সদকাতুল ফিতর কার উপর ওয়াজিব - সদকাতুল ফিতরের পরিমান কত
সদকাতুল ফিতর কার উপর ওয়াজিব ? আসসালামু আলাইকুম প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা। নিশ্চয় আল্লাহর রহমতে বরকত ময় রমজান মাসে সকলেই ভালোই আছেন। আজ আমরা এই পোষ্ট থেকে জানবো সদকাতুল ফিতর কার উপর ওয়াজিব এবং সদকাতুল ফিতরের পরিমান কত। সদকাতুল ফিতর কার উপর ওয়াজিব এ বিষয়ে অনেক মুসলিম জানেন না। তা জানার জন্য আমাদের এই পোষ্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন তাহলে সদকাতুল ফিতরের সব বিষয়ে জেনে যাবেন।
যাকাতের মতো সদকাতুল ফিতর একটি আর্থিক ইবাদাত। রমজান মাসে রোজা করতে গিয়ে আমাদের অনেক ধরনের ভুল-ত্রুটি হয়ে থাকে। এই ভুল-ত্রুটি গুলো আমাদের কাছে ঋণের মতো । এই ঋণ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সদকাতুল ফিতর আদায় করতে হয়। রমজান মাসের শুরু থেকে ঈদের নামাজের পূর্ব পর্যন্ত সদকাতুল ফিতর আদায় করা যায়।সদকাতুল ফিতর কার উপর ওয়াজিব? সদকাতুল ফিতর প্রত্যেক স্বাধীন ব্যক্তির উপর ওয়াজিব।
ভৃমিকা
মহান রব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে নির্ধারিত এই ইবাদাত। ফিতরা প্রকৃত পক্ষে রোজার যাকাত। অর্থাৎ যাকাত যেমন মালকে পবিত্র করে, তেমনি ফিতরাও রোজাকে পবিত্র করে। অর্থাৎ রোজার ভেতর যে সকর ভুল -ভ্রান্তি থাকে ফিতরা দ্বারা তা পূরন হয়ে যায়। বন্ধুরা সদকাতুলফিতর কার উপর ওয়াজিব এবং সদকাতুল ফিতরের পরিমান কত তা জানার জন্য আমাদের এই পোষ্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইলো।
সদকাতুল ফিতর কাকে বলে
সদকাতুল ফিতর কাকে বলে? সদকাতুল ফিতর শব্দটি আরবি শব্দ। এখানে দুইটি আরবী শব্দ ব্যাবহার করা হয়েছে। দুইটির আলাদা আলাদা রুপ আছে। যেমন, সদকা মানে দান করা এবং ফিতর মানে রোজার সমাপন বা ঈদুল ফিতর। ঈদুল ফিতরের দিন আদায় করা সদকাকে সদকাতুল ফিতর বলে।আবার এটিকে যাকাতুল ফিতর বা ফিতরাও বলা হয়।
ঈদুল ফিতরের দিন সাহেবে নেসাব অর্থাৎ নির্দিষ্ট ধনীদের প্রতি সদকায়ে ফিতর আদায় করা ওয়াজিব। রমাযানের রোজার কোন ত্রুটি -বিচ্যুতি ঘটলে ফিতরের দ্বারা তা প্রায়শ্চিত্ত হয়ে যায়। হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে, সদকা আদায় না করা পর্যন্ত রোজাদারের রোজা আসমানে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে। এবং আদায় করা মাত্র মহান আল্লাহর দরবারে পৌছে যায়।
তাফসীরে পাওয়া যায় এতে ঈমান ও চরিত্রগত শুদ্ধি এবং আত্মিক যাকাত প্রদান সবই অন্তভুক্ত। ইবনে আব্বাস (রাঃ) বর্ণানা করেছেন, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, বাজে কথা ও অশ্লিলতা হতে রোযাকে পবিত্র করার ও মিসকীনদেরকে অন্নদানের উদ্দেশে সদকায়ে ফিতর নির্ধারন করেছেন। (আবু দাউদ)
