কোয়েল পাখির ডিম প্রতিদিন কয়টা খাওয়া যায় বিস্তারিত জানুন
পৃথিবীতে যত রকমের ডিম খাদ্য উপযোগী রয়েছে তার মধ্যে গুনে মানে পুষ্টিতে ভরপুর হলো এই ছোট্ট কোয়েল পাখির ডিম। কোয়েল পাখির ডিমে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন। যা সকল ধরনের মানুষেরা খেতে পারে। সুস্থ্য -অসুস্থ্য সবাই খেতে পারে। তো বন্ধুরা কোয়েল পাখির ডিম প্রতিদিন কয়টা খাওয়া যায় সে বিষয়ে আজ এই পোস্টে আলোচনা করব।
হাসের ডিম, মুরগীর ডিম বা রাজহাসের ডিম এ সকল ডিম ডায়াবেটিস বা প্রেসারের রোগীদের খাওয়া যায় না। কিন্তু কোয়েল পাখির ডিম সকল মানুষেরা খাইতে পারবে। অন্যান্য ডিম খেলে কোলেস্টেরেল এর মাত্রা বেড়ে যায়। কিন্তু কোয়েল পাখির ডিমে অতটা কোলেস্টেরল এর মাত্রা বেড়ে যায় না।
ভৃমিকা
কোয়েল পাখির ডিম যেকোন মানুষেরা নিঃসংকোচে খেতে পারবেন। আমাদের দেশে কোয়েল পাখির ডিমের বেশ জনপ্রিয়তা হয়েছে। এখন প্রায় সবাই কোয়েল পাখির ডিম খায়। ডিমের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দেশে প্রচুর কোয়েল পাখির খামার দিয়েছে বেকার যুবকরা।কোয়েল পাখির ডিম প্রতিদিন কয়টা খাওয়া যেতে পারে এবং এই ডিমের পুষ্টিগুন নিচে দেওয়া হলো-
কোয়েল পাখির ডিমের পুষ্টি উপাদান
কোয়েল পাখিটাও ছোট এবং তার ডিম টাও একেবারেই ছোট। কোয়েল পাখির ১ ডিম সাধারনত ৮-৯ গ্রাম ওজন হবে।আর একটা মুরগীর ডিমের ওজন প্রায় ৫০ গ্রাম পর্যন্ত। তাই পরিমানের দিক থেকে ৫ টি কোয়েল পাখির ডিম একটি মুরগীর ডিমের সমপর্যায়ে হয়ে থাকে। বন্ধুরা চলুন জেনে নেওয়া যাক কোয়েল পাখির ডিমে কি পরিমান পুষ্টিগুন থাকে-
কোয়েল পাখির ডিমে রয়েছে-
- ১৪ গ্রাম - ক্যালোরি
- ১ গ্রাম-ফ্যাট
- ওমেগা-৩, ৪ মিলিগ্রাম- ফ্যাটি এসিড
- ওমেগা- ৬, ৮৪ মিলিগ্রাম - ফ্যাটি এসিড
- ৭৬ মিলিগ্রাম- কোলেস্টেরল
- ১.২ গ্রাম- প্রোটিন
- ভিটামিন এবং মিনারেল
- ১% - ভিটামিন-এ
- ৪% - রিবোফ্লাভিন
- ২%- ভিটামিন বি১২
- ২% - প্যানথেনিক এসিড
- ২%- আয়রন
- ৪% - সেলেনিয়াম
- ২% - ফসফরাস
আপনারা একটি ব্যাপার লক্ষ্য করুন, কোয়েলের ডিমের আকারের তুলনায় অনেক বেশী আমিষ পাওয়া যায়। ছোট কোয়েল পাখির ডিমে ভিটামিন এবং খনিজ লবণে পরিপূর্ণ।
কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা
আমাদের দেশে কোয়েল পাখির ডিম খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কোয়ের পাখি এবং এর ডিম উৎপাদনের জন্য তৈরী হচে্ছ দেশে অনেক খামার। যার ফলে দেশের কিছু বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের ব্যাবস্থা ও হচ্ছে। কোয়েল পাখি আকারে ছোট এবং এর ডিম ও আন্যান্য ডিমের চেয়ে আকারে অনেক ছোট।
তাই আপনি এই ছোট্ট ডিমকে তুচ্ছ মনে করবেন না।অন্যান্য ডিমে থাকা পুষ্টি উপাদান গুলোর সবগুলো এই ছোট্ট আকারের ডিমে পাবেন। যার জন্য একজন সুস্থ্য মানুষ প্রত্যেকদিন কোয়েল পাখির ডিম খেতে পারবেন। কারন কোয়েল পাখির ডিমে এমন কিছু পুষ্টি উপাদান আছে যা অন্য ডিমে পাবেন না। তো আসুন বন্ধুরা জেনে নেওয়া যাক কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা গুলো।
