ঈদুল ফিতরের নামাজের তাকবীর - ঈদের নামাজ কয় রাকাত | Msta2z

ঈদুল ফিতরের নামাজের তাকবীর - ঈদের নামাজ কয় রাকাত

ঈদুল ফিতরের নামাজের তাকবীর। আসসালামু আলাইকুম, আমার প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা। এই পোষ্ট থেকে আজ আমরা জানবো ঈদুল ফিতরের নামাজের তাকবীর, ঈদের নামাজ কয় রাকাত,ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ত আরবিতে, ঈদের নামাজের ফরজ কয়টি, ঈদের নামাজ না পড়লে কি গুনাহ হবে, ঈদের সালাত আদায় করা কি ওয়াজিব, ইত্যাদি। ৩০ রমজানের ইফতারের পর আমাদের প্রথম কাজই হচ্ছে তাকবীর অর্থ্যাৎ আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা। মহান আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায় করে তাকবির পরা। এটিই ঈদের প্রথম কাজ।
ঈদুল ফিতর নামাজের তাকবীর

পবিত্র রমাজান মাস শেষ হওয়ার লগ্নে মহান আল্লাহতায়ালা তার বান্দার জন্য তাকবীর দেওয়ার বিধান দিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন, ” তিনি চান তোমরা সংখ্যা পূরণ কর এবং তিনি যে তোমাদেরকে নির্দেশনা দিয়েছেন সে জন্য তাকবীর উচ্চারন কর ( আল্লাহর মহাত্ন এবং বড়ত্ব ঘোষনা কর) এবং তোমরা বেশি বেশি শোকর আদায় কর।( সুরা বাকারা, আয়াত: ১৪৫) মুখদিয়ে তাকবির উচ্চারন করা মানে তোমাদের অন্তর দিয়ে এবং মুখ দিয়ে আল্লাহর মহাত্ব ঘোষনা করা। সেটি তাকবির বলার মাধ্যমে হতে পারে। ঈদুল ফিতরের নামাজের তাকবীর

ভৃমিকা

মুসলমানদের জন্য বছরে ২ টি প্রধান উৎসব হয়। এর মধ্যে হলো ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা। যেহেতু এক বছর পরপর এই উৎসব হয় সেহেতু আমরা অনেকেই ঈদের নামাজের অনেক মাসায়ালা গুলো ভুলে যাই। এই ভুলে যাওয়া মানুষ গুলোর জন্য আমাদের এই পোষ্ট। এই জন্য ঈদুল ফিতরের নামাজের তাকবীর এবং কয় তাকবীরে নামাজ পড়া হয় এবং ঈদের নামাজ কয় রাকাত এ সব কিছুই আমাদের এই পোষ্টের মধ্যে পাবেন। আপনার প্রশ্নের সঠিক উত্তর পাওয়ার জন্য আমাদের এই পোষ্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইলো। মনোযোগ দিয়ে পড়তে থাকুন-

ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ত আরবিতে

ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ত আরবিতে। রমজান মাস শেষ হওয়ার পর শাওয়াল মাসের পহেলা তারিখ যে ঈদ উৎসব অনুষ্ঠিত হয় সেটাই ঈদুল ফিতর। ঈদ শব্দের অর্থ খুশি বা আনন্দ। রমজান মাসে রোজাগুলো মহান আল্লাহ পাকের নির্দেশ অনুযায়ী পালনের জন্য এবং খুশির উৎসব অনুষ্ঠিত হয় বলে, গরিব মিসকিন কে রোজার ফিতরা ইত্যাদি দান করা হয় বলে, এবং কিছু খেয়ে রোজা ভঙ্গ করা হয় বলে এই দিনটির নাম ঈদুল ফিতর রাখা হয়েছে। এই দিন সূর্য উদয়ের পর থেকে দ্বিপ্রহরের পূর্ব পর্যন্ত যেকোনো সময় অতিরিক্ত ছয় তাকবীরের সাথে দুই রাকাত নামাজ আদায় করতে হয়।

ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করা মুসলমানদের উপর ওয়াজিব করেছেন মহান আল্লাহ পাক। মুসলিমদের কে যেমন প্রত্যেক দিন ৫ ওয়াক্ত নামাজের আগে বা অন্যান্য নফল ও ওয়াজিব নামাজের আগে নিয়ত করতে হয় তেমনি ঈদুল ফিতরের নামাজের ও নিয়ত করতে হবে। নিয়ত হলো আল্লাহর উদ্দেশে কোন ইবাদাত করার আগে নিজের ইচ্ছা প্রকাশ করা। নিয়ত মুখে ‍উচ্চারন নিয়ে কিছু কিছু মানুষ বির্তক করেন। আসলে নামাজ পড়ার আগে নিয়ত না বলে নামাজ পরিপূর্ন মনে হয় না। এই জন্য মনে মনে নিয়ত করটাই সঠিক হবে।


আমাদের নবীজি হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এবং তার সাহাবীগন নামাজের আগে উচ্চস্বরে নিয়ত বলেছেন বা বলা লাগবে এরকম কোন হাদিসে প্রমান নেই। কিন্তু নামাজ শুরু করার আগে, ভালো যে কোন কাজ করার আগে, হজ্জ করার আগে বা আল্লাহর যে কোন ইবাদাত করার আগে মনে মনে নিয়ত করতেই হবে। সে নিয়ত বাংলায় বা আরবিতে যে কোন একটা বললেই হবে। তবে আরবিতে নিয়ত করা মুস্তাহাব। আর প্রত্যেকটা মানুষ তো কোন কাজ করার আগে অবশ্যই অন্তর থেকেই নিয়ত করে থাকেন। তো বন্ধুরা আর কথা না বাড়িয়ে চলুন জেনে নেওয়া যাক, ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ত আরবিতে। নিচে দেওয়া হলো-

ঈদুল ফিতর নামাজের আরবি নিয়ত, উচ্চারন ও বাংলা অর্থ
উচ্চারণ: ‘নাও**য়াইতু আন উসাল্লিয়া লি**ল্লাহি তাআলা রাকাআ**তাইন সালাতিল ইদিল**ফিতরি মাআ সিত্তাতিত তাকবিরাতি** ওয়াঝিবুল্লাহি** তাআলা ইকতাদাইতু বিহাজাল **ইমামি মুতাওয়াঝঝিহান ইলা ঝিহাতিল** কাবাতিশ শারিফাতি ‘**আল্লাহু আকবার’।

ঈদুল ফিতরের নামাজের তাকবীর
ঈদুল ফিতরের নামাজের তাকবীর। ঈদুল ফিতরের তাকবীর শুরু হবে রমজান মাসের শেষ দিন সূর্যস্তের পর থেকে। আর তাকবীর শেষ হবে ঈদের নামাজে ইমাম উপস্থিত হলেই। অর্থ্যাৎ মানুষ যখন ঈদের নামাজ শুরু করবে তখন থেকেই তাকবির বলা বন্ধ করতে হবে। আপনারা যখন ৩০ রোজার পর শাওয়ালের চাঁদ দেখতে পাবেন তখন আপনারা যেখানেই থাকেন না কেন, হাটে বাজারে, মসজিদ মাদ্রাসায়, মাঠে ঘাটে , রাস্তায়, সফররত অবস্থায় আপনারা তাকবীর দেওয়া শুরু করবেন। যতক্ষন না ঈদের নামাজ শুরু হয়েছে। ঈদের নামাজ শুরু হলে আর তাকবীর দিতে হবে না।

তাকবীর অবশ্যই ছেলেদেরকে উচ্চস্বরে পাঠ করতে হবে। আর নারীদেরকে নিচু কন্ঠে পাঠ করতে হবে যেন কোন বাইরের পুরুষ শুনতে না পায়। তাকবীর গুলো আপনি দুই বা করে পাঠ করতে পারবেন অথাবা তিন বার করেও পাঠ করতে পারবেন। দুই বার করে পাঠ করা ও জায়েজ তিন বার করে পাঠ করাও জায়েজ। আপনারা কাজ করতে করতে ও তাকবীর পাঠ করতে পারবেন। ইবনে ‍উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে , তিনি যখন ঈদের দিন সকাল বেলা সূর্যউদয়ের সময় ঈদগাহে যেতেন তখন তিনি তাকবীর দিতেন; যতক্ষন না ঈদগাহে পৌছেন। 

