খাচায় কোয়েল পাখি পালন পদ্ধতি - কোয়েল পাখির রোগ ও চিকিৎসা
নতুন নতুন পোষ্ট পেতে msta2z.com ব্লগের সাথে থাকুনআমাদের দেশে কোয়েল পালন দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এটি পালন করে অনেক বেকার যুবক তাদের বেকারত্ব দূর করেছেন। অনেকেই কোয়েল পালন করে উদ্যোক্তা হতে চান। আবার কেউ খাচায় কোয়েল পাখি পালন করতে চায়। তবে কুয়েল খাচায় পালন করতে হলে কিছু বিষয় সম্পর্কে জানতে হবে।
কোয়েল পালন করতে গেলে প্রথমে এর জায়গা নির্ধারণ করতে হবে কোন ঘরে রাখবো সেটা ঠিক করতে হবে এবং কোয়েলের সুস্থতা ও ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার দিতে হবে ।
ভূমিকা
কোয়েল পালনে অল্প বিনিয়োগ বা পুঁজি খরচ করলে অনেক বেশি লাভ করা যায় সবাই বলে কোয়েল পাখির কোন রোগ নেই শুধু ডিম পাড়ার জন্য ম্যাদি কিনে আনলেই হয়। আসলে এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। পাখি পালনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিষয়ে মাথায় রেখে কোয়েল পাখি পালন করতে হবে। খাঁচায় কোয়েল পাখি পালন পদ্ধতি আলোচনা করা হলো।
কোয়েল পাখির রোগ ও চিকিৎসা
কোয়েল এমন এক প্রজাতির পাখি যার কোন রোগ বালাই নেই বললেই চলে। সাধারণত কোন ভ্যাকসিন অথবা ক্রিমিনাশক ওষুধ দেয়ার প্রয়োজনও পড়ে না। তবে বাচ্চা ফুটানো প্রথম দুই থেকে তিন সপ্তাহ বাচ্চার একটু বেশি যত্ন নিতে হয়। আর তার জন্মের পরে বাচ্চার তাপ দেওয়া উচিত। না হলে বাচ্চা মারা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সাধারণত কোয়েল পাখির তেমন কোন রোগ নেই বললেই চলে অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় এর পালন ও লাভজনক বেশ।
কোয়েল পাখির রোগের নাম
- মারেক্স রোগ
- কৃমির আক্রমণ
- ডিম আটকে যাওয়া
- ক্ষতসৃষ্টিকারী অস্ত্রপ্রদাহ
- রক্ত আমাশয়
- ক্রোম ন্যালি প্রদাহ
- রানীক্ষেত
- কোয়েল পক্স
- কোয়েল ব্রংকাইটিস
- ব্ল্যাকহেড
- এভিয়ান কলেরালিম্ফয়েড লিউকোসিস
রোগের কারন
উপরের উল্লেখিত রোগ গুলো ব্যাকটেরিয়াজনিত কারনে হয়। এগুলো সাধারনত অন্ত্রের রোগ। বিশেষ করে কোয়েল যে খাবার গুলো খায় সে খাবার দুষিত হয়ে গেলে বা খারাপ হয়ে গেলে এই সেই খাবার গুলো কোয়েল পাখি খেলে এই রোগ গুলো বিস্তার হয়। আক্রান্ত পাখি থেকে ভালো পাখির মধ্যে এই রোগ গুলো দ্রুত ছরিয়ে পরে। আর এই রোগ গুলো ছোট বাচ্চাদের বেশী হয়।
চিকিৎসা
কুয়েল বাচ্চা গুলো যদি উপরোক্ত রোগগুলোতে আক্রান্ত হয় তাহলে আপনি যত দ্রুত সম্ভব নিকটস্থ চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। বেশিরভাগ কোয়েল এই রোগ গুলো থেকে বাঁচতে পারে না। তবে দ্রুত ধরা পরলে প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা করলে রোধ করা যায়। চিকিৎসকের পরামর্শে অনুযায়ী নির্দেশিত মাত্রায় ক্লোরোমাইসেটিন, ব্যাসিট্র্যাসিন, স্ট্রেপটোমাইসিন বা টেট্রাসাইক্লিন জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে।
কোয়েল পাখি পালনের সুবিধা গুলো
কোয়েল পাখি পালনের যথেষ্ট পরিমাণ সুবিধা আছে ।অল্প জায়গায় বা খাচায় কোয়েল পাখি পালন করা সম্ভব। নিচে কোয়েল পাখি পালনের কিছু সুবিধা দেওয়া হলো।
