গর্ভাবস্থায় জাফরান খেলে কি বাচ্চা ফর্সা হয়? (বিস্তারিত জানুন)
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক। আল্লাহর রহমতে সকলেই ভালোই আছেন। প্রিয় পাঠক এই আরর্টিকেলে আজকের আলোচিত বিষয় হলো, গর্ভাবস্থায় জাফরান খেলে কি বাচ্চা ফর্সা হয়? আসলে গর্ভস্থায় প্রত্যেকটা নারীর সঠিক যত্নের সাথে তাদের পেটের সন্তানের ভালো মন্দ নির্ভর করে। কারন মা যা খায় তাই সন্তানের মানসিক এবং শারিরীক বিকাশ ঘটে। তো বন্ধুরা আজ আমরা জানবো গর্ভাবস্থায় জাফরান খেলে কি বাচ্চা ফর্সা হয়? আসলে এই কথাটা কতটুকু সত্য তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচিত হবে।
এমন কিছু কিছু খাবার আছে যা গর্ভবস্থায় খেলে বাচ্চার গায়ের রং ফর্সা হয় সত্যিই। কিন্তু গর্ভাবস্থায় জাফরান খেলে কি বাচ্চা ফর্সা হয় এই কথাটা কত টুকু সত্যি তা আমাদের বিস্তারিত জানতে হবে এবং আরো জানুন, গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার নিয়ম, গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার উপকারিতা, জাফরান এর উপকারিতা ও অপকারিতা, জাফরান দুধ খাওয়ার নিয়ম, জাফরান দুধ খেলে কি হয়, গর্ভবস্থায় কি খেলে বাচ্চার গায়ের রং ফর্সা হয়, আসল জাফরান চেনার উপায়। গর্ভাবস্থায় জাফরান খেলে কি বাচ্চা
ফর্সা হয় তা জানার জন্য আরর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইলো।
জাফরান এর উপকারিতা ও অপকারিতা?
জাফরান এর উপকারিতা ও অপকারিতা- আদিকাল থেকেই জাফরান কে ভেষজ মশলা হিসাবে সকলেই চেনে। বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসায় এবং জটিল জটিল রোগ সারাতে জাফরান এর ব্যাবহার করা হয়। জাফরান মশলা মানবদেহের প্রায় ২০ ধরনের রোগ সারাতে পারে। জাফরানে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, খনিজ এবং মিনিারেল সহ প্রায় ১২০ ধরনের পুষ্টি উপাদান। জাফরান ব্যাবহারে মানবদেহের যেমন উপকার হয় তেমনি অপকারিতা ও রয়েছে। জেনে নিই জাফরানের উপকারিতা এবং অপকারিতা গুলো-
জাফরান এর উপকারিতাঃ
স্বাস্থ্যর উন্নতি করে
স্বাস্থ্যর উন্নতি করতে হলে নিয়মিত জাফরান খেতে হবে। আপনার শরীরে যদি অসুখ লেগেই থাকে তাহলে জাফরান সেবনে আপনার স্বাস্থ্য উন্নতি করবে। কারন নিয়মিত জাফরান খেলে হরমোন উদ্দিপক হিসাবে কাজ করে।
ক্লান্তি দুর করে
আপনার শরীর যদি ক্লান্ত লাগে, দুশ্চিনতায় ভোগেন তাহলে জাফরানে আপনার যদি কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না থাকে আপনি নিয়মিত জাফরান খেয়ে যাবেন। নিয়মিত জাফরান খেলে মস্তিষ্কের নিউরন সচল রাখে।
স্মৃতিশক্তি বাড়ায়
জাফরান মস্তিষ্কের জন্য খুবই উপকারী একটি মশলা। যাদের স্মৃতিশক্তি দুর্বল তারা জাফরান নিয়মিত খাবেন তাহলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পাবে। গর্ভবস্থায় কোন নারীর কোন ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না হলে নিয়মিত জাফরান খেলে বাচ্চার স্মৃতিশক্তি বেড়ে যাবে ইনশাল্লাহ।
রক্তস্বল্পতা দুর করে
যাদের শরীরে কম রক্ত আছে এবং রক্তের উৎপাদন কম হয় তারা নিয়মিত জাফরান খাওয়ার চেষ্টা করবেন। কারন জাফরানে রয়েছে প্রচুর আয়রন। জাফরানে থাকা আয়রন মানবদেহের রক্ত পরিষ্কার করে এবং রক্ত বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। রক্তের যে সকল সমস্যা হয় তা নিয়মিত জাফরান সেবনে সহজেই দুর করা যায়।
