শবে কদরের নামাজ বিতরের আগে না পরে বিস্তারিত জানুন
শবে কদরের নামাজ বিতরের আগে না পরে? আসসালামু আলাইকুম,সকল মুসলমান ভাই ও বোনদের। প্রিয় ভাই ও বোনেরা আপনারা জানতে চেয়েছেন যে, শবে কদরের নামাজ বিতরের আগে না পরে। আমরা যত নামাজি মুসলমান আছি সকলেই রাতে এশার নামাজের পর বেতর নামাজ পড়ি। তাহলে বুঝতেই তো পারছেন সবশেষে আমরা বেতরের নামাজ পড়ি। এটাই মহান আল্লাহ তায়ালার বিধান। এখন প্রশ্ন হলো শবে কদরের নামাজ বিতরের আগে পরা যাবে কি, যাবে না। চলুন জেনে নেওয়া যাক হাদিসে আসল তথ্য কি আছে। পড়তে থাকুন-
শাবান চাঁদের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে এ নামাজ পড়তে হয়। দুই বা চার রাকাত করে এই নামাজ পড়তে হয়। সুরা ফাতিহার পর যে কোন সুরা পড়ে এই নামাজ পড়া যায় এবং যত রাকাত ইচ্ছা পড়া যায়। এই নামাজের ফজিলত অত্যান্ত বেশি। শবে কদরের নামাজ রাতের বেলা এশার নামাজের পরে পড়তে হয়। এই জন্য এই কদরের রাতকে হাজার মাসের চেয়ে উত্তম রাত বলা হয়েছে। প্রিয় ভাই ও বোনেরা জেনে নেওয়া যাক শবে কদরের নামাজ বিতরের আগে না পরে ।
ভৃমিকা
মহান আল্লাহ তায়ালা শবেকদরের রাতে পবিত্র কোরআন নাযিল করেছেন। এই কদরের ফজিলত অনেক। আল্লাহ তায়ালা এই রাতটি কে বরকত পূর্ণ রাতে নাযিল করেছেন। ফজর উদয় হওয়ার সাথে সাথে ঐ রাতটি পুরোপুরি শান্তিময়। শবেকদরের রাতে সব ব্যাপারে জ্ঞানগর্ভ ফায়সালা প্রকাশ করা হয়ে থাকে।ফেরেস্তা ও রুহ, তাদের রবের অনুমতিক্রমে প্রতিটি হুকুম নিয়ে দুনিয়াতে নেমে আসে। এই জন্য এই কদরের রাতকে হাজার মাসের চেয়ে উত্তম রাত বলা হয়েছে।
হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্নিত, নবী (সাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে এবং সওয়াবের আশায় রমযানের রোজা পালন করল, তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। আর যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে এবং সওয়াবের আশায় শবে কদরের রাতে ইবাদাতে দাড়াল, তার আগে কার সমস্ত গুনাহ মাপ করে দেওয়া হবে।(বুখারি,১৮৭১) নবী করিম (সাঃ) বলেছেন, তোমরা লাইলাতুল কদরকে রমযানের শেষ দশ দিনের বেজোড় রাতে তালাশ কর। (বুখারি,১৮৭৪)
লাইলাতুল কদর কবে
লাইলাতুল কদর কবে? এই রাত চেনার কোন নির্দিষ্ট আলামত আছে কি? লাইতুল কদরের রাত কে নির্দিষ্ট করে চেনার সম্ভবনা নেই। কারন কোন হাদিসে নির্দিষ্ট কোন রাতের কথা বর্ণা করা হয়নি। অনেক মুসলিম মনে করে যে, রমজান মাসের ২৭ রমজানের দিন লাইলাতুল কদরের দিন। এমন ধারনা প্রায় সকল মুসলমানের মধ্য রয়েছে। কিন্তু এই ধারনা সঠিক নয়। বিশেষ করে ২০ রমজানের পর থেকে যে কোন একটি বেজোর রাত শবে কদরের রাত হতে পারে। এই জন্য নির্দিষ্ট ভাবে রমজানের কোন একটি রাতকে শবে কদরের রাত বলা যাবে না।
