তায়াম্মুম ভঙ্গের কারণ কয়টি - মাটি ছাড়া তায়াম্মুমের নিয়ম | Msta2z

তায়াম্মুম ভঙ্গের কারণ কয়টি - মাটি ছাড়া তায়াম্মুমের নিয়ম

তায়াম্মুম ভঙ্গের কারণ কয়টি ? আসসালামু আলাইকুম প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা। পানি হলো পবিত্রতার সবচেয়ে বড় মাধ্যম। পানি পাওয়া অনেক সময় কঠিন হয়ে পরে। সে সময় মাটি দ্বারা বা মাটি জাতীয় বস্তু দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করতে হয়। এটাই তায়াম্মুম। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, যদি তোমরা রোগ গ্রস্ত কিংবা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেউ প্রসাব -পায়খানা করে কিংবা তোমরা নারী স্পর্শ কর( স্ত্রী সহবাস কর) এবং পানি না পাও তাহলে তোমরা পাকপবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করবে। তা দ্বারা তোমরা তোমাদের মুখ-মন্ডল ও হস্তদ্বয় মাসাহ করবে। (সুরা নিসাঃ ৪৩) তায়াম্মুম ভঙ্গের কারণ কয়টি ?
তায়াম্মুম ভঙ্গের কারন

ইসলামকে মহান আল্লাহ তায়ালা সহজ করেছেন। কঠিন করেননি। এটা সর্বদিক বিবেচনায় বলা সম্ভব।আল্লাহ তায়ালা এটা পবিত্র কোরআনে বলেছেন,  তিনি (আল্লাহ) তোমাদের জন্য বিধান সহজ করতে চান, কঠিন করতে চান না।( সুরা আল -বাকারা: ১৮৫) এখন জেনে নেওয়া যাক তায়াম্মুম ভঙ্গের কারন কয়টি, মাটি ছারা তায়াম্মুমের নিয়ম, তায়াম্মুমের ফরজ কয়টি, তায়াম্মুমের সুন্নত কয়াটি, তায়াম্মুম করা কখন জায়েজ,মাটি ছারা তায়াম্মুমের নিয়ম, ইত্যাদি বিষয়ে আমরা আজ এই আরর্টিকেলে বিস্তারিত জানবো। তো বন্ধুরা তায়াম্মুম ভঙ্গের কারণ কয়টি তা জানার জন্য আরর্টিকেল টি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইলো।

পেজ সূচিপত্রঃ তায়াম্মুম ভঙ্গের কারণ কয়টি - মাটি ছাড়া তায়াম্মুমের নিয়ম
ভৃমিকা

মানুষ আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি ( আশরাফুল মাখলুকাত)। আল্লাহর ইবাদাত বন্দেগীর দ্বারাই তার সন্তুষ্টি লাভ করা যায়। সেই ইবাদাত বন্দেগী করার জন্য পূর্ব শর্ত হলো অযু অথবা গোসলের। অযু ও গোসল উভয়ই করতে হয় পানি দ্বারা। যখন মানুষ সেই পানি না পায়, অথবা ব্যাবহার করতে অপরাগ হয় তখন কি করবে? আল্লাহ রব্বুল আলামীন বন্দার প্রতি যতেষ্ট স্নেহ ও দয়াশীল। তাই তার বন্দার ক্ষতি হয়, অথবা হুকুম পালনে ব্যর্থ হয়ে গুনাহাগার হয়ে পড়ে, তার জন্য পবিত্র কোরআন মাজিদে ইরশাদ করলেন, এবং হুকুম দিলেন,

অযু ও গোসলের অপরাগ সত্তে তায়াম্মুম দ্বারাই পবিত্রতা অর্জন করা যায়। তাই তিনি ঘোষনা করলেন, যদি তোমরা রোগ গ্রস্ত কিংবা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেউ প্রসাব -পায়খানা করে কিংবা তোমরা নারী স্পর্শ কর( স্ত্রী সহবাস কর) এবং পানি না পাও তাহলে তোমরা পাকপবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করবে। তা দ্বারা তোমরা তোমাদের মুখ-মন্ডল ও হস্তদ্বয় মাসাহ করবে। (সুরা নিসাঃ ৪৩) রাসুল (সাঃ) বলেছেন, যখন পানি না পওয়া যাবে তখন মাটিই আমাদের জন্য পবিত্রকারি হবে।( মুসলিম) ।জেনে নেওয়া যাক তায়াম্মুম ভঙ্গের কারণ কয়টি?

