অযুর দোয়া কখন পড়তে হয় - ওযুর ফরজ ও সুন্নত কয়টি
মেসওয়াকের ফজিলত সম্পর্কে হাদিসঅযুর দোয়া কখন পড়তে হয়? আসসালামু আলাইকুম প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা। অযুর দোয়া কখন পড়তে হয় এবং কিভাবে পড়তে হয় তা আমাদের অনেকেরই জানা নেই। আমাদের এই পোষ্ট থেকে জানতে পারবেন যে অযুর দোয়া কখন পড়তে হয়। এই জন্য আপনাদের কে পোষ্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে হবে। প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা পবিত্রতা হাসিলের জন্য ওযুই শেষ্ঠ এবং শেষ পন্থা। কারণ, ওযু করেই অন্যতম ও শ্রেষ্ঠ ইবাদাত নামাজ আদায়, কোরআন শরীফ তেলওয়াত এবং অন্যান্য সকল ধমীয় অনুষ্ঠান পালন করতে হয়।
বিশেষ করে প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর সর্বদা পাক-পবিত্র হয়ে থাকা একান্ত কর্তব্য। কারণ পাক-পবিত্র থাকা ইবাদতের মাঝে গুণ্য, শয়তানের ধোকা ও ফেরেববাজি থেকে রেহাই পাওয়া যায়। এতে প্রত্যেক মুসলমানের মন প্রাণ আল্লাহর ভয়ে সচেতন থাকে এবং তার বেহেস্তের গমনের পথ প্রশস্ত করে এবংদোজখের ভীষণ অগ্নির আক্রমণ হতে হিফাজত করে। পাক-পবিত্রতার সাথে মৃত্যু হলে ঈমানের সাথে মৃত্যু হওয়ার পূর্ণ সম্ভাবনা থাকে। কারণ মৃত্যু কালে শয়তান প্রবঞ্চনা দিতে তার নিকট আসতে পারে না। অযুর দোয়া কখন পড়তে হয় তা জানার জন্য আমাদের পোষ্ট টি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইলো। পড়তে থাকুন অযুর দোয়া কখন পড়তে হয়?
পেজ সূচিপত্রঃ অযুর দোয়া কখন পড়তে হয়
ভৃমিকা
অযুর দোয়া কখন পড়তে হয়, ওযুর বিভিন্ন মাসয়ালা, এবং এর জরুরি বিষয়গুলো, যথা ফরজ. ওয়াজিব, সুন্নত, মুস্তাহাব, সম্পর্কে আমাদের এই পোস্টটিতে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এখানে আমরা সর্বপ্রথম ওযু করার নিয়ম এবং পদ্ধতি ও দোয়া দরুদ সম্পর্কে আলোচনা করব। কারণ প্রত্যেক নর- নারী ছেলে-মেয়ে সকলে ওযু করার নিয়ম জেনে তৎপরে এর প্রত্যেকটির মর্যাদা বা কি ধরনের রোকন তার বিষয়ে অবগত হওয়া একান্ত দরকার। আগে শিখতে হবে অজুর নিয়ম তারপর অযুর দোয়া সহকারে অন্যান্য বিষয় গুলো। জানতে চাইলে পড়তে থাকুন-
ওযুর নিয়ত বাংলায়