প্রিয় মুসলিম ভাই বোনেরা তাহরে আপনারা এই পোষ্টটি পড়ে বুঝতে পারলেন যে সদকাতুল ফিতর কাকে বলে। সদকাতুল ফিতর কি এবং কাকে বলে অনেক মানুষ জানেন না। আসলে প্রত্যেক মুসলিম বান্দাহকে জানতে হবে সদকাতুল ফিতর কি বা কাকে বলে। যে বন্ধুরা এই পোষ্টটি পড়বেন তারা অবশ্যই ফিতর বিষয়ে অজানা মানুষকে জানানোর চেষ্টা করবেন। এতে আপনারা প্রচুর নেকি অর্জন করবেন। ইনশাল্লাহ। নিজে জানুন এবং অন্যকে জানানোর চেষ্টা করবেন। যে কোন হাদিস বা কোরআন থেকে আয়াত। এভাবে ইসলাম প্রচার করা হয়।
সদকাতুল ফিতরের হুকুম কি
সদকাতুল ফিতরের হুকুম কি, সদকাতুল ফিতরের কি হুকুম আছে কোরআন এবং হাদিসে তা আমরা এই পোষ্ট থেকে জানার চেষ্টা করবো।ইবনে আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, রাসুল (সাঃ) যারা বাজে কথা ও অশ্লীলতা হতে রোজাকে পবিত্র করার ও মিসকিনদের কে অন্নদানের উদ্দেশে সদকায়ে ফিতর নির্ধারন করেছেন। (আবু দাউদ)
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, নবী করীম (সাঃ) প্রতিটি মুসলমান ক্রীতদাস, আযাদ, নারী-পুরুষ, ছোট -বড় নির্বিশেষে সকলের জন্য সদকায়ে ফিতর এক সা‘ পরিমান খেজুর কিংবা যব নির্ধারন করেছেন। আর ঈদগাহে যাওয়ার আগেই সদকায়ে ফিতর আদায় করার হুকুম দিয়েছেন। (বুখারি ও মুসলিম)
ফিতরা ওয়াজিব। তাই প্রতিটি মালদার ব্যক্তি তার ও তার পোষ্যদের পক্ষ হতে ঈদের দিন নামাজে রওনা হবার আগেই তা আদায় করবে। যাকাতের জন্য যেমন নিসাব পরিমাণ মালের পুরা এক বছর মালিক থাকা প্রয়োজন। ফিতরার জন্য তা নয় বরং ঈদের দিন সকালে নিসাব পরিমান মালের মালিক হলেই তাকে অবশ্যই ফিতরা আদায় করতে হবে। সদকাতুল ফিতর কার উপর ওয়াজিব তা নিয়ে বিস্তারিত জেনে নিন।
সদকাতুল ফিতর কার উপর ওয়াজিব
সদকাতুল ফিতর কার উপর ওয়াজিব। গরিব দরিদ্র মানুষগুলো আমাদের সমাজেরই মানুষ। তারা সারা বছরই কঠিন কষ্টের মধ্যে বসবাস করে। ঈদের দিন অনন্ত তাদের কে সদকাতুল ফিতর দিয়ে সকলের সাথে আনন্দ করার সুযোগ করে দিতে হবে। সদকাতুল ফিতর কার উপর ওয়াজিব তা আমাদের কে সঠিক ভাবে জানতে হবে। আমাদের এই পোষ্টে সদকাতুল ফিতরের সঠিক বর্ণানা গুলো হাদিস থেকে দেওয়া হয়েছে। তো বন্ধুরা জেনে নেওয়া যাক সদকাতুল ফিতর নিয়ে হাদিসে কি বলা হয়েছে।
