ওলট কম্বল গাছের হাজারো গুনগুন ও ওলট কম্বল বীজের উপকারিতা | Msta2z

ওলট কম্বল গাছের হাজারো গুনগুন ও ওলট কম্বল বীজের উপকারিতা

আসসালামু আলাইকুম বন্ধুরা। আজ আমি আপনাদের জন্য ওলট কম্বল গাছের হাজারো গুনগুন সম্পর্কে লেখব। এই গাছের ফল, ফুল, এবং পাতা, ডাটার কত যে শরীরের জন্য উপকারি তা হয়তো আজও অনেকেই জানে না। বৃ্দ্ধ থেকে শুরু করে ৮০ বছরের বৃদ্ধ পর্যন্ত এই গাছের উপকারিতা নিতে পারবে।
ওলট কম্বল গাছের হাজারো গুনগুন

রাস্তার ধারে বনে জঙ্গলে ভেষজ অনেক উদ্ধিদ আছে যা আমাদের শরীরের ঔষুধ হিসাবে কাজে লাগে।তবে ইউনানী ও কবিরাজী রা ভেষজ উদ্ধিদ ভালো চিনেন।অনেক স্ব- শিক্ষিত কৃষকেরা ও চিনেন। আমাদের উদ্ধিদের গুনাগুন জানা প্রয়োজন।

ভৃমিকা

এসব দরকারি উদ্ধিদ আমাদের শরীরের রোগব্যাধির ঔষুধ। ওলট কম্বল এই গাছটিকে অনেকেই Devil`s Cotton বলে চেনেন। কারন এ গাছের হুল চামরায় জ্বালা ধরায়। এই গাছটি ঔষুধি গাছ নামে পরিচিত। এই গাছটি পাওয়া এশিয়ার সব জায়াগাতে।এই গাছে ফুল ফোটে এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে। ওলট কম্বল মানুষের দেহের শক্তিবলের ঔষুধি গাছ নামে পরিচিত।

ওলট কম্বল গাছ চেনার উপায়

আমাদের দেশে প্রায় সবজায়গাতেই ওলট কম্বল গাছ দেখা যায় বা পাওয়া যায়। তবে বাংলাদেশে এগাছ এখন চাষা আবাদ করা হয়। কারন এ গাছ একটি ঔষুধি গাছ। মানবদেহের বিভিন্ন রোগের সমাধান দেয় এ গাছ। এ গাছের ইংরেজী নাম ডেভিলস কটন। এই গাছটি ৯-১০ ফুট লম্বা হয়ে থাকে। বেশী মোটা হয়না। এগাছ গুল্মাজাতীয় চিরহরিৎ গাছ।

আদি নিবাসঃ বাংলাদেশ সহ, ভারত, পাকিস্থান, সব দেশেই এগাছ টি রয়েছে। কিন্তু এশিয়ার প্রধান এলাকায় এর আদি নিবাস।

পাতাঃ পাতার সামনে দিকে সরু এবং পাতার রং উজ্জল গারো সবুজ। পাতার বোটা টা খয়েরি রঙের এবং গাছের বাকল শক্ত আশযুক্ত।

ফুলঃ ওলট কম্বল গাছের ফুলের রঙ খয়েরি। পাপরি আছে পাঁচটি এবং কচি ডগায় এ ফুল ফোটে। ফুল দেখতে খুবই সুন্দর। গ্রীষ্ম মাসে ফুল ফোটা শুরু হয় এবং শরৎ পর্যন্ত থাকে। শীতকালে এ গাছের ফুল দেখা যায় না।

ফলঃ ফুলের শেষে ফল হয়। ফলের রঙ প্রথমে সবুজ রঙের হয় পরে শুকিয়ে গেলে কালো রঙের হয়। এ ফল পুষ্ট হলে ফেটে যায় এবং ফলের বাইরে এবং ভিতরে কম্বলের মতো লোমশ অংশ থাকে। যে গুলো হাতে লাগলে খুব চুলকায়। এই জন্য সাবধানে ফল তুলতে হয়।