ওযুর নিয়ত বাংলায়। অজু করার মাধ্যমে আমরা পাক পবিত্র হয়ে থাকি। সঠিক অজু ছারা নামাজ হবে না। আর সঠিক অজু করা শিখতে চাইলে আমাদের এই আলর্টিকেলটি পড়ুন তাহলে সঠিক অজুর একটি ধারনা পেয়ে যাবেন। আশা করি যারা সঠিক অযু করা শিখতে চায় তারা অবশ্যই আরর্টিকেল টি পড়বেন। অযু করাও ইবাদাত। অযুর মাধ্যমে আমরা সকল ধরনের নাপাক থেকে পবিত্রতা অর্জন করে থাকি। আমরা যখনি অযু করবো তখনি আমাদেরকে অযুর নিয়ত করতে হবে। অনেত ইবাদাতের জন্য অযু করা ফরজ।
এভাবে নিয়ত পাঠ করার পর সর্বপ্রথম ডান হাত ও পরবর্তীতে বাম হাতের কব্জি পর্যন্ত যথাক্রমে তিনবার ধৌত করবে। তারপর গড়গড়ার সাথে তিনবার কুলি করবে। এরপর ডান হাত দ্বারা নাকে পানি দিয়ে বাম হাতের বৃদ্ধা ও কনিষ্ঠ অঙ্গুলি দয় নাসিকা ছিদ্রে প্রবেশ করিয়ে ভিতর ভাগ তিনবার ধৌত করবে। অতঃপর সম্পূর্ণ মুখ্য মন্ডল অর্থাৎ ললাটের উপরিভাগের চুল ওঠার স্থান হতে, থুতনির নিচ পর্যন্ত এবং এক কানের লতি হতে ওপর কানের লতি পর্যন্ত ভালোভাবে তিনবার ধৌত করবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন মুখ -মণ্ডলের কোন অংশ শুকনো না থাকে।
আরো পড়ুনঃ ইসলামিক শর্ট ও উত্তর জেনে নিন
যাদের দাড়ি অত্যান্ত ঘন তাদের দাড়ি খিলাল করে ভিজিয়ে নিতে হবে ।এরপর উভয় হাতে কনিষ্ঠ, অনামিকা, ও মাধ্যমা এ তিনটি আঙ্গুলী একত্র করে মাথার এক চতুর্থ অংশ মাসেহ করবে এবং সাথে সাথে দুহাতের তর্জনী আঙ্গুলদ্বয় কানে ঢুকিয়ে বৃদ্ধা আঙ্গুলি দ্বারা কানের পৃষ্ঠদেশ মাসেহ করবে। আর উভয় হাতের পিঠ দ্বারা ঘার মাসেহ করবে। এরপর ডান পা প্রথমে তিনবার টাকনু অর্থাৎ ছোট গিরাসহ ধৌত করবে এরপর বাম পা তিনবার ধৌত করার মাধ্যমে ওযু শেষ করবেন। ওযুর নিয়ত বাংলায়
ওযুর নিয়ম কয়টি
ওযুর নিয়ম কয়টি? আমরা সকল মুসলমান ওযু করি কিন্তু ওযু করার নিয়ম কয়টি তা হয়তো অনেকেরই সঠিক ভাবে জানা নেই। প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা আমরা আজ জানবো যে ওযুর নিয়ম কয়টি। মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বিষেয় ভাবে নামাজ ও কোরআন পাড়ার আগে ওযু করার আদেশ দিয়েছেন। শারিরিক পবিত্রতা অর্জনের জন্য গোসলের পর অযুর স্থান। অযু সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের সুরা মায়িদায় অজুর নিয়ম বিশেষ ভাবে বলেছেন আল্লাহ তায়ালা। তো মুসলমান ভাই ও বোনেরা আজ আমরা জেনে নিই ওযুর নিয়ম কয়টি? পড়তে থাকুন, ওযুর নিয়ম কয়টি?
