শিশুর পাতলা পায়খানা বন্ধ করার ঘরোয়া উপায় জেনে নিন
ছোট শিশুদের প্রায় প্রায় পেট খারাপ হয়েই থাকে এবং তার সাথে বমি বমি ভাব লেগেই থাকে। এতে বাচ্চাদের খুব কষ্ট হয়। এরকম পেট খারাপের সমস্যা হলে অনেক সময় দ্রুত ডাক্তার ডাকা সম্ভব হয় না।এই জন্য বন্ধুরা শিশুর পাতলা পায়খানা বন্ধ করার ঘরোয়া কিছু উপায় আছে যা আমি আজ এই পোষ্টে লেখেছি। পড়তে থাকুন তাহলে সব কিছু জানতে পারবেন।
বড়দের এধরনের সমস্যা হলে নাজেহাল হয়ে পরে তাহলে ছোট বাচ্চাদের এই সমস্যা হলে কতই না কষ্ট হয়। পেটের হজম শক্ত কম হওয়ায় বা আনুসাঙ্গিক কিছু কারনে বাচ্চাদের এধরনে সমস্যা দেখা দেয়।
ভৃমিকা
বাচ্চাদের অসুখ হলে তাড়াতাড়ি সুস্থ্য করা পারলেই মনে হয় ভালো হয়। সে যে কোন উপায়েই হোক না কেন। কেননা খুব সাধারন অসুখ ও কিন্তু প্রানঘাতি করতে পারে। এজন্য আপনাদের সর্তক থাকতে হবে বাচ্চাদের অসুখের প্রথম দিন থেকে। ছোট বেবীদের অসুখ হলে প্রথমে অ্যান্টিবায়োটিক না খাইয়ে আগে ঘরোয়া ভাবে আমাদেরকে চিকিৎসার ব্যাবস্থা করতে হবে।
শিশুদের পাতলা পায়খানায় কি খাবার খেতে হবে
আমরা সবাই জানি যে, ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা হলে শরীর থেকে প্রচুর পানি বেড়িয়ে যায়। আর শিশুদের ক্ষেত্রেও একই কথা। এ সময় যেহেতু শরীরের পানির ঘাটতি হয় এজন্য ডাবের পানি, স্যালাইন পানি, ভালো মানের জুস, ইত্যাদি তরল খাবার গুলো খাওয়াতে থাকতে হবে।
১. পাতলা পায়খানায় আক্রান্ত শিশু সঠিক ভাবে খাবার খাওয়ানো টা চালিয়ে যেতে হবে। সেক্ষেত্রে তরল খাবারের পাশাপাশি একটু শক্ত বা অর্ধতরল খাবার খাওয়াতে হবে।
২. পাতলা পায়খানায় আক্রান্ত শিশুদের তাড়াতাড়ি হজম হবে এধরনে খাবারের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। যেমন নরম করে খিচুরী বা নরম ভাত।
৩. পানির মতো পাতলা ডাল (মটর ডাল)। পাঁকা কলা, কাঁচা কলা সেদ্ধ, ভেজানো চিরা, ভাতের মাড়, আপেল, নুডুলস, ওটমিল ইত্যাদি খাওয়ানো যাবে।
৪. পাতলা পায়খানায় আক্রান্ত শিশুদের লাচ্ছি, ডাবের পানি,ফলের রস এবং কম লিকারের চা খাওয়াতে পারবেন।
৫. শিশু যদি মায়ের বুকের দুধ খায় তাহলে দুধ খাওয়াটা চালিয়ে যেতে হবে। পাতলা পায়খানা বন্ধ হওয়ার পর শিশুকে এক বেলার বেশী খাবার খাওয়াতে হবে।
শিশুদের পাতলা পায়খানায় কি কি খাবার খাওয়ানো যাবে না
শিশুর পাতলা পায়খানা হলে মশলা যুক্ত খাবার, দুগ্ধজাত খাবার, গরু,ছাগল, বা কৌটার দুধ খাওয়ানো যাবে না। চর্বিযুক্ত খাবার, সেরেলাক দোকেনের খাবার, সুজি, এবং শাক- সবাজি একে বারেই খাওয়ানো যাবে না।
শিশুর ঘন ঘন পাতলা পায়খানা হলে করনীয়
পাতলা পায়খানায়,বা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের শরীর থেকে প্রচুর পরিমান পানি বেড়িয়ে যায়। এই জন্য শিশুর পানি স্বল্পতা দেখো দেয়। পানি স্বল্পতা হলে শিশুর শরীর দুর্বল হয়ে যায় এবং শিশুর মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। এমন কি শিশুর মৃত্যু ও হতে পারে। এসময় পানিস্বল্পতার কিছু লক্ষণ দেখে বুঝতে হবে শিশুর অবস্থা ভালো নয় যেমন-
- শিশুর ঘন ঘন পাতলা পায়খানা হলে।
- শিশুর মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাবে।
- শরীর আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে যাবে।