শরীরের রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে
জাফরানে রয়েছে পরিমান মতো পটশিয়াম যা শরীরের রক্ত চলাচলা বেড়ে দেয়। নিয়মিতজাফরান সেবনে দেহের মরা কোষ গুলো উজ্জিবীত করে। এবং শরীরের উচ্চ রক্ত চাপ নিয়ত্রন রাখে।
আসিডিটি দুর করে
জাফরান মশলা সেবন করলে পেটের কোষ্টকাঠিন্য, বদহজম, আসিডিটি এবং গ্যাস দুর করে পেট রাখে ঝামেলা মুক্ত। যাদের পেটের আসিডিটির সমস্যা আছে তারা নিয়মিত জাফরান খেলে আসিডিটি দুর হয়ে যাবে।
পিরিয়ডের ব্যাথা দুর করে
যাাদের পিরিয়ডের সময় প্রচুর পেট ব্যাথা করে তারা পিরিয়ডের ১০-১৫ দিন আগে থেকে নিয়মিত কয়েকদিন জাফরান সেবন করলে পিরিয়ডের ব্যাথা অনায়াসে কমিয়ে দেয়। কারো যদি পিরিয়ডের ব্যাথা থাকে তাহলে জাফরান নিয়মিত খাবেন পিরিয়ডের ব্যাথা ভালো হয়ে যাবে।
চোখে ছানি পড়ে না
জাফরানে রয়েছে ১২০ ধরনের পুষ্টি উপাদান যা নিয়মিত সেবন করলে চোখের দুর্বলতা রোধ এবং চোখের ছান পড়া রোধ করে।
হৃদপিন্ড সুস্থ্য রাখে
জাফরানে পটাশিয়াম থাকার কারনে হৃদপিন্ড সুস্থ্য রাখে এবং শরীরের কোলেস্টেরল নিয়ত্রন করতে সাহায্য করে। হৃদপিন্ড সুস্থ্য রাখার জন্য নিয়মিত জাফরান খাওয়ার অভ্যাস করুন।
শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা দুর করে সহজেই
যাদের সর্দি-কাশি এবং অ্যাজমা জাতীয় সমস্যা গুলো আছে তারা নিয়মিত জাফরান খাবেন তাহলে শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা সহজেই দুর হয়ে যাবে। জাফরান মশলা শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা দুর করতে কার্যকর ভৃমিকা পালন করে থাকে।
ক্যান্সার নিয়ন্ত্রন করে
ক্যান্সার হওয়ার জন্য এমন কিছু ভাইরাস আছে যা শরীরে ধিরে ধিরে মরন ব্যাধি ক্যান্সার সৃষ্টি করে। এই ধরনের রোগীদের জন্য নিয়মিত জাফরান খাওয়াতে হবে। প্রটেস্ট এবং কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে জাফরান বিশেষ ভৃমিকা পালন করে।
শরীরের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রন করে
নিয়মিত জাফরান সেবনে শরীরের কোলেস্টেরল মাত্রা নিয়ন্ত্রন করে। জাফরান মশলা শরীরে থাকা এলডিএল কোলেস্টেরল সহজেই দুর করে এবং শরীরের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রন করে।
জাফরান এর অপকারিতাঃ
জাফরান সেবনে মানবদেহের যেমন উপকার হয় তেমন অপাকারিতা ও আছে। জাফরান সেবনের অনিয়ম এবং অতিরোক্ত সেবনের ফলে জাফরান এর কিছু অপকারিতা আছে। জাফরান সঠিক নিয়মে ব্যাবহার না করলে শরীরের মারাত্বক কিছু কিছু ক্ষতি হতে পারে যেমন, এলার্জির প্রতিক্রিয়া, জরায়ুর সংকোচন, মাথা ব্যাথা সমস্যা এবং পেটের বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। একটি নারী গর্ভবস্থায়র প্রথম মাস থেকে জাফরান অনিয়মিত সেবন করলে তার গর্ভপাত হতে পারে।
তাছারাও অতিরোক্ত জাফরান সেবনে চোখ এবং নাক থেকে রক্তক্ষরন সমস্যা হতে পারে এবং জন্ডিস, ডায়রিয়া ইত্যাদি সমস্যা গুলো দেখা দিতে পারে। যাদের জাফরান সেবনে প্রথমেই সমস্যা মনে হবে তারা জাফরান সেবন থেকে দুরে থাকবেন এবং গর্ভবস্থায় প্রথম মাস থেকে জাফরান খাবেন না। কিভাবে খেতে হবে তা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাবেন। আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন জাফরান এর উপকারিতা এবং অপকারিতা গুলো।
গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার নিয়ম?
গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার নিয়ম- গর্ভাবস্থায় কিভাবে জাফরান খেতে হয় তা আপনারা হয়তো অনেকেই সঠিক নিয়ম জানেন না। সঠিক নিয়মে গর্ভবস্থায় জাফরান না খেলে হয়তো গর্ভবতীর কিছু সমস্যা হতে পারে। চলুন জেনে নেওয়া যাক সঠিক পদ্ধতিতে গর্ভবস্থায় জাফরান খাওয়ার নিয়ম। গর্ভবস্থায় ২টি পদ্ধতিতে জাফরান খেতে হয়-
- গর্ভবস্থায় জাফরান ভিজিয়ে খেতে হবে অথবা
- জাফরান চুর্ণ করে খেতে হবে।
১.গর্ভবস্থায় জাফরান ভিজিয়ে খাওয়ার নিয়মঃ প্রথমে জাফরান সুতো গুলো ভালো করে বেটে পানি অথবা দুধে ভিজিয়ে রাখতে হবে। ভেজানো জাফরান খাওয়া বা কোন রেসিপিতে ব্যাবহার করতে চাইলে জাফরান সুতো গুলো অবশ্যই পানিতে ১০-১৫ মিনিট আগে ভিজিয়ে রাখতে হবে।
২.গর্ভবস্থায় জাফরান চুর্ণ খাওয়ার নিয়মঃ জাফরান চুর্ণ বিভিন্ন ধরনের খাবারে ব্যাবহার করতে পারবেন স্বাদ গন্ধ এবং রং এর জন্য। এই জন্য জাফরান সুতো গুলো আঙ্গুল দিয়ে ভেঙ্গে সরাসরি খাবারে দিয়ে ব্যাবহার করতে পারবেন। আপনি যদি ইচ্ছে করেন পায়েস, স্যুপ, সালাদ, লাস্যি এবং বিরিয়ানিতে দিয়ে জাফরান খেতে পারবেন।
গর্ভাবস্থায় জাফরান খেলে কি বাচ্চা ফর্সা হয়?
গর্ভাবস্থায় জাফরান খেলে কি বাচ্চা ফর্সা হয়- অনেকেই বলেন গর্ভবস্থায় জাফরান খেলে শিশুর গায়ের রং ফর্সা হয় আসলে এই কথাটা কতটুকু সত্যি চলুন জেনে নেই। জাফরানে এমন কোন বৈশিষ্ট নেই যে, বাচ্চার গায়ের রং ফর্সা করবে। গর্ভবস্থায় জাফরান খেলে বাচ্চার গায়ের রং ফর্সা হয় না। কিন্তু অনেক গর্ভবতী মহিলারা আছেন তারা নিজেকে সুস্থ্য রাখার জন্য গর্ভবস্থায় দুধের সাথে বা কোন খাবারের সাথে জাফরান মিশিয়ে খেয়ে থাকেন।
গর্ভবস্থায় জাফরান খেলে বাচ্চার গায়ের রং ফর্সা হয় এরকম গুজবে আপনারা কখনো কান দিবেন না। এটা একেবারে অবিশ্বাস্য কথা। জাফরান খেলে শিশুর গায়ের রং এ কোন প্রভাব পরে না। জাফরান নিয়মিত খেলে যে শিশুর গায়ের রং ফর্সা হয়ে যাবে এই কথাটা বলা একেবারে ভুল। এই কথাটা বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমানিত হয় নি। প্রিয় পাঠক মনে রাখবেন, গর্ভবস্থায় পেটে থাকা শিশুর গায়ের রং, চুল, এবং চোখের রং জেনেটিক্যাল নির্ধারিত হয়।
গর্ভবস্থায় জাফরান খেলে শিশুর গায়ের রং ফর্সা হয় না, গর্ভাবস্থায় জাফরান খেলে গর্ভবতী মহিলাদের বিশেষ উপকার হয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার উপকারিতা গুলো কি কি?