ওলট কম্বল গাছের উপকারিতা ও হাজারো গুনাগুন

  • ওলট কম্বল গাছটি সাধারনত ৯ থেকে ১২ ফুট লম্বা হয় এবং মিডিয়াম সাইজের হয়। গাছের ছালে রেশমের মত আঁশ থাকে, এবং ফুলের রং মেরুন কালার। কাচা অবস্থায় রং হয় সবুজ এবং পাকলে ধুসর রঙের হয়। এ গাছের পাতা, ফুল, ছাল, কান্ড সবকিছুই ওষুধি হিসাবে ব্যবহত হয়।
  • শরীরের দুর্বলতা এবং জ্বর, কৃমি, আমাশয় রোগে এবং বায়ু অধিক্য ওলট কম্বল অধিক উপকারি।
  • এগাছের ডাটা রাতে ভিজিয়ে সকালে পানি টুকুন পান করলে শরীরের ক্যালসিয়াম বৃদ্ধি পায়।
  • ডাটার রস করে খেলে প্রসাবের জ্বালা পোড়া, এবং আমাশয় রোগীর জন্য ভালো উপকারি।
  • অতিরোক্ত কৃমিনাশক,হাপানিরোগ, কুষ্ট রোগ, এবং অনিদ্রা দুর করে।
  • ওলট কম্বলের রস মাথার চুলে লাগালে চুল পরা বন্ধ করে এবং চুল গজাতে, এবং চুল কালো রাখতে সাহয্য করে।
  • ওলট কম্বলের ডাটা সিদ্ধকরে এর রস গুলো ঘা, পচরা, চুলকানিতে লাগালে তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যাবে।
  • ওলট কম্বলের রস প্রত্যেকদিন সকালে একগ্লাসকরে পান করলে,শরীরের যৌনশক্তি বৃদ্ধি করে এবং একই সাথে বার্ধক্যজনিত সমস্যা কমিয়ে দেয়।
  • ওলট কম্বল রক্ত আমাশয়ে খুব উপকারি। সারারাত পাতা পানিতে ভিজিয়ে রেখে সেই পানি সকালে পান করলে রক্ত আমাশয় ভালো হয়ে যায়। তবে নিয়ম করে কয়েক দিন খেতে হবে।
  • মেয়েদের ঋতুস্রাব, জরায়ু সংক্রান্ত সমস্যা এবং শরীরের ব্যাথাসহ বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে কার্যকরি।
  • ওলট কম্বল হাপানি এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দুর করতে বেশ কার্যকরী। ৫-৬ গ্রাম ওলট কম্বল খোসা গুরো করে এর সাথে চিনি মিশিয়ে রাতে গরম পানি দিয়ে খেলে বেশ উপকার পাওয়া যায়।
  • এগাছের পাতার রস এবং কান্ডের রস গনোরিয়া, স্ত্রীরোগ ও ফোরা সারাতে বেশ উপকারি।
  • প্রতিদিন সকালে বা বিকালে হোক যেকোন সময় এর পাতার রস দুই চামুচ করে খেলে সর্দিকাশি ভালো হয়ে যাবে।

ওলট কম্বল বীজের উপকারিতা

বন্ধুরা ওলট কম্বল ডাটা যেমন উপকারি তেমনি এর বীজ ও উপকারি। এর মাধ্যমে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রোগ ভালো হয়। ত বন্ধুরা আমরা এখন জানে নেয় ওলট কম্বল বীজ কি কি উপকারে আসে।
  • যাদের বীর্য তাড়াতাড়ি হয়, বীর্যখুবই পাতলা তাদের জন্য ওলট কম্বল বীজ একটা বিশেষ ঔষুধ হিসাবে ব্যাবহত হয়ে থাকে। যাদের এসমস্যা আছে তারা যদি প্রতিদিন ৩-৪ টা বীজ পানের সাথে বা এমন চিবিয়ে খায় তাহলে তাদের এই রোগ গুলো দুর হয়ে যাবে।
  • যাদের ঘন ঘন স্বপ্ন দোষ হয় বা স্বপ্নদোষের কারনে শরীর শুকিয়ে গেছে, চোখ মুখ খানা শুকিয়ে গেছে বা চোখ গুলো গর্তের মধ্যে ঢুকে গেছে তাদের জন্য ওলট কম্বল বীজ অত্যন্ত উপকারি এবং ভেষজ গুন সম্পর্ন।
  • যাদের ধাতুর দুর্বলতা আছে এবং লিঙ্গ শিথিল, বা উথ্থান হয় না বা সামান্য উথ্থান হলেও আবার শিথিল হয়ে যায়,স্ত্রী সহবাসে মোটে ও তৃপ্তি লাভ করতে পারে না তাদের জন্য ওলট কম্বল বীজ অলটাইম ঔষুধের মত কাজ করে। নিয়মিত এ গাছের বীজ খেলে ইনশাল্লাহ এ সকল সমস্যা ভালো হয়ে যাবে।
  • দ্রুত বীর্যপাত রোগে অনেক পুরুষরাই ভোগেন তারা যদি এই ওলট কম্বল বীজ নিয়মিত খায় তাহলে বেশ উপকার পাবেন।
  • বিবাহিত এবং অবিবাহিত সকলেই খেতে পারবেন।