অজু করার জন্য বসার জায়গা
উঁচু এবং পবিত্র স্থানে কিবলামুখী হয়ে ওযু করা মুস্তাহাব। পানি ঢেলে নিতে হয় এমন পাত্র হলে তা বাম দিকে রাখা আর হাত দিয়ে তুলে নিতে হলে পানির পুকুর বা হাউস ডানে রেখে বসা মুস্তাহাব।
অজুতে নাকে পানি দেয়ার নিয়ম
ডান হাত দিয়ে নাকে পানি দিবে এবং বাম হাত দিয়ে নাক ঝাড়বে। বাম হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুলের অগ্রভাগ দিয়ে নাক পরিষ্কার করবে। এছাড়া কনিষ্ঠ ও বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়েও নাক পরিষ্কার করা যায়। তিনবার নাকে পানি দেওয়া সুন্নত।
অজুতে মুখমন্ডল ধোয়ার নিয়ম
উভয় হাতে পানি নিয়ে সমস্ত মুখমণ্ডল ধৌত করবে। কপালের চুলের গোড়া থেকে থুতনির নিচে এবং এক কানে লতি হতে ওপর কানের লতি পর্যন্ত এমনভাবে পানি পৌঁছানো যাতে করে একটি পশম পরিমাণ জায়গা ও শুকনো না থাকে। ঘন দাড়ি হলে খিলাল করে দিতে হবে।
কুনই সহ হাত ধৌত করার নিয়ম
হাতের তালুতে পানি নিয়ে আঙ্গুলের অগ্রভাগ থেকে ধৌত শুরু করবে কুনই পর্যন্ত পানি পৌঁছার পর হাতের অগ্রভাগ নিচু করবে যাতে করে ধৌত করা পানি আঙ্গুলের অগ্রভাগ দিয়ে নিচে গড়িয়ে পড়ে।
মাথা মাসেহ করার নিয়ম
মাথার চার ভাগের একভাগ মাসাহ করা ফরজ। সম্পূর্ণ মাথা মাসাহ করা সুন্নত। পানিতে হাত ডুবাইয়ে বা হাতে পানি নিয়ে ঝেড়ে ফেলবে। তারপর ভেজা হাত একবার মাথায় ফিরাবে। দুই হাত ভিজিয়ে হাতের পুরোতালু আঙ্গুলের পেট সহ মাথার অগ্রভাগে রেখে মাথা জুড়ে পেছনের দিকে টেনে নিয়ে মাশাহ করবে।
গোড়ালি সহ পা ধৌত করার নিয়ম
ডান হাত দিয়ে পায়ের সামনে এর অংশে পানি ঢালা সুন্নাত। বামহাত দিয়ে পা ও পায়ের তলদেশ মর্দন করা মুস্তাহাব। পায়ের আঙ্গুল খিলাল করা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। প্রথমে ডান পায়ের কনিষ্ঠা ও অনামিকা আঙ্গুরদ্বয়ের মাঝে নিচ থেকে আঙ্গুল প্রবেশ কড়াইয়ে বাম পায়ের কনিষ্ঠা আঙ্গুল দ্বারা খিলাল করবে। ডান পায়ের বৃদ্ধা আঙ্গুলে গিয়ে শেষ করবে। তারপরে বাম হাতের কনিষ্ঠা আঙ্গুল দ্বারা বাম পায়ের বৃদ্ধা আঙ্গুল থেকে আঙ্গুলে গিয়ে শেষ করবে।
এই আরর্টিকেলে সহীহ সুদ্ধ ভাবে ওযু করার নিয়ম বলা হয়েছে। আশা করি আপনারা সকলেই ভালো ভাবে তা বুঝতে পেরেছেন। নামাজ এবং কোরআন পরার আগে আমরা সকলেই ওজু করি পবিত্রতা অর্জনের জন্য। আমরা এখন থেকে উপরের নিয়মে ওযু করার চেষ্টা করবো। আসলে ওযু সঠিক না হলে নামাজ ও সঠিক হয় না। নামাজ ও ওযু ওতোপ্রত ভাবে জরিত। আমরা সকলেই চেষ্টা করবো সহিহ সুদ্ধ ভাবে ওযু করার। ভালো থাকবেন।
অযুর দোয়া কখন পড়তে হয়