লাইলাতুল কদর কবে? হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন (রমাযানের শেষ) দশ দিন এসে যেত, তখন নবী করিম (সাঃ) পরনের কাপর মজবুত করে বাধতেন। (দৃঢ়তার সাথে প্রস্ততি নিতেন), রাতে তিনি জাগতেন এবং পড়িবারের লোকজনকে ও জাগাতেন। বুখারি,১৮৮২) । শাবান চাঁদের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে এ নামাজ পড়তে হয়। দুই বা চার রাকাত করে এই নামাজ পড়া হয়। সুরা ফাতিহার পর যে কোন সুরা পড়ে এই নামাজ পড়া যায় এবং যত রাকাত ইচ্ছা পড়া যায়। এই নামাজের ফজিলত অত্যান্ত বেশি।
রমজানের শেষ দশ দিন শবে কদর রাত খুজতে বলা হয়েছে। এবং এই রাতে বিশেষ ইবাদাতের প্রতে মনোনিবেশ দিতে বলা হয়েছে। পবিত্র কোরআনুল কারিমে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, আমি এই কোরআনকে কদরের রাতে নাযিল করেছি।তুমি কি জানো, লাইলাতুল কদর কি? লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।( সুরা কদর, আয়াত:১-৩) । শবে কদর কবে? তোমরা শেষ দশকের বেজোড় রাতে শবে কদর তালাশ করো। (বুখারি হাদিস: ২০১৭) । উবাদা ইবনে সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুল (সাঃ) একদিন লাইলাতুল কদরের ব্যাপারে খবর দিতে বের হলেন।
এসময় দুইজন মুসলমান ঝগরা করছিলেন। তখন নবী করিম (সাঃ) বললেন, আমি আপনাদের কে লাইলাতুল কদরের ব্যাপারে বলতে বের হয়েছিলাম। কিন্তু দুই জন্য মুসলিম ব্যক্তি বিবাদে লিপ্ত হওয়ায় সেই জ্ঞান উঠিয়ে নিয়া হয়েছে। আশা করি উঠিয়ে নেওয়া টা আপনাদের জন্য বেশি ভালো হয়েছে। আপনারা সপ্তম (২৭তম) এবং ৫ম(২৫ তম) তারিখে লাইতুল কদরের সন্ধান করুন। (সহিহ বুখারি হাদিস:৪৯) অর্থাৎ আপনারা ২০ রোজার পর থেকে যে বোজোর দিন গুলো আছে সে দিনে লাইলাতুল কদরের সন্ধান করুন। যেমন, ২১ রোজার দিন, ২৩ রোজার দিন, ২৫ রোজার দিন,২৭ রোজার দিন এবং ২৯ রোজার দিন লাইলাতুল কদর সন্ধান করুন।
শবে বরাতের নামাজ কোন সূরা দিয়ে পড়তে হয়
শবে বরাতের নামাজ কোন সূরা দিয়ে পড়তে হয়? নামাজের আলাদা কিছুই নেই। নামাজ নামে সব নামাজই একই নিয়মে। যেহেতু এই রাতকে আল্লাহ তায়ালা এক বিশেষ রাত বলেছেন এবং ইবাদাত বন্দেগী করে কাটাতে বলেছেন তাই হাদিসে এর সমাধান দেওয়া হয়েছে। রাসুল (সাঃ) শবে কদরের রাত সম্পর্কে বলেছেন, এই রজনীতে ইবাদাত কারিদের সকল গুনাহ গুলো মহান আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করে দিবেন। তবে কিছু মানুষকে ক্ষমা করবেন না। তারা হলো, আল্লাহর সাথে শিরককারি, যাদুকর, সুদখোর, যিনাকারি, এবং পিতামাতাকে কষ্ট দেয় এমন ব্যক্তি কে আল্লাহ ক্ষমা করবেন না।