অনেক মুসল্লিরা জানেন না যে ঈদের দিন কিভাবে তাকবীর পাঠ করতে হয়। ঈদুল ফিতরের নামাজের তাকবীর জানার জন্য আমাদের এই পোস্টটি ভালো করে পড়তে থাকুন। চলুন বন্ধুরা জেনে নেওয়া যাক ঈদুল ফিতরের নামাজের তাকবীর কিভাবে উচ্চারন করতে হয়। পড়তে থাকুন-

ঈদুল ফিতরের নামাজের তাকবীর বাংলা অর্থসহ

যে মুসলমান রমজান মাসে রোজা পালন করবে এবং যারা রোজা পালন করতে পারেন তারা সকলেই ঈদের চাঁদ দেখার পর তাকবীর উচ্চস্বরে উচ্চারন করবেন। মেয়েরা নিচুস্বরে উচ্চারন করবেন। এবং ঈদের নামাজের পড় সালাম ফিরিয়ে ও কয়েকবার তাকবীর পরবেন। হাদিসে আছে, হজরত উম্মে আতিয়াহ (রাঃ) বলেন, আমরা মাসিক হওয়া মেয়েদেরকে ও নিয়ে ঈদগাহে বের হতাম। তারা পরুষদের পেছনে অবস্থান করত। পুরুষদের তাকবীরের আওয়াজ শুনে মেয়েরাও তাকবীর পাঠ করতো। তারা পুষদের দোয়া শুনে দোয়া করতো।আর ঈদের বরকত ও পবিত্রতা আশা করতো।( বুখারি ও মুসলিম)

ঈদের নামাজ কয় রাকাত

ঈদের নামাজ কয় রাকাত? রমযানুল মোবারকের চাঁদ শেষ হয়ে শাওয়ালের নতুন চাঁদ উঠার পরদিন ঈদুল ফিতর অনুষ্ঠিত হয়।সূর্য ‍উদয়ের পর হতে দুপুরের পূর্ব পর্যন্ত ঈদুল ফিতর নামাজ আদায়ের সময়। ঈদুল ফিতরের ২ রাকাত নামাজ । ঈদুল ফিতরের নামাজ এবং ঈদুল আযহার নামাজ ওয়াজিব নামাজ।আল্লাহকে খুশি করার উদ্দেশে নিয়ত সহকারে ২ রাকাত ওয়াজিব নামাজ পড়তে হয়।

সুতরাং তাকবীর নিয়ে কেউ বাড়াবাড়ি করবেন না।।উল্লেখ যে আবু দাউদ ও তাহাবী শরীফে ( কেতাবুজ জিয়াদাত) ছয় তাকবীরে হাদিস বর্ণিত আছে। বন্ধুরা আপনারা আমাদের এই পোষ্টটি পড়ে নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন যে ঈদুল ফিতরের নামাজ দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ।

ঈদুল ফিতরের সুন্নত কয়টি

ঈদুল ফিতরের সুন্নত কয়টি? প্রিয় মুসলমান ভাই ও বোনেরা আমরা অনেকেই জানি না যে, ঈদের দিনে কিছু সুন্নত কাজ আছে আমাদের জন্য। কোন কাজগুলো সুন্নত তা আমাদের সকলেরই জানা প্রয়োজন। ঈদের দিনে শুধু খুশি আনন্দ নিয়ে থাকলে হবে না আমাদের প্রিয় নবীজির সুন্নত গুলো আদায় করার চেষ্টা করতে হবে। কারন ঈদুল ফিতরের দিন আল্লাহর কাছ থেকে পুরুস্কার লাভের দিন।এই দিনে আনন্দের সাথে সাথে আমাদের কে অবশ্যই আল্লাহর ইবাদাত ও করতে হবে। ঈদের দিনের সুন্নত কাজসমূহ অর্থ্যাৎ ঈদুল ফিতরের সুন্নত কয়টি তা নিচে বিস্তারিত দেওয়া হলো। ঈদের নামাজের ফরজ কয়টি পড়তে থাকুন-