সদকাতুল ফিতরের নিসাব যাকাতের নিসাবের সমপরিমান। কারো কাছে যদি সাড়ে সাত ভরি সোনা বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা অথবা তার সমমূল্যের নগদ টাকা থাকে অথবা নিত্যপ্রযোজনীয় জিনিসের অতিরোক্ত সম্পদ ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদিকের সময় বিদ্যামান থাকে তাহলে তার উপর সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব হয়ে যাবে। যার উপর সদকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব তিনি নিজের পক্ষ থেকে যেমন আদায় করবেন, তেমনি নিজের অধীনদের পক্ষ থেকেও আদায় করবেন। যে ব্যাক্তি পবিত্রতা অবলম্বন করেছে সে সফলকাম হয়েছে।(সুরা আলা: ১৪)
সদকাতুল ফিতরা ওয়াজিব হবার কারন
একজন ব্যক্তি রোজা করতে গিয়ে তার রোজার বিভিন্ন ধরনের ভুল ত্রুটি হয়ে থাকে। এই ভুল ত্রুটির কারনে হয়তো রোজা ভেঙ্গে যায় না কিন্তু রোজার ত্রুটি- বিচ্যুতি হয়ে যায়। অর্থ্যাৎ রোজার ভিতর যেসব ত্রুটি হয় সেই ত্রুটি গুলো ফিতরা দ্বারা পুরণ করা হয়। মহান রব্বুল আলামিন আমাদের জন্য কোন ইবাদাত কষ্ট দায়ক করেন নি। কিন্তু আমরা কষ্ট দায়ক মনে করে নিই। বান্দাহ যেমন ইবাদাতে ভুল করে তেমনি আল্লাহ তায়ালা সেই ভুলের ক্ষমার পথ ও খুলে রেখেছেন।
রোজাদার বান্দাহ রোজা থেকে কিছু পানাহার করে নি,স্ত্রীর সাথে মেলামেশা করেন নি, যার কারনে তার রোজা নষ্ট হয় নি। কিন্তুু মুখ দিয়ে গীত করেছেন, অশ্লীল কথাবার্তা বলেছেন, পরনিন্দা করেছেন, ইচ্ছাকৃত ভাবে চোখ দিয়ে অশ্লীল কিছু দেখেছন, অপ্রয়োজনীয় কথা বার্তা বলেছেন, এসব কারনে একজন রোজাদার ব্যাক্তির রোজার ত্রুটি হয়। সেই ত্রুটি পূর্ন রোজাকে পরিষ্কার পরিচ্ছিন্ন করতে সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব করেছেন।
সদকাতুল ফিতর কে দিবে
সদকাতুল ফিতর কে দিবে? নবীজি ইরশাদ করেছেন,যতক্ষন পর্যন্ত সদকাতুল ফিতর আদায় করা না হয় ততক্ষন আসমান ও জমিনের মাঝখানে রোজা ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে।(কানজুল ওম্মাল,হাদিস:২৪১২৪) ঈদুল ফিতর উপলক্ষে, রোজাদার ব্যক্তিরা সদকাতুল ফিতর, দরিদ্র মানুষদের মধ্যে দান করবে। সাদকাতুল ফিতর কে দিবে এই বিষয়ে আমাদের প্রত্যেককে সঠিক হাদিস জানতে হবে। প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা জেনে নেওয়া যাক রমজান মাসে সাদকাতুল ফিতর কে দিবে।
১. গৃহকর্তা ফিতরা দেবে নিজের পক্ষ হতে। ২. নিজের দরিদ্র নাবালেগ সন্তান -সন্ততি গনের পক্ষ থেকেও এটা তাকে আদায় করতে হবে। ৩. ঈদের দিন ফজরের নামাজের পূর্বে যদি কোন সন্তান জন্মগ্রহণ করে তার পক্ষ হতেও ফিতরা আদায় করতে হবে। অবশ্য যদি ওই সময় কেউ মারা যায় তবে তার পক্ষ হতে ফিতরা দিতে হবে না। ঈদের দিন সূর্যোদয়ের পর কারো জন্ম হলে তার ফিতরা আদায় করতে হবে না। আবার ওই সময় কেউ মারা গেলে তার ফিতরা লাগবে। সন্তান -সন্ততি বা স্ত্রী যদি সাহেবে নিসাব হয় তবে তাদের ফিতরা তারা নিজেরাই আদায় করবে।