তায়াম্মুম ভঙ্গের কারণ কয়টি

তায়াম্মুম ভঙ্গের কারণ কয়টি? হযরত আবু যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, পবিত্র মাটি মুসলমানদের পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম-দশ বছর পর্যন্ত পানি পাওয়া না গেলেও। অবশ্য পরে যদি কখনো পানি পাওয়া যায় তখনই যেন সেই পানি দিয়ে স্বীয় শরীর পবিত্র করে নেয়।কেননা এই ব্যবস্থা সর্ব উত্তম।(মুসনাদে আহমদ,তিরমিযী, আবু দাউদ) । যে সকল কারনে অযু ভেঙ্গে যায় সে সকল কারনে তায়াম্মুম ও ভেঙ্গে যায়। তায়াম্মুম ভঙ্গের কারন কারণ ৪ টি। তায়াম্মুম ভঙ্গের কারন গুলো নিচে বিস্তারিত দেওয়া হলো। পড়তে থাকুন-
  • যে সমস্ত কারনে অযু ভঙ্গ হয়, সে সমস্ত কারনে তায়ম্মুম ও ভঙ্গ হয়।
  • পানি পাওয়া গেলে তখনই তায়াম্মুম ভঙ্গ হয়ে যায়। কেননা পানির অভাবেই তায়াম্মুম করার বিধান দেয়া হয়েছে।
  • যে সমস্ত কারনে তায়াম্মুক করা জায়েজ সে সমস্ত কারন দুর হয়ে গেলে।
  • পানি থাকা অবস্থায় রোগের কারনে তায়াম্মুম করা হয়েছে, এমতাবস্থায় পানি দেখলে তায়াম্মুম ভঙ্গ হবে এবং নতুন করে তায়াম্মুম করতে হবে।

মাটি ছাড়া তায়াম্মুমের নিয়ম

মাটি ছাড়া তায়াম্মুমের নিয়ম? পবিত্র শুকনা মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করা উত্তম। তবে মাটি না পেলে মাটি জাতীয় বস্তু যেমন, বালি, পাথর, শুর্কি, ইট, হরিতাল, সুরমা, ইত্যাদি বস্তু দ্বারা তায়াম্মুম করা জায়েজ আছে। এক কথায় মাটির তৈরি যে কোন পাত্র যথা, থালা, বাটি, হাঁড়ি-পাতিল, মটকা,দ্বারা তায়াম্মুম জায়েজ। এছারা অন্য কিছু দ্বারা জায়েজ নয়। অর্থাৎ যে বস্তু আগুনে পোড়ালে গলে যায় না বা পুরে ছাই হয় না এমন বস্তু দ্বারা তায়াম্মুম করা যাবে। বন্ধুরা এই আরর্টিকেলে আমরা জানলাম মাটি ছারা তায়াম্মুমের নিয়ম গুলো।

তায়াম্মুমের ফরজ কয়টি কি কি

তায়াম্মুমের ফরজ কয়টি কি কি? তায়াম্মুমের ফরজ তিনটি যথা,

১. তায়াম্মুমের উদ্দেশে নিয়ত করা। তায়াম্মুমের ফরজ
২. সমস্ত মুখ-মন্ডল একবার মাসেহ করা। তায়াম্মুমের ফরজ
৩. হস্তদ্বয় কনুই পর্যন্ত একবার মাসেহ করা। তায়াম্মুমের ফরজ