অযুর দোয়া কখন পড়তে হয়? ওযুর আগে সর্বপ্রথম দোয়া হলো `বিসমিল্লাহ' বলে ওযু শুরু করা। আমাদের নবী রাসুল (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি ওযুর শুরুতে বিসমিল্লাহ বলবে না তার ওযু পরিপূর্ন হবে না। (তিরমিজি, হাদিস: ২৫) অজুর শুরুতে এবং অযুর সময় প্রত্যেকটা অঙ্গ ধৈাত করার সময় কিছু দোয়া আছে। ওযুর এ সকল দোয়া পাঠ করা মুস্তাহাব। অযুর আগে, মাঝে, ও পরে দোয়া পড়া আল্লাহর রাসুল (সাঃ) থেকে প্রমানিত। এসকল দোয়া পড়লে সওয়াব আছে না পড়লে কোন গুনাহ নেই। শুধূ ৪ টি ফরজ আদায় করলে ওযু হয়ে যাবে। অযু করার সময় কোন অঙ্গ ধৈাত করার সময় কোন দোয়া পড়তে হবে তা নিচে দেওয়া হলো-
হাত ধোয়ার সময় এই দোয়াটি পড়বে
উচ্চারণঃ বিসমিল্লাহিল*** আ’লিয়্যিল আযীম, ***ওয়াল হামদু লিল্লাহি ***আ’লা-দ্বীনিল ***ইসলামি, আল ইসলামু হাককুন ***ওয়াল কুফরু বাত্বিলুন, আল ইসলামু নুরুন ওয়াল কুফরু জুলমাতুন।
অর্থঃ “সর্বপ্রথম মহান ***আল্লাহর তা'আলার নামে শুরু করছি **এবং যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর জন্য। কেননা তিনি আমাকে ইসলামের উপর রেখেছেন। ইসলাম হচ্ছে সত্য, ***আর কুফরি হচ্ছে মিথ্যা। ইসলাম আলোক উজ্জ্বল এবং কুফর অন্ধকারময়।”
কুলি করার সময় এই দোয়াটি পড়বে
উচ্চারণঃ আল্লাহুমা আয়িন্নি আলা*** তিলাওয়াতিল কুরআনি*** ওয়া যিকরিকা ওয়া **শুকরিকা ওয়া হুসনি ই’বাদাতিকা।
অর্থঃ “হে আল্লাহ! তোমার কোরআন*** পাঠ করার, তোমার যিকির করার****, তোমার শুকরিয়া আদায় করার, এবং তোমার (***উক্ত ইবাদাত গুলো আদায় করার, ব্যাপারে আমাকে অতি উত্তম সাহায্য করো।”
নাকে পানি দেওয়ার সময় এই দোয়াটি পড়বে
উচ্চারণঃ আল্লাহু***মা আরিহনী রায়িহাতা****ল জান্নাতি ওয়া ‘আনতা মিন্নি রাদিন্।
অর্থঃ “হে আল্লাহ ! তুমি আ**মাকে জান্নাতের সুঘ্রান নেয়ার তৌ***ফিক দান করো এবং তুমি যাদের প্রতি সন্তুষ্ট আছো আমাকে তাদে**র দলভুক্ত করে দিও।”
মুখ-মন্ডল ধোয়ার সময় এই দোয়া পড়বে
উচ্চারণঃ আল্লাহুমা বাইয়্যিদ*** ওয়াজহী বিনুরিকা ইয়াওমা8** তাবইয়াদ্দু উজূ-হু হাবীবিকা **ওয়ালা তুদাওভিদ ওয়াজহী ইয়াওমা তাছাওয়াদ্দু উজু-হু আ’দাইকা।
অর্থঃ “হে আল্লাহ! তুমি আমার মুখ-মন্ডল কে*** সেদিন শুভ্র করে দিও। যেদিন তোমার প্রিয় বান্দাগণের মুখ-মন্ডল ***আলোকোজ্জল করবে। আর সেদিন আমার মুখকে(( বিশ্রি করে দিও না, যেদিন তুমি তোমার শত্রুতা পোষণকারীদের** মুখ-মন্ডল কে বিশ্রি করে দিবে।”
ডান হাত ধোয়ার সময় এই দোয়া পড়বে
উচ্চারণঃ আল্লাহুমা আ**’ত্বিনি কিতাবি ইয়ামিনি **ওয়া হাসিবনি হিসাবাই ইয়াসিরা।
অর্থঃ “হে আল্লাহ ! তুমি আমার **আমল নামা আমার** ডান হাতে প্রদান করবে। এবং আমার *হিসাব নিকাশ সহজ করে দিবে।”
বাম হাত ধোয়ার সময় এই দোয়া পড়বে
উচ্চারণঃ আল্লাহুমা লা** তু’ত্বিনী কিতাবী বিমিমালী ওয়ালা মিওঁ ওয়ারায়ি যাহরি।
অর্থঃ “ হে আল্লাহ!* তুমি আমার আমল ****নামাটি আমার বাম হাতে দিও না,* এবং আমার আমলনামাটি পেছনে *প্রকাশ করো না।”
মাথা মাসেহ করার সময় এই দোয়া পড়বে