সদকাতুল ফিতর কাকে দেওয়া যাবে
সদকাতুল ফিতর কাকে দেওয়া যাবে? রমজান মাস সিয়াম সাধনার মাস এবং বরকত ময় ফজিলত পূর্ন মাস। এই মাসে যে যত খুশি দান করুন বা যত খুশি খরচ করুন মহান আল্লাহ তার কোন হিসাব নিবেন না। দীর্ঘ এক মাস রোজা পালনের মধ্যে কোন ভুল -ত্রুটি হয়ে গেলে তা থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য ফিতরা আদায় করা অবশ্যক। এই জন্য প্রকৃত হকদারকে ফিতরা দিতে হবে। যাকে তাকে ফিতরা দিলে হবে না। বুঝে শুনে ফিতরা দিতে হবে। অবশ্যই গরিব লোকেরাই ফিতরার আসল হকদার। তো বন্ধুরা জেনে নেওয়া যাক হাদিস মোতাবেক সাদকাতুল ফিতর কাকে দেওয়া যায়। পড়তে থাকুন-
- দরিদ্র ভাই-বোনেরা।
- গরীব প্রতিবেশি গণ।
- নিকটবর্তী বা দুরবর্তী মিসকিন গন।
- গরীব তলেবে ইলম বা আলেম -ওলামগণ। মোট কথা,ফিতরা দেওয়ার যোগ্য নয় এরুপ গরীব মুসলমান গণই ফিতরা গ্রহনের যোগ্য।
- একজনের ফিতরা এক জন কে দেয়াই উত্তম।তবে একাধিক ব্যক্তিকে ও দেয়া যায়।
- বহুজনের ফিতরা ও একজনকে দেওয়া যায়।
- কোন প্রতিষ্ঠান বা মসজিদ মাদ্রাসা, রাস্তা-ঘাট,পুল নির্মানে ইত্যাদিতে ফিতরার টাকা দেওয়া জায়েজ নয়। এই জন্য এখানে বলা হয়েছে যাকে তাকে, যেখানে সেখানে ফিতরা দিলে হবে না। সদকাতুল ফিতর কাকে দেওয়া যাবে
ইসলামে যেসব পর্ব বা অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা আছে তা সর্বজনীন অর্থাৎ অনুষ্ঠান পালন ও তার আনন্দ উৎসব গরিব ধনী নির্বিশেষে যাতে সকলেই উপভোগ করতে পারে ইসলাম তার দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিয়েছেন । ফলে ঈদের আনন্দ যাতে সচ্ছল ঘরেই সীমাবদ্ধ না থাকে সেই জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু নির্দেশ দিয়েছেন যে, ঈদের নামাজে রওনা হওয়ার আগেই যেন স্বচ্ছল লোকেরা প্রত্যেকে নিজ ও তার পোষ্যদের পক্ষ হতে ফিতরা অবশ্যই গরিব মিসকিনদের কে আদায় করে দেয়।
আরো পড়ুনঃ মেসওয়াকের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস জেনে নিন
যাতে করে ঈদের আনন্দ শুধু ধনীদের ঘরেই সীমাবদ্ধ না থাকে। গরীব - বড়লোক সকলেই যেন ঈদের দিন আনন্দ উপভোগ করতে পারে। সদকাতুল ফিতরের পরিমান কত বা কিপরিমান দিতে হবে তা নিয়ে সঠিক আলোচনা করা হলো জেনে নিন
সদকাতুল ফিতরের পরিমাণ কত
সদকাতুল ফিতরের পরিমাণ কত? সদকাতল ফিতর কত তা আমরা কি সকলেই সে বিষয়ে সঠিক ভাবে জানি। জেনে কি ফিতরা আদায় করি। সদকাতুল ফিতর যে পরিমান দেওয়ার হুকুম আছে আমারা কি আসলে সেই পরিমানই দিই। আসলে আমাদের কে এই বিষয়ে সঠিক তথ্য টি জানতে হবে। আর সেই ভাবেই ফিতরা আদায় করতে হবে। তো ভাই ও বোনেরা জেনে নেওয়া যাক সদকাতুল ফিতরের পরিমান কত?