তায়াম্মুমের সুন্নত কয়টি

তায়াম্মুমের সুন্নত কয়টি? তায়াম্মুমের সুন্নত ৬ টি। নিচে তায়াম্মুমের সুন্নত গুলো আলোচনা করা হলো। পড়তে থাকুন- তায়াম্মুমের সুন্নত কয়টি?
  • বিসমিল্লাহ বলে তায়াম্মুম শুরু করা।
  • তায়াম্মুমের বস্তুর উপর হাত রাখার সময় আঙ্গুলগুলো ফাঁক করে রাখা।
  • দুই হাত তায়াম্মুমের বস্তুর উপর রেখে সামনে পেছনে টানা।
  • তায়ামুমের বস্তুর উপর থেকে হাত উঠিয়ে মৃদু ভাবে ঝেরে নেওয়া।
  • তরতীব মতে (অর্থাৎ) প্রথমে নিয়ত করা, তারপর মুখমন্ডল মাসেহ করা, অতঃপর দুইহাতের কনুই পর্যন্ত মাসেহ করে তায়ম্মুম করা।
  • খুব দ্রুততার সাথে মাসেহ কাজ শেষ করা।

তায়াম্মুমের নিয়ত ও নিয়ম

তায়াম্মুমের নিয়ত- উচ্চারনঃ নাওয়াইতুআন আতাইয়াম্মামা লিরাফই'ল হাদাছি ওল জানাবাতি ওয়াছতিবাহাতাল্লিছ ছালাতি তাকাররুবান ইলাল্লাহি তা'য়ালা।

অর্থঃ নাপাকি দুর করে সঠিক ভাবে নামাজ আদায় করার জন্য এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভ করার উদ্দেশে আমি তায়াম্মুমের নিয়ত করলাম।।

তায়াম্মুমের নিয়ম- পবিত্র শুকনা দ্বারা তায়াম্মুম করা উত্তম। অতঃপর ‘বিসমিল্লাহ’ বলে ,তায়াম্মুম করার বস্তুর উপর হাত মারবে এবং যদি ধুলাবালি বেশি মনে হয় তাহলে এক হাত অন্য হাতের কব্জির উপর ঝারা মেরে পরে অজু করতে যে পরিমাণ মুখমণ্ডল ধৌত করা হয় ঠিক ততটুকু জায়গা একবার মুছে নিবে। দ্বিতীয়বার একইভাবে হাত মেরে হস্তদয়ের কনুই পর্যন্ত একবার মুছে নেবে। স্মরণ রাখবে, এতে যেন তিল পরিমাণ জায়গা ও বাদ না যায়। এরপর দুই হাতের আঙ্গুলগুলো খেলাল করে নিবে।অন্য কোন অঙ্গ অথবা মুখ ও হাত তিন বার করে মাসেহ করার কোন প্রমান নেই ।

তায়ম্মুম করা কখন জায়েজ

তায়ম্মুম করা কখন জায়েজ? প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা তায়ম্মুম কখন আমাদের জন্য জায়েজ তা আমাদের সঠিক ভাবে জানা দরকার।এবং তায়াম্মুমের কিছু শর্তবলী আছে সেগুলো ও আমাদেরকে জানা দরকার। তায়ম্মুম করা কখন জায়েজ তা নিচে বিস্তারিত দেওয়া হলো-
  • দেড় কিলোমিটার ( অর্থাৎ এক মাইলের) মাঝে যদি কোথাও পাক পানি পাওয়া না যায়। তখন তায়াম্মুম করতে হবে।
  • যদি ইন্দিরা বা কূপের পানি তোলার জন্য কোন পাত্র না থাকে। তখন তায়াম্মুম করতে হবে।
  • এমন পরিমান পানি আছে , যাতে অযু বা গোসল হয় না। তখন তায়াম্মুম করতে হবে।
  • ওযু বা গোসল করতে যে পানি ব্যবহার করা হয় তাতে রোগ বৃদ্ধি সম্ভাবনা দেখা দেয়। তখন তায়াম্মুম করতে হবে।
  • পানি আনতে যেতে পথে বাঘ, ভাল্লুক অথবা শত্রুর ভয় থাকে বা জীবননাশের সম্ভাবনা থাকে। তখন তাযাম্মুম করে নিতে হবে।
  • পানি ক্রয় করার ক্ষমতা না থাকলে। তায়ম্মুম করতে হবে।
  • প্রবাস বা মুসাফিরি অবস্থায় সাথে যে পরিমাণ পানি আছে তা তারা অজু, গোসল করলে নিজের ও বহন পশুর পানির অভাবে মৃত্যুর আশঙ্কা থাকলে তায়াম্মুম করে নিতে হবে।
  • আজু বা গোসল করতে গেলে ঈদ বা জানাজার নামাজ পাওয়া যাবে না এমন আশঙ্কা থাকলে তায়ম্মুম করে নিতে হবে।
  • ওযু বা গোসল করতে গেলে বিমান, ট্রেন বা বাস ইত্যাদি ছেড়ে যাবার আশঙ্কা থাকলে তায়াম্মুম করে নিতে হবে।
  • আজুবা গোসল করতে গেলে শরীরের ক্ষতস্থানের ক্ষত বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে তায়াম্মুম করে নিতে পারবেন। উপরোল্লিখিত কারন থাকলে তায়াম্মুম করা জায়েজ হবে।
মৃত ব্যক্তির তায়াম্মুম
মৃত ব্যক্তিকে দাফনের পূর্বে গোসল দিতে হয়। তবে যদি প্রয়োজনীয় পানি না পাওয়া যায় তাহলে তায়াম্মুম করাতে হয়।