- সব সময় তৃষ্ণা লেগেই থাকবে।
- খাবার খেতে পারবে না।
- চোখ দুটো গর্তে ঢুকে যাবে।
- খিচুনি দিলে
- শরীরের চামরা আস্তে আস্তে ঢিলে হবে।
যা করবেন
উপরের লক্ষণগুলো বুঝতে পারলে আপনেরা তাড়াতাড়ি নিকটস্থ হাসপাতালে বা ডাক্তারের কাছে নিতে হবে। তবে প্রথম থেকে সর্তক থাকলে পানি স্বল্পতা প্রতিরোধ করা সম্ভব। এই জন্য আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে যে শিশুর প্রত্যেক বার পায়খানার পর স্যালাইন পানি বা ডাবের পানি খাওয়াতে থাকতে হবে।
তার পাশাপাশি ভাতের মাড়, ডাবের পানি, চিরার পানি, লবণ-গুরের শরবত, টকদই, এবং ডালিম ফলের রস খাওয়াতে হবে। তহলে শিশুর পানিস্বল্পতা দেখা দিবে না। এবং ছোট বাচ্চা হলে শিশুকে ঘন ঘন বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।
শিশুর পাতলা পায়খানা বন্ধ করার ঘরোয়া উপায়
শিশুদের পাতলা পায়খানা হলে সাধারনত ২ থেকে৩ দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। তাই পাতলা পায়খানায় শিশুদের কে প্রথম দিনই ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। বাড়িতেই শিশুর পাতলা পায়খানার ঘরোয়া চিকিৎসা করতে পারলে আশা করি তাড়া তাড়ি ভালো হয়ে যাবে। ঘরোয়া চিকিৎসার কিছু নিয়ম দিলাম যা আপনারা এইভাবে নিয়ম মেনে চিকিৎসা করলে আশা করি খুবই তাড়াতাড়ি পায়খানা ভালো হয়ে যাবে।
স্যালাইন পানি খাওয়াবেনঃ বাচ্চাদের পাতলা পায়খানায় বা ডায়রিয়ায় শরীর থেকে প্রচুর পানি নেমে যায়। এই সময় শিশুদেরকে স্যালাইন পানি ঘন ঘন খাওয়ালে কখনোও শরীরের পানি শুন্যতা হবে না। এবং শিশু খুব দ্রুত সেরে যাবে।
ডাবের পানি খাওয়াবেনঃ ডাবের পানির উপকারিতা আমরা মনে হয় সবাই জানি। সব বয়সী মানুষের জন্য ডাবের পানি খুবই উপকারী। বিশেষ করে ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানায় ডাবের পানি মহাঔষুধ হিসাবে কাজ করে। শিশুর পাতলা পায়খানা হলে স্যালাইনের পাশাপাশি ডাবের পানি একটু একটু করে সারাদিন খাওয়াবেন।
ভাতের মাড় খাওয়াবেনঃ শিশুদের পাতলা পায়খানার সময় ভাতের চেয়ে ভাতের মাড় বেশী উপকার করে। ভাতের মাড় সহজেেই শিশুরা হজম করতে পারে। তাই চেষ্টা করবেন ভাতের মার খাওয়ানোর।
লবণ-চিনি মেশানো পানিঃ কোন সময় যদি বাসায় স্যালাইন না থাকে বা ফার্মেসিতে যেতে পারছেন না। এই সময় আপনি লবণ-চিনি একগ্লাস পানিতে মিশিয়ে বাচ্চাদের স্যালাইনের মতো করে খাওয়াতে পারবেন। এই পানি ও বাচ্চাদের শরীরে স্যালাইনের মতো কাজ করে।
বুকের দুধঃ যে শিশুরা বুকের দুধ খায় তাদের কে ঘন ঘন বুকের দুধ খাওয়ানোর চেষ্টা করতে হবে।
চিকিৎসকের পরামর্শ ছারা কোন ঔষুধ বা এ্যান্টিবায়েটিক খাওয়ানো যাবে না। বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা না হওয়ার জন্য পরিষ্কার খাবার খাওয়াতে হবে। এলার্জিজাতীয় খাবার খাওয়ানো যাবে না। এবং শিশুর এবং নিজের নখ কাটতেহবে এবং স্তনের দুধ দেওয়ার সময় স্তন ভালো করে পরিষ্কার করে নিতে হবে। যে খাবারে বাচ্চার হজম করতে সহজ হয় না সে খাবার জোর করে খাওয়াবেন না। এবং শীতের সময় বাচ্চাকে ঠান্ডা লাগানো যাবে না।
নবজাতক শিশুর পাতলা পায়খানা হলে করনীয়