অর্ধ সা’ অর্থ্যাৎ এদশেীয় ৮০ তোলা সেরের পৌণে দু’সের। এ পরিমান গম, আটা, কিংবা ছাতু, দ্বারা ফিতরা আদয় করতে হয়।মনে রাখবেন, উল্লিখিত বস্তু সমূহের পরিবর্তে উক্ত পরিমান চাউল দ্বারা ফিতরা দিলে আদায় হবে না। অবশ্য ঐ বস্তুসমূহের উল্লেখিত পরিমান মূল্য দ্বারা যে পরিমান চাউল পাওয়া যায়, সেই পরিমান চাউল দ্বারা ফিতরা দিলে জায়েয হবে।সদকাতুল ফিতরের পরিমাণ কত
সদকায়ে ফিতর সম্পর্কিত হাদিসগুলোতে পর্যালোচন করলে মোট ৫ প্রকারের খাদ্য দ্বারা সদকাতুল ফিতর আদায় করা যায়। এগুলো হলো- গম, যব, খেজুর, কিসমিস এবং পনির। এগুলো দিয়ে ফিতরা আদায় করতে চাইলে প্রত্যেকের জন্য এক সা’ দিতে হবে। আর গম দ্বারা আদায় করতে হলে আধা সা’ দিতে হবে। এটা ওজনের দিক দিয়ে তফাৎ। আর মূল্যের দিক থেকে ও পার্থ্যক্য রয়েছে। হাদিসে এই পাঁচটি পণ্যের মধ্যে যে কোন ১ টির দ্বারা আপনারা ফিতরা আদায় করতে পারবেন।এই উল্লেখিত পণ্যের মূল্য দ্বারা ও আপনি ফিতরা আদায় করতে পারবেন। সদকাতুল ফিতরের পরিমাণ কত
ফিতরা কি আত্মীয়দের দেওয়া যায়
ফিতরা কি আত্মীয়দের দেওয়া যায়? কারো যদি এমন আত্মীয় থাকে অসহায়, দরিদ্র, এবং ঋণগ্রস্ত সেসব আত্মীয়দের কে সদকাতুল ফিতর নিঃসন্দেহে দেয়া যাবে। এবং কারো ভাই-বোন যদি অভগ্রস্ত হয়ে তাহলে তাকে ও ফিতরা দেওয়া যাবে। আসলে বন্ধুরা ফিতরা দিতে হলে আবশ্যই চারিদিকে ভেবে চিন্তা করে ফিতরা টাকা দিতে হবে। প্রিয় মুসলমান ভাই ও বোনেরা জেনে নেওয়া যাক আত্মীয়দের ফিতরা দেওয়া নিয়ে হাদিস কি বলেছেন। ফিতরা কি আত্মীয়দের দেওয়া যায়?
উত্তরঃ হ্যা। অবশ্যই আপনার কোন গরীব আত্মীয় স্বজন থাকলে ফিতরার টাকা দিতে পারবেন। কারন কারো যদি গরীব আত্মীয়-স্বজন থাকে তারাই আগে সেই ফিতরার হকদার। এতে করে ফিতরা ও আদায় করা যায় এবং আত্মীয়তার হক ও আদায় হয়। কোন ছেলে বা মেয়ে যদি তাদের দরিদ্র ভাই-বোন, চাচা- ফুফু সহ অন্যান্য যে আরো যেসকল আত্মীয় আছে তাদের কে ফিতরা নিজের হাতে ফিতরা দিলে ইসলামে কোন প্রকার আপত্তি নেই।
যেহেতু এ সংক্রান্ত দলিল গুলো খুব সাধারন। সদকাতুল ফিতরার বিষয়ে নবী করিম (সাঃ) বলেছেন, মিসকিনকে যাকাত দেওয়া সদকা। আর আত্মীয়কে দেওয়া সদকা ও আত্মীয়তার হক আদায়। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১৫৭৯৪; সুনানে নাসায়ি, হাদিস: ২৫২)
সদকাতুল ফিতরার কিছু মাসয়ালা
সদকাতুল ফিতরার কিছু মাসয়ালা? সদকাতুল ফিতর এমন এক সদকা যা রমজান মাসের শুরু ঈদের দিন নামাজের আগ পর্যন্ত সকলের উপর ওয়াজিব হয়ে যায়। যেহেতু প্রতি বছর আমাদের কে সদকাতুল ফিতর দিতে হয় সেহেতু আমাদের কে সদকাতুল ফিতরের মাসায়ালা গুলো সঠিক ভাবে জেনে নিতে হবে। সদকাতুল ফিতরের কিছু গুরুত্বপর্ণ মাসায়ালা দেওয়া হলো। নিজে জানুন এবং অন্যকে জানান। মনোযোগ দিয়ে পড়ুন-
১ নং মাসায়ালা
ঈদের নামাজে রওনা দিয়ার আগে সদকাতুল ফিতর আদায় করতে হবে। আবার প্রথম রোজা থেকে শুরু করে শেষ রোজার যে কোন দিন ফিতর আদায় করতে পারবেন। ঈদুল ফিতরের দিন ঈদগাহে নামাজের উদ্দেশে বের হওয়ার আগে ফিতরা আদায় করা মুস্তাহাব। তবে ঈদের পরে ফিতরা আদায় করলেও আদায় হবে। ফাতাওয়া মাহমুদিয়া: (১৪/৩৮৩)
২ নং মাসায়ালা
