি নারীরই শুরু থেকে কিছু বিষয়ে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে কাজ করতে হয়।তার কিছু কোমন খাবার থাকে যা প্রতিটি মাকে মেনটন করে চলতে হয়।প্রত্যেকটা গর্ভবতী মা যেন আল্লাহর রহমতে ভালো থাকে সুস্থ্য থাকে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

msta2z.comব্লগের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url