ঈদের দিনের সুন্নত কাজসমূহ
  • খুব ভোরে নিদ্রা ত্যাগ করা। (বায়হাকী, হাদীস নং-৬**১২৬)
  • মেসওয়াক করা। (তাবয়ীনুল হাকায়েক-১/**৫৩৮)
  • গোসল করা। (ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৩১**৫)
  • সামর্থ অনুযায়ি উত্তম পোশাক পরিধান করা। (বুখারী, হাদীস নং-৯৪৮)
  • চোখে সুরমা লাগানো।
  • সুগন্ধি ব্যবহার করা। (মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস নং-৭৫**৬০ )
  • ঈদুল ফিতরের দিন সকালে মিষ্টি জাতীয় কিছু খাবার খাওয়া। খেজুর খেলে বেজোর সংখ্যক খাওয়া মুস্তাহাব। (বুখারী, হাদীস নং-**৯৫৩)
  • যথা শীঘ্র নামাজের ময়দানে রওনা দিয়া। (আবু দাউদ, হাদীস নং-১১**৫৭)
  • পায়ে হেটে যাওয়া। (আবু দাউদ, হাদীস নং-১১৪৩)
  • নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় তাকবীরে তাশরিক পড়তে পড়তে যাওয়া। (মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস নং-১১০৫)
  • ঈদের নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় এক পথে যাওয়া অন্য পথে আসা। অসুবিধা থাকলে একই পথে যাতায়াত চলবে। (বুখারী, হাদীস নং-৯৮৬)
  • নামাজের পূর্বে সদকায়ে ফিতর আদায় করা। (দারাকুতনী, হাদীস নং-১৬৯৪)
  • খুশি আনন্দ প্রদান করবে
  • শরীয়ত সম্মত খেলাধুলা ঈদের দিন বৈধ

ঈদের নামাজ আদায়ের নিয়ম

ঈদের নামাজ আদায়ের নিয়ম? ঈদের দিন সকালে পুরুষদের জন্য ঈদের নামাজ জামাতের সাথে পড়া ওয়াজিব। প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা ঈদের নামাজ ঈদগাহ, মসজিদ বা খোলা মাঠে যেখানেই হোক না কেন ঈদের নামাজ অবশ্যই জামাতের সাথে পড়তে হবে। জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হওয়ার জন্য যে সব শর্তের প্রয়োজন ঈদের নামাজ আদায় করার জন্য সেই একই রকম শর্ত প্রযোজ্য। এক কথায় জামাত বদ্ধ ছারা ঈদের নামাজ হয় না। বছর শেষে ঈদের নামাজ অনেকেই ভুলে যায় যে কিভাবে ঈদের নামাজ পড়তে হয়। তো বন্ধুরা আর দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক ঈদের নামাজ আদায়ের নিয়ম কি?

ঈদুল ফিতর নামাজ আদায়ের নিয়ম
ঈদের নামাজ উক্ত নিয়ত করে তাকবীর তাহরিমা বাঁধার পর ছানা পড়ে ইমাম তিন বার উচ্চস্বরে তাকবীর বলবে। তাকবীর বলার সঙেগ সঙেগ দু হাত কান পর্যন্ত উঠাবে এবং হাত নামিয়ে ছেরে রাখবে।প্রত্যেকবার দুহাত কান পর্যন্ত উঠাবে এবং দুই বার হাত ছেরে দিবে।অতঃপর তৃতীয় তাকবীর বলে বুকে হাত বাধবে এবং ফাতেহা শরীফ ও অন্য সুরা ক্বেরাত পড়ে রুকু ও সিজদা করবে।কিন্তু দ্বীতীয় রাকাতে উঠে প্রথমে সুরা ফাতিহা ও অন্য সুরা পাঠ করে রুকু করার আগে অতিরোক্ত তিন তাকবীর বলবে।প্রত্যেক তাকবীরে দু হাত উঠাবে।