শরীর সুস্থ্য রাখে।চিকিৎসকরা বলেন, আপনি যদি নিয়মিত কোয়েল পাখির ডিম খেতে পারেন তাহলে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পেলে আপনার শরীর সুস্থ্য থাকবে। এই জন্য আপনাকে কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ার অভ্যস করতে হবে।
শরীরে ভিটামিন পূরন করে
হাস মুরগীর ডিমের মতোই কোয়েল পাখির ডিমে রয়েছে ভিটামিন। এই ছোট্ট ডিমে রয়েছে আয়রন, ফসফরাস, ভিটামিন বি-১,এবং ভিটামিন বি-২ রয়েছে। একটি মুরগীর ডিমের তুলনায় কোয়েল পাখির ডিমে ৬ গুন ভিটামিন বেশী রয়েছে। এই জন্য আপনাকে নিয়মিত কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ার অভ্যাস গরে তুলতে হবে।
এলার্জি প্রতিরোধ করে থাকে
আমাদের শরীরে প্রয় সাবারই কম বেশী এলার্জি আছে। বিভিন্ন ধরনের ঔষুধ খাওয়ার পরেও এই সমস্যা দুুর হয় না। কিন্তু আপনে জানেন না যে এলার্জি প্রতিরোধে করতে পারে কোয়েল পাখির ডিম। কারন এই ডিমে রয়েছে এলার্জি প্রতিরোধক উপাদান। যাদের বেশী বেশী ঠান্ডা লাগে তারা নিয়মিত কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ার অভ্যাস গরে তুলুন।
শরীরে রক্তের পরিমান বাড়ায়
কোয়েল পাখির ডিম আমাদের শরীরে শক্তির উৎস হিসাবে কাজ করে এবং দেহের শক্তি বাড়াতে সাহয্য করে। এই ডিমে উপস্থিত অ্যামিনো এ্যাসিড নতুন নতুন টিস্যু তৈরী করে, টিস্যুর ক্ষয়রোধ করে এবং ব্লাড সুগার নিয়ত্রনকরে, আয়রনের অভাব পূরন হয় এবং শরীরের রক্তের স্বল্পতা দুর করে। যাদের শরীরে রক্ত কম আছে তারা নিয়মিত কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ার অভ্যাস গরে তুলুন।
দেহকে পরিষ্কার রাখে
আমাদের বাড়ির আশেপাশে ময়লা হলে যেমন পরিষ্কার করি তেমনি আমাদের শরীরের ভিতরে কিছু বদ বা ময়লা জমা হয়। দেহের এই ময়লাকে পরিষ্কার করার জন্য কোয়েল পাখির ডিম বিশেষ কার্যকর ভৃমিকা পালন করে। দেহের ময়লাকে মুত্রের মাধ্যমে দুর করতে সহায়তা করে।
শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি করে
ছোট কোয়েল পাখির ডিম নিয়মিত খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরী করে। আপনার শরীরে অ্যান্টিবডি পর্যাপ্ত পরিমানে থাকলে আপনার রোগ হওয়ার সম্বাভনা কম থাকে। আপনি নিয়মিত কোয়েল পাখির ডিম খেয়ে শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরী করুন।
ত্বক এবং চুলের জন্য উপকারি
শরীরের অন্যান্য অঙ্গের চেয়ে আমরা ত্বক এবং চুলের বেশী যত্ন নেয়। কোয়েল পাখির ডিমে রয়েছে ভিটামিন বি যা চোখের দৃষ্টশক্তি রক্ষার সাথে সাথে লোহিত রক্ত কণিকাও উৎপাদন করে যা আমাদের ত্বক, চুলের জন্যে খুবই উপকারি হিসেবে কাজ করে।
কোয়েল পাখির ডিমের অপকারিতা