শবে বরাতের নামাজ কোন সূরা দিয়ে পড়তে হয়শবে বরাতের নামাজ নফল নামাজ। শবে বরাতের রাত জেগে নফল নামাজ পড়তে বলেছেন রাসুল (সাঃ)। এই রাতে আলাদা কোন নামাজ নেই। আমরা যেভাবে নফল নামাজ পড়ি ঠিক ঐ ভাবেই এই রাতে নামাজ পড়তে হবে। নফল নামাজ যে যত রাকাত পাড়তে পারবে পরবে। এতে কোন আলাদা নিয়ম নেই। এবং আলাদা কোন নিয়ত ও করতে হয় না। তবে অনেকেই ১২ রাকাত করে পড়তে বলে। যে সুরা গুলো দিয়ে শবে বরাতের নামাজ পড়তে হয় সেগুলো নিচে বিস্তারিত জানানো হলো-
সাধারনত শবেবরাতের নামাজ নফল নামাজ তাই এই নামাজ আর অন্য নামাজের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। আপনি দুই রাকাত করে নামাজের নিয়ত করে আপনার সামর্থ্য অনুযায়ি আপনি যতটুকু পারেন পড়তে পারবেন। সে ক্ষেত্রে ৮ রাকাত বা ১০ রাকাত বা ১২ রাকাত পড়তে পারেন বা তার বেশি ও হতে পারে। শবেবরাতের নফল নামাজের নিয়ত বলতে হবে, আমি শবেবরাতের দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ছি আল্লাহুআকবার বলে তকবির দিয়ে নামাজ পড়া শুরু করতে হবে। রাসুল (সাঃ) কোন হাদিসে উল্লেখ্য করেন নি যে,প্রতি রাকাতে ৭ বার বা ১১ বার সুরা ইখলাস পড়ে শবেবরাতের নামাজ পড়তে হবে। এগুলো মানুষের মনগড়া কথা।
শবে বরাতের রাতে নফল নামাজের নির্দিষ্ট কোন সুরা নেই। এমন কোন নির্দিষ্ট সুরা নেই যে আপনি এই সুরা গুলো দিয়ে নামাজ পড়বেন। আপনার যে সুরা গুলো মুখস্থ আছে সেই সুরা গুলো দিয়েই আপনি নামাজ পড়তে পারবেন। সুরা ফাতিহার সাথে ৭ বার বা ১১ বার সুরা ইখলাসের মাধ্যমে শবেবরাতের নামাজ, না পড়ে স্বাভিক নিয়মে ২ রাকাত করে যতটুকু পারা যায় পড়া উচিত। বিভিন্ন নামাজ শিক্ষা বই ও মকসেদুল মুমিনের মত বানোয়াট মিথ্যা ও জাল বইগুলোতে, শবে বরাতের নামাজের নিয়ম, শবে মেরাজের নামাজের নিয়ম, শবে কদরের নামাজের নিয়ম ইত্যাদি দেয়া হয়ে থাকে।
এগুলো সবই তাদের মনগড়া বক্তব্য। কোন নফল নামাজের ক্ষেত্রে এই রকম বিশেষ কোন নিয়ম নেই। তাহাজ্জুদ বা কিয়ামুল লাইলের ক্ষেত্রে আমাদের উচিত দীর্ঘ সময় কোরআন তেলয়াত করা। আর লম্বা সুরা জানা না থাকলে যেই ১০ টা সুরা সবাই জানি সেগুলো ২ রাকাতে ৫ টা, ৫টা করে পড়তে পারি। প্রত্যেক নামাজ আমাদের কে অর্থ বুঝে পড়া উচিত। দীর্ঘ রুকু করতে হবে এবং সিজদাহ দীর্ঘ সময় করা। দোয়া ইস্তেগফার করা এবং ঘুমানোর দরকার হলে ঘুমানো। এমন যেন না হয় সারা রাতের নফল ইবাদাতের ক্লান্তিতে ফজরের ফরজ নামাজ ছুটে যায়। সেদিকে খেয়াল রাখে নামাজ পড়তে হবে।
শবে কদরের নামাজ বিতরের আগে না পরে
শবে কদরের নামাজ বিতরের আগে না পরে? প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা অনেকে প্রশ্ন করেন যে শবে কদরের নামাজ বিতরের আগে না পরে। আমাদের পোষ্টটি ভালো করে পড়তে থাকুন তাহলে শবে কদরের নামাজ সম্পর্কে ভালো করে জেনে যাবেন। শবে কদরের রাতে আপনি যে কোন সময় নফল নামাজ পড়তে পারবেন। তবে রাতের শেষ তৃতীয়াংশে নামাজ পড়া উত্তম। শবে কদরের নামাজের নির্দিষ্ট কোন রাকাত নেই। যত রাকাত ইচ্ছা নামাজ পড়া যায়। শবে কদরের নামাজ বিতরের আগে না পরে?