ওলট কম্বল গাছের ডাটার উপকারিতা

  • ওলট কম্বল ডাটা ছোট ছোট টুকরো করে, সারা রাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে ঐপানির সাথে একটু বীট লবন দিয়ে খেয়ে নিবেন এতে শরীরের বিভিন্ন রোগ ভালো হয়ে যায়। এবং ডায়াবেটিস রোগে ও বেশ কার্যকরি।
  • ডাটার পানিতা প্রত্যেকদিন সকালে খালি পেটে খেলে বেশ উপকার পাওয়া যায়। তবে নিয়ম মত প্রত্যেকদিন খেতে হবে।
  • ৭০ থেকে ৮০ বছরের বৃদ্ধ ও এভাবে ডাটার সরবত করে খেলে তাদের শরীর ও চাঙ্গা হয়ে উঠবে।

ওলট কম্বল ঔষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কি

না, ওলট কম্বল একটি ভেষজ উদ্ধিদ। এর গাছের পাতা,ডাটা, ফুল এর কোন ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। এ গাছের ঔষুধ বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে টনিকের মতো কাজ করে।এ থেকে তৈরী ঔষুধের কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। ওলট কম্বল, শুলফা বীজ, আওবেল, সারাকা ইন্ডিকা, চায়নারুট, শুকনা পুদিনা, শিয়ালকাটা, কপচিনি, জটামাংসী, তজ, এবং বড় এলাচসহ অন্যান্য উপদান মিলিয়ে ঔষুধ তৈরী করা হয়। 

আপনেরা কোন সন্দেহ ছারাই এ গাছের ঔষুধ খেতে পারবেন। এগাছের তৈরী ঔষুধ, কাচা পাতার রস, কাচা ডাটার রস, এবং কাচা ফুলের রস, সেবন করে কখনো কোন ক্ষতি তো করবেই না বরং অসখ্য সমস্যা এবং রোগ থেকে মুক্তি দেয়।

ওলট কম্বল গাছ কোথায় পাওয়া যায়

ওলট কম্বল গাছ একটি ঔষুধি গাছ। অনেকেই বলেন এই গাছটি ভারত বর্ষে বেশী পাওয়া যায় বা সেখানে চাষ আবাদ করা হয়। কিন্তু বর্তমানে প্রায় সব দেশেয় এ গাছ পাওয়া যায়। তবে বাংলাদেশে গ্রাম- শহর সবজায়গাতে আছে। বাংলাদেশে এখন এই গাছ চাষ আবাদ ও করা হচ্ছে। এগাছ টি এমন একটি ঔষুধি গাছ যার পাতা, ডাটা, ফুল, ফল, শেকড় সব কিছুই মানুষের উপাকারে লাগে।

ওলট কম্বল খাওয়ার নিয়ম

ডাটাঃ ওলট কম্বলের ডাটা ছোট ছোট করে টুকরো করে রাতের বেলা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। সকালে সেই পানি একটু ঘন হয়ে যাবে বা সরবতের মতো হয়ে যাবে। ঐ পানিতে বা সরবতে একটু বীট লবণ , চিনি মিশেয়ে সকালে খালি পেটে খেয়ে নিবেন। বেশ মজাদার সরবত এবং বেশ উপকার ও পাবেন।

পাতাঃ ওলট কম্বলের পাতা টাটকা গাছ থেকে পেরে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। তারপর বিলিনডারে বা পাটায় ভালো করে বেটে রস চিপে বের করে নিতে হবে। এই রস সকালে বা বিকালে যে কোন টাইমে খেতে পারবেন।ভালো ফল পেতে এভাবে ২১ দিন পর্যন্ত খাবেন তাহলে বেশ উপকার পাবেন।

পাতা সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে সেই পানি সকালে খালি পেটে পান করলে রক্ত আমাশয় ভালো হয়ে যাবে এবং পেটের গ্যাস জনিত সমস্যা দুর হবে।

শিকড়ঃ ওলট কম্বলের শিকড় তুলে ভালো করে ধুয়ে বেটে রস করে খাওয়া যায়।

ফুলঃ ওলট কম্বলের ফুল ও বেটে রস বের করে খেতে হয়।

ফলঃ ওলটকম্বল ফলের ভিতর কালি জিরার মতো ছোট ছোট দানা আছে সেগুলো পানের সাথে বা এমনি চিবিয়ে খেতে পারবেন।

শেষ কথা

গ্রামের গৃহস্থ বাড়িতে এই গাছ প্রয়োজনীয় ঔষুধ বলে অনেকেই রোপন করে থাকেন। এছারাও রাস্তার পাশে বা জঙ্গলের ভিতরে এগাছ বেশ দেখা যায়। এই ওলট কম্বল থেকে মানুষের নানা রকম রোগের উপশমের ঔষুধ মিলে । তাই আজে বাজে গাছ না লাগিয়েি ঔষুধি গাছ যেগুলো যেমন, ওলট কম্বলগাছ, নিমগাছ, লজ্জাবতী গাছ, তুলশী গাছ ইত্যাদি গাছ গুলো বাড়িতে লাগিয়ে রাখলে হাতের কাছে সহজেই পাওায়া যায় এবং সেবন করা যায়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

msta2z.comব্লগের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url