গর্ভবস্থায় কি খেলে বাচ্চার গায়ের রং ফর্সা হয়?
গর্ভবস্থায় কি খেলে বাচ্চার গায়ের রং ফর্সা হয়- একটি গর্ভবতী নারীর স্বাভিকের তুলনায় একটু বেশি খিদে পায়। এই সময় তাদের বাড়তি খাবারের প্রয়োজন হয়। গর্ভবস্থায় কি খেলে বাচ্চার রং ফর্সা হয় এই প্রশ্নটা অনেকেই করে থাকেন। এবং কি খেলে গর্ভের বাচ্চা ফর্সা করা যাবে তার জন্য বাচ্চার পিতা এবং মাতা মরিয়া হয়ে যায়। তো বন্ধুরা আপনারা সঠিক তথ্য জেনে নিন, গর্ভবস্থায় কোন খাবার খাওয়ার মাধ্যমে বাচ্চার গায়ের রং ফর্সা হয় না।
অনেকেই বলেন, দুধ,ডিম, টমেটো, কমলা, জাফরান দুধ, নারিকেল এবং চেরি-বেরি জাতীয় ফল ইত্যাদি খেয়ে গর্ভের বাচ্চার গায়ের রং ফর্সা হয়। আসলে এই কথাটা সম্পর্ন ভুল। গর্ভবস্থায় বাড়তি খাবার খেতে হয় বাচ্চা এবং মায়ের সুস্থ্যতার জন্য এবং শরীরে রক্ত, ক্যালসিয়াম এবং পুষ্টির ঘাটতি পূরণের জন্য। এমন কথা নয় যে কোন খাবার খাওয়ার মাধ্যমে গর্ভের বাচ্চার গায়ের রং ফর্সা হয়। গর্ভের বাচ্চার চোখের রং, নাক, চুল, গায়ের রং ইত্যাদি জেনিটিক্যাল নির্ধারিত হয়। এতে কারো হাত নেই।
গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার উপকারিতা?
গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার উপকারিতা- একজন গর্ভবতী নারী গর্ভের ৫ মাস হওয়ার পর থেকে যদি জাফরান নিয়মিত খেয়ে থাকে তাহলে তার শরীরের জন্য বেশ উপাকারী হবে। শুধু গর্ভবতী নারীই নয় জাফরান সকল মানুষের শরীরের জন্য উপকারী। যাদের জাফরান খেয়ে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয় তাদের জাফরান না খাওয়া টাই ভালো। গর্ভবস্থায় জাফরান খেতে হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করবেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক গর্ভবস্থায় জাফরান খাওয়ার উপকারিতা গুলো কি?
- জাফরানে রয়েছে প্রচুর আন্টিঅক্সিডেন্ট যা মা ও গর্ভের শিশুর জন্য খুবই উপকারী এই মশলা। নিয়মিত জাফরান সেবনে গর্ভকালীন প্রদাহ দুর করে। এই জন্য ডাক্তাররা গর্ভবতী মেয়েদের খাদ্য তালিকায় জাফরান রাখতে বলেন।
- জাফরানে রয়েছে আন্টি ডিপ্রেসেন্ট উপাদান। যা গর্ভকালীন সময়ে নিয়মিত খেলে মেজাজ ঠান্ডা থাকে। যার ফলে গর্ভবতী মায়ের উপর মানসিক চাপ খুব কম পরে।
- গর্ভবতী সময়ে হরমোনের উঠানামা করে। যার ফলে এই সময় শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যাথা, পায়ের রগ, মেরুদন্ড, তলপেট টান ধরা মাজা ব্যাথা ইত্যাদি সমস্যা হয়ে থাকে। এই জন্য গর্ভকালীন সময়ে জাফরান খেলে বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
- জাফরানে রয়েছে প্রচুর পরিমানে আয়রন। গর্ভকালীন সময়ে মায়েদের এমনিতে রক্ত স্বল্পতা দেখা দেয়। এই রক্ত স্বল্পতা দুর করার জন্য জাফরান খাওয়া খুবই উপকারী। যদি জাফরান খেয়ে কারো কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না হয় তাহলে অবশ্যই গর্ভবতী মায়েদের খাবার তালিকাই জাফরান রাখবেন।
জাফরান দুধ খাওয়ার নিয়ম?