- এই কোয়েল পাখি গুলো ছোট এইজন্য অল্প জায়গায় বা ছোট ঘরে বা খাচায় সহজেই কোয়েল পাখি পালন করা যায়।
- ছোট্ট কোয়েল পাখি দাম অনেক কম এইজন্য কেউ অল্প পুঁজি নিয়ে ছোটখাটো খামার দিয়ে ব্যবসা শুরু করতে পারে।
- কোয়েল পাখি পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে এবং আট সপ্তাহের মধ্যে পূর্ণ বড় হয় এবং মানুষের জন্য ব্রয়লার কোয়েল বাজারজাত করার উপযুক্ত হয়। প্রতিটি জাপানি ও বাপ হওয়াই কোয়েলি বছরে ৮ থেকে ১০ সপ্তাহে মধ্যে ডিম পারা শুরু করে।
- কোয়েল পাখির মাংস খুব নরম এবং বেশ সুস্বাদু ডিমেও খুব ভিটামিন। এজন্য উঁচু দরের খাদ্য হিসেবে পরিচিত। মুরগির তুলনায় কোয়েলের দেহের মাংসের ওজন অনুপাতিক হারে বেশি।
- কোয়েল পাখির মুরগির তুলনায় খাবার অনেক কম লাগে।
- কুয়েল পাখির ডিমের চাহিদা ব্যাপক হারে রয়েছে।
- কোয়েল পাখি সারা বছর পালন করা যায় এর অসুখ কম হয়।
- কোয়েল পাখি পালন করে অনেক বেকার যুবক স্বনির্ভর কর্মসংস্থান তৈরি করেছে। বেকার সমস্যা দুর করেছে । স্বল্প পরিসরে পারিবারিকভাবে কোয়েল পালন করা যায় এটা একটি লাভজনক ব্যবসা।
খাচায় কোয়েল পাখি পালন পদ্ধতি
বাড়িতে কোয়েল পাখি চাষ করার জন্য আপনাকে প্রথমে উপযুক্ত খাঁচা তৈরি করতে হবে । এক্ষেত্রে বেশ কিছু পদ্ধতি আছে । তাঁর মধ্যে ব্যাটারি বা খাঁচা পদ্ধতি সবচাইতে সহজ এবং লাভজনক । এছাড়াও বিভিন্ন ধরণের খাঁচা আছে যেমন লেয়ার খাঁচা, ব্রিডার খাঁচা, ব্রডার খাঁচা, বিয়ারিং খাঁচা ইত্যাদি । তবে অল্প জায়গায় যদি বেশি সংখ্যেক কোয়েল পাখি পালন করতে চান তাহলে ব্যাটারী পদ্ধতি ব্যবহার করার সর্বোত্তম ।
খাচায় কোয়েল পাখি পালন করতে হলে ৬০ টি কোয়েল পাখির জন্য ১৩০ সেমি. এবং দৈঘ্য ৬০ সেমি. এবং ৩০ সেমি. উচ্চাতার একটি খাচা লাগবে। খাচার মেঝের জালিটি হবে ১৭-১৮ গেজি ৩-৪ সপ্তাহ পর্যন্ত বাচ্চার খাচার মেঝের জালের ফাকগুলো হতে হবে। আর বয়স্ক কোয়েল পাখির জন্য মেঝের জালের ফাক হবে ৫৬ মিলিমিটার।
খাচার একদিকে থাকবে পানির পাত্র আর অন্য দিকে থাকবে খাবারের পাত্র। খাঁচায় ৫০টি কোয়েলের জন্য তিন সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত ২৫ সেন্টিমিটার বা ১০ ইঞ্চি উচ্চতা বিশিষ্ট ২৮ বর্গ সেন্টিমিটার বা ৩ বর্গফুট জায়গার প্রয়োজন।
কোয়েল পাখি কতদিনে ডিম পারে
কোয়েল পাখি থেকে ভালো মানের ডিম পেতে হলে কোয়েল পাখিকে পুষ্টিকর এবং ভিটামিন যুক্ত খাবার খাওয়াতে হবে। এবং তার সাথে কোয়েল পাখিকে সোনালী ইস্টেটার ফিড খাওয়ালে তাড়াতাড়ি ডিম দেবে।কোয়েল পাখি গুলোকে সোনালী ইস্টেটার ফিট খাওয়ালে প্রায় ৪৭ দিনের মধ্যে ডিম পারবে। পুষ্টির যদি কমতি থাকে তাহলে ৫৭-৬০ দিন সময় লাগবে ডিম পাড়তে।
কোয়েল পাখির ডিম পারার লক্ষণ
- কোয়েল পাখিকে তাড়াতাড়ি ডিম পাড়াতে হলে কোয়েল পাখির পর্যাপ্ত পরিমাণে ওজন আনতে হবে পুষ্টিকর খাবার খাইয়ে কোয়েল পাখির ওজন যখন হবে তখন তাড়াতাড়ি ডিম দিবে।
- কোয়েল পাখির ডিম পাড়ার সময় হলে এক জায়গায় বসে থাকার চেষ্টা করে