শবে কদরের নামাজ বিতরের আগে পরবো না বিতরের পরে পরবো । এই বিষটি নিয়ে আমাদের মনে একটা প্রশ্ন থেকে ই যায়। তাহলে চলুন বন্ধুরা জেনে নেওয়া যাক কখন বিতরের নামাজ পড়তে হবে। বিতরের নামাজ হলো ওয়াজিব নামাজ। আর শবেকদরের নামাজ হলো নফল নামাজ।বিতরের নামাজ রমজান মাসে জামাতের সাথে পড়া এটি সাহাবায়ে কেরামদের (রাঃ) থেকে প্রমানিত।তাই রমাজান মাসে বিতরের নামাজ আমরা জামাতের সাথে পড়ি। কিন্তু আপনি যদি বিতরের নামাজ ভোর রাতেই পরেন তাহলে ও কোন সমস্যা নেই।
বরংচ আপনি যদি বিতরের নামাজ ভোর রাতে পরেন তাহলে আপনার নামাজ টি তাহাজ্জতের নামাজ হিসাবে গন্য করা হবে। এই জন্য শবে কদরের রাতে বিতরের নামাজ পরে পড়লেও কোন সমস্যা নেই। আবার শবে কদরের নামাজ হলো নফল নামাজ। আপনি যদি বিতরের নামাজ পড়ে শবেকদরের নামাজ ভোর রাত পর্যন্ত পড়তে থাকেন তাহলেও কোন সমস্যা নেই। এই জন্য এই বিষয়টি নিয়ে দিদ্বাদন্দের মধ্যে পড়ার কোন প্রয়োজন নেই। আপনি বিতরের নামাজের আগে শবেকদরের নামাজ পড়তে পারেন অথবা শবেকদরের আগে বিতর নামাজ পড়তে পারেন। আল্লাহ রব্বুল আলামিন আমাদের সকলকে সঠিক ভাবে বুঝার তৌফিক দান করুন আমিন।
লাইলাতুল কদর কত রাকাত
লাইলাতুল কদর কত রাকাত? প্রিয় ভাই ও বোনেরা লাইতুল কদরের নামাজ কত রাকাত তা কোন নির্দিষ্ট ভাবে কোন হাদিসে উল্লেখ করেন নি। তবে এই কদরের নামাজ দুই রাকাত করে নফল নামাজ পড়তে হয়। আর দুই রাকাত থেকে শুরু করে কেউ কেউ ১২ রাকাত বা তার বেশি ও পড়ে। যে যত বেশি নামাজ পড়বে তার তত বেশি সওয়াব হবে। সুরা ফাতিহার পরে আপনি যে সুরা জানেন সেই সুরা মিলিয়ে নামাজ পড়লেই হবে। কেউ বা আবার একবার সুরা ফাতিহার সাথে ৭ বার ১১ বার সুরা ইখলাস মিলিয়ে নামাজ পরেন। যার যে রকম শরীরের সামর্থ্য সে অনুযায়ি সে নামাজ পড়বে। এতে কোন সমস্যা নেই।
শবে কদরের নামাজ কত রাকাত এই বিষয়ে কোন সঠিক তথ্য নেই। রাসুল (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি শবে কদর রাতে ৪ রাকাত নামাজ আদায় করবে এবং প্রতিরাকাতে সুরা ফাতিহা পড়ার পর ২১ বার সুরা ইখলাস পাঠ করবে, আল্লাহ তায়ালা ঐ ব্যক্তিকে নব্য ভুমিষ্ট শিশুর মতো নিষ্পাপ করে দিবেন ও জান্নাতের মাঝে এক মনো মুগ্ধকর মহল বানিয়ে দিবেন। আর প্রতি রাকাতের রুকু এবং সিজদাহ দির্ঘ করতে হবে।
রাসুল (সাঃ) আরো বলেছেন, যে ব্যক্তি শবেকদর রাতে ৪ রাকাত নামাজ আদায় করবে এবং প্রতি রাকাতে সুরা ফতিহার পড়ার পর সুরা ক্বদর ও সুরা ইখলাস তিন বার করে পাঠ করবে। আর সিজদায় গিয়ে নিম্নের দোয়াটি পাঠ করে আল্লাহর দরবারে যা কিছু প্রার্থনা করবেন মহান রব্বুল আলামিন তা কবুল করবেন এবং তার প্রতি অসখ্য রহমত বর্ষিত হবে। দোয়াটি হলো-
শবেকদর নামাজের সিজদার দোয়া