নবজাতক শিশুর ক্ষেত্রে ছয় মাস পর্যন্ত শুধু বুকের দুধ খায়, তখন কিন্তু ৮ থেকে ১০ বার পায়খানা করতে পারে। সেটা অবশ্য পাতলা ও হতে পারে। তবে এই পায়খানা হওয়াটা স্বাবাভিক। দুধে ল্যাকটোজ নামে একটি পদার্থ থাকে, যার জন্য পায়খানাটা একটু নরম হতে পারে। এই সময় মায়ের চিন্তিত হওয়ার কারন নেই। যদি ৮ থেকে ১০ বার বাচ্চা পায়খানা করে তখনই পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া বলব। যদি সে অতিরোক্ত পায়খানা করে পানির পরিমান বেড়ে যায়।
সেক্ষেত্রে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করা যাবে না। বরং তখন বেশী বেশী করে বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। আর খুব বেশী হলে বুকের দুধের সাথে তাদের খাবার স্যালাইন দেওয়া যাবে। একই নিয়মে গুলিয়ে তাদের খাবার স্যালাইন দিতে হবে।
শিশুর পাতলা পায়খানার ঔষুধ
ঘরোয়া চিকিৎসার মাধ্যমে যদি শিশুর পাতলা পায়খানা ভালো না হয় বা অতিরোক্ত পায়খানা করে সেক্ষেতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ঔষুধ খাওয়াতে হবে। পাতলা পায়খানার ঔষুধ যেটা ভালো সেটা হলো বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত বহাল প্রচালিত শিশুর পাতলা পায়খানার ট্যাবলেট সেটা হলো জিংক ট্যাবলেট।
৬ মাস থেকে ৫ বছর বয়সী বাচ্চাদের জন্য এই ট্যাবলেট। পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হলে প্রত্যেকদিন একটি করে ট্যাবলেট খাওয়াতে হবে। জিংক ট্যাবলেট খাওয়ানোর সময় স্যালাইন বন্ধ করা যাবে না। স্যালাইন খাওয়ানোর পাশাপাশি জিংক ট্যাবলেট খাওয়াতে হবে। ট্যাবলেট টি অবশ্যই ১০ দিন খাওয়াতে হবে।
জিংক ট্যাবলেট খাওয়ানোর নিয়ম
১. একটি চামুচে জিংক ট্যাবলেট রাখুন
২.কয়েক ফোটা নিরাপদ পানি চামুচে ঢালুন
৩. ট্যাবলেটটি সম্পর্ন গলে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন
৪. শিশুকে সবটুকুন গোলানো ঔষুধ খাওয়ান
পাতলা পায়খানায় জিংক ট্যাবলেট খাওয়ালে কি হয়
- ঘন ঘন পাতলা পায়খানা হওয় কমে যায়
- অন্ত্রের পানি ও খনিজ লবণের শোষন ক্ষমতা বাড়ায়
- শিশুর রোগ দ্রুত ভালো দিকে যায় এবং শরীরের রেগা প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
- পরবর্তিতে শিশুর ডায়রিয়াতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা কমে যায়
শিশুকে জিংক ট্যাবলেট খাওয়ালে স্যালাইন খাওয়াতে হবে কি
শিশুর পাতলা পায়খানা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত অবশ্যই খাবার স্যালাইন পানি স্বল্পতা পূরণ করে, আর জিংক পানি স্বল্পতা পূরণ করে না। শিশুর ডায়রিয়া বন্ধ হয়ে যাবার পর পানি স্বল্পতার চিন্হ না থাকলে
আর খাবার স্যালাইন খাওয়ানোর প্রয়োজন নেই। তবে জিংক ট্যাবলেট ১০ দিন পর্যন্ত খাওয়াতে হবে।
শেষ কথা
শিশুর পাতলা পায়খানা বন্ধ করার ঘরোয়া উপায়, শিশুদের পাতলা পায়খানায় কি খাবার খেতে হবে,
শিশুদের পাতলা পায়খানায় কি কি খাবার খাওয়ানো যাবে না, শিশুর ঘন ঘন পাতলা পায়খানা হলে করনীয়, নবজাতক শিশুর পাতলা পায়খানা হলে করনীয়, শিশুর পাতলা পায়খানার ঔষুধ সম্পর্কে
আমরা বিস্তারিত জানলাম।
আশা করি বন্ধুরা সামান্য হলে ও আপনেরা উপকৃত হয়েছেন। ভালো লাগলে আপনাদের পরিচিত দের মধ্যে সেয়ার করে দিবেন প্লিজ। msta2z.com ব্লগের অন্যান্য পোষ্ট গুলো পড়ার অনুরোধ রইলো। ভালো থাকুন সুস্থ্য থাকুন।
msta2z.comব্লগের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url