- মেয়ে পাখিগুলো ডিম দেয়ার সময় হলে পুরুষ কোয়েল পাখি গুলো ডাকাডাকি করে তখন আপনি বুঝবেন কোয়েল পাখির ডিম পাড়ার সময় হয়ে গেছে।
- আরেকটি লক্ষণ হল মেয়ে পাখিগুলো ডিম পাড়ার আগে কোন দৌড়াদৌড়ি করবে না এবং অন্যান্য পাখির সাথে মারামারি বা ঠুকরাঠুকরি করবে না।
- ডিম পাড়ার আগে কোয়েল পাখির বায়ু পথ একটু নীলচে কালার হবে।
কোয়েল পাখির ঔষধ
কোয়েল পাখিকে ২-৩ মাস পর পর কৃমিনাশক ঔষুধ খাওয়াতে হবে। পাখি অসুস্থ্য হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়েটিক ঔষুধ খাওয়ানো যাবে। কোয়েল পাখির সকল রোগের চিকিৎসা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে করলে ভালো হয়। নিচে কোয়েল পাখির কিছু ঔষুধের নাম দেওয়া হলো-
কোয়েল পাখির কৃমিনাশক ঔষধঃ এভিনেক্স, পেরাভেট, রেনাপার, হেলমাসিড- ভেট, পাইপার ভেট।
কোয়েল পাখির জীবাণু নাশক ঔষধঃ পভিসেপ, বায়োসিড, সুপারসেপ্ট, ভাইরোসিড, টিমসেন, জিপিসি-৮, বায়োক্লিন।
কোয়েল পাখির মাল্টিভিটামিন ঔষুধঃ মেগাভিট, ভিটাক্স- ডব্লিউ এস, ভিটাক্স- বিসি প্লাস, রেনা-ডব্লিউ এস,
কোয়েল পাখির জিংক সিরাপঃ ভিটা জিংক, ওরাজিংক, জিস- ভেট, এজিংক- ভেট, জিংক-কেয়ার।
কোয়েল পাখির ক্যালসিয়ামের ঔষুধঃ সুপার ক্যাল- এফপি, ক্যালভেট- পি, স্যান ক্যাল- পি।
কোয়েল পাখির লিভার টনিকের ঔষধঃ লিভা- ভিট, রেনালিভ, লিভাটোন, হেপাভেট, হেপাটোভিট।
কোয়েল পাখির অ্যান্টিবায়োটিক ঔষুধঃ কসুমিক্স প্লাস, রেনাফ্লাক্স, সিপ্রো-ভেট, রেনামাইসিন।
কোয়েল পাখির খাবার তালিকা
একটি কোয়েল পাখি দৈনিক ২০ থেকে ২৫ গ্রাম খাবার খেয়ে থাকে। আর সেক্ষেত্রে হিসাব করলে ১ হাজার কোয়েল পাখি ২৫ কেজি খাবার খায়। আর ৫০০ কোয়েল পাখি খাবার খায় ১২ কেজি৫০০ গ্রাম। লেয়ার মুরগি যে খাবার খায় সেই খাবারই কোয়েল পাখিকে খাওয়ানো হয়। কোয়েল পাখির খাবার হিসেবে পোল্ট্রি মুরগির খাবার এবং লেয়ার মুরগির খাবার টা দিতে পারেন।
এই খাবার কোয়েল পাখির মাংস বৃদ্ধি করে এবং ডিম উৎপাদনে যথেষ্ট উপযোগী। কোয়েল পাখি খুব ঘনঘন পানি খেয়ে থাকে ।তাই কোয়েলের খাঁচায় কয়েকটি জায়গা পানির পাত্র রাখার ব্যবস্থা রাখতে হবে। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে পানির পাত্র গুলো যেন খাঁচার সাথে শক্ত করে আটকানো থাকে। যাতে পানির পাত্র উপচিয়ে না পড়ে। এতে কোয়েল পাখির গা ভিজে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে।
লেখকের মন্তব্য
কোয়েল পাখি পালন করে বাংলাদেশে আজ অনেক বেকার যুবক লাভবান হচ্ছে। আপনি যদি ইচ্ছে করেন অল্প টাকা বিনিয়োগ করে কোয়েল পালন খাচায় শুরু করতে পারেন। খাচায় কোয়েল পালন করতে চাইলে ৩০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করলে আপনি প্রতি মাসে ১৫-২০ হাজার টাকা আয় করতে পারবেন।
তবে সেটা সঠিক নিয়মে করতে হবে। এবং কোয়েল পাখিকে পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহ করতে হবে এবং যত্ন নিত হবে। বন্ধুরা আমাদের পোষ্ট পরে আপনাদের ভালো লাগলে বা পোষ্ট নিয়ে কোন মতামত থাকলে কমেন্ট বক্সে জানিয়ে দিবেন।
msta2z.comব্লগের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url