কোয়েল পাখির ডিম খেয়ে যে উপকারী হয় বা ক্ষতি হয় সেসব ক্ষতি সকল ধরনের মানুষের জন্য হয় না। এই ক্ষতিগুলো কিছু নির্দিষ্ট মানুষের জন্য কাজ করে। আর আমরা যখন কোয়েল পাখি ডিমের উপকারী উল্লেখ্য করবো, তখন আপনারা নিজে নিজে বুঝতে পারবেন বিষয়টি। যে আপনার জন্য কোয়েল পাখির ডিম উপকারি হবে না ক্ষতি কর হবে।
আরো পড়ুনঃ হাফ বয়েল ডিম খাওয়ার উপকারিতা জেনে নিন
এটা আপনি কখন খেতে পারবেন এবং কিভাবে খেতে পারবেন। নিচে কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা গুলো বিস্তারিত ভাবে দেওয়া হল-
- কোয়েল পাখির ডিমে থাকে অতিরিক্ত পরিমাণে কোলেস্টেরল। যা শরীরের কোলেস্টেরল লেভেল বাড়িয়ে তোলে যাদের অতিরিক্ত প্রেসার আছে তাদের খাওয়াটা ঠিক হবে না।
- কোয়েল পাখির ডিম থাকে অতিরিক্ত মানের পুষ্টি। যা একটি হার্ড দুর্বল রোগীদের হার্ট ব্লক করে দিতে পারে। হার্টের রোগীদের কোয়েল পাখি ডিম না খাওয়াটাই ভালো।
- যারা ডায়াবেটিস ও হৃদ রোগে আক্রান্ত রোগী আছেন তাদের যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকে। তাহলে তাদের ক্ষেত্রে কোয়েল পাখির ডিম এড়িয়ে চলা উচিত। কেননা এতে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাট আছে। অন্যান্য রোগীদের সমস্যার কারণ হতে পারে।
উপরোক্ত আলোচনায় দেখা যায়, কোয়েল পাখির ডিমের ক্ষতির চেয়ে উপকারিতাই বেশি ।আমরা যদি এই ডিম খাওয়ার মাত্রা অতিরিক্ত বাড়িয়ে দিই তখন আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর হয়ে যায়। অর্থাৎ কোন খাবার অতিরিক্ত গ্রহণ করা ভালো নয়। নিয়ম মাফিক খেলে শরীর সুস্থ এবং সবল থাকে।
কোয়েল পাখির ডিম প্রতিদিন কয়টা খাওয়া যায়
কোয়েল পাখির ডিমের মধ্যে যথেষ্ট পরিমাণে প্রোটিন, মিনারেল, এনজাইম, ভিটামিন, এবং অ্যামাইনো এসিড, এমনভাবে আছে যে, এই ডিম শরীরের সব ধরনের পুষ্টির অভাব পূরণ করে থাকে। শরীরের কর্মদক্ষতা বাড়িয়ে দেয়। এবং রোগ প্রতিরোধ করে থাকে। মুরগির ডিমের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায় কোয়েল ডিমের কোলেস্টেরল ১.১৪% আর মুরগির ডিমের ৪% এবং প্রোটিনের পরিমাণ মুরগির ডিম থেকে প্রায় শতকরা সাত ভাগ বেশি।
ছোট্ট পাখি কোয়েল ডিমে খাওয়ার ফলে একজন মানুষের হজম শক্তি বাড়ায়, মস্তিষ্ক শতেষ রাখে, কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করে, বাচ্চাদের মানসিক শারীরিক এবং বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ঘটায়, হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা উন্নত করে, কিডনি এবং লিভারের কর্মদক্ষতা দুর্বল থেকে সবল করে। প্রতিদিন ২ থেকে ৪ টি কোয়েল পাখির ডিম খেতে পারবেন। দুর্বল লোকেরা সবল হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ার নিয়ম
কোয়েল পাখি ডিমে আছে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান যেমন, ভিটামিন -এ, প্রোটিন, মিনারেল, এবং আমায় নো এসিড থাকার ফলে আমাদের শরীরে প্রায় সকল ধরনের পুষ্টির অভাব পূরণ হয়। এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তার পাশাপাশি শরীরের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিশেষ কার্যকর ভূমিকা পালন করে এই কোয়েল পাখির ডিম।