অর্থঃ আমি আল্লাহতায়ালার গুণকীর্তন করছি, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহতায়ালার জন্য, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো মাবুদ নেই, আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ।
লাইলাতুল কদরের ফজিলত
লাইলাতুল কদরের ফজিলত? লাইলাতুল কদরের ফজিলত? মহান রব্বুল আলামিন কদরের রাতে পবিত্র কোরআন নাজিল করার কারনে অন্য সব মাসের চেয়ে রমাজান মাস বেশি বরকত ময় এবং ফজিলতপূর্ন মাস। হযরত আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) বলেন একবার রমজান মাসের আগমনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু বললেন দেখো এ মাসটি তোমাদের নিকট এসে উপস্থিত হয়েছে, এতে এমন একটি রাত আছে যেটি হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। যে এর কল্যাণ হতে বঞ্চিত হলো সে যাবতীয় কল্যাণ হতে বঞ্চিত হলো। আর চিরবঞ্চিত ব্যক্তি কেবল এর সুফল হতে বঞ্চিত হয়। (ইবনে মাজাহা)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, যখন শাবানের ১৫ তম রাত্রি আগমন করে তখন রাতে ইবাদত করো এবং পরের দিন রোজা রাখো ।এই রাতে এই বছরের যতগুলি সন্তান জন্মগ্রহণ করবে তা লিপিবদ্ধ করা হবে আর এই বছর যত লোক মৃত্যুবরণ করবে তাও লিপিবদ্ধ করা হয়। এই রাতে বান্দাদের আমল আসমানে ওঠানো হয় আর এই রাতেই মানুষের নির্ধারিত রিযিক অবর্তীন হয় ।এই রজনীর অসংখ্য ফজিলত বর্ণিত আছে।
তাই এই রজনী এবাদত ও আমলের মধ্যে কাটানো উচিত এবং রজনীতে নিম্নোক্ত আমলগুলো করা সুন্নত। আমলগুলো হলো-(১) রাত জেগে নামাজ আদায় করা (২) জিকির ও তেলাওয়াত করা (৩) ইস্তেগফার করা (৪) দোয়া করা (৫) কবর জিয়ারত করা ইত্যাদি। শবেবরাতের বিশেষ ধরনের নামাজের কোন শর্ত নেই। ইবাদতকারী নিকট যেভাবে সহজ সেভাবেই ইবাদত করবে। অর্থাৎ শুধু লাইলাতুল বরাতের নিয়ত করে অন্যান্য নফল নামাজের মতই নামাজ আদায় করবে। লাইলাতুল কদরের ফজিলত-
- এই রাত হাজার মাসের থেকে উত্তম ও কল্যানময় রাত।
- এই রাতে ইবাদাতে মশগুল বান্দাদের জন্য অবতরনকৃত ফেরেস্তারা দোয়া করেন।
- এই রাতে যে ঈমানের সাথে এবং আল্লহকে খুশি করার উদ্দেশে ইবাদাত করবে, মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন সে ইবাদাত কারির জীবনের সকল গুনাহ মাফ করে দিবেন।
- এই রাতে আমলকারিদের পুরুষ্কার আল্লাহ তায়ালা হাসরের ময়দানে দিবেন।
শবে কদরের আমল গুলো কি
শবে কদরের আমল গুলো কি? আমরা রমজান মাসে রোজা রাখি, নামাজ পড়ি কিন্তু অনেকেই জানি না যে হাজার বছরের চেয়ে উত্তম শবেকদর রাতের সঠিক আমল গুলো কি? পবিত্র রমজান মাসে মহান রব্বুল আলামিন তার বন্দাদের দিকনির্দেশনার জন্য পবিত্র কোরআন শরিফ নাযিল করেছেন। তাই এই রাতে নফল নামাজের পাশাপাশি কোরআন তেলওয়াত করা সবচেয়ে বড় ইবাদাত হিসোবে বিবেচনা করা হয়। তাছারা ও কদরের রাতে আরো অনেক আমল আছে সেগুলো সঠিক ভাবে জানার জন্য আমাদের এই পোষ্টটি পড়তে থাকুন মনোযোগ সহকারে।