এবং ছেরে দিবে বাধবে না। অতঃপর রুকুর তাকবীর বলে রুকুতে যাবে। তার পর বসে তাশহুদা, দরুদ, পাঠ করবেন। অতঃপর সালামান্তে ইমাম দাড়িয়ে জুময়ার খুৎবার মতো দুটো খুৎবা পাঠ করবেন।এই খুৎবা আরম্ভকালে জুময়ার খুৎবার ন্যায় আযান দিতে হয় না। খুৎবা পাঠ শেষে ইমাম হাত উঠিয়ে মুক্তাদিগগন সহ মুনাজাত করবেন। অতঃপর বাকী অংশ রীতিমতো সম্পন্ন করবে। ঈদের নামাজের আযান ও ইক্বামত নেই এবং একা একা নামাজ পড়লে হবে না। ঈদের নামাজ অবশ্যই জামাতের সাথে ছেলেদের কে পড়তে হবে।

ঈদের নামাজের কতিপয় মাসায়েল

ঈদের নামাজের কতিপয় মাসায়েল? মহান আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদের জন্য বছরে দুটি খুশির দিন দান করেছেন। তা হলো ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহা। আল্লাহর পক্ষ থেকে মুসলমানদের জন্য এক বড় নিয়ামত। অন্যান্য জাতির আনন্দ অনুষ্ঠানের ধর্মের চেয়ে আলাদা মুসলিমদের এই ঈদ। আল্লাহর যিকির ও তার বড়ত্বের মাধ্যমে শুরু হয় মুসলিমদের ঈদ। ঈদের দিনে মুসলিমদের প্রধান আমল হলো ঈদের নামাজ। এই ঈদের নামাজ পড়ার জন্য আমাদের জন্য কিছু মাসায়েল আছে তা জানা অবশ্যই জরুরি। চলুণ জেনে নেওয়া যাক ঈদের নামাজের কতিপয় মাসায়েল গুলো।

ঈদের নামাজের কতিপয় মাসায়েল
  • যাদের প্রতি জুম্মার নামাজ আদায় করা ফরজ, ঈদের নামাজ তাদের প্রতি আদায় করা ওয়াজিব। আর যাদের প্রতি জুম্মার নামাজ আদায় করা ফরজ নয়, তাদের প্রতি ঈদের নামাজ আদায় করা ওয়াজিব নয়।
  • ঈদের খুতবা পাঠ করা সুন্নাত। অবশ্যই জুম্মার খুতবা পাঠ করা ওয়াজিব।
  • ঈদের খুতবা কোন নাবালেগ পড়লেও জায়েজ হয়। পক্ষান্তরে জুম্মার খুতবা কোন নাবালেগ পড়লে জায়েজ হবে না।
  • নামাজের পর ঈদের দুই খুতবা শ্রবণ করা ওয়াজিব। যদি খুতবা শোনা না যায়, তাহলে চুপচাপ বসে থাকবে। অনেক লোক সালামের পর খুতবা না শুনেই চলে যায়, এটা সুন্নতের খেলাফ।
  • ঈদের নামাজের আগে পরে কোন নফল নামাজ নেই।
  • ঈদের নামাজের সালাম ফেরানোর পর মোনাজাত করা মুস্তাহাব। ঈদের খুতবার পরে মোনাজাত করা মুস্তাহাব নয়।
  • ঈদের নামাজ কোন ওজর ব্যাতিত মসিজিদে পরা সুন্নাতের খেলাপ করা হবে।
  • ঈদের নামাজের আগে নিজ ঘরে বা ঈদগাহে ইশরাক ইত্যাদি নফল পড়া নিষিদ্ধ। ঈদের জামাতের পরেও ঈদগাহে নফল নামাজ পড়া মাকরুহ। হ্যাঁ, ঘরে ফিরে ইশরাক, চাশত নফল পড়তে কোনো অসুবিধা নেই।
  • একই ব্যক্তি এক স্থানে ঈদের নামাজের ইমামতি করে আবার অন্য স্থানে একই ঈদের নামাজ পড়তে পারবে না। অবশ্য খুতবা পাঠ করতে পারবে।
  • শুক্রবার দিন ঈদের নামাজ পড়ে যথাসময়ে জুম্মার নামাজেও আদায় করতে হবে।
  • বহু সংখ্যক লোক ঈদের জামাত না পেলে দ্বিতীয় জামাত করে তা আদায় করতে পারবে।
  • ঈদের ময়দানে জানাজার নামাজ পড়া জায়েজ। প্রথম ঈদের নামাজ অতঃপর জানাজার নামাজ এরপর খুতবা হবে।