জাফরান দুধ খাওয়ার নিয়ম- আপনি যদি বিভিন্ন রোগব্যাধি থেকে মুক্তি পেতে চান তাহলে প্রতিদিন খাবার তালিকায় জাফরান রাখতে পারেন। জাফরান কি করে খায় এবং কিভাবে খেতে হয় তা নিয়ে আমাদের এই আরর্টিকেলটি। প্রিয় পাঠক জাফরান খাওয়ার সঠিক সময় হলো রাতে। আপনি যখন রাতে ঘুমাতে যাবেন তখন এক গ্লাস দুধের সাথে জাফরান মিশিয়ে খেয়ে নিবেন। জাফরান খেতে চাইলে অবশ্যই ইরানি জাফরান খাবেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক জাফরান দুধ খাওয়ার নিয়ম?
খাওয়ার নিয়ম
এক গ্লাস গরুর দুধ ভালো করে ফটিয়ে নিবেন। দুধ ফুটানো অবস্থাতেই এক চিমটি জাফরান দিবেন। দুধ হালকা কুসুম গরম হলে তাতে কয়েকটা কিচমিচ এবং এক চামুচ মধু দিয়ে কুসুম গরম দুধ পান করুন। আর কেউ যদি এতা ঝামেলা না করতে চায় তাহলে এক গ্লাস কুসুম গরম গরুর দুধের মধ্যে জাফরান, কয়েকটা কিচমিচ, মধু মিশেয়ে ও খেতে পারেন। চলুন বন্ধুরা জেনে নিই জাফরান দুধ খেলে কি হয়?
জাফরান দুধ খেলে কি হয়?
জাফরান দুধ খেলে কি হয়- জাফরানে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, এবং ভিটামিন সি সহ প্রায় ১২০ টি উপাদান। যা সেবন করলে মানব দেহের জন্য অস্বাভিক উপকার হয়। তবে জাফরান বিভিন্ন ভাবে খাওয়া যেতে পারে। তার মধ্যে গরুর দুধের সাথে জাফরান মিশিয়ে খেলে ভালো উপকার পাওয়া যাবে। তো বন্ধুরা জেনে নেওয়া যাক জাফরান দুধ খেলে কি হয়?
- জাফরান দুধ খেলে হজম শক্তি বারে।
- জাফরান দুধ খেলে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করে।
- জাফরান দুধ খেলে শরীরের ক্লান্তি দুর করে এবং রাতে ঘুম হয় ভালো
- জাফরান দুধ খেলে মানসিক অবসাদ পাওয়া যায় এবং মানসিক চাপ, টেনশান কম হয়।
- জাফরান দুধ খেলে শরীরের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন করে।
- জাফরান দুধ খেলে শরীরের রক্ত স্বপ্লতা দুর করে।
- জাফরান দুধ খেলে স্বাস্থ্যর উন্নতি হয়।
- জাফরান দুধ খেলে স্মৃতিশক্তি বাড়ায়।
- জাফরান দুধ খেরে হার্ট সুস্থ্য রাখে।
- জাফরান দুধ খেলে ঠান্ডা বা সর্দি-কাশি লাগে না।
- জাফরান দুধ খেলে ক্যান্সারের আশঙ্কা থাকে না।
আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন জাফরান দুধ খেলে কি উপকার হয়। উপরোক্ত উপকার গুলো পেতে হলে জাফরান দুধ অবশ্যই নিয়ম মেনে খেতে হবে। জাফরান দুধ খাওয়ার নিয়ম উপরে দেওয়া আছে পড়ে নিবেন।
কোন কোন খাবারে জাফরান খেতে হয়?