আরো পড়ুনঃ রোজার কাফফারা কিভাবে দিতে হয় জানুন
এই রজনী ইবাদাত ও আমালের মধ্যে কাটানো উচিত। এবং এই রজনীতে নিম্নোক্ত আমল গুলো করা সুন্নত। আপনাদের ভাগ্যে যদি লাইতুর কদরের রাত পেয়ে থাকেন তাহলে নিম্নক্ত আমল গুলো অবশ্যই করার চেষ্টা করবেন। প্লিজ। আমলগুলো হলো-
- এশার নামাজ আদায় করে এবং তারাবির নামাজ আদায় করবেন।
- রাত জেগে নফল নামাজ আদায় করা। আপনার সামর্থ্য অনুযায়ি। আপনি যতটুকুন পারবেন নামাজ আদায় করতে ।
- কোরআন তেলওয়াত করতে হবে। যেমন, সুরা কদ্বর পরবেন, সুরা মুলক পরবেন, সুরা ইয়াসিন পরবেন,সুরা ওয়াকিয়া পরবেন এবং ৪ কুল পরবেন।
- জিকির -আজকার করবেন। ৪ টি জিকির আছে যা আমল করলে গুনাহ গুলো গাছের পাতার মতো ঝরে যাবে । জিকির গুলো হলো- ১.সুবহানাল্লাহ : আর আল্লাহ তাআলা অতি পবিত্র। ২. লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু : আর আল্লাহ তাআলা ব্যতিত সত্য কোনো মাবুদ নেই। ৩. ওয়াল্লাহু আকবার : এবং তিনি অতি মহান। ৪. সুবহানাল্লাহ : আর আল্লাহ তাআলা অতি পবিত্র।
- তওবা - ইস্তিগফার করবেন। তওবা ইস্তিগফার কোরআন হাদিসে অনেক আছে তার মধ্যে ছোট কয়েক টা ইস্তেগফার হলো- ১. আস্তাগফিরুল্লা-হ। অর্থ: আমি আল্লাহ্'র কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। ২.আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়া আতুবু ইলাইহি। অর্থ: আমি আল্লাহ্'র কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি ও তাঁর দিকে ফিরে আসছি। ৩.রব্বিগফিরলী ওয়াতুব ‘আলাইয়া ইন্নাকা আনতাত্ তাওয়াবুর রহিম। হে আমার রব, আমাকে ক্ষমা করুন। আমার তাওবা গ্রহণ করুন। নিশ্চয় আপনি তাওবা গ্রহণকারী, অতি দয়ালু। ৪. আল্লাহুম্মা আংতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আংতা খালাক্কতানি ওয়া আনা আবদুকা ওয়া আনা আলা আহ্দিকা ওয়া ওয়াদিকা মাসতাতাতু আউজুবিকা মিন শাররি মা সানাতু আবুউলাকা বিনিমাতিকা আলাইয়্যা ওয়া আবুউলাকা বিজাম্বি ফাগ্ফিরলি ফা-ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আংতা।
- বেশি বেশি দোয়া করবেন। রাসুল (সাঃ) কদরের রাতে যে দোয়াটি বেশি বেশি করতে বলেছেন সে দোয়া হলো- আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন কারিম; তুহিব্বুল আফওয়া, ফা’ফু আন্নি। অর্থ : হে আল্লাহ, আপনি মহানুভব ক্ষমাশীল। আপনি ক্ষমা করতে পছন্দ করেন। অতএব আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫১৩)
- কবর জিয়ারত করা। পরিবার পরিজন, বাবা-মা ও মৃতদের জন্য দোয়া করা, কবর জেয়ারত করা।
- বেশি বেশি করে দরুদ পাঠ করতে হবে।
- বেশি বেশি দান খয়রাত করতে হবে।
- মহান আল্লাহতায়ালার কাছে বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে।
- এবং ফজরের নামাজ আদায় করতে হবে।
লাইলাতুল কদর সূরা