ঈদের নামাজ না পড়লে কি গুনাহ হবে

ঈদের নামাজ না পড়লে কি গুনাহ হবে? ঈদ মুসলিমদের জন্য সবচেয়ে বড় উৎসব। ঈদ আসলে সারা বিশ্বে খুশি ও আনন্দের আবির ছরিয়ে পরে। এই খুশির দিনে নামাজ দিয়ে ঈদ শুরা করা হয়। এটা ইসলামের নিয়ম ও বিধান। দীর্ঘ একমাস রোজা এবং ঈদের বিনিময়ে মহান আল্লাহ তায়ালা সকল রোজাদার মুসলিম দের জীবনের গুনাহ গুলো মাফ করে দেন এবং ঈদের নামাজ পড়ার জন্য অসংখ্য সওয়াব দান করেন। যে ব্যক্তি একমাস রোজা থাকলো তার ঈদের নামাজ পড়তে কোন বাধা নেই। আর যে ব্যক্তি রোজা রাখলো না তার ঈদের নামাজ পড়ার দরকার নেই।

এ প্রসঙ্গে রাসুল (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখলো না সে যেন আমার ঈদগাহে প্রবেশ না করে। ঈদের নামাজ না পড়লে কি গুনাহ হবে? ঈদের নামাজ যেহেতু ওয়াজিব সেহেতু নামাজ পড়তেই হবে। কারন ওয়াজিব আদায় না করলে গুনাহ হবে। কিন্তু অবিশ্বাস কররে কাফের হবে।যেমন, ঈদের নামাজ, বেতরের নামাজ ওয়াজিব। কোন বিশেষ কারন ছারা ইচ্ছাকৃত ভাবে ঈদের নামাজ ত্যাগ করা যাবে না। ১ মাস রোজা রাখার পর ঈদের নামাজ ঈদের নামাজ আনন্দের সাথে পরাটাই প্রত্যেক মুসলমানের জন্য উত্তম।

ঈদের নামাজ কয় তাকবীর

ঈদের নামাজ কয় তাকবীর? ঈদের নামাজে কয় তাকবীর এ নিয়ে মুসলমানদের মধ্য কোন বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করে আলাদা আলাদা নামাজ পরা জায়েজ নয়। কারন ঈদের নামাজ দুই বার পরা বা নিজেদের মত অনুযায়ি আলাদা ভাবে নামাজ আদায় করা বেদায়াত হবে। তাতে মুসলমানদের মধ্য হিংসা সৃষ্টি হবে এবং বিচ্ছিন্নতা দেখা দিবে। তাই প্রত্যেক মুসলমানদের উচিত এ ধরনের কোন কথা নিয়ে বিদ্বেষ না করা। ঈদ আনন্দ বয়ে আছে আমাদের জন্য খুশি বয়ে আনে। ঈদের নামাজ কয় তাকবীর তা নিয়ে এই পোষ্টে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। পড়তে থাকুন-

ঈদের নামাজ কয় তাকবীর?
 তাকবীর নিয়ে বাড়াবাড়ি করবেন না কেউ।আবু দাউদ ও তাহাবী শরীফে (কেতাবুজ জিয়াদাত) ছয় তাকবীরের হাদিস বর্ণিত আছে।

বৃহৎ জামায়েত সহকারে ঈদের নামাজ আদায় করতে হয়।এই নামাজের জন্য আজান ইক্বামতের প্রয়োজন নেই।এতে খুৎবা পাঠ করতে হয়। এটা নামাজের পরে পড়তে হয়। অন্যান্য নামাজের মতো নিয়ত করে তাকবীরে তাহরিম বলে হাত বেঁধে ছানা পাঠ করতে হয়। ইমাম উচ্চস্বরে পরপর তিনটি তাকবীর বলবেন এবং মুক্তাদিগণ সহ প্রতি তাকবীরে কান পর্যন্ত হাত উঠাবেন। আবার ছেড়ে দিবেন। অবশ্য শেষ তাকবীরের পর যথা নিয়মে হাত বেধে ইমাম উচ্চস্বরে সূরা, কেরাত ,পাঠ করবেন। 