গাড়িতে তায়াম্মুমের নিয়ম

গাড়িতে তায়াম্মুমের নিয়ম? গাড়িতে আছেন কোথাও না কোথাও পানি আছে অথবা গাড়ির ভিতরে পানি আছে । কিন্তু সেই অবস্থায় তো আপনি ওযু করতে পারবেনা।আপনি এমন কোথাও যাচ্ছেন যেখানে দীর্ঘ এলাকাতে পানির কোথাও সন্ধান নেই আপনার জনামতে এবং কিনে ও পানি পাবেন না এবং কারো কাছে থেকে চেয়েও পানি পাবেন না। এই রকম অবস্থায় আপনার তায়াম্মুম হবে। সেক্ষেত্রে আপনি গাড়ি থামিয়ে মাটি জাতীয় বা রাস্তার উপরে যে কোন কিছুর উপর আপনি তায়াম্মুম করতে পারেন।

গাড়ির মধ্যে আপনি গাড়ি যে বডি আছে ( গাড়ির দেয়ালে) সেখানে হাত দিয়ে আপনি তায়াম্মুম করতে পারবেন না ভিতরের অংশে। আপনাকে মাটি জাতীয় দ্রব্যের উপরে হাত দিয়ে তায়াম্মুম করতে হবে।গাড়িতে তায়াম্মুমের নিয়ম? যদি গন্তব্যে পৌঁছে নামাজ আদায় করা সম্ভব না হয়, অথবা যানবাহনটি এমন কোথাও না দাঁড়ায় যেখানে পানি দ্বারা অযু করে নামায আদায় করা সম্ভব, তবে এমতাবস্থায় গাড়িতে পানিতে পানির ব্যবস্থা না থাকলে মাটি জাতীয় বস্তু দ্বারা তায়াম্মুম করে নামায পড়া জায়েজ আছে। ( সুরা মায়িদা-৬, ফাতাওয়ায়ে শামী-১.৯৬, খুলাসাতুল ফাতওয়া-১/৩৫)

তায়াম্মুমের কতিপয় মাসাআলা

তায়াম্মুমের কতিপয় মাসাআলা? তায়াম্মুম বান্দার জন্য আল্লাহ তায়ালার এক বিশেষ অনুগ্রহ। নামাজের সময় হলে পানি না থাকলেও যেন নামাজ পড়তে পারে এবং গুনাহ থেকে মুক্ত হতে পারে সে জন্যই মহান আল্লাহ পাক তায়াম্মুমের বিধান দিয়েছেন। তায়াম্মুম করে আপনি নামাজ পড়তে পারবেন, কোরআন তেলওয়াত করতে পারবেন, কাবা শরীফ তাওয়াফ করতে পারবেন, আপনি ফরজ, সুন্নত, ওয়াজিব এবং নফল সব ইবাদাত গুলো করতে পারবেন তায়াম্মম করে। প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা জেনে নেওয়া যাক তায়াম্মুমের কতিপয় মাসাআলা গুলো-