উচ্চারণঃ আল্লাহুমা আযিল্লিনী ****তাহতা যিলি আ’রশিকা ইয়াওমা লা ****যিল্লা ইল্লা যিল্লু আ’রশিকা।
অর্থঃ “ হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ***সেদিন তোমার আরশের ছায়ার নিচে ছায়া দান করো,যেদিন তোমার আরশের ছায়া ছারা আর কোন ছায়া থাকবে না।”
কান মাসেহ করার সময় এই দোয়া পড়বে
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মাজ ***আ’লনী মিনাল্লাযীনা **ইয়াসমাউনাল ক্বাওলা ফা-ই**য়াওাবিউনা আহসানাহু।
অর্থঃ “হে আল্লাহ! আপনি **আমাকে তাদের অন্তভুক্ত করুন, **যারা আপনার কথা শুনে এবং তা যথাযথ ভাবে(( অনুসরন করে।”
ঘাড় মাসেহ করার সময় এই দোয়া পড়বে
উচ্চারণঃ আল্লাহুমা আ’**তিক রাকাবাতি** মিনান নারি।
অর্থঃ “ হে আল্লাহ! **তুমি আমাকে জাহান্নামের ***আগুন, শিকল ও বেড়ি** সমূহ থেকে রক্ষা করো।”
ডান পা ধোয়ার সময় এই দোয়া পড়বে
উচ্চারণঃ আল্লাহুমা** ছাব্বিত ক্বদামাইয়া** আ’লা ছিরাতিল মুসতাক্বিম।
অর্থঃ “ হে আল্লাহ! তুমি পদদ্বয়কে সঠিক পথে প্রতিষ্ঠিত রেখো।”
বাম পা ধোয়ার সময় এই দোয়া পড়বে
উচ্চারণঃ অল্লাহুমা ইন্নি** আউযুবিকা আন **তাযিল্লু ক্বাদামী ইয়াওমা** তাযিল্লু আক্দামাল মুনাফিকীন।
অর্থঃ “ হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে ঐ দিনের** পদঙ্খলন থেকে নিষ্কৃতি কামনা করছি, **যেদিন মুনাফিকের পদঙ্খল ঘটবে।”
উপরের ওযুর দোয়াগুলো পড়লে সওয়াব আছে, না পড়লে কোন গুনাহ নাই। তবে আপনি যদি উপরিল্লিখিত দোয়া গুলো না পড়তে পারেন, তাহলে আপনি কালেমা শাহাদাত পরবেন। অজু করার পর আকাশ বা ওপরের দিকে তাকিয়ে কালেমা শাহাদাত পাঠ করা মুস্তাহাব। রাসুল (সা.)-বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কামিল বা পূর্ণরূপ অজু করে পাঠ করবে আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু। তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে যাবে এবং যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। (মুসলিম, হাদিস : ৪৪৬; ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪৪৬) নিচে কালেমা শাহাদাত দেওয়া আছে।
অজু সমাপ্ত করার পর এই দোয়া (কালেমা শাহাদাত) বলা মুস্তাহাব।
উচ্চারণঃ ‘আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহ। ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহ’।
অর্থঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো উপাস্য নেই।
ওযুর ফরজসমূহ