অতঃপর অন্যান্য নামাজের ন্যায় রুকু, সেজদা আদায় করে দ্বিতীয় রাকাতে দাঁড়িয়ে ইমাম উচ্চস্বরে সূরা কিরাত পাঠ করবেন। অতঃপর রুকুতে যাওয়ার আগে পূর্বের রাকাতের নিয়মে অতিরিক্ত তিনটি তাকবীর বলবেন। অর্থ্যাৎ প্রথম রাকাতে ৩ টি তাকবীর দিতে হয় ২য় রাকাতে আবার ৩ টি তাকবীর দিতে হয়।এভাবে ঈদুল ফিতর নামাজের ৬ টি তাকবীর দিতে হয়।

ঈদ সম্পর্কে কুরআনের আয়াত

ঈদ সম্পর্কে কুরআনের আয়াত কি? ঈদ সম্পর্কে কোরআনের আয়াত সম্পর্কে আমরা কেউ জানি আবার কেউ জানি না। আসলে যারা ঈদ সম্পর্কে কোরআনের আয়াত জানেন না তারা এই পোষ্টটি ভালো করে পড়ুন তাহলে বুঝতে পারবেন মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ঈদ সম্পর্কে কোরআনে কি দিয়েছেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক।

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃরাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মদীনায় আগমন করলে দেখলেন, মদীনাবাসীরা দুটি ঈদ পালন করছে। তা দেখে তিনি বললেন, (জাহেলিয়াতে) তোমাদের দুটি দিন ছিল যাতে তোমরা খেলাধূলা করতে। এক্ষণে ঐ দিনের পরিবর্তে আল্লাহ তোমাদেরকে দুটি উত্তম দিন প্রদান করেছেন; ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহার দিন।’ (আবূ দাঊদ ১১৩৬, নাসাঈ ১৫৫৬)

ঈদের দিন রোজা রাখা নিষেধ কেন

ঈদের দিন রোজা রাখা নিষেধ কেন? এক মাস রোজা রাখার পর সিয়াম সধানার পর মানুষ ঈদের দিন আনন্দ উৎসব করবেন, খাওয়া দাওয়া করবেন। ঈদের দিনে যদি রোজা রাখা হয় তাহলে মানুষ আনন্দ অনুভব করতে পারবে না। এই জন্য শরিয়তের দৃষ্টিতে ঈদের দিন রোজা রাখা নিষেধ বা হারাম। কোরআনে বা কোন হাদিসে ঈদের দিন রোজা রাখার বিধান নেই। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, ‘নবী (সা.) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিন রোজা রাখতে নিষেধ করেছেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৯৯২; মুসলিম, হাদিস : ৮২৭)

পাঠকদের জন্য কিছু প্রশ্নের উত্তর

ঈদের নামাজ কি বাধ্যতামূলক?
উত্তরঃ হ্যা, প্রিয় মুসলিম ভাই বোনেরা ঈদের নামাজ বাধ্যতামুলক। কোন বিশেষ কারন ছারা ঈদের নামাজ ত্যাগ করা যাবে না। কারন ঈদের নামাজ মুসলমানের উপর ওয়াজিব।

ঈদের নামাজ তাড়াতাড়ি আদায় করা কি?
উত্তরঃ ঈদের নামাজ তাড়াতাড়ি আদায় করা ওয়াজিব। ঈদের নামাজের কোন আজান ও ইকামত নেই। যাদের উপর জুমার নামাজ ওয়াজিব তাদের উপর ঈদের নামাজও ওয়াজিব।

ঈদ উল ফিতর এর নামাজ কত রাকাত?
উত্তরঃ ঈদ উল ফিতরের নামাজ মোট ২ রাকাত ওয়াজিব নামাজ। ২ রাকাত নামাজ ৬ তাকবিরে পড়তে হবে।

