কোন জাতের ছাগল পালনে লাভ বেশি হয় বিস্তারিত জানুন
প্রিয় বন্ধুরা, আসসালামু আলাইকুম। আশা করি ভালোই আছেন। কোন জাতের ছাগল পালনে বেশী লাভ হয়, এই প্রশ্ন সকল ছাগল পালন খামারি ভাইদের। হ্যা ভাইয়া আপনি যদি বাংলাদেশী ছাগল খামারি বা ছাগল পালনের ব্যাবসা করতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে ভালো জাতের ছাগল বাছাই করতে হবে বা বাজার থেকে কিনতে হবে।
বর্তমানে বাংলাদেশ ছাগল পালন করা টা জনপ্রিয় হয়ে গেছে। যদিও এটি একটি প্রতিষ্ঠিত ব্যাবসা তাই অনেক ভাইয়ারা ছাগল পালণ ব্যাবসাকে বানিজ্যিক ভাবে পালনে কথা ভাবছেন। কোন জাতের ছাগল পালনে বেশী লাভ তা নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
ভৃমিকা
বাংলাদেশে যেমন ছাগলের দুধ ও মাংসের চাহিদা আছে তেমনি আন্তর্জাতিক বাজারে ও ছাগলের দুধ ও মাংসের চাহিদা ব্যাপক আছে। একারনেই বাংলাদেশের যুবক ও যুবতী ভাই বোনরা ছাগল পালনে বেশ উদ্বিগ্ন হয়েছে। বানিজ্যিক ভাবে ছাগল পালন করে গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের আর্থনীতিক সম্ভবনা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কোন জাতের ছাগল পালনে লাভ বেশী হয়
সকলা প্রানীর মতো ছাগলের ও জাত আছে। ছাগলের বিভিন্ন জাতের মধ্যে বিভিন্ন শারিরিক গঠন, রং এবং চারিত্রিক বৈশিষ্টর পরিবর্তন দেখা যায়। আপনি কোন ধরনের ব্যাবসা করতে চান তার উপর নির্ভর করে আপনাকে ছাগলের জাত বাছাই করতে হবে। বিশ্বে প্রায় ৪০-৫০ টির উপরে ছাগলের জাত আছে ।তো চলুন বন্ধুরা এই ৫০ টি ছাগলের জাতের মধ্যে কয়েক টি সেরা বা বেশী লাভ হবে সে জাতের ছাগলের নাম দেওয়া হলো-
ব্ল্যাকবেঙ্গল ছাগল
বাংলাদেশের গ্রাম এলাকায় প্রায় সব বাড়িতে এই ব্লাকবেঙ্গল ছাগল পালন করা হয়। ব্লাকবেঙ্গল ছাগলটি আমাদের দেশী ছাগল। এই ছাগলের গায়েল রং সাধারনত কালো রঙ্গের বেশী হয়। ছারাও সাদা, বাদামী এবং ধূসর রঙ্গের পাওয়া যায়। এই ছাগল গুলো পালন করা খুব সহজ। এই ছাগল গুলোর বেশী যত্নের প্রয়োজন পরে না।
এরা প্রাকৃতি উৎস থেকে খাবার খেয়ে থাকে। বিশেষ করে ঘাস, পাতা, আগাছা, ভাতের মার, গমের ভুসি, ধানের ভুসি, বিভিন্ন গাছের পাতা ইত্যাদি যা পায় তাই খায়। এই ব্লাকবেঙ্গল ছাগল বছরে ২-৩ বার বাচ্চা দেয়। তারা ভালো প্রজনন কারি জাতের ছাগল এবং ১৮-১৫ মাস বয়সে প্রজনন শুরু করে। ব্লাকবেঙ্গল ছাগলের দুধ উৎপাদন তুলুনা মুলক ভাবে কম।