সদকায়ে ফিতর দিবে গৃহকর্তা নিজের পক্ষ থেকে। নিজের দরিদ্র নাবালেগ সন্তান-সন্ততিগণের পক্ষথেকে ও আদায় করতে হবে। তবে সাবালক স্ত্রী, সন্তান , মাতা-পিতার পক্ষ থেকে দেওয়া ওয়াজিব নয়। যদি সাবালক সন্তান পাগল হয় তার ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব হবে। (ফাতাওয়া মাহমুদিয়া :১৪/৩৯৭)
৩ নং মাসায়ালা
নাবালেগ সন্তানের বাবা যদি ওই পরিমান সম্পদের মালিক হয় তাহলে পিতার উপর তাদের পক্ষ থেকে সদকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব।
৪ নং মাসায়ালা
সদকাতুল ফিতর আদায় করার পর যদি ঈদের দিন আবার ফিতরের পরিমান বেড়ে যায় তাহলে ঐ বাড়তি পরিমান ফিতর ও আদায় করতে হবে। ( ফাতাওয়া মাহমুদিয়া: ১৪/৩৯২)
৫ নং মাসায়ালা
মৌলিক নিত্যপ্রয়োজনীয় খরচ বাদ দিয়ে প্রত্যেককে নেসাব পরিমান অর্থ বা সম্পদের মালিক হওয়া সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব হওয়ার পূর্বশর্ত। যৌথ সম্পদ বা যৌথ উপার্জনের কোন ধার্তব্য নেই।( মুসন্নাফে ইবনেন আবি শাইবা: ১০/৪৯৪, মাসুতে সারাখসিঃ ২/১৮৫)
৬ নং মাসায়ালা
ফিতরা আদায় করার সময় আপনি যে জায়গায় বসবাস করবেন সেই জায়গার মূল্য হিসাবেই আপনাকে ফিতরা আদায় করতে হবে। যে এলাকায় বসবাস করবেন সেই এলাকার ফিতরের মুল্য ধরতে হবে। ( ফাতাওয়া মাহমুদিয়া:১৪/৩৭৪)
৭ নং মাসায়ালা
ঈদের দিন ফজরের নামাজের পূর্বে যদি কোন সন্তান জন্ম গ্রহন করে তার ফিতরাও আাদায় করতে হবে। অবশ্য ঐ সময় যদি কোন ব্যক্তি মারা যায় সেই মৃত ব্যক্তির ফিতরা আদায় করতে হ বে না।( ফাতাওয়া আলমগিরি : ১/১৯২)
৮ নং মাসায়ালা
ঈদের দিন সূর্য উদয়ের পর কোন সন্তানের জন্ম হলে তার ফিতরা আদায় করতে হবে না। আবার ঐ সময় কেউ মারা গেলে তার ফিতরা আদায় করতে হবে।
৯ নং মাসায়ালা
রমজান মাসে বা ঈদের দিন কোন ব্যক্তি ফিতরা না দিয়ে মারা গেলে তার ফিতরা তার উত্তরাধিকারি দিলে তার পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে। (রুদ্দুল মুহতার: ২/১০৬)
১০ নং মাসায়ালা
বিবাহিতা ছোট মেয়ে নিজে সম্পদশালি হলে তার ফিতরা তাকে আদায় করতে হবে। আর সম্পদশালি না হয় তাহলে ছেলে পক্ষ উঠিয়ে না নিলে নিজ পিতার উপর ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব হবে। আর উঠিয়ে নিলে কারও উপর ওয়াজিব হবে না।( ফাতাওয়া আলমগিরি: ১/১৯২)
১১নং মাাসায়ালা
কোন গৃহকর্তার স্ত্রী, সন্তান, পিতা-মাতা যদি সাহেবে নিসাব হয় ( মানে নিজেরা সাবলম্বী হয়) তাহলে তাদের ফিতরা তারা নিজেরাই আদায় করবে।
প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা একজনের ফিতরা একজনকেই দিয়াই উত্তম। একজনের ফিতরা কয়েক জনের মধ্যে ভাগ করে দিয়া যেতে পারে। তবে ফিতরার টাকা যে পরিমান হবে তা বুঝে শুনে ভাগ করে দিতে হবে। মাথা পিছু ১২০ টাকা ফিতরা হলে তা যদি ১০ জনের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয় তাহলে এক এক জন কয় টাকা করেই পাবে। সেই টাকা দিয়ে তাদের কোন কি উপকারে আসবে। মনে হয় আসবে না। এই জন্য যদি পারেন একজনের ফিতরার টাকা এক জ নকে দিয়ার চেষ্টা করবেন। যেন টাকা টা পেয়ে তাদের কোন কাজে লাগে।
পাঠকদের কিছু প্রশ্ন
সাদকাতুল ফিতর কার উপর ওয়াজিব?