ওযুর ফরজসমূহ কি কি? মানুষের জীবনকে সুন্দর করে গড়ে তোলার জন্য মহান আল্লাহ তা'আলা তাঁর বান্দাদেরকে হৃদয়ের পবিত্রতা অর্জনের পাশাপাশি বাহিক পবিত্রতার প্রথম ধাপ হিসাবে ওযুর বিধান বলি বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, হে ঈমানদারগণ যখন তোমরা নামাজের জন্য প্রস্তুত হও এবং (যখন অজুহীন অবস্থায় থাকো) তখন মুখ মন্ডল ও কুনই সহ দুহাত ধৌত কর তোমাদের মাথা মাসেহ করো এবং উভয় পা টাকনু সহ ধৌত কর। নামাজ যেহেতু শ্রেষ্ঠ ইবাদাত সেহেতু আল্লাহ তাআলা বান্দাহকে উত্তম রূপে পবিত্রতা লাভ করার নিয়ম বলি বর্ণনা করে দিয়েছেন। আলোচ্য আয়াতে আলোকে ওযুর চারটি ফরজ নিম্নে দেওয়া হল- ওযুর ফরজসমূহ
ওযুর ফরজ ৪ টি সেগুলো হলো
- সম্পন্ন মুখমন্ডল ভালোভাবে ধৌত করা অর্থাৎ ললাটের উপরে ভাগের চুল গজানোর স্থান হতে থুতনির নিজ পর্যন্ত এবং এক কানের লতি হতে অন্য কানের লতি পর্যন্ত ভালোভাবে ধৌত করা
- কোনই সহ দুহাত ভালোভাবে ধৌত করা
- মাথার চার ভাগের একভাগ মাসেহ করা
- পায়ের গিরা পর্যন্ত দু’পা উত্তম রুপে ধৌত করা।
ওযুর সুন্নত সমূহ
ওযুর সুন্নত সমূহ কি কি? ওযুর মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করা হয়। আর পবিত্র ব্যক্তিকে আল্লাহ তায়ালা ভালোবাসেন। মহান আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি লাভ হয়। তাই নামাজ পড়ার জন্য ওযু অবশ্যক। রাসুল (সাঃ) এর সুন্নতে যখন ওযু করা হবে তখন সওয়াব বহুগুন বেড়ে যাবে। সুন্নতের উপর আমাদের প্রত্যেক মুসলমানদের কে আমল করা উচিত। এগুলোর মাধ্যমে ওযু সুন্দর হয়। ওযুর আমল গুলো পূর্ণতা লাভ করে। ওজুতে কিছু বিষয় সুন্নত আছে যা আমাদের কে জানা অবশ্যক। ওযুর সুন্নত সমূহ অথবা ওযুর সুন্নত কি কি তা নিচে দেওয়া হলো। পড়তে থাকুন-
ওযুর সুন্নত সমূহ কি কি?
১.নিয়ত করা ২. বিসমিল্লাহ বলে ওযু আরম্ভ করা ৩. হাতের আঙ্গুলগুলো খিলাল করা ৪. উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত তিনবার ধৌত করা ৫. মেসওয়াক করা ৬. তিনবার কুলি করা ৭. তিনবার নাকে পানি দেয়া ৮. সম্পূর্ণ মুখ্য মন্ডল তিনবার ধৌত করা ৯. উভয় হাত কোনই সহ তিনবার ধৌত করা ১০,সমস্ত মাথা একবার মাসেহ করা ১১. উভয় কান একবার মাসেহ করা ১২. টাকনো পর্যন্ত উভয় পা তিনবার ধৌত করা ১৩. পায়ের আঙ্গুলগুলো খিলাল করা ১৪. এক অঙ্গ শুকানোর পূর্বে অন্য অঙ্গ ধৌত করা ১৫. ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ওজুর কাজ গুলো সম্পন্ন করা।
ওযুর মোস্তাহাব সমূহ
ওযুর মোস্তাহাব সমূহ কি কি? অজুর পবিত্রতা অর্জন নামাজ আদায়ের প্রধান মাধ্যম। অযুর অভিধানিক অর্থ হলো, পরিষ্কার, স্বচ্ছতা ও সৌন্দর্য। শরিয়তের পরিভাষায় পবিত্রতা অর্জনের নিয়তে নির্দিষ্ট অঙ্গসমূহে পানি ব্যাবহার করাকে অজু বলে। হাদিসে যে রকম বলা হয়েছে জান্নাতের চাবি নামাজ আর নামাজের চাবি অজু। অজু তিন প্রকার যথা - ফরজ, ওয়াজিব, ও মুস্তাহাব। প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা ওযুর ফরজ ও সুন্নত যে রকম আমাদের জানা আবশ্যক তেমনি ওযুর মোস্তাহাব সমূহ আমাদের প্রত্যেক মুসলমানকে জানা প্রয়োজন।
ওযুর মোস্তাহাব সমূহ হলো