লাইলাতুল কদর সূরা? সুরা আল কদর মুসলমানদের পবিত্র কুরআনের ৯৭ তম সুরা। এই সুরার আয়াত সংখ্যা ৫ টি। এবং রুকুর সংখ্যা ১ টি। সুরা আল কদর মক্কায় অবতীর্ন হয়েছে। কদর এর অর্থ মাহাত্য ও সন্মান। এই জন্য লাইলাতুল কদর কে মহিম্মান্বিত রাত বলা হয়েছে। যে ভাই ও বোনেরা সুরা কদর জানেন না বা মুখস্থ নেই তারা এই পোষ্ট থেকে মুখস্থ করে নিতে পারেন। তো আর দেরি নয় লাইলাতুল কদর সুরা বাংলা অর্থ সহকারে জেনে নিই।
লাইলাতুল কদর রাতের মর্যাদা কত
লাইলাতুল কদর রাতের মর্যাদা কত? মুসলিম বান্দার কাছে লাইলাতুল কদরের রাত এক বরকতময় এবং মহিমান্বিত রাত। কারন এই রাতে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআন নাযিল করেছেন। এবং কদর সুরা নাযিল করেছেন। এই জন্য এই রাতকে বলা হয়েছে কদরের রাত হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। আল্লাহ তায়ালা বলেন, অবশ্যই আমি একে একটি বরকত পূর্ন রাতে নাযিল করেছি। (সুরা দুখান: ৩) আরো বলেন, এই রাতে জ্ঞান গর্ভ ফায়সালা প্রকাশ করা হয়ে থাকে। ফজর উদয় হওয়া পর্যন্ত ঐ রাতটি পুরোপুরি শান্তি ময়।
হযরত আনাস ইবনে মালেক (রাঃ)*** বলেন, একবার রমজান মাসের আগমনে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, দেখ এ মাসটি তোমাদের নিকট এসে উপস্থিত হয়েছে। এতে এমন একটি রাত আছে , যেটি হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। যে এর কল্যাণ হতে বঞ্চিত হলো,***সে এর যাবতীয় কল্যান থেকেই বঞ্চিত হলো। আর চিরবঞ্চিত ব্যক্তিই কেবল এর সুফল থেকে বঞ্চিত হয়। (ইবনে মাজাহ)
মহান আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের হেদায়াতের জন্য ১০৪ খানা আসমানি কিতাব নাযিল করেছেন। তার মধ্যে সর্বোচ্চ এবং সর্বশ্রেষ্ট হলো কোরআনুল কারিম। যা আমাদের নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর উপর নাযিল করা হয়। এই জন্যই শবে কদরের রাতকে এত মর্যাদাবান রাত বলা হয়েছে। কোরআনের বিভিন্ন সুরায় আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, আমি কোরআনকে মোবারকময় রজনী ও রমজান মাসে অবতীর্ণ করেছি। এই রাতে পৃথিবীতে অসংখ্য ফেরেশ্তা নেমে আসে এবং তারা তখন দুনিয়াতে কল্যান,
বরকত ও রহমত বর্ষন করতে থাকে। এজা শান্তি বর্ষনের রাত। এই রাতে ইবাদাত গুজার বান্দাদেরকে ফেরাস্তারা জাহান্নামের আযাব থেকে মুক্তির বাণী শুনায়। এই রাতেই লাইলাতুল কদর সুরা নাযিল হয়। এই রাতে ঈমানে সাথে এবং সওয়াবের আশায় কদরের রাতে ইবাদাতে দাড়ালো তার আগেকার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দিয়া হবে। সামনে লাইলাতুল কদরের রাত আসছে । আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক মুসলিমদের কে যেন, লাইলাতুল কদরের রাতে ঈমানের সাথে আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
পাঠকদের কিছু প্রশ্ন ও উত্তর
শবেকদরের নামাজ কত রাকাত?