কারো কাছে যদি সাড়ে সাত ভরি সোনা বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা অথবা তার সমমূল্যের নগদ টাকা থাকে অথবা নিত্যপ্রযোজনীয় জিনিসের অতিরোক্ত সম্পদ ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদিকের সময় বিদ্যামান থাকে তাহলে তার উপর সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব হয়ে যাবে।
ফিতরা কাকে দেওয়া যাবে?
দরিদ্র ভাই বোনেরা, গরিব প্রতিবেশিরা, নিকটবর্তী আত্মীয়স্বজনরা এবং দুরবর্তী আত্মীয় স্বজনরা, গরীব তালেব ইলমে আলেম ওলামগন। মোট কথা ফিতরা দেয়ার যোগ্য নয় এরকম মানুষকে ফিতরা দেওয়া যাবে।
কত টাকা হলে ফিতরা দিতে হবে?
ফিতরা মানেই ১১৫ টাকা। জ্বি, ১১৫ টাকা দিয়ে আমরা সবাই ফিতরা দিলে তা আদায় হয়ে যাবে। তবে প্রতিবছর যে পরিমান টাকা নির্ধারন করবে সেই পরিমান টাকা দিতে হবে। একেক বছরে একেক পরিমান টাাকা নির্ধারন করেন। সেই পরিমানি জেনে ফিতরা আদায় করতে হবে।
এক মুদ সমান কত গ্রাম?
এক মুদ সমান ৬০০ গ্রাম। এটি একটি ইসলামি পরিমাপ পদ্ধতি। এক মুদ পানি দিয়ে উযু করা সুন্নত।
আত্মীয়দের ফিতরা দেওয়া যাবে কি?
হ্যা, বন্ধুরা আত্মীয়দের কে ফিতরা দেওয়া যাবে। নিকট বর্তী বা দুরবর্তী কোন অভাব গ্রস্ত আত্মীয় থাকে তাহলে ঐ আত্মীয়দের ফিতরা দিতে পারবেন। ফিতরা দেওয়ার সময় আত্মীয়দের কে অন্যদের চেয়ে অগ্রধিকার বেশি দিয়া উচিত।
সদকাতুল ফিতরা কারা দিবে?
কার জন্য ফিতরা দেওয়া ওয়াজিব?
প্রত্যেক স্বাধীন মুসলমানের উপর ফিতরা দিয়া ওয়াজিব।ঈদের নামাজে রওনা হওয়ার আগ পর্যন্ত কেউ যদি নেসাব পরিমান সম্পদের মালিক হয় ফিতরা তার উপর ওয়াজিব হবে।
ফিতরা স্বামী নাকি স্ত্রীকে দিতে হবে?
গৃহ কর্তা ফিতরা দিবে নিজের পক্ষ থেকে। নিজের দরিদ্র সন্তান-সন্তনদির পক্ষ থেকে ও তাকে আদায় করতে হবে। তবে সন্তান- সন্তনদি, স্ত্রী যদি সাহেবি নিসাব হয় তবে তাদের ফিতরা তাদেরকেই আদায় করতে হবে।
কাদের যাকাত দিতে হয় না?