  • একবার তাইম্মুম করে কয়েক ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা জায়েজ হবে। নামাজের জন্য যে তায়াম্মুম করা হয়েছে তা দ্বারা কোরআন তেলোয়াত সহ অন্যান্য সকল ইবাদত করা জায়েজ হবে। কিন্তু যদি শুধুমাত্র কোরআন তেলোয়াতের জন্য তায়াম্মুম করা হয় তাহলে ঐ তায়াম্মুম দ্বরা নামাজ আদায় করা জায়েজ হবে না।
  • যদি কোন লোকের গোসর ওযু উভয়ই ফরজ হয়,কিন্তু ওযু করলে শারিরিক ভয়ের কোন কারন নেই অথচ গোসল দিলে স্বাস্থ্যহীনতার ভয় আছে, এমন অবস্থায় ঐ ব্যক্তির প্রথমে ওযু করে নিবে এবং পরে গোসলের নিয়তে তায়াম্মুম করে নিবে।
  • কোন মাটিতে নাজাসাত লেগে তা শুকিয়ে গিয়েছে তাতে ওই জায়গা পাক বলেই ওইখানে নামাজ আদায় করা জায়েজ হবে। কিন্তু ওই মাটি দ্বারা তায়াম করা জায়েজ হবে না।
  • যদি কোন ব্যক্তির ওযু -গোসল উভয়টির জন্য তায়াম্মুম করা প্রয়োজন হয় তাহলে ওই ব্যক্তি, ওযু ও গোসলের জন্য একসাথে নিয়ত করে তায়াম্মুম করলে একই তায়াম্মুম দ্বারা ওযু গোসল উভই টাই সমাধা হবে। কিন্তু যদি এক কাজের জন্য নিয়ত করে তাহলে উভয় কাজ সমাধান হবে না।
  • যে পর্যন্ত পানি দ্বারা ওযূ করা না যায় সে পর্যন্ত তায়াম্মুমই করিতে থাকিবে, যত দিনই অতীত হউক না কেন, কোনরূপ ওয়াছওয়াছা বা সন্দেহ করিবে না। ওযূ বা গোসল দ্বারা যেরূপ পাক হওয়া যায়, তদ্রুপ তায়াম্মুম দ্বারাও পাক হওয়া যায়। এরূপ মনে করিবে না যে, তায়াম্মুমে ভালমত পাক হয় না।
  • শীতের সময় যদি বরফ জমে এবং গোসল করিলে প্রাণনাশ বা রোগ বৃদ্ধির পূর্ণ আশংকা থাকে এবং শরীর গরম করার জন্য লেপ ইত্যাদি কোন প্রকার গরম বস্ত্র না থাকে, তবে এরূপ কঠিন ওযরের সময় তায়াম্মুম করা দুরুস্ত হইবে।
  • একই স্থানের মাটিতে বা একই ঢিলায় যদি কয়েকজন তায়াম্মুম করে, তাহা দুরুস্ত আছে।
  • কারো হয়ত কাপড় বা শরীর নাপাক আছে, আর ওযূও নাই, কিন্তু পানি আছে অল্প, তবে ঐ পানির দ্বারা কাপড় এবং শরীর পাক করিবে, আর ওযূর জন্য তায়াম্মুম করিবে।

তায়াম্মুম সম্পর্কে কুরআনের আয়াত

তায়াম্মুম সম্পর্কে কুরআনের আয়াত? ইসলামকে মহান আল্লাহর সহজ করেছেন কঠিন করেননি। এটা সর্বদিক বিবেচনায় বলা সম্ভব। আল্লাহ তায়ালা এটা পবিত্র কুরআনেও বলেছেন- তিনি (আল্লাহ) তোমাদের জন্য বিধান সহজ করতে চান কঠিন করতে চান না।( সূরা আল বাকারা: ১৮৫) পানি হল পবিত্রতার সবচেয়ে বড় মাধ্যম। পানি পাওয়া অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে। সে সময় মাটি দ্বারা, মাটি জাতীয় বস্তু দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করতে হয়। এটাই তাইয়াম্মুম। তায়াম্মুম সম্পর্কে কুরআনের আয়াত