ব্লাকবেঙ্গল পুরুষ জাতের ছাগল ২৫-৪০ কেজী মাংস হয়। এই জাতটি প্রথম দিকে প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে যায় এবং প্রতিটি স্তন্যদানে ২-৩ তিনটি বাচ্চার জন্ম দেয়।
যমুনপারি ছাগল বা রাম ছাগল
বাংলাদেশে যমুনা পারি ছাগলের উৎপাদন বেশ ভালো। এই ছাগলের গায়ের রং সাধারনত সাদা হয়ে থাকে। মুখে হালকা হলুদ এবং ঘার ও মুখে হালকা গাঢ় বাদামী দাগ থাকে। তাছার ও এই জাতের ছাগল কিছু কিছু কালো রঙ্গের ও দেখা যায়। যমুনা পারি ছাগলের দুধ এবং মাংস বেশ ভালোই হয়। যমুনা পারি ছাগলকে ছাগলের সেরা জাত বলা হয়।
একটি প্রাপ্ত বয়স্ক ছাগলের ওজন প্রায় ৪৫-৫০ কেজী পর্যন্ত হয়। পুরুষ ছাগলের দাড়ি হয়। আর যমুনা পারি ছাগল একটা থেকে ২ টা বাচ্চা দেয়।
বারবেরী জাতের ছাগল
আমাদের দেশে বারবেরী ছাগলের জাত পাওয়া যায়। এই ছাগল আপনেরা সহজেই পালন করতে পারবেন। এই ছাগল পালনে আপনাকে বেশী পরিশ্রম করতে হবে না। বারবেরী জাতের ছাগলের মাংস এবং দুধ বেশ ভালো পাওয়া যায়। এই জাতের ছাগলের দুধের পরিমান ও অনেক। এই ছাগল বাজারে ১০-১৫ হাজার টাকার মধ্যে পাবেন।
বিটল জাতের ছাগল
বিটল জাতের ছাগল গবাদিপশু পালনকারিরা দুধ এবং মাংসের জন্য পালন করে। বিটল জাতের ছাগল প্রতিদিন ২-৩ লিটার দুধ দেয়। এই ছাগলের দাম ১০-১৫ হাজার টাকা।
কালাহারি জাতের ছাগল
আমাদের দেশে সাধারনত কালাহারি জাতের ছাগল মাংসের জন্য পালন করা হয়। কালাহারি ছাগলের মাংস অন্যান্য ছাগলের মাংসের তুলনায় অনেক নরম মাংস। আর কালাহারি ছাগলের প্রজনন ক্ষমতা ও ভালো। এই জাতের ছাগলেরা প্রায় ৯-১০ মাস পর বাচ্চা দেয়। বানিজ্যিক ভাবে ছাগল পালনে এই জাত সর্বোচ্চ লাভ দিতে পারে।
এছারাও বাংলাদেশে আরো অনেক জাতের ছাগল আছে যেমন,
বোয়ারা জাতের ছাগল
সিরোহী জাতের ছাগল
সানেন জাতের ছাগল
বিতাল জাতের ছাগল ইত্যাদি
ছাগলের দুধের উপকারিতা
ছাগলের দুধে প্রচুর পরিমানে পুষ্টি আছে। ছাগলের দুধ পান করার অনেক উপকার আছে। এই ছাগলের দুধে আছে প্রচুর ক্যালসিয়াম, এবং ভিটামিন এ বেশী থাকে। গরুর দুধের তুলুনায় ছাগলের দুধ মানুষ সহজেই হজম করতে পারে।
কোন জাতের ছাগল বেশি বড় হয়
আমাদের দেশে বিভিন্ন জাতের ছাগল আছে। তবে আমরা যে ছাগল সচারচর পালণ করে থাকি মানে গ্রাম -গন্জে পালন করে সে জাতের ছাগল আকারে ছোট হয়। এছারাও যে ছাগল গুলো উচ্চতায় অনেক লম্বা হয় সে জাতের কয়েক টি ছাগলের নাম নিচে দেওয়া হলো।
- হরিয়ানা ছাগল
- শিরোহী ছাগল
- তোতাপরি ছাগল
- অ্যাংলো নুবিয়াণ ছাগল
- আঙ্গোরা ছাগল
- কাশ্মীর ছাগল