১.ওযু করার সময় কেবলামুখী হয়ে বসা। ২. নিচু স্থান অপেক্ষায় একটু উঁচু স্থানে বসা। ৩. ডান দিক হতে অজু আরম্ভ করা। ৪. অজুতে অন্য কোন লোকের সাহায্য না নিয়া। ৫. নামাজের সময় হওয়ার পূর্বে ওযু করা। ৬. অজুর নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা।৭. ওযু করার সময় কথা না বলা । ৮.বাম হাত দ্বারা নাসিকা পরিষ্কার করা। ৯. ঘাড় মাসেহ করা। ১০. উভয় কানের পৃষ্ঠদেশ মাসেহ করা। ১১. অজুর অঙ্গ সমূহ ভালোভাবে ধৌত করা। ১২. আংটি গহনা নেড়েচেড়ে উক্ত স্থান ভিজিয়ে দেয়া।
১৩. প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি খরচ না করে মধ্যম পরিমান পানি খরচ করা। ১৪. উভয় পা বাম হাত দ্বারা ধৌত করা। ১৫. অজুর উদ্বৃত্ত পানি থেকে সামান্য পরিমাণে পান করা। ১৬. অজুর শেষে দরুদ ও কালেমায়ে শাহাদাত পাঠ করা। ১৭. তাহিয়াতুল ওযুর নামাজ আদায় করা। ১৮. ওযুর শেষে যে পানি থাকে তা দাঁড়িয়ে পান করা।
ওযু ভঙ্গের কারণ কয়টি
অযু ভঙ্গের কারণ কয়টি? কি কি কারনে অজু ভেঙ্গে যায় তা হয়তো আমরা অনেকেই জানি না। ওযু করার পর এমন কোন কারনে ওযু ভেঙ্গে যাচ্ছে সে বিষয়ে আমাদের কোন জ্ঞানি নেই। আর সেই অজুহীন অবস্থাই নামাজ হবে না। এই জন্য প্রত্যেক মুসলিম বান্দাদের জানা প্রয়োজন কি কি কারনে অযু ভঙ্গ হয়। আসলে অযু ভঙ্গের কারণ কয়টি। হাদিস মোতাবেক অযু ভঙ্গের কারন ১০ টি। জেনে নেওয়া যাক অযু ভঙ্গের ১০ টি কারন কি কি?
নিম্নলিখিত কারনে অযু ভেঙ্গে যায়- ১. শরীরের কোন অংশ থেকে রক্ত বা পুজ বের হয়ে গরিয়ে পরলে। ২. যে কোন অবস্থায় তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়লে। ৩. প্রসাব বা পায়খানা করলে। ৪. মুখ ভরে বমি করলে। ৫. পায়খান বা প্রসাবের পথ দিয়ে কোন কিছু বের হলে। ৬. জ্ঞান হারালে। ৭. পাগল বা মাতাল হলে। ৮. নামাজের মধ্যে উচ্চস্বরে হাসলে। ৯. গুহ্যদ্বার দিয়ে কৃমি বের হলে। ১০. স্বামী-স্ত্রীর গুপ্ত অঙ্গ একত্রে মিলিত করলে অযু ভঙ্গ হয়ে যায়।
ওযুর মাকরুহ সমুহ
ওযুর মাকরুহ সমুহ কি কি? জেনে নেওয়া যাক ওযুর মাকরুহ সমূহ কিকি? ১. অজু শুরু করার সময় বিসমিল্লাহ না বলা। ২. নাপাক স্থানে বসে ওযু করা । ৩. পায়খানা প্রসবের বেগ নিয়ে ওযু করা। ৪. নিয়ত না করা। ৫. কুলি করার সময় গড়গড়া না করা। ৬. বিনা অজুর কুলি ও নাকে পানি বাম হাতে দেয়া। ৭. কোন অঙ্গ তিনবারের কম বা বেশি ধোয়া। ৮. একা ধিক বার মাথা মাসেহ করা। ৯. ওযু করার পরে মেসওয়াক করা। ১০. অধিক পানি খরচ করা। ১১. ওযুর কোন সুন্নাত পরিত্যাগ করা। ১২. ছতর খুলে ওযু করতে বসা। ১৩. ওযু করার সময় কথা বার্তা বলা। ১৪. ওযুর অঙ্গ প্রতঙ্গ গুলোতে এমন ভাবে পানি নিক্ষেপ করা যাতে নিজের বা অন্যের শরিরে লেগে যাওয়া। ১৫.নাপাক স্থানে অযু করা ১৬. অযুর সময় দুনিয়াবি কথা বলা।
ওযুর ওয়াজিব কয়টি
ওযুর ওয়াজিব কয়টি ও কি কি?