উত্তরঃ শবেকদরের নামাজ কত রাকাত সে বিষয়ে কোন নির্দিষ্ট হিসাব হাদিসে দেওয়া নেই। তবে আপনারা কদরের রাতে দুই রাকাত করে নফল নামাজ যত মনোযোগ সহকারে পড়া যায় ততই ভালো। দুই রাকাত দুই রাকাত করে আপনেরা যত রাকাত পড়তে পারেন। কোন সমস্যা নেই।
কদরের রাতে কি হয়েছিল?
উত্তরঃ কদরের রাতে হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর উপর পবিত্র কোরআন নাজিল হয়েছিল।
কদরের রাতে কোন সূরার কত আয়াত নাযিল হয়?
উত্তরঃ কদরের রাতে লাইলাতুল কদর সুরা নাযিল হয়। এই সুরার আয়াত সংখ্যা ৫ টি। এবং রুকু ১ টি।
শবে কদরের নামাজ কিভাবে পড়ে?
উত্তরঃ শবে কদরের নামাজ নফল নামাজ। দুই রাকাত দুই রাকাত করে পড়তে হয়। যেমন ভাবে অন্য সব নামাজ পড়তে হয় সেই একই নিয়মে পড়েতে হবে কদরের নফল নামাজ।
শবে কদরের রাতে কি কি আমল করতে হয়?
উত্তরঃ শবে কদরের রাতে ১. রাত জেগে নামাজ আদায় করতে হবে ২. যিকির ও তেলওয়াত করতে হবে। ৩. কোরআন তেলওয়াত করতে হবে। ৪. তওবা ইস্তিগফার করতে হবে। ৫. দোয়া দরুদ করতে হবে। ৬. কবর জিয়ারত করতে হবে ইত্যাদি।
শবে কদরের রাত কবে?
উত্তরঃ বাংলাদেশে ২৭ রমজান দিনগত রাত শবে কদর হিসেবে মানুষের কাছে প্রচলিত। তবে ২০ রোজার পরে বেজোর রোজা গুলোর যে কোন এক রোজা তে শবেকদর হতে পারে। এ বিষয়ে নির্দিষ্ট কোন কিছু দলিল হাদিসে দেওয়া নেই। এই জন্য ২০ রোজার পড়ে ২১ রোজা, ২৩ রোজা, ২৫ রোজা, ২৭ রোজা, ২৯ রোজা গুলোতে রাত জাগতে হবে। এই বেজোর রোজা গুলোর মধ্যে যে কোন একটি রোজায় শবেকদরের রাত পড়বে।
লাইলাতুল কদর কি শুধু বেজোড় রাতে হয়?
উত্তরঃ এটি সাধারণভাবে স্বীকৃত যে লায়লাতুল কদর সাধারণত 'বেজোড় রাতে' হয় , তবে মূল রসূল থেকে বলা হয়েছিল যে লায়লাতুল কদর রমজানের শেষ দশ রাতের 'যেকোনো' রাতে আসতে পারে।
লেখকের শেষ কথা
প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা আমরা আজকে এই পোষ্ট থেকে শবে কদরের নামাজ বিতরের আগে না পরে জানতে পারলাম এবং তার সাথে আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো জানতে পারলাম। আমার এই পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে এবং কেউ উপকৃত হলে অন্যদের কাছে সেয়ার করে দিবেন। আর শবে কদরের যে আমল গুলো আছে সেগুলো শবেকদর রাতে আমল করার চেষ্টা করবেন। আর আমাদের এই পোষ্টের মধ্যে কোন বিষয়ে ভুল তথ্য থাকলে ক্ষমা করে দিবেন। আশা করি ভুল তথ্য নেই। তার পরে ও বলা যায় না। সবাই ভালো থাকবেন।
msta2z.comব্লগের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url