কোন কোন খাবারে জাফরান খেতে হয়- জাফরান কেশর নামেও পরিচিত। বিভিন্ন খাবারে জাফরানের ব্যাবহার করা হয়। সাধারনত খাবারের রং, স্বাদ এবং গন্ধ বাড়ানোর জন্য জাফরান ব্যাবহার করা হয়। মিষ্টি জাতীয় খাবারে জাফরান বেশি ব্যাবহত হয়। যেমন, রসমালাই, পায়েস, বিরিয়ানি, মুর্গ মোশাল্লাম, জাফরানী পোলাও এবং শাহী মুর্গতে জাফরান ব্যাবহার করা হয়। তাছারাও দুধের সাথে জাফরান মিশিয়ে খাওয়া যায়। মনে রাখবেন, জাফরান ব্যাবহার করার আগে অবশ্যই গরম দুধ অথবা
গরম পানিতে জাফরান ভিজিয়ে রাখতে হবে ২০-৩০মিনিট ধরে। তারপরে নির্দিষ্ট সময়ে রান্নায় মিশিয়ে দিতে হবে। রান্নার আগে জাফরান ভিজিয়ে রাখলে ভালো রং এবং গন্ধ পাওয়া যায়। তাছারাও সাদা পোলাও, মোরগ পোলাও, ফিরনি, কাচ্চি, মুরগীর রোস্ট ইত্যাদিতে জাফরান ব্যাবহার করতে পারবেন। সরাসরি জাফরান পাপড়ি গুলো খাবারে না দিয়ে খাবার তৈরীর আধা ঘন্টা আগে গরম দুধ বা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে। কিভাবে আসল জাফরান চিনবেন তার উপায় নিচে দেওয়া হলো।
আসল জাফরান চেনার উপায়?
আসল জাফরান চেনার উপায়- জাফরান চাষ করতে প্রচুর অর্থ ব্যায় হয় এবং কষ্ট করতে হয়। জাফরান ফুলগুলো ফোটার সাথে সাথেই জমি থেকে তুলে নিতে হয়। কিন্তু জাফরান ফুল মেশিন দিয়ে তুললে জাফরান মশলা করা যায় না। এই জন্য জাফরান ফুল হাত দিয়ে খুব সর্তকতার সাথে তুলতে হয়। জাফরান ফুলের মাঝখানে যে লাল বা খয়েরি রং এর সুতোর মতো গর্ভদন্ড হয় সেগুলো দিয়ে জাফরান মশলা তৈরী হয়। ৫ লক্ষ জাফরান ফুল থেকে মাত্র ৫০ গ্রাম জাফরান মশলা পাওয়া যায়। এর প্রতি কেজি জাফরানের মূল্য হয় ৩-৪ লক্ষ টাকা পর্যন্ত।
আসল জাফরান চেনার উপায়
বাজারে আসল এবং নকল দুই ধরনের জাফরান মশলা বিক্রি হয়। অনেক ক্রেতা আছে যারা আসল জাফরান চেনে না তারা জাফরান মশলা কিনে ঠকে। আসল জাফরান পানিতে ভিজিয়ে রাখলে পানি হলুদ রঙ্গের হবে এবং পানিতে যে জাফরান ভেজাবেন সেই জাফরান হাতের তালুতে নিয়ে ঘষলে সহজে গলে যাবে না। আর নকল জাফরান পানিতে ভিজিয়ে রাখলে পানি লাল রঙ্গের হবে। নকল ভেজানো জাফরান হাতের তালুতে নিয়ে ঘষলে জাফরান গুলো গলে যাবে। এই ভাবে পরিক্ষা করলেই আসল এবং নকল জাফরান সহজেই চিনতে পারবেন।
কোন জাফরান সবচেয়ে ভালো?
কোন জাফরান সবচেয়ে ভালো- বাজারে আসল নকল সব ধরনের জাফরান বিক্রি হয়। কোন জাফরান আসল কোন জাফরান নকল তা চেনার উপায় নাই অনেকেরই কাছে। আগেই বলেছি যে, আসল জাফরান পানিতে ভেজালে পানির রং হলুদ হবে এবং নকল জাফরান পানিতে ভেজালে পাানির রং লাল হবে। কোন জাফরান সবচেয়ে ভালো হবে এই প্রশ্নে বলা যায়, ইরানি জাফরান সবচেয়ে ভালো হবে। ইরানি জাফরানের রং, গন্ধ এবং স্বাদ আলাদা হয়। এই জন্য আপনারা বাজারে জাফরান কিনতে গেলে ইরানি জাফরান কিনবেন।
FAQ- গর্ভাবস্থায় জাফরান খেলে কি বাচ্চা ফর্সা হয়?
জাফরান ১ কেজির দাম কত?
উত্তরঃ জাফরান চাষ করতে অনেক টাকা ব্যায় করতে হয়। জাফরানের ৫ লক্ষ ফুল থেকে ৫০ গ্রাম জাফরান মশলা বের হয়। এই জন্য জাফরান মশলার দাম অনেকটাই বেশি হয়ে থাকে। জাফরান ১ কেজির দাম বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩-৪ লক্ষ টাকা।
জাফরান কত দিন ভালো থাকে?