হানাফি ঈদুল ফিতর কত দিন?
উত্তরঃ দেশের উপর ভিত্তি করে ঈদুল ফিতর তিন দিন পালিত হয়। ঈদুল ফিতরের দিন রোজা রাখা হারাম।

ঈদ কত প্রকার ও কি কি?
উত্তরঃ ঈদ ২ প্রকার। মুসলমানের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব হলো ১, ঈদুল ফিতর ২. ঈদুল আযহা।

ছেলেরা কি বাড়িতে ঈদের নামাজ পড়তে পারবে?
উত্তরঃ না, পুরুষ রা ঘরে বসে ঈদের নামাজ পরার বিধান নেই। পুরুষদের ঈদের নামাজ জামাতের সাথে পড়তে হবে। আর মেয়েরা ঘরে বসে ঈদের নামাজ পড়তে পারবে।


ঈদের নামাজ না পড়া কি হারাম?
উত্তরঃ না, কখনো না। প্রত্যেক রোজাদার মুসলমানের জন্য ঈদের নামাজ প[ড়া ওয়াজিব। পুরুষদের জন্য তা মিস করা জায়েয নয়, বরং তাদের উপস্থিত থাকতে হবে , কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নির্দেশ দিয়েছেন।

ঈদের নামাজে কোন সূরা পড়তে হয়?
উত্তরঃ প্রথম রাকাতে ইমামকে তাকবিরাত আল-ইহরাম বলতে হবে এবং তার পর তাকে আরও ছয় বা সাতটি তাকবীর বলতে হবে। তারপর তাকে আল-ফাতিহা পাঠ করতে হবে এবং সূরা ক্বাফ পাঠ করতে হবে।

ঈদুল ফিতরের দিন কত রাকাত নামাজ ওয়াজিব?
উত্তরঃ আমি ঈদুল ফিতরের দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ অতিরিক্ত ৬ তাকবিরের সঙ্গে এ ইমামের পেছনে কেবলামুখী হয়ে আল্লাহর জন্য আদায় করছি- 'আল্লাহু আকবার'।

ঈদুল ফিতরে কি তাকবীর দিতে হয়?
উত্তরঃ ঈদুল ফিতরের দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ। প্রথম রাকাতে  ৩টি তাকবীর দিতে হয় এবং দ্বিতীয় রাকতে ৩টি তাকবীর দিতে হয়। এভাবে ৬ তাকবীরে নামাজ শেষ হয়।

মেয়েরা কি জামায়াতবদ্ধ হয়ে ঈদের  নামাজ পড়তে পারবে?
উত্তরঃ হ্যা পারবে। তবে মেয়েদের নিজ বাড়িতে ঈদের নামাজ সহ সব ধরনের নামাজ পড়া উত্তম। আর জামায়াত বদ্ধ হয়ে নামাজ পড়লে কোন মেয়েদের কে ইমাম হওয়া যাবে না। সকলেই লাইন করে দাড়িয়ে নামাজ আদায় করতে হবে।

লেখকের শেষ কথা

প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা আপনারা যে প্রশ্নের উত্তর খুজছিলেন ( ঈদুল ফিতরের নামাজের তাকবীর)আশা করি তা আমাদের এই পোষ্ট থেকে সঠিক উত্তর পেয়ে গেছেন। আর নিশ্চয় আপনাদের উপকার হলো। আর পোষ্টটি পড়ে আপনাদেরকে ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই পরিচিতদের মধ্যে সেয়ার করে দিবেন। কারন তারাও পড়ে উপকৃত হবে। আমরা ব্লগার রা আপনাদের সেবা দানে এবং সঠিক তথ্য দেয়ার জন্য পোষ্ট লিখি। 

আশা করি আরো অনেক ভালো ভালো পোষ্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করবেন। আমাদের সাথে থাকবেন। দোয়া রাখবেন। আর লেখার মধ্য কোন ভুল থাকলে দয়া করে মাফ করে দিবেন। মহান আল্লাহ নিজে ক্ষমাশীল এবং তার ক্ষমাশীল বান্দাদেরকে পছন্দ করেন। ভালো থাকবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

msta2z.comব্লগের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url