কোয়েল পাখির ডিম সাধারণত আপনি এমনিতেই অন্যান্য সকল ডিমের মতো সিদ্ধ করে, ভাজা, কাঁচা, এবং রান্না করে, তরকারির সাথে রান্না করে, খেতে পারবেন। প্রাপ্তবয়স্করা প্রতিদিন খাদ্যের অংশ হিসেবে তিন থেকে পাঁচটি কোয়েল পাখির ডিম সিদ্ধ করে নিমিষে খাবারের সঙ্গে খেতে পারে। এতে বেশ উপকার পাবেন।
কোয়েল পাখির ডিমে কি এলার্জি আছে
আমি যতদূর জানি যে কোয়েল পাখি ডিমের কোন এলার্জি নেই, বরং নিয়মিত খেলে এলার্জি প্রতিরোধ করে। তারপরে ও কোয়েল পাখি ডিমে আপনার এলার্জি আছে কি না তা জানতে আপনাকে কোয়েল পাখি ডিম আগে খেতে হবে। খাওয়ার পর যদি আপনার শরীরে কোন ধরনের সমস্যা দেখা দেয় তাহলে বুঝবেন আপনার কোয়েল পাখির দিনে এলার্জি আছে। আর ডিম খাওয়ার পরে যদি কোন সমস্যা বা এলার্জির লক্ষণ দেখা না দেই তাহলে বুঝবেন যে আপনি কোয়েল পাখির ডিমের কোন এলার্জি নেই।
কোয়েল পাখির ডিম ও মুরগীর ডিমের তুলনা
শরীরের প্রয়োজনীয় সকল ধরনের ভিটামিন, মিনারেল, অ্যামিনো এসিড ,কোয়েল ডিমের রয়েছে। যার কারণে কোয়েল ডিম ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা নিয়ে গবেষকদের কোন মতবেদ নেই। সবচাইতে সেরা এবং বেটার এই কোয়েল পাখির ডিম। মুরগির ডিমের চেয়ে কোয়েল পাখির ডিমে চারগুণ পুষ্টি বেশী। মুরগির ডিমের চাইতেও আবার হাসের ডিমের পুষ্টি বেশি।
সেই হিসেবে কোয়েল পাখির ডিম হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ। কোয়েলের ডিম খেলে তার কোন ক্ষতি কর দিক নেই। কোয়েলের ডিমে এমন সব উপাদান আছে যা কোলেস্টেরল ওজন কমাতে সাহায্য করে। এই ডিম সব বয়সের মানুষ খেতে পারবে। কোয়েল ডিম দেহের সকল পুস্টি উপাদান পুরন করে। সুতরাং কোয়েল পাখির ডিমের পুষ্টি উপাদান বেশি।
কোয়েল পাখির ডিমের দাম কত
বর্তমানে বিভিন্ন খামারে ৭০ হাজারের বেশি কোয়েল পাখি আছে। শুধু বাগেরহাট জেলাতে। এবং এই সংখ্যা প্রতি সপ্তাহে একজন ব্যক্তি ৪থেকে সাড়ে৪ হাজার ডিম ৪২০০ থেকে ৪৫০০ কোয়েল পাখি বিক্রি করতে পারছেন ।প্রতিদিন প্রতিটি ডিমের দাম ২ টাকা ও প্রতিটি কোয়েল পাখির পাইকারি দাম ২০ থেকে ৩০ টাকা।
তবে অনেক সময় বাজারের দ্রব্যমুল্য কম বেশী হলে সেক্ষেত্রে ডিমের দাম বাড়তে পারে।তাহলে এই ধরনের সকল তথ্যগুলো পেতে আপনারা আমাদের ওয়েব সাইটে ভিজিট করে আমাদের সঙ্গে থাকতে পারেন।
লেখকের মন্তব্য
কোয়েল পাখির ডিমে থেকে নির্দিষ্ট পরিমান পুস্টি পেতে আপনাকে অবশ্যই নিয়মিত ডিম খেতে হবে।দেহের পুস্টির গুনাগুন এবং রক্তস্বল্পতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কোয়েল ডিমের কোন বিকল্প নেই। এবং শিশুদের মানসিক এবং শারিরিক বিকাশের জন্য আপনি দিনে ১-২ টা কোয়েল পাখির ডিম সিদ্ধ করে খাওয়াতে পারেন।
আমাদের পোস্টটি ভালো লেগে থাকলে কমেন্ট বকসে জানিয়ে দিবেন। আর পোষ্ট নিয়ে কোন মন্তব্য থাকলে জানাবেন।
msta2z.comব্লগের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url