উত্তরঃ ওযুর ওয়াজিব ৩ টি। যে সকল কারনে ওযু করা ওয়াজিব তা নিচে দেওয়া হলো-
- পবিত্র কাবা ঘর তাওয়াফ করার পূর্বে।
- জানাজার নামাজ আদায় করার সময়।
- পবিত্র কুরআন শরীফ স্পর্শ করা কিংবা লিখার সময় ওযু করা ওয়াজিব।
যে সকল ক্ষেত্রে ওযু করা সুন্নাত
যে সকল ক্ষেত্রে ওযু করা সুন্নাত? ১.আজান দেয়ার পূর্বে ওযু করা সুন্নত। ২. মসজিদে প্রবেশের পূর্বে ওযু করা সুন্নত। ৩. বিধর্মীদেরকে ইসলামে দীক্ষিত করার পূর্বে ওযু করা সুন্নত। ৪. মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেয়ার পূর্বে ওযু করা সুন্নত। ৫. একবার ওজু করে ইবাদত করার পর অজু থাকা অবস্থায় পুনরায় ওযু করা সুন্নত। ৬. খাটি আলিমদের সাথে দেখা করার পূর্বে ওযু করা সুন্নত। ৭. কোন পশুর জবেহ করার পূর্বে ওযু করা সুন্নত।
ওযুর প্রকারভেদ
ওযুর প্রকারভেদ। ওযু তিন প্রকার যথা- ১.ফরজ ২. ওয়াজিব ও ৩. মুস্তাহাব।
(ক) কোরআন শরীফ স্পর্শ করা ও নামাজ পড়ার জন্য ওযু করা ফরজ। (খ) ক্বাবা শরীফ তাওয়াফ করার জন্য ওযু করা ওযাজিব। (গ) ৮ সময় অযু করা মুস্তাহাব সেগুলো হলো-১. নিদ্রা যাওয়ার পূর্বে। ২. অজু থাকা সত্ত্বেও ওযু করা। ৩. অজু ভঙ্গ হওয়া মাত্র অজু করা। ৪. মিথ্যা বলার পর ওযু করা। ৫. গীবত বলার পর ওযু করা। ৬. অশ্লীল গান গাওয়ার পর ওযু করা। ৭. নামাজের বাহিরে উচ্চস্বরে হাসিবার পর ওযু করা। ৮. মৃত ব্যক্তিকে গোসল দিতে যাওয়ার পূর্বে ওযু করা মুস্তাহাব।
লেখকের শেষ কথা
প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা আমাদের এই আরর্টিকেল থেকে আপনারা ওযু নিয়ে বিশেষ বিশেষ তথ্য পেয়েছেন আশা করি। আমরা সকল মুসলিম ভাই ও বোনেরা চেষ্টা করবো সহীহ শুদ্ধ ভাবে ওযু করার। ওযু মানুষ দেখানোর জন্য নয় আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য। রাসুল (সাঃ) যেভাবে ওযু করেছেন আমরা ও সেই ভাবেই ওযু করার চেষ্টা করবো। কারন ওযু সঠিক না হলে নামাজ হবে না। জান্নাতের চাবি যেমন নামাজ তেমনি নামাজের চাবি হলো ওযু। তাহলে আপনারা বুঝুন ওযু কত সহীহ শুদ্ধ ভাবে করতে হবে।
প্রিয় ভাই ও বোনেরা আমাদের এই আরর্টিকেল টি পড়ে যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই পরিচিতদের মধ্যে সেয়ার করে দিবেন। সকলেই ভালো থাকবেন। আসসালামু আলাইকুম।
msta2z.comব্লগের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url