- টগেন বার্গ ছাগল
এই জাতের ছাগল গুলোর উচ্চতা প্রায় ২০-২৬ ইঞ্চি লম্বা হয় এবং এদের মাংস হয় প্রায় ৪৫-৫০ কেজী পর্যন্ত।
কোন জাতের ছাগল বেশী বাচ্চা দেয়
ব্ল্যাকবেঙ্গল ছাগলঃ এই জাতের ছাগল আমাদের বাংলাদেশে এবং ভারতে বেশী পাওয়া যায় বা পালন করে। এই ছাগল গুলো বছরে ২ বার বাচ্চা দেয়। কিন্তু ব্লাকবেঙ্গল ছাগলের দুধ তুলুনা মুলক ভাবে কম হয়। আর বাচ্চা প্রায় ৩-৪ টি হয়।
বোয়ারা ছাগলঃ বোয়ারা ছাগল ৫-৬ মাস বয়সে যৌন পরিপক্কতায় পৌছে। এই জাতের ছাগল বছরে ৩ টি বাচ্চা উৎপাদন করে। প্রথম বার একটি বাচ্চা হয় পরে সাধানরত ২টি করে বাচ্চা দেয়।
বিটল ছাগলঃ বিটল ছাগলের প্রায় ১৪-১৫ মাস বয়সে প্রজনন ক্ষমতা হয়। প্রায় দুই বছর বয়সে প্রথমবার বাচ্চা দেয়। কিন্তু বছরে একবার হলেও তিন টি করে বাচ্চা দেয়। এই ছাগলের পর্যাপ্ত পরিমানে দুধ হয়। দুধ প্রায় ৩-৪ লিটার হয়।
যমুনা পারি বা রাম ছাগলঃ বছরে একবার বাচ্চা দেয়। এবং বাচ্চার পরিমান ১-২ পর্যন্ত।
মালাবারী ছাগলঃ মালাবারী ছাগল ১০-১২ মাস বয়সে প্রজনন ক্ষমতা হয়। এই ছাগল বছরে দুই বার বাচ্চা দেয় এবং প্রথমে একটা বাচ্চা হয় পরে ৩-৪ পর্যন্ত বাচ্চা হয়।
উন্নত জাতের ছাগল কোথায় পাওয়া যায়
যারা ছাগল পালন করে তারা সবাই চায় উন্নত জাতের ছাগল পালন করতে। কিন্তু অনেকেরই জানা নেই যে উন্নত জাতের ছাগল কোন গুলো এবং কোথায় পাওয়া যায়। উন্নত জাতের ছাগল কোথায় পাওয়া যায় তা জানার আগে আমাদেরকে জানেতে হবে উন্নত জাতের ছাগল কোনগুলো।
নিচে কয়েকটি উন্নত জাতের ছাগলের নাম দেওয়া হলো-
- ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল
- তোতাপুরি ছাগল
- বারবারি ছাগল
- যমুনা পুরি বা রাম ছাগল ( এই দুটো একই জাতের ছাগল)
- বোয়ার ছাগল
- বিটল ছাগল
আমাদের দেশে এই ছাগল গুলোকে উন্নত জাতের ছাগল বলা হয়। এই ছাগল গুলো মানুষ খামারে বা বাড়িতে পালন করে বেশ লাভবান হচ্ছে। এই ছাগল গুলো সাধারনত দেশের যেকোন এলাকায় বিশেষ করে বড় ব ড় খামারে পাওয়া যায়। তাছারাও যারা বাড়িতে পালন করে তাদের কাছে ও পাওয়া যায়।
উন্নত জাতের ছাগলের দাম কত
শিরোহী ছাগলঃ শিরোহী ছাগলের মাংস প্রায় ১৫-২০ কেজি হয়। এই জাতের ছাগলের দাম প্রায় ২০-২৫ হাজার টাকা।
তোতাপুরি ছাগলঃ তোতাপুরি জাতের পুর্নবয়স্ক ছাগলের দাম ৪৫-৫০ হাজার টাকা।
বিতাল ছাগলঃ বিতাল জাতের ছাগলের পূর্ণবয়স হলে ৪৫-৫০ কেজী মাংস হয়। এই ছাগলের দাম প্রায় ৫০-৫৫ হাজার টাকা।