৪ শ্রেনীর লোক কে যাকাত দিতে হয় না। সেই ৪ শ্রেণীর লোক হলো, দরিদ্র, অসহায়, ঋণগ্রস্ত ও অমুক্ত লোকদের যাকাত দেওয়া লাগবে না।
যাকাতের কাজ কিভাবে করতে হয়?
যদিও যাকাত আপনার সম্পদের 2.5% , যাকাত-আল-ফিতর সমস্ত মুসলমানদের জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ। যাকাত-আল-ফিতর বলতে রমজানের শেষ রোজা শেষে দেওয়া দানকে বোঝায়।
এক বছরের কম সঞ্চয় করলে কি যাকাত দেওয়া যায়?
আপনার পুরো এক বছরের জন্য যে কোনো সঞ্চয় আছে তার উপর যাকাত দেওয়া হয় ।
যাকাত কি মাসিক দেওয়া হয়?
না, যাকাত মাসিক দেওয়া হয় না। জাকাত বছরে একবার ফরজ ।
কত টাকা থাকলে যাকাত দিতে হয়?
বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয়? কারো কাছে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা অথবা সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা এর বর্তমান বাজারমূল্য সমপরিমাণ টাকা বা ব্যবসায়িক পণ্য থাকলে তার উপর যাকাত আবশ্যক হবে
লেখকের শেষ কথা
সকাতুল ফিতরা হচ্ছে কাফফারার মতো। নিসাব পরিমান সম্পদ থাকলে যাকাত আদায় করতে হবে। ধনী -গরিব সকলেই যাকাত আদায় করতে বাধ্য। তবে সেই শ্রেনীর গরিব না যারা একে বারে গরিব। হাদিসে আছে প্রত্যেক স্বাধীন ব্যক্তিদের কে ফিতরা দেওয়া ওয়াজিব। হাদিস আরো আছে, প্রত্যেক স্বাধীন ক্রীতদাস, পুরুষ-নারী, ছোট -বড় ধনী- গরীব সকলের উপর সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব। (মুসনাদে আহমাদ,দারাকুতনি,বায়হাকি) সদকাতুল ফিতরা আদায় করার জন্য কোন সম্পদ যেমন, গাড়ি-বাড়ি, জামা-কাপর, সোনা-রুপা, গরু-ছাগল বিক্রয় করা জরুরি নয়।
যেসব জিনিষ আপনার প্রয়োজনের বেশি সেগুলো বিক্রি করে সদকাতুল ফিতর দেওয়া ওয়াজিব। বিক্রয় যোগ্য জিনিষ থাকলে আপনি অবশ্যই সেগুলো বিক্রি করে সদকাতুল ফিতর আদায় করতে পারবেন। আর সদকাতুল ফিতর নির্দিষ্ট সময়ে আদায় করতে হবে। টাকা থাকা সত্বেও দেরি করা যাবেনা । আপনারা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফিতরা আদায় করে নিবেন। কারন এমন অভাবগ্রস্ত, ঋণগ্রস্ত পরিবার আছে যারা ফিতরার টাকা পেলে বাজার সদাই করেন। আর ফিতরার টাকা নেয়ার জন্য গরীবদের কে যেন দ্বারে দ্বারে যেতে না হয় সেদিকে ও আমাদের কে খেয়াল রাখতে হবে।
যার যার ফিতরার টাকা সে সে যদি খেয়াল করে খুজে খুজে গরিব অসহায় দের কে দেয় এটা তাহলে বেশ ভালো হয়।তো বন্ধুরা সদাকাতুল ফিতর সম্পর্কে আপনারা অনেক কিছু জানলেন এবং বুঝলেন। নিশ্চয় আপনারা বুঝতে পেরেছেন যে সদকাতুল ফিতর কার উপর ওয়াজিব। তো বন্ধুরা আমার এই পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে পরিচিতদের মধ্যে সেয়ার করতে ভুলবেন না। আর পোষ্টের মধ্যে কোন ভুল ভ্রান্তি হলে ক্ষমা করে দিবেন। সবাই ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ।
msta2z.comব্লগের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url