যদি তোমরা রোগগ্রস্ত কিংবা সফরে থাকো অথবা তোমাদের কেউ প্রসাব পায়খানা করে আসে কিংবা তোমরা নারী স্পর্শ করা (স্ত্রী সহবাস করো) এবং পানি না পাও তাহলে তোমরা পাক পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করবে। তা দ্বারা তোমরা তোমাদের মুখমন্ডল ও হস্তদ্বয় মাসেহ করবে। (সুরা নিসাঃ ৪৩)

তায়াম্মুম সম্পর্কে হাদিসের আয়াত

তায়াম্মুম সম্পর্কে হাদিসের আয়াত? আম্মার ইবনু ইয়াসার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি একদা ওমর ইবনু খাত্তাবকে বললেন, আপনার কি মনে আছে যে আমি ও আপনি সফরে ছিলাম এবং উভয়ের অপবিত্র হয়েছিলাম। কিন্তু আপনি নামাজ আদায় করলেন না। কিন্তু আমি মাটিতে গড়াগড়ি করলাম ও নামাজ আদায় করলাম। তারপর আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ বিষয়ে জানালাম। তিনি বললেন, এটিই তো তোমার জন্য যথেষ্ট ছিল। এ বলে নবী (সাঃ) তার দুই হাতের তালু মাটিতে মারলেন এবং ফু দিয়ে ঝারলেন তারপর তার সাহায্যে নিজের মুখমণ্ডল ও হস্তদ্বয় মাসেহ করলেন।( বুখারী)

হযরত হুজাইফা বিন ইয়ামান (রাঃ) বললেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু বলেছেন, তিনটি বিষয় সমগ্র মানবজাতির উপরে আমাদের মর্যাদা দেয়া হয়েছে। নামাজে আমাদের শাড়ি বেঁধে দাঁড়ানো ফেরেশতাদের শাড়ির ন্যায় করা হয়েছে। আর সমগ্র পৃথিবীকে আমাদের জন্য মসজিদ তুল্য করা হয়েছে। আর যখন পানি না পাওয়া যাবে তখন মাটি আমাদের জন্য পবিত্র কারী হবে।( মুসলিম) তায়াম্মুম সম্পর্কে হাদিসের আয়াত

হযরত আবু যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু বলেছেন ,পবিত্র মাটি মুসলমানের পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম। ১০ বছর পর্যন্ত পানি পাওয়া না গেলেও ।অবশ্য পরে যদি কখনো পানি পাওয়া যায় তখনই যেন সেই পানি দিয়ে স্বীয় শরীর পবিত্র করে নেই। কেননা এ ব্যবস্থাই সর্বোত্তম। (মুসনাদে আহমদ, তিরমীযি, আবু দাউদ) তায়াম্মুম সম্পর্কে হাদিসের আয়াত

পাঠকদের জন্য কিছু প্রশ্ন ও উত্তর

তায়াম্মুম করে কি কুরআন পড়া যাবে?
কোরআন পড়তে চাইলে অবশ্যই পাক-পবিত্র থাকতে হবে। এবং অজু থাকতে হবে। বিশেস কোন কারনে পানির অভাবে অযুু করতে না পারলে তায়াম্মুম করে কোরআন পড়তে পারবেন।

এক তায়াম্মুমে কত নামাজ পড়া যায়?
স্বেচ্ছায় নামাযের ক্ষেত্রে, ফরয নামাযের পরে হোক বা অন্য সময়ে সেগুলি করার জন্য একই তায়াম্মুম ব্যবহার করার অনুমতি রয়েছে। তবে আল্লাহ পাক ভালো জানেন।