কারি বিটল ছাগলঃ এই ছাগলের দাম ৩০-৩৬ হাজার টাকা দাম।
বারবারি ছাগলের দামঃ বারবারি ছাগলের দাম ৩০-৩৪ হাজার টাকা।
রাম ছাগল বা যমুনাপুরি ছাগলঃ এই ছাগলের দাম ৩৫-৫০ হাজার টাকা।
তবে মনে রাখবেন, ছাগলের ওজনের উপর ছাগলের দাম হবে। যেই ছাগলের যতটুকু মাংস হবে তার উপর ওজন করে একটা ছাগলের দাম নির্ধরন করা হয়।
ছাগল কত বছর বাঁচে
একটি ছাগলের যখন বেশী বয়স হয়ে যায় তখন সেই ছাগল বাচ্চা দিলে বাচ্চার কোয়ালিটি ভালো হয় না। বিশেষ করে বাচ্চা দুর্বল এবং রোগা পাতলা হয়ে থাকে। এবং বাচ্চা বাচে ও না। সাধারনত একটি ছাগল ১০-১২বছর পর্যন্ত বাঁচে। তবে জাত ভেদে কিছু কিছু ছাগল ১৫ বছর পর্যন্ত বাঁচে থাকে। একটি ছাগলের যখন একবছর বয়স হয় অর্থাৎ ১২ মাস বয়সে প্রথম দাঁত পরে যায়।
এর পরের দাঁত গুলো প্রতি ৬ মাস পর পর দাঁত পরে যায়। কোন ছাগলের যদি দেখেন আপনারা দুটো দাঁত পরা তাহলে ঐ ছাগলের ১২ মাস বয়স হয়েছে। ৪ টা দাঁত পড়লে ১৮ মাস বয়স হয়েছে। আর নতুন দাঁত গুলো আগের দাঁতগুলোর তুলনায় স্বাভিক ভাবে একটু বড় হয়ে থাকে। আর আপনি দাঁত দেখে ছাগলের বয়স নির্ধারন করতে পারবেন। যে ছাগলের বয়স কত বছর বা মাস।
গর্ভবতী ছাগলের খাবার তালিকা
গর্ভবতী ছাগলের সকালের খাবারঃ গর্ভবতী ছাগলকে সকালে খামার থেকে বের করার পর কাচা ঘাস বা লতা -পাতা দিতে হবে। এবং পানি খাওয়াতে হবে বেশী পরিমানে।
গর্ভবতী ছাগলের দুপুরের খাবারঃ খর ছোট ছোট টুকরো করে ভুট্টার ময়দা, লবণ, এবং হালকা পানি দিয়ে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে।
বিকেলের খাবারঃ গর্ভবতী ছাগলকে বিকেলে কাচা ঘাস, পাতা, দিতে হবে। মনে রাখবেন গর্ভবতী ছাগলকে দানাদার খাবার দেওয়া যাবে না। দিলে ও সামান্য পরিমান।
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় বন্ধুরা কোন জাতের ছাগল পালন করে লাভ বেশী হবে তা আপনারা এই পোষ্ট থেকে জেনে গেছেন।আমাদের দেশের খামারীরা দেশী ছাগল পালনের পাশাপাশি ব্যাপক ভাবে বিদেশি ছাগল পালন করে প্রচুর টাকা লাভ করছে। তাই আপনাদের উদ্দেশে বিদেশি জাতের ছাগলের জাত পালন করলে আপনাদের ভালো লাভ হবে।
ছাগল পালন করার পদ্ধতি অনুযায়ী যদি সঠিক ভাবে ছাগলের খামার তৈরি করা হয় তাহলে যে কেউ অনায়সেই স্বাবলম্বী হতে পারবে। বন্ধুরা এই পোস্ট খানা পরে আপনাদের ভালো লেগে থাকলে কমেন্ট বকসে জানিয়ে দিবেন। আর কোন ভুল হলে ক্ষমা করে দিবেন।
msta2z.comব্লগের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url