উত্তরঃ উচ্চ মানের জাফরান সঠিক তাপমাত্রায় দিয়ে শুকিয়ে রাখলে প্রায় ৮-১০ বছর পর্যন্ত ভালো থাকে।
ভালো জাফরান কোথায় পাওয়া যায়?
উত্তরঃ জাফরান উৎপাদনের সেরা দেশ হলো ভারত এবং ইরান। এই দুই দেশে জাফরান ভালো উৎপাদন হয়। এই জন্য বাজারে জাফরান কিনতে গেলে ইনারি জাফরান নিবেন। ইরানি জাফরান সবচেয়ে ভালো।
জাফরান কি পানি দিয়ে খাওয়া যায়?
উত্তরঃবিশেষজ্ঞরা বলেন রাতে সোয়ার আগে এক চিমটি জাফরান এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রেখে সেই পান সকালে খালি পেটে খেতে পারলে শরীরের জন্য অনেক উপকার।
জাফরানের স্বাদ কেমন?
উত্তরঃ জাফরানের একটি শক্তিশালী বহিরাগত সুগন্ধ এবং তিক্ত স্বাদ রয়েছে। জাফরান সরাসরি না খেয়ে দুধ দিয়ে খেলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
দিনে কতবার জাফরান খেতে হয়?
উত্তরঃ জাফরান আসলে গরম প্রকৃতির হয় এই জন্য দিনে একবারের বেশি না খাওয়াটাই ভালো। আর জাফরান খাওয়ার সঠিক সময় হলো রাতে। রাতে সোয়ার আগে দুধ দিয়ে জাফরান খেতে পারলে ভালো উপকার পাবেন।
জাফরান মুখে মাখলে কি হয়?
উত্তরঃ জাফরান মুখে মাখলে মুখের উজ্জলতা বেড়ে যায়, ড্রাকসার্কেল দুর হয়ে যায়, ব্রনের দাগ দুর হয় এবং আরো অনেক সমস্যার সমাধান হয়। মুখে মাখার জন্য জাফরান ক্রিম আছে। বাজারের যে কোন দোকানে কিনতে পারবেন।
জাফরান খেলে কি শরীরের গরম বাড়ে?
উত্তরঃ হ্যা, জাফরান বেশি পরিমানে খাওয়া হলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে দেয়। জাফরানের ক্রোসিন এবং সাফরানালের মতো নির্দিষ্ট যৌগের কারনে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়।
লেখকের শেষ কথাঃ গর্ভাবস্থায় জাফরান খেলে কি বাচ্চা ফর্সা হয়?
প্রিয় পাঠক এই আরর্টিকেল থেকে আমরা জানতে পারলাম, জাফরান এর উপকারিতা ও অপকারিতা,
গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার নিয়ম, গর্ভাবস্থায় জাফরান খেলে কি বাচ্চা ফর্সা হয়, গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার উপকারিতা, জাফরান দুধ খাওয়ার নিয়ম, জাফরান দুধ খেলে কি হয়, গর্ভবস্থায় কি খেলে,বাচ্চার গায়ের রং ফর্সা হয়, আসল জাফরান চেনার উপায়, কোন কোন খাবারে জাফরান খেতে হয়? ইত্যাদি
বিষয়ে আমরা বিস্তারিত জানতে পারলাম। আমাদের আরর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকলে অন্যদেরকে জাফরান সম্পর্কে জানার সুযোগ করে দিবেন। এরকম আরো ভালো ভালো আরর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইডিটি ভিজিট করুন। আরর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
পোষ্ট ট্যাগঃ
গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়া যাবে কি?, গর্ভাবস্থায় কোন জাফরান ভালো?, জাফরান খেলে কি ত্বক ফর্সা হয়?, গর্ভাবস্থায় জাফরান l কেশর খেলে কি বাচ্চা ফর্সা হয়?, ভালো জাফরান কোথায় পাওয়া যায়?, পৃথিবীর সেরা জাফরান কোথায় পাওয়া যায়?,জাফরান কোন ফুল থেকে পাওয়া যায়, জাফরান চাষ ভালো হয় কোন মাটিতে, জাফরানের রং কি?, জাফরান এর চারা কোথায় পাওয়া যায়?, ইরানি জাফরান দাম, মানুষ জাফরান পছন্দ করে কেন? ।
msta2z.comব্লগের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url