তায়াম্মুম কত প্রকার?
তায়াম্মুমের ফরজ তিন প্রকার। ১. নিয়ত করা। ২.উভয় হাত পবিত্র মাটিতে মেরে তা দিয়ে সমস্ত মুখমণ্ডল মাসেহ করা এবং ৩.উভয় হাত মাটিতে মেরে তা দিয়ে উভয় কনুই মাসেহ করা।

কি কি দিয়ে তায়াম্মুম করা যায়?
মাটি জাতীয় সকল দ্রাব্য দিয়ে তায়াম্মুম করা যায়। পবিত্র মাটি, বালি , পাথর, ইত্যাদি দিয়ে তায়াম্মুম করা যায়।

তায়াম্মুম কেন করা হয়?
পবিত্রতা অর্জনের জন্য এবং আল্লাহর ইবাদাত পালনের জন্য তায়াম্মুম করা হয়। পবিত্রতা অর্জন সাধারণত অজু, গোসল ইত্যাদির মাধ্যমে হয়ে থাকে। কিন্তু কখনো কখনো এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, কোনো স্থানে পবিত্রতা অর্জনের জন্য পর্যাপ্ত পানি নেই, কিংবা পানি ব্যবহার ব্যক্তির জন্য ক্ষতিকর। এমন পরিস্থিতিতে ইসলাম তায়াম্মুম করার অনুমতি দিয়েছে।

ওযুর ব্যাবহত পানি কি নাপাক?
ওযুর ব্যাবহত পানি নাপাক না। ব্যাবহত পানি গায়ে ছিটকে পড়লে শরীর নাপাক হয় না। ওযুর ব্যবহত পানি দিয়ে আপনি কাপর খাচতে পারবেন বা অন্য কোন কাজ করতে পারবেন।

তায়াম্মুমের পর পানি পেলে কি হয়?
নাপাক হয়ে গেলে পানি না পাওয়া গেলে মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করতে হবে। এটাই তোমাদের জন্য যতেষ্ট। আর পানি পাওয়া গেলে এবং পানি ব্যাবহার করতে সক্ষম হলে তায়াম্মুম করা জায়েজ নয়।

সহবাসের পর গোসল কখন করতে হয়?
সহবাসের করার পর ফরজ গোসল করবে তার সময় অনুযায়ী যত তাড়াতাড়ি সম্ভব,তবে হ্যা এতে কোনো ইবাদত এর ক্ষতি না হয় সেটাও খেয়াল রাখতে হবে,একটা মতে সকাল সকাল তাড়াতাড়ি গোসল করলে ভাল হয়।

ওযু গোসল ও তায়াম্মুম কোন সূরায় আছে?
 আল-মায়িদা, অধ্যায় ৫,  আয়াত ৬ ।

তায়াম্মুমের আয়াত কত হিজরীতে নাযিল হয়?
আর এ যুদ্ধটি পঞ্চম হিজরীতে সংঘটিত হয়েছিল। তাই যে ভাষণটিতে (৭ম রুকূ) তায়াম্মুমের কথা উল্লেখিত হয়েছিল সেটি এ সময়ই নাযিল হয়েছিল মনে করতে হবে।

লেখকের শেষ কথা

তায়াম্মুম বান্দার জন্য আল্লাহর অন্যতম অনুগ্রহ। মনে রাখতে হবে, কঠিন সমস্যা ছাড়া অজু ও গোসলের বিকল্প হিসেবে তায়াম্মুম গ্রহণযোগ্য নয়। পানি না পেলেও যেন বান্দা তার মাওলাকে ভুলে না যায়, তাই আল্লাহ তাআলা তায়াম্মুমের বিধান করে দিয়েছেন। প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা আপনারা আমাদের এই আরর্টিকেল থেকে তায়াম্মুম সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারলেন। তাই আশা করি পরিচিতদের মধ্যে আরর্টিকেলটি সেয়ার করে দিবেন। আর কোন ভুল থাকলে মাফ করে দিবেন।আল্লাহ তাআলা সবাইকে তার হুকুম-আহকাম পালনে সচেষ্ট হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

msta